কথা শেষ করতে পারলেননা তিনি । পিছন থেকে কে যেন ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়, পড়ে যান তিনি । মারামারি, হৈচৈ শুরু হয়ে যায় । তার গায়ে কোন মার কিন্তু পড়ছেনা, দেখেন দু’জন শক্তসামর্থ মানুষ তাকে ঘিরে রয়েছেন । তাকে মারতে উদ্যত জানোয়ারদের সাথে সময় সময় তাদের বেশ ধস্তা-ধস্তি হচ্ছে । উঠে বসেছেন তিনি এবং একসময় দেখেন, ছাত্র-ছাত্রীরা গুন্ডাদের মার দিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছে । অনেকদুর পর্যন্ত তাদের তাড়িয়ে নিয়ে গেল তারা ।

প্রিয় ইউনিয়নবাসী এবং আমার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা, আবার শুরু করেন তিনি, একটা বাধা এসেছিল এবং আগামীতে আরো বড় বাধা আসবে । সুবিধাভোগীরা আমাদেরকে হিসাব দিবেনা এবং সহজে ছেড়েও দিবেনা । কিন্তু আমরা তাদের উপর যদি চাপ অব্যহত রাখতে পারি, তবে তারা তা না দিয়ে থাকতে পারবেনা । আপনারা কি চান জানতে চাই, অর্থাৎ আপনারা কি আপনাদের পাওনা বুঝে নিতে চান না চাননা ?

জোরালোভাবে আওয়াজ আসে, আমরা পাই পাই করে আমাদের পাওনা বুঝে নিতে চাই ।

তবে তাই-ই হবে । ইউনিয়নব্যপী যে কমিটি রয়েছে, সেই কমিটি আপনাদের পাওনা আদায় করে দেয়ার ব্যপারে আবারও ওয়াদাবদ্ধ হল । আমাদের উপর হামলা হয়েছে, আগামীতে আরো বড় বড় হামলা হবে । হয়তো কারো মৃত্যুর মত ঘটনাও ঘটবে । উপরে আল্লাহ এবং নীচেও কিন্তু আপনাদের সাথে সাথে আরো মানুষ আছেন আমাদের পক্ষে । যেমন আপনারা দেখেছেন কি-না, আজকেই সরকারী চাকুরীরত, প্রশাসনের দু’জন লোক সাধারন পোষাকে থেকে আমাকে মারের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন । ধন্যবাদ দিয়ে তাঁদের আমি ছোট করতে চাইনা । তবে বিবেকবান মানুষ কিন্তু অনেক আছে এদেশে, এটা মনে রাখতে হবে আমাদের । এভাবেই আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে, আমরা কোনমতেই পিছপা হবনা । আগামীতে আরো বড় কর্মসূচী আসবে ইউনিয়নব্যপী, উপজেলাব্যপী এবং এমনকি জেলাব্যপীও কর্মসূচী হবে প্রয়োজনে । তবে আজকের এই ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল পারাতিয়া-সাতনলী দুই কিলোমিটারব্যপী যে প্রধান সড়কটি রয়েছে, সেখানে মানববন্ধন করা হবে সকাল ১০ ঘটিকা থেকে ১১ ঘটিকা পর্যন্ত । একটা কথা অপকর্র্মের হোতাদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই । হয় আমাদের পাওনা বুঝিয়ে দিবেন, নয়তো এক কথায় বলি, বুঝিয়ে দেয়া থেকে কখনও রেহাই পাবেননা । যত দেরী করবেন, তত সন্মানি লোক আপনারা, আপনাদের সন্মানহানি বাড়বে ।

রাত ১২টা । এমপি সাহেবের ভাই, জসীমের বাড়ীতে গুরুত্ত্বপূর্ন মিটিং । জসীম সাহেব বিভাগীয় শহরে বড় ব্যাবসা করেন, গার্মেন্টসও আছে তাঁর ঢাকার কাছে । ইউপি চেয়ারম্যানসহ ইউনিয়নের মানুষজন তাকে সন্মানের চোখে দেখে । এলাকার সাথে তাঁর বিশেষ যোগাযোগ রয়েছে । এসেছেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবেদ আলী ; প্রাক্তন চেয়ারম্যান শমসের ভুঁইয়াও আছেন । আলোচনার বিষয়– প্রধানতঃ আজকের ব্যর্থতা এবং এতোদিন পাত্তা দেননি তারা যে বিষয়টিকে, মানে গম-চালের বিষয়টি, সেটাও আছে ।

চেয়ারম্যান আবেদ আলী বলেন, এদের সঙ্গে কতটুকু পারবেন জানিনা, তবে না পারলে আমাদের আয়-রোজকার যে একেবারে বন্দ হয়ে যাবে তা নিশ্চিত ।

আশ্চর্য, যাদের পাঠালাম, কিছু করতেতো তারা পারলইনা, উপরন্ত মার খেয়ে ফিরে এল ।

শমসের ভুঁইয়া যোগ করেন, আরেকটু হলেতো দুজন ধরাই পড়ে গেছিল । বুঝতে পারছিনা, আজিজের পাশে যে দুজন লোক ছিল, তারা কারা ! এদের জন্যইতো ব্যাটার গায়ে একটি আঁচড়ও দেওয়া গেলোনা ।

গুন্ডা ভাড়া করে এনেছে না-কি ওরাও ? মুখ না-কি ঢেকে ছিলো । এমপির ভাই জসীম বলেন ।

আর ঘটনার পর হাওয়া হয়ে গেল লোকগুলো । এটাইবা কেমনে সম্ভব ! শমসের ভুঁইয়া আবার বলেন ।

আবেদ আলী বলেন, ঘটনা যা-ই হোক, সম্পদগুলোর কোন হিসাব কিন্তু দেয়া যাবেনা । তাহলে আর মান-সন্মান কিছুই থাকবেনা এবং আগামীতে আর কিছু করাও যাবেনা । পিআইও সাহেবকে একটু টাইট দেয়ার জন্য স্যারকে বলবেন, তথ্য কেমন করে বের হয় ? আর যেন কোনক্রমেই কোন তথ্য বের না হয় ।

বিস্তারিত আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় যে, কোনক্রমেই স্বীকার করা চলবেনা কিছুই এবং এর চেয়েও ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটানো হবে ভবিষ্যতে । আপাততঃ কালকের মানববন্ধনে কিছু করা হবেনা ।

প্রায় নিঃশ্বাস বন্দ করা মানববন্ধন হয়েছে । দুই কিলোমিটার রাস্তায় মানুষ-ছাত্র-ছাত্রী প্রায় গায়ে গা লাগালাগি হয়ে যায় বলে দু’টি লাইন করা হয়েছিল । উপজেলার সাংবাদিকরা বিস্তারিতভাবে সব শুনেছেন কিজন্য এই মানববন্ধন । শেষে আজিজ বলেন, জানি শাসকগোষ্টির কিছুই হবেনা এই মানববন্ধনে । তবে শুনে রাখুন সবাই, ছাড়বোনা আমরা । পাওনা আদায় না হওয়া পর্যন্ত এবং আগামীতেও সবাই ভালো হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবেই, বন্দ হবেনা । প্রতি শুক্রবার বিকেল চারটা থেকে এই মানববন্ধন চলার ঘোষনা দেন তিনি ।

দ্বিতীয় শুক্রবার উপজেলা সদরে পুর্বঘোষনা অনূযায়ী মানববন্ধন হচ্ছে বিকেল বেলা । এই মানববন্ধনে বিভিন্ন ইউনিয়নের অনেক মানুষ জমায়েত হয়েছেন । এই জমায়েত ইতিমধ্যে সদরের কলেজমাঠে জনসভায় পরিনত হয়েছে । মাইকে কেউ কেউ কথাও বলছেন । দেবিতা ইউনিয়নের একজন শিক্ষিত বেকার, আসলাম জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিচ্ছেন তার ইউনিয়নেও এরকম ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি নির্র্ভরযোগ্যসুত্রে খবর পেয়েছেন । তিনিও তার এলাকার জনগনকে সাতনলী ইউনিয়নের জনতার মত করে দাবী আদায়ের আহ্বান জানাচ্ছেন ।

সমাপনী বক্তব্যে আজিজ আগামী শুক্রবার পুনঃরায় এই স্থানে আরো ব্যাপকভাবে জনসভা করার ঘোষনা দিয়ে এই সমাবেশের সমাপ্তি টানেন । তবে তিনি কাউকে হিংসাত্মক আচরন না করার জন্য বিশেষভাবে বলে দেন । তিনি বলেন, দেখেন ভাইসব, সরকারী বরাদ্দকৃত সম্পদ অর্থাৎ গম-চাল-টাকার হিসাব আমরা অবশ্যই চাই এবং এ-দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়েও যাব, এটা নিশ্চিত । আপনারা লক্ষ্য করে থাকবেন, এ-আন্দোলন ধীরে ধীরে বিস্তৃতিলাভ করছে এবং সার্থকতাও লাভ অবশ্যই করবে এটা । এজন্য আমরা অহিংসভাবে চলবো, আপনারা কেউ অধৈর্য হবেননা । মনে রাখবেন আমরা হেরে যেতে চাইনা, কারন হেরে গেলে আমাদের দরিদ্র ইউনিয়নবাসী সরকারী সম্পদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে । সরকার দরিদ্র গ্রামবাসীর জন্য যে বরাদ্দ দিয়ে থাকেন, তা আমরা ক্ষমতাসীনদেরকে ভোগ করতে দিবনা, আমরা শুধুমাত্র এইজন্যই লড়ছি । আমাদের রাজনৈতিক কোন অভিলাষ নাই, আমরা কোনদিন ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার অথবা অন্যান্য কোন নির্বাচনে অংশগ্রহন করবোনা, এটা আমাদের ওয়াদা । তবে খারাপ কাজ করলে আমরা তাঁদের ভালো কাজ করতে বাধ্য করেই যাব, যতক্ষন পর্যন্ত না কাজটি ভালো হবে । আর কিছু নয় ; ধন্যবাদ সবাইকে ।

সাতটি ইউনিয়ন সহকারে গঠিত এই উপজেলাটি। সাতনলী ইউনিয়নের প্রতিবাদ কর্মসূচীর ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে সারা উপজেলায়। আজিজদের নিকট উপজেলা সদরে কর্মসূচী পালনের প্রস্তাব আসে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে। উপজেলার তরুন কিছু সাংবাদিকও এই কর্মসূচীর ব্যপ্তি ঘটাতে বলেন।  নিজ ইউনিয়নের নেতৃস্থানীয়দের পরামর্শক্রমে উপজেলা সদরেই মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন তিনি।(চলবে)

0 Shares

২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ