গুলতি

জি.মাওলা ৪ ডিসেম্বর ২০১৩, বুধবার, ০২:২০:০১অপরাহ্ন এদেশ ৪ মন্তব্য

>>উচ্চারণঃ গুলতি । শব্দের অর্থঃ গুলিনিক্ষেপের ধনুবিশেষ; বাঁটুল। এটি একটি সরল যন্ত্র বিশেষ।
>>গুলতি [gulati] catapult.
>>গুলতি [gulati] বাঁটুল, ছোট পাথর, মাটির গুলি ইত্যাদি ছোড়ার প্রাচীন ও দেশীয় অস্ত্রবিশেষ।
>>A catapult is a device used to throw or hurl a projectile a great distance without the aid of explosive devices—particularly various types of ancient and medieval siege engines. Although the catapult has been used since ancient times, it has proven to be one of the most effective mechanisms during warfare. The word 'catapult' comes from the Latin 'catapulta', which in turn comes from the Greek καταπέλτης (katapeltēs), itself from (kata), "downwards" + πάλλω (pallō), "to toss, to hurl".Catapults were invented by the ancient Greeks. (Wikipedia)

>>ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বাংলাদেশে হারিয়ে যাচ্ছে গুলতি<>

গুলতিঃ অঞ্চলভেদে “গুলতি”, “গুলই”, “ছটকা”, ”বাটুল” ইত্যাদি নামে পরিচিত। গ্রাম্য কিশোরদের গুলতি হাতে বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো আর পাখি শিকারের নেশার কথা বর্ণনা আছে সাহিত্যের নানা জায়গায়। আবহমান বাংলায় কিশোর জীবনের বিভিন্ন ক্রীড়াসামগ্রী, অন্য অর্থে সম্পদের তালিকায় লাটিম-নাটাইয়ের পাশাপাশি গুলতির গুরুত্বও কম ছিল না। এখন তা বিলুপ্তির পথে। কেননা শহরের শিশুরা এখন গুলতির অভাবে বেছে নিয়েছে খেলনা পিস্তল-বন্দুক। এসব খেলনা নিয়েই তারা খেলতে বেশি পছন্দ করে। এখনকার অনেক শিশুই ঐতিহ্যবাহী গুলতি চেনে না।তা এখন কেবল মাত্র উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে ও গ্রামের কিছু ছেলে পেলের মাঝে অত্যান্ত অবহেলায় টিকে আছে।

>>তৈরির প্রক্রিয়াঃ গাঁয়ের শিশু-কিশোররা কী অনায়াসে এই খেলনাটি তৈরি করতে পারে। পেয়ারা, জাম, বেল ইত্যাদি শক্ত গাছের চিকন এক টুকরা ডাল দিয়ে হাতল বা দোডালা তৈরি করা হয়।
ইংরেজি 'ওয়াই' (Y) অক্ষরের মতো দোডালার টুকরাটিকে ডালা বা বাট বা হাতল বলে। এর বাকল তুলে রোদে শুকিয়ে এই হাতলের Y এর দুই বাহুর সঙ্গে রাবারের ফিতা বা সাইকেলের টিউব বা ভয়েল টিউব সুতা দিয়ে বেঁধে গুলতি তৈরি করা হয়। নিচের প্রান্তটি ব্যবহার করা হয় হাতলের মতো, ধরার জন্য। রাবারের ফিতাকে বলা হয় ব্লক। ব্লক ২ টা করে ৪ টা পাট বা আরও বেশি ও কম করা হয় প্রয়োজন মত।
ব্লকের ঠিক মাঝখানে চামড়া বা রেক্সিন জাতীয় বস্তুর একটু চওড়া টুকরা রাবারের নলের সঙ্গে সুতা দিয়ে গিট দেওয়া হয়। এটা গুলির আধার বা রাখার স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
>> গোলাবারুদ/ গোলাঃ এই গুলতির প্রধান গোলাবারুদ হল পোড়া মাটির গোল মার্বেল। অতীতে মাটি কাদা করে মার্বেলের মতো গোল গোল করে পাকিয়ে রোদে শুকিয়ে উনুনে পুড়িয়ে গুলতির গুলি বানানো হতো। এর পরিবর্তে এখন কাঁচের মার্বেল নুড়িপাথর বা ইটের ছোট টুকরাও ব্যবহার করা হয়। গুলতির গুলি তৈরিও একসময় ছিল গ্রাম্য কিশোরদের নিত্য কাজ। সেসব গুলি প্যান্টের পকেটে পুরে তারা বেরিয়ে পড়ত মাঠে বা বনবাদাড়ে। শক্তির পরীক্ষা হতো দীঘি বা পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে। যে সবচেয়ে বেশি দূরে গুলতির গুলি ছুড়তে পারত, সে-ই বিজয়ী হতো। পাখিসই খেলাটাও ছিল গুলতির আরেক খেলা। লক্ষ্য বা তাক করে গুলতি থেকে গুলি ছোড়াই হলো খেলোয়াড়ের মূল পারদর্শিতা। যেকোনো সংখ্যক প্রতিযোগী গুলতি খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। এখনকার শ্যুটিং খেলার মতো কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে তাক করেও গুলতির গুলি ছোড়া হয়। প্রত্যেকে পরপর পাঁচবার করে গুলতি থেকে গুলি ছুড়তে পারে। যে খেলোয়াড় সবচেয়ে বেশি বার গুলি লক্ষ্যবস্তুতে লাগাতে পারে, সে-ই খেলায় বিজয়ী হয়। চোখ ও হাতের নিশানা ঠিক রেখে গুলতি থেকে গুলি চালানোই এ খেলায় সাফল্যের মূল কৌশল। এ ছাড়া দড়ি দিয়েও একটা গুলতি বানানো যার নিরীখটা ঠিক হতনা তবে তিন ডবল দূরে ছোঁড়া যায় ৷ তবে শিশু-কিশোররা প্রতিযোগিতার চেয়ে গাছের পাকা ফল পাড়তে বা পাখি শিকার করতেই গুলতি বেশি ব্যবহার করে থাকে। গ্রামের মুদি দোকানগুলোতে এখনো গুলতি কিনতে পাওয়া যায়।

>> ব্যবহারঃ সেই প্রাচীন কাল হতে এটির অন্য একটি বড় রুপ যুদ্ধ ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে। এই যন্ত্র প্রথম আবিষ্কার করে গ্রিকরা। পড়ে বিভিন্ন যুদ্ধে বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনী কোন দুর্গের মাঝে বড় বড় পাথর ও আগুনের গোলা ছুড়ে মারার জন্য ব্যবহার করত।
তথ্যসূত্র: পত্রিকা, ব্লগ, ফেসবুক, সাইট।

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ