FB_IMG_1467528138104

গুলশান ট্র্যাজেডিতে নিহত ছয় হামলাকারীর মধ্যে পাঁচ জঙ্গির ছবি প্রকাশিত হয়েছে। শনিবার রাতে পুলিশ এই পাঁচজনের ছবি এবং নাম প্রকাশ করে জানায় এদের নাম আকাশ, বিকাশ, ডন, বাঁধন ও রিপন। এরা চিহ্নিত জঙ্গি। এদের খোঁজা হচ্ছিল বলেও জানিয়েছেন পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক।
দুই ছবির অন্তত চারজনের চেহারার মিল ধরা পড়ে। বাকি একজনের ছবি একই ব্যক্তির কি না, তা স্পষ্ট নয়।

যে পাঁচ জঙ্গির ছবি প্রকাশ করা হয়েছে ইতোমধ্যে তাদের তিনজনের স্কুল-কলেজ ও পরিচিতজনসুত্রে পরিচয় ফূটে উঠেছে।
gulshan_attacker-2
nibras-islam-1
★ তাদের একজন নিব্রাস ইসলাম, নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। সাবেক সহাপাঠীরা সনাক্ত করে তার ছবি ও পরিচয় সামনে এনেছে।

Mubashir
★ আরেকজন মীর সাবিহ মুবাশ্বের, স্কলাসটিকার ছাত্র। এ লেভেল পরীক্ষার আগে গত মার্চে মুবাশ্বের নিখোঁজ হন বলে তার এক সহপাঠীর বরাত দিয়ে জানা যায়। আগের ও সাইটের দেওয়া ছবি পাশাপাশি ‍দিয়ে তার পরিচয় প্রকাশ করেছেন এক প্রবাসী।

Rohan
★ রোহান ইমতিয়াজ, স্কলাসটিকার সাবেক ছাত্র। বাবা-মার সঙ্গে তার ছবির পাশে দেওয়া হয়েছে সাইটের ছবি, যেখানে দুই ছবির মধ্যে মিল পাওয়া যায়। মাহবুব রাজীব নামে একজন ফেইসবুকে তার ছবি দিয়েছেন। সে আওয়ামীলীগের শীর্ষ একজন নেতার সন্তান।

যে কথাগুলো এতোদিন বারবার বলে আসছিলাম, আজ এই কথাটাই সবার মুখেমুখে ফিরছে। সন্তানের দিকে নজর রাখুন। উঠতি বয়সের সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিত না থেকে সন্তানের গতিবিধি লক্ষ্য রাখুন। কিশোর বয়সে মানুষের মনোজগত থাকে অনেক বেশি স্পর্শকাতর। এ সময়টাতেই মানুষের মননে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করা যায়। আর প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ঠিক এই সময়েই মানবমনে তাদের মতবাদের বীজ বপণ করে দেয়! অথচ আমরা মা-বাবারা থাকি এ ব্যাপারে চরম উদাসীন। আমরা শুধু চোখে চোখে দেখি ছেলে কোচিং এ যাচ্ছে, স্কুলে যাচ্ছে, সারাবছর পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকছে, এবং আমরা তাই চাই। আমরা চাই ছেলেটা পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনেই ব্যস্ত থাকুক। অবাক বিস্ময়ে পৃথিবীকে জানার প্রবল আগ্রহ নিয়ে বাড়ন্ত এই বয়সে আমরা তাকে পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনেই ব্যস্ত রাখতে চাই অলীক স্বপ্ন বাস্তবায়নের আশায়। তাকে গল্পবই ছুঁতে দেই না। তাকে সমবয়সীদের সাথে খেলতে, ভাব বিনিময় করতে দেই না। আবার নিজেরাও তেমন বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়াতে পারি না। আমরা বুঝতে চাই না কোমল বয়সে তার যে জানার কৌতূহল তা থেকে তাকে নিবৃত্ত রাখা যাবে না। ফলে এই সুযোগটাই সুযোগসন্ধানীরা নিয়ে থাকে। আমাদের উদাসীনতা তাদের এই কাজটাকে আরো বেশি সহজ করে দিয়েছে।

বছর তিনেক আগে হবে হয়তো এমন দুটি ঘটনা আমার নজরে এসেছিলো।
★আমার বন্ধুলিস্টের একজন তাঁর ছেলে তখন ক্লাস ফাইভ/সিক্সে পড়ে। একদিন আপা বলতেছিলো, ছেলে ইদানীং খুব নামাজী হয়ে উঠেছে। প্রতি ওয়াক্তেই মসজিদে যেতে চায়। অবশ্যই খালিচোখে ব্যাপারটিকে দেখলে এটি আমাদের জন্য খুবই ভালো খবর। আমরা সবাই চাই আমাদের সন্তানটি যেনো ধর্মপ্রাণ হয়ে বেড়ে উঠে, কিন্তু আমরা কেউই চাই না আমার সন্তানটি ধর্মান্ধ হোক। আর ঠিক এখানেই আমাদের নজরদারি প্রয়োজন। চামেলিআপা নজরদারি বাড়িয়ে দিলো এবং খুব সম্ভব তখন এটি জানা গিয়েছিলো যে অখানে নামাজের পর কিছু সিনিওর ছেলেদের সাথে আলাপ আলোচনা হয় যা ব্রেনওয়াসের কোন কারণ ছিলো কিনা জানা যায়নি, তবে সন্দেহজনক হওয়ায় ছেলেকে কৌশলে সেখান থেকে ফেরানো হয়েছিলো। এমন সম্ভাবনা দেখা দিলে ফেরানোর কাজটি ব্রেনওয়াসের আগে করতে পারলেই কেবল ফেরানো সম্ভব, নইলে নয়।
★আমার বন্ধু তৃণা ছোটবেলার বন্ধু। একদিন ফোনে গল্পচ্ছলে প্রায় একইরকম খবর আমাকে দেয়। শুনেই আমি আঁতকে উঠি। সন্দেহ দানা বাঁধে। বেচারি বন্ধুটি একা এই শহরে দুটো ছেলেকে মানুষ করার জন্য এসেছে। আর সেই ছেলেই যদি পথভ্রষ্ট হয়, তো সবই বিফলে। শুরু হলো আমার একের পর এক প্রশ্ন। কানখাড়া হয়ে গেলো মায়ের। গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে দিলো। আবিষ্কারও হলো যা সন্দেহ করেছিলাম, তাই ঘটতে চলেছিলো। রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে ছেলে তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে। আমার প্রশ্নবাণে জর্জরিত মা জানায়, স্কুল ছুটি হয় চারটায়, ছেলে স্কুল মসজিদে নামাজ আদায় করে বের হতে হতে প্রায় সাড়ে চারটা/পৌনে পাঁচটা। আমার প্রশ্ন, নামাজ পড়ে ভালো কথা কিন্তু এতো সময় লাগবে কেনো? মা ছেলের অন্য বন্ধুদের থেকে জানলো, ছেলেটি নামাজ শেষ করে মজলিসে একটু বসে তারপর বের হয়। মা চেপে ধরে ছেলেকে, ছেলে জানায় সিনিয়র ভাইরা ডেকে নিয়ে মজলিসে বসায়। বলে, "মা, অখানে অনেক ভালো ভালো কথা আলোচনা হয়।" পরবর্তীতে মা কৌশলে ছেলেটিকে সে প্রভাব থেকে বের করে নিয়ে আসে। অথচ এই মা-ই কিন্তু প্রতিদিন নিয়ম করে ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসতো, নিয়েও আসতো। তখনও সে জানতো না এই নজরদারির মধ্যেও ছেলেটি তার ধর্মান্ধতার বেড়াজালে আটকা পড়তে যাচ্ছিলো। এদিকে মায়ের গোয়েন্দাগিরিতে ধরা পড়ে বাসায় ছোট ছেলেটিকে পড়াতে আসা উঠতি বয়সের হুজুরের সাথেও বড় ছেলেটির খুব ভাব। বাধ্য হয়ে আড়িপেতে তাদের কথা শুনে। চুনে মুখপোড়া মায়ের দই দেখেও ভয় পেয়ে যাওয়ার মতো ঘটনায় এখানেও ছোটছেলেকে পড়াকালীন সময়ে মা সমানে নজরদারিতে রাখতে শুরু করে দিলো।

উপরের দুটো ঘটনা থেকে নিশ্চয় উঠতি বয়সী ছেলেদের মায়েরা সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
* অবশ্যই বাসায় টিচার দিলে (ছেলেমেয়ে) এমন জায়গায় পড়তে দিন, যেখানে সারাক্ষণ আপনার চোখ ঘুরে বেড়ায়।
* ছেলেদের মনোজগতে কি খেলা করছে সর্বদা সেদিকে নজর রাখুন।
* ইন্টারনেটের যুগ, কাজেই এর থেকে দূরে রাখা যাবে না। ব্যবহার করতে দিন কিন্তু সতর্ক নজর রাখুন। দরজা বন্ধ করে নেটে বসার ক্ষেত্রে কৌশলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করুন।
* মনে রাখবেন, কিশোর বয়সে খুবই স্পর্শকাতর মন তাদের। কাজেই কঠিন অভিভাবকত্ব নয়, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করুন। সন্তান জানবে মা-বাবা আমার বন্ধু আবার মা-বাবাই আমার শাসক। একসময় অনুভব করবে মা-বাবাই আমার সব। দেখবেন, এই ছেলেমেয়েগুলো কোনভাবেই পথভ্রষ্ট হবে না।

FB_IMG_1467528143183
** না চাইতেই ছেলেমেয়েদের হাত ভরে টাকা আর অবাধ স্বাধীনতা দিলেই ভালো মা-বাবা হওয়া যায় না। এতে ছেলেমেয়েরা বখে গিয়ে হয় ঐশীদের জন্ম হয় নাহয় নিব্রাস ইসলাম, মুবাশ্বের, রোহান ইমতিয়াজ তৈরি হয়।

কাজেই ঘর থেকেই শুরু হোক সতর্কযাত্রা।

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ

Thumbnails managed by ThumbPress