হোস্টেলে আর আমার সেদিন ফেরা হয়নি!
কারণের বিশ্লেষণে যাব এক্ষুনি!

ধানসিঁড়িতে সু-ভোজনের নামে যে পয়সা খরচ হয়েছিল তা নিয়ে আমার কোন চিন্তাও ছিলনা। তাই বলে এমন না যে আমি খরচের ব্যপারে উদাসীন! কিন্তু চিন্তা করারও একটা স্থান কাল পাত্র আছে। আর তখন আমার চিন্তা করার এমন হাজারো বিষয় ছিল।
ভদ্রতার ষোল কলা পূরণ করতে আমায় দরজার বাহির পর্যন্ত এগিয়ে দেয়া হল!
দরজার বাইরে পৃথিবীর মুখ দেখে আবারো পুরনো ভয়ে জর্জরিত। সূর্য যে পৃথিবীকে ছেড়ে চলে গেছে!! এক মূহুর্তে মনে হল আমার জীবন থেকেই সূর্য ডুবেছে। ১৯ বছরের এ দীর্ঘ জীবনে কোনদিন সূর্যের এত গূরুত্ব অনুভব করিনি। হোস্টেলের মেইন গেট বন্ধের সময় ৬ টা।
আর ঘড়ির কাটা তখন প্রায় সাতের ঘরে।
সে ভয়ে আর কাজ নেই। এমন নয় যে পিছনে কোন পথ খোলা আছে। সামনেই এগুতে হবে।

রাস্তা পারাপারে আমার বড় অনীহা। মাইল দশেক দূরেও যদি একটা ওভারব্রীজ দেখতাম তবে চলে যেতাম। কিন্তু নেই বলেও খুব সমস্যা হয়না এ ঢাকায়। একটা অচেনা ভীর পেয়েই গেলাম রাস্তা পার হবার জন্যে। ভালবাসা সব রাস্তা পারাপারের ভীরকে!

কি সুন্দরই না লাগছে এই শহরকে। ঝলমল করছে পিংক সিটি! পার্কিং এ গাড়িগুলোর কি শৃঙ্খলা! কেউ আমার দিকে তাকিয়ে নেই! আমিই মুগ্ধ হয়ে মানুষের ব্যস্ততা দেখছিলাম। সন্ধা হলে শ্রান্ত চোখে বিশ্রাম নেয়ার আকূলতার ব্যস্ততা কিন্তু নয় !!! এ হচ্ছে শহরের ব্যস্ততা! এখানে রাখাল বালকেরা গরুর পাল নিয়ে বাড়ি ফেরে না সূর্য ডোবার সাথে সাথে! এখানে রাখাল বালক রাখালীকে নিয়ে বিটারসুইট ক্যাফেতে যাবায় ব্যস্ত যে!!

কোথাও বাস থামেনা। হেটে হেটেই কতদূর চলে এসেছি। ঢাকা ছাড়িয়ে এলাম না তো! সাহায্যের খুব প্রয়োজন! রাস্তায় দাড়ানো ট্রাফিক পুলিশের কাছে জানতে চাওয়ায় আমার পিছনের দিকে আঙুলে ইশারা করে ঐদিকে বাস স্টপ আছে বলে জানাল। আমিও একটা হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম হ্যা ঠিকাছে সব বুঝে গিয়েছি। উল্টো পথে হাটা শুরু। কিন্তু কোথায় আর পেলাম সে সব বুঝে যাওয়া বাস স্টপ!!

সাড়ে সাতটা! হোস্টেল থেকে ফোন যদি আসে! আসুক! যা করে ফেলেছি তা বলতে আর কি। ভাবতে ভাবতেই পেয়ে গেলাম গন্তব্য। অনেকেই বসে আছে এই স্টপে। তাদের সাথে একটু আলাপচারিতায় জানলাম ৬ নাম্বার বাসেই উঠতে হবে।
হঠাৎ সবাই উত্তেজিত হয়ে উঠে দাড়াল। বাস থামার আগেই বুঝি বাসে উঠতে হবে। গেলাম পিছন পিছন,কিছ বুঝে ওঠার আগেই কি এক ধাক্কায় ধাম করে পড়ে গেলাম বাসের সামনে। কাকে যেন সবাই গালিগালাজ করছে। শান্ত ভাবে উঠে দাড়িয়ে আর দেখার প্রয়োজন বোধ করিনি কে ছিল। নিজের উপর অভিমান করে বাসে না উঠে হাটতে লাগলাম ফুটপাথ ধরে । বোধহয় পিছন থেকে কেউ একজন ডেকেছিল কিন্তু তার ভাগ্য খারাপ আমার আর সাড়া মেলেনি।।

সেদিন রাতটা বনানীতে এক আত্নীয়ের বাসায় ছিলাম।

==================================
হয়তো অনেকে আমার লেখার সাথে শিরোনামের মিল খুঁজে পাননি। যেটা লেখিকার চরম ব্যর্থতা মেনে নিলাম! কিন্তু গুলশান নাম শুনতেই যদি ধরে নেন বি.এন.পি এর কার্যালয়ের সামনের সেদিনের ভয়াবহতা বর্ণনা হবে। তাহলে মাফ করবেন এ ভয় সে ভয় না। এটি শুধু একটি ১৯ বছরি মেয়ের,যে একা কখনো চলাফেরা করেনি তার হারিয়ে যাবার ভয়। ধন্যবাদ 🙂

0 Shares

৩৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ