
আমার ছোটবেলাটা পুরোপুরি শহরকেন্দ্রিক ছিল। গ্রামের বাড়িতে যেতাম বছরে একবার। লঞ্চে যেতে হতো বলে পুরো একদিন লাগতো। আগেরদিন বিকেলে উঠলে পরেরদিন বিকাল হয়ে যেত পৌঁছাতে। মামার বাড়ি আগে পড়তো বলে আগে ওখানেই উঠতাম। ওখানে আমার বেশী ভালো লাগতো না । মায়ের কারণে বাধ্য হতাম ওখানে থাকতে। নিজের কোনো কাজিন ছিলোনা বলে খেলার সাথী হতো গ্রামের সমবয়সী পাড়াতো ভাইবোন, খালা মামারা। তবে শীতকালে গেলে মামার বাড়ি টা বেশী ভালো লাগতো। কেন?- কারণ একটাই শীতকালের খেজুরের রস আর কীর্তনের আসর। খেজুরের রস সেটাও পেতাম প্রতিবেশী মামার বাড়ি। মামী খুউব ভালোবাসতো । গাছিদের গাছ কেটে রস বের করার পন্থা গুলো খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতাম। বিকেলবেলা রসের হাঁড়ি বসানো, কুয়াশামাখা ভোরে রসের হাঁড়ি গাছ থেকে নামানো ইত্যাদি ইত্যাদি খুব ভালো লাগতো। আমার জন্য রস আলাদা করে রেখে দিতো, যত ইচ্ছা খেতে পারতাম। ঠান্ডার জন্য বেশী একবারে খেতে পারতাম না। তবুও এক/দেড় লিটার খেয়ে ফেলতাম। সেই মামাদের অনেক গাছ ছিল তাই রস পেত ৩০/৪০ হাঁড়ি।
সে যে কি অনুভূতি, তৃপ্তির ঢেকুর তুলতাম পেট পুরে খেয়ে। রস দিয়েই সকালের নাস্তা করতাম। সেই মামীর ছেলেমেয়েরাও আমাকে খুব পছন্দ করতো, তারা সবাই আমার এক দু’বছরের ছোট-বড় ছিল। খেলার সাথী, খাবারের সাথী, ঘোরাঘুরির সাথী সবকিছুতেই আমাকে সঙ্গী করতো। কাঁচা রসতো খেতামই , তারপর বেঁচে যাওয়া রস জ্বাল দিয়ে নরম গুড় বানাতো সেটা দিয়ে তেঁতুল মেখে খেতাম। সেটা ছিল আরো লোভনীয়। রাতেও রস চুরি করেই খেয়েছি কারণ মামী আবার ওটা পছন্দ করতো না। কিন্তু মামাতো ভাইবোন গুলো খুব ডানপিটে স্বভাবের কারণে মামীকে ভয় পেতো না। চুরি করে পায়েস রান্না করা আবার সেই উপলক্ষে সবাই চাল-ডাল,মুরগী এনে বনভোজন করাটা ছিল আরেক উৎসবের আমেজ। লুকানোর কিছু বাকী থাকতো না। গ্রামের সবাই আসতো আমাদের ছোটদের বনভোজন দেখতে, তারাও কমবেশি খাবারে ভাগ বসাতো। ক্ষেতের মধ্যে ঢুকে কলাইয়ের শাক তুলতাম, সকালের শিশির ভেজা ঘাসে পা ভিজাতাম । অন্যরকম ভালোলাগা, আকর্ষণ অনুভব করতাম। আমাকে খুব বাধা দিতো বলে লুকিয়ে লুকিয়ে বের হয়ে যেতাম সঙ্গীদের নিয়ে। রাস্তার দু’পাশ ধরে খেজুর গাছের সারি ছিল। বড় রাস্তা হবে বলে মামী সব গাছ কেটে ফেললো, বাড়ির মধ্যে দু-চারটে যা ছিল তাই দিয়েই তৃষ্ণা মেটাতে হতো। গাছ কেটে ফেলার জন্য কি যে কষ্ট পেয়েছিলাম । এখন আর বাড়িতে যাওয়া হয় না, রস ও খাওয়া হয়না। খুব খুব মিস করি সেসব দিনগুলি- আমার সোনালী দিনগুলি।
৩০টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
এখন খেজুরের রস খাওয়ায় বিপদজনক রোগের জন্য। সুন্দর সৃতিচারোন। ফিরে গেলাম পুর্বে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো
ইঞ্জা
শহরের ছেলে হিসাবে আমি হয়ত গ্রামের আনন্দটা উপভোগ করিনি, কিন্তু আব্বা বিভিন্ন জনকে বলে খেজুরের রস আনাতেন, তা দিয়ে ভাপা পিটা ডুবিয়ে, আহা হা হা কি যে স্বাদ ছিলো।
আপু অনেক পুরানো কথা মনে করিয়ে দিলেন, ধন্যবাদ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকুন শুভ কামনা রইলো
ইঞ্জা
আপনার জন্যও শুভকামনা অফুরান
সাবিনা ইয়াসমিন
শিশিরে ঢাকা কলাই ক্ষেতে বসে শাক তোলার দৃশ্যটা এখনো মনকে নষ্টালজিক করে তুলে। বছরে/ পাঁচ দশ বছরে দুয়েকবার গ্রামে যেতাম। যান্ত্রিক শহরে বসে এখনো মনে পরে সেইসব সোনালী সকালের কথা।
সুন্দর বর্ণনায় লেখাটি বেশ ভালো লাগলো।
শুভ কামনা 🌹🌹
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সত্যিই আপু আজো ভুলতে পারিনি । খুব মনে পড়ে। ধন্যবাদ আপু 💓🌹 ভালোবাসা অবিরাম
ফয়জুল মহী
…..যে দিন গেছে সেইদিন কি আর ফিরে পাওয়া যায়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
যায়না। তারচেয়ে ভয়াবহ সত্য পরবর্তী প্রজন্ম তাও পাচ্ছে না। ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো
ছাইরাছ হেলাল
আহা, ফেলা আসা সে সব দিন শুধুই ব্যথাতুর করে।
শিশিরে শিশিরে পায়ে পায়ে অহেতুক হেঁটে যাওয়া!
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হুম। ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকুন
নিতাই বাবু
আপনার ছোটবেলার স্মৃতিচারণ খুবই ভালো লেগেছে! তবে আরও ভালো লাগতো, যদি পোস্টে মামার বাড়ি আর আপনাদের গতামের বাড়ির ঠিকানা লেখা থাকতো! তারপরও আপনার লেখা পড়ে নিজের ছোটবেলার স্মৃতিতে কিছুক্ষণের জন্য ডুবে গিয়েছিলাম।
শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দিদি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ দাদা। সেইসব দিন কখনো ভোলা যায় না। সবার জীবনেই এমন কিছু কিছু স্মৃতি আছে। শুভ কামনা রইলো
সুপায়ন বড়ুয়া
ছেলেবেলার গল্প
ছিল অনেক মজার।
রস চুরীর পায়েস রান্না
ছিল ভারী মজার।
খুব ভাল লাগলো। শুভ কামনা দিদি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হুম পায়েস ও খেয়েছি, বনভোজন করেছি রস খাওয়া উপলক্ষে। লেখা হয়নি। ধন্যবাদ দাদা শুভ কামনা রইলো
আরজু মুক্তা
খেজুরের রস চুরি করে খাওয়ার আলাদা মজা ছিলো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ আপু। শুভ কামনা রইলো
রেহানা বীথি
সেসব দিন কি ভোলা যায়! নস্টালজিক করে দিলেন আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ আপু। শুভ কামনা রইলো
জিসান শা ইকরাম
ছোট বেলার দিনগুলো মনে করিয়ে দিলে ছোটদি।
কত অকৃত্রিম আনন্দঘন দিন ছিল সেসব,
এখন আর এমন দৃশ্য দেখাই যায় না। খেজুর গাছই নেই বলতে গেলে। গাছিরা তাই অন পেশায় চলে গিয়েছে।
অনেক ভাল লেগেছে পোস্ট,
শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ দাদা ভাই। সত্যিই গাছ নেই, গাছিরাও নেই। যে গাছগুলো আছে তা পড়েই থাকে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। ভালো থাকুন সবসময়
কামাল উদ্দিন
খেজুরের রস আমারও খুবই প্রিয়। ছোট বেলার এমন সব কাহিনীগুলো মনটাকে নষ্ট্যালজিক করে তোলে। কতো যে ভালোলাগার ছিল ছোট বেলার এই সময়গুলো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হুম ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকুন সবসময় শুভ কামনা রইলো
কামাল উদ্দিন
শুভ কামনা আপনার জন্যও সব সময়।
তৌহিদ
আপনি ভাগ্যবান এমন রসিয়ে রসিয়ে খেজুর রস খেতে পেরেছেন। আমাদের এদিকে খেজুর রস খুব একটা হয়না। গাছই নেই।
তবে নাটোর রাজশাহী এদিকে গেলে খাওয়া হয়। আপনার অনুভূতি পড়ে ভালো লাগলো আপু। ভালো থাকবেন সবসময়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এটা সবসময় খুব মিস করি শীত এলেই। ভালো লাগার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।আপনিও ভালো থাকবেন সবসময়।
সুরাইয়া পারভীন
স্মৃতি আমারে হৃদয়ে
বেদনার রঙে রঙে ছবি আঁকে
স্মৃতি বিজড়িত লেখা। চমৎকার প্রকাশ
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকুন
ইসিয়াক
খুব সুন্দর প্রকাশ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকুন শুভ দুপুর