গল্পের সাথে ক্ষাণিক্ষণ

ছাইরাছ হেলাল ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ১০:২০:০০পূর্বাহ্ন গল্প ২৬ মন্তব্য

 

গল্প হেঁটে যাচ্ছে হনহনিয়ে তীর-বেগে/সর্পিল গতিতে, যাক না সে এমন করে দূরে কিম্বা কাছে, আর-ও কাছে। সিদ্ধ বা নিষিদ্ধের তোয়াক্কা না করে।
ভোর-বিহান থেকে ক্লান্ত- বিকেলে গল্পের পেট এবার চো চো, পথ-ঘাটের জনহীনতায় ভরকে গিয়ে দারুণ-চাঙ্গা এবার খিদে; প্রত্যাশার ইতালিয়ান কোজিন, কাউন্টারে বসা ঢাউস ভূরি বাগিয়ে আধ-কপালি টাকের গমগমে গলার সদা-হাস্যের ম্যানেজার; এগিয়ে দেয়া নিপাট-হাতের চকচকে কাসার বাটিতে দু’টুকরো আখের গুড় আর টাটকা মচমচে মুড়ি।

জুতমতো বসে আমরা বরং গল্পের কাছে গল্পে-গল্পে গল্প শুনতে চাইতে পারি। অবশ্য এমনটা ভাবার যথেষ্ট কারণ ঘটেনি যে গল্প শোনান/বলার মৌরসি স্বত্ব গল্পের কাছে কী জোর করে গছিয়ে দিয়েছে।

ভাদ্র-গ্রীষ্মে মেঘেদের গুরু গর্জনের ঘনঘটা থাকলেও গনগনে তপ্ততা সাবলীল ক্রুদ্ধতায়গল্পের সাথে গা বাওয়া-বাওয়ি করেই হাঁটে; আনকোরা ছাতা পেখম মেলে স্নিগ্ধতা ছড়ালেও, গল্প এসব ছাতামাতায় সায় না দিয়ে আধা-দিগম্বর-বেশে এগিয়ে যায়! ভাবে, বৃষ্টির ভাজে ভালোবাসার সাথে দেখা হয়ে গেলে জম্পেশ আড্ডা হয়েই যাবে, হয়েছে যেমন আগে-ও।

গল্পের/গল্পদের কোন গল-টল্প থাকে কী না তাও আমরা সামান্য ঝুঁকে আলগোছে উঁকিঝুঁকি দিতেই পারি, আরে উঁকিঝুঁকি আবার কিসের! ক্যাঁক করে চেপে ধরে একটানে খুলে ফেলতে পারি গল্পের লুকনো ভাণ্ডার যা চিরকালীন স্তব্ধতায় যেখানে আগলে রেখেছে ভারার ঘরের কোনে খুনসুটির আচলে বেঁধে।

সেবারে গল্প সরবে-সদলে মাছ ধরতে গিয়েছিল, চিক্কুর পারতে পারতে, সে এক কঠিন/করুন অভিজ্ঞতার গল্প। গগন বিদারী আর্ত-চিৎকারে শুরুতেই সাঙ্গ হয়েছিল মাছ ধরা-ধরি, সামান্য এক কচি-শিঙ্গির এক কাটার ছোঁয়ায়। অনেক চেষ্টা-চরিত্রির করে এ ব্যথার এলাচ কী করে হয়েছিল জানতে পারিনি, শুধু জেনেছি নিম্নাঙ্গে শিঙ্গা নিতে হয়েছিল, এ-ই জেনেছি, ঠিক কোথায় সে শিঙ্গাস্থান তা জানতে পারিনি।

গল্পকে এবার ডেঙ্গু খেয়েছিল, প্রথমে গল্পের সে কী হালুম-ধালুম! কুচ নেহি হোগা বলে উল্লম্ফ নৃত্য, সামান্য পরে-ই পাপদ-ধরণী-তল; বেজায় চ্যাংদোলার পর- ও হম্বি তম্বি, তবে তা শুধুই ক্ষীণ-কলরবে!
গল্পের সাথে হঠাৎ দেখা রাস্তায়, ঘর্মাক্ত-মণ্ডল জামার হাতায় মুছতে মুছতে ছুটছে তো ছুটছে, খপ করে ধরে ফেলে বেত্তান্ত জানতে চাইলে ছলছল মুখচ্ছবি মেলে শুধু বলল তার এক অতি-নিকট-কুটুম্বের হৃদয় খয়া গেছে! এ আর এমন কী! আকছার-ই-তো এমন- খোয়া-খুইয়ি হচ্ছে! ঝাঁ-চকচকে দেখে নূতন একখানা লাগিয়ে /বাগিয়ে নিলেই তো হয়!
ধাই করে আমার বুকে ঘুসি বসিয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। নাম জপতে জপতে!

আমারা বরং ইলিশ-ভ্রমণ করি, ঐ যে সে-বারে, যা খেলুম না দাদা, কী বললে! গোটাটা! আরে নাহ্‌, পাশের বাড়িতে ভাজি হচ্ছিল! তো তাতে কী! যা ঘ্রাণ! এখন- ও মুখে লেগে আছে! ঘ্রাণ আবার বুঝি মুখে লেগে থাকে! ঐ আর-কী! ধুর এ অচল গপ্প বাদ, বাজারে ইলিশ-পেটির চাপে অন্য মাছ পানির দরে বিকচ্ছে।

এর থেকে বরং আমরা বাঘ-সওয়ারী করে আসি, তা মন্দ হয়-না, তা কী সাভানায়! নাকি সুন্দরী-বনে! সাভানার কি দরকার সুন্দরী-বন থাকতে। তবে গিয়েছিলাম সে-বারে, সওয়ারীর মাঝ-পথে নেমে যেতে হয়েছিল, বাঘের গায়ে পচা-মাংসের উৎকট গন্ধে হর হর করে উল্টি হয় গেল। মাঝ-পথে থেমে যাওয়ার বিড়ম্বনা সবাই বুঝতে পারে না, ভুক্ত-ভুগি ছাড়া। না ঘরকা না ঘটকা। বাহ্‌, এর মধ্যে বাঘ-টাঘ করা সারা!

কৃত্রিম/কপট রাগে গর গর করে গল্প বলে, এবার আমি ঘুমাবো। তা কে আবার নিষেধ দিল! আশপাশে ভুত-পেত্নী-ও দেখছি না। তা যদি কাল ঘুম হয় তা-ও তো সমস্যা দেখছি না! চাইলেই কী আর ঘুমানো যায়!! স্বপ্ন-স্বপ্ন স্বপ্নে এক কুচকুচে কালো ভূতনি (পেতনী/ডাইনি না) শুধু হাসে আর হাসে, শিথিল গাত্র-বসনে!!

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ