ভূমিকাঃ গোপালগঞ্জ খুব ছোট নিরিবিলি একটি জেলার নাম । মলুত মধুমতি নদীকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ শহর ও জেলার বিকাশ । যদিও শহর সংলগ্ন মধিমতি নদীটি এখন একটি নালায় পরিণত হয়েছে । ১৯০৯ সালে মাদারীপুর মহকুমাকে ভেঙ্গে গোপালগঞ্জ মহকুমা গঠন করা হয়।গোপালগঞ্জ এবং কোটালীপাড়া থানার সঙ্গে ফরিদপুর মহকুমার মুকসুদপুর থানাকেনবগঠিত গোপালগঞ্জ মহকুমার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এবং ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জ মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলা ০৫ টি উপজেলা, ০৫ টি থানা, ০৪ টি পৌরসভা, ৬৮টি ইউনিয়ন এবং ৬৫৩ টি মৌজা নিয়ে গঠিত। এ জেলার উত্তরে ফরিদপুর জেলা, দক্ষিণে পিরোজপুর ও বাগেরহাট জেলা, পূর্বে মাদারীপুর ও বরিশাল জেলা এবং পশ্চিমে নড়াইল জেলা অবস্থিত ।

নামকরণঃ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় একজন উচ্চপদস্থব্রিটিশ কর্মকর্তাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন জেলেসম্প্রদায়ের মেয়ে রাসমনি। এ মহৎ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি লাভ করেছিলেনমকিমপুর পরগনার জমিদারি। খাটরা মৌজা ছিল মকিমপুর পরগনার আওতাধীন একটিএস্টেট। জেলে বসতিপূর্ণ খাটরা এলাকার জমিদারি পেয়ে তিনি ভীষণ খুশী হন।খাটরা জমিদারি লাভের কিছুদিন পর রানীর  নাতির জনম  হয়। তার নাম রাখা হয় নবগোপাল। খাটরা এস্টেটের প্রজারা রানীর  প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে খাটরা এস্টেটেররাজগঞ্জ বাজারের নাম বদল করে রানীর নাতি নব গোপালের নামানুসারে রাখতে চান।নব গোপালের  গোপালআর রাজগঞ্জের গঞ্জএই মিলে তখন নাম হয় গোপালগঞ্জ।

বর্ণনাঃ আমি জন্মসুত্রে এই গোপালগঞ্জ জেলার সদর গোপালগঞ্জ শহরের বাসিন্দা । গোপালগঞ্জ একটি নিরিবিলি ছোট শহর । শহরে এখনও প্রায় গ্রামের পরিবেশ বিদ্যমান । এখানকার বাসিন্দারা মোটামুটি সবাই পাড়া প্রতিবেশির খবর রাখেন এবং পরম মমতায় একজন আরেকজনের সুখ দুঃখ ভাগ করে নেন । এমনকি আমরা যারা শহরের স্থায়ী বাসিন্দা তারা শহরের অন্যান এলাকারও সম বয়সীদের চিনি । বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে আমরা একে অপরের সাথে মেশার সুযোগ পাই । সর্বপরি আমাদের শহরটিতে সাম্প্রদায়িক সমস্যা নেই বললেই চলে । এবং এই জেলার শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ আওয়ামীলীগের সমর্থক । আমি এখনও দেখিনি বিএনপি বা অন্য কোন দলের কেউ গোপালগঞ্জের কোন নির্বাচনে জয় লাভ করেছে । সাধারণত এই জেলার সংসদীয় আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থির সাথে নিকটতম প্রার্থীর ভোটের ব্যাবধান হয় কমপক্ষে দুই লাখ । আমাদের নেত্রি শেখ হাসিনা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এই জেলায় জন্ম নিয়ে গোপালগঞ্জের মাটি পবিত্র করেছেন । এবং নেত্রি শেখ হাসিনাকে আমাদের জেলার মানুষ ঘরের মেয়ে বলেই জানে । এবং শেখ হাসিনা পুত্রকে আমাদের গোপালগঞ্জের মানুষ “আমাদের ভাগ্নে” বলে সম্বোধন করে । ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুর পর আমি কয়েকজন কে কাঁদতে দেখেছি যারা রাজনীতির সাথে জড়িত নয় । ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর শেখ হাসিনার জন্য প্রার্থনা করতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যায় নি এমন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ গোপালগঞ্জে খুজে পাওয়া যাবে না । কোটালিপাড়া অঞ্চলে আমি দুজন বৃদ্ধ কে দেখেছি যারা গাছের প্রথম ফল,খইভাজার ধান ও দেশি মাছ  শেখ হাসিনার জন্য তুলে রাখেন এবং টাকা জমিয়ে ঢাকা পউছে দেন । শেখ হাসিনাও এই বৃদ্ধদের সাথে দেখা করেন । কিন্তু এরা কেউই রাজনীতি করে না এবং আর্থিকভাবেও সচ্ছল নন । গোপালগঞ্জ সদরের হিরণঅঞ্চলে এক ভ্যান চালক আছেন যে প্রতি ১৫ ই আগস্ট নিজের খরচে জাতির পিতার জন্য দোয়া চেয়ে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে । এমনকি এবার গাজিপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য টাকা ধার করে গাজীপুর গিয়েছিল । শহরের চৌরঙ্গী গেলে এক ভিক্ষুক দেখা যায় , লোকটি প্রতিবন্ধি, বাড়ি টুঙ্গিপাড়া । এই ভিক্ষুক কে ধানের শীষের টাকা বা বিএনপির টাকা বলে ভিক্ষা দিলে নেয় না । বেশি চাপাচাপি করলে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে । এই বিষয় গুলো আমার নিজের চোখে দেখা । এছাড়াও শত শত ঘটনা আছে আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে । কোটালিপাড়া অঞ্চলের অধিকাংশ বৃদ্ধ শেখ হাসিনাকে মা বলে সম্বোধন করে । এবং বেশিরভাগ মানুষই শেখ হাসিনাকে আপা বলে ডাকে । যে গোপালগঞ্জের মানুষ আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনাকে এত ভালোবাসে সে জেলার উপর ম্যাডাম খালেদার ক্ষোভ থাকবে, এটা স্বাভাবিক ।

 

মূল বক্তব্যঃ বিরোধীদলীয় নেত্রি বেগম খালেদা জিয়া কেন গোপালগঞ্জের নাম মুছে দিতে চান তা নিশ্চয়ই এখন সবার কাছে পরিস্কার । তবে উনি যা করার হুমকিই দেন না কেন আমরা গোপালগঞ্জবাসী আওয়ামীলীগে ছিলাম,আছি,থাকব । আরেকটি কথা বলি বঙ্গবন্ধু একবারই জন্ম নেয় । বঙ্গবন্ধুর বড় মনের পরিচয় পেয়ে ম্যাডাম খালেদা যদি ভাবেন গোপালগঞ্জ বাসী তার এই আস্পর্ধা মেনে নেবে তাহলে তিনি ভুল করেছেন ।  

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ