ক্লান্তির পথে নদী

সৌবর্ণ বাঁধন ২২ জানুয়ারি ২০২২, শনিবার, ১০:১৭:৫৯অপরাহ্ন কবিতা ৬ মন্তব্য

হয়তো ক্লান্তির শেষে শুয়ে আছে ক্ষণজন্মা কোন বিকাল,
ঐরাবতের মতো কমলা লাল মেঘ!
পায়ের নীচে মৃদু শব্দে হেঁটে যাওয়া কিশোরী ঘাসের দল,
কচি জলে ছলাত ছলাত শব্দে ভেঙ্গে পড়া হিমবাহের আবেগ,
বিলের ঢেউয়ে শস্যক্ষেতের নুয়ে পড়া ঢল,
সেই সব মৃদু জল ছুঁয়ে দিতে আমি বুঝি দাবানলে পুড়ে,
হেঁটে যাই মানচিত্রের সীমানা ছাড়িয়ে আজো বহুদূরে!
হয়তো উত্তাপে তীব্র মাঘের শীতে থার্মোমিটারে থাকে জ্বর,
তবুও সুদূর ডাকে নিয়ে মাঠভরা মুক্তির পরিশুদ্ধ জল,
হয়তো বিবাগী বিকালের কোলে নেভাবো সমস্ত অনল!   

হয়তো ক্লান্তির শেষে অপেক্ষায় আছে নাতিশীতোষ্ণ রাত,
নরম লেপের বুকে আয়েশী শীত ঘুমায় যেমন,
ঘুমের কড়া ডোজে থেমে থাকে বহু তীব্র জলপ্রপাত!  
প্রতিটি সন্ধ্যার বুকে নেমে আসা বিশ্রামের প্রত্যয়ী আভাস,
যেভাবে জড়িয়ে ধরে মহাকাশে ভাসা বুনোপাখিদের চোখ,
গভীর স্বপ্নের কালে উঠে আসা প্রেমিক ধরে রাখে রাশ,
আমার ক্লান্তিরা তার তাঁবুর পাশে সাইবেরিয়ার গাঁড় শীতে,
মুক্ত তবু পাশাপাশি শুয়ে থাকা বন্য হরিণী হোক!
হয়তো ক্লান্তির শেষে ঘিরে নিবে কুয়াশার রহস্যময় ঝাঁক,
বলবে আয়েশী রাত- ‘আহা! ও একটু শান্তি পাক!’   

হয়তো ক্লান্তির শেষে আছে প্রাচ্যের কোন স্তব্ধ শহর,
প্রাচীন তবু কথা বলে কোটি ভ্রমরের অশ্রুত মৃদু কন্ঠস্বর!
গান গায় নিচুস্বরে পোষা ময়না বুড়ো দেয়ালের ছায়াতলে,
চুপ থাকে কোলাহল নীলপদ্মের সরোবরে বিস্মৃত বিকালে!
হালকা হাওয়ায় উড়ে যায় আঁচলের কারুকাজ,
অলিন্দে হয়তো বাজবে আমারই নুপূরের তীব্র আওয়াজ!  
এক আমি থেকে বহুজন আমি জন্ম নিব মুক্ত চাতালে,
আসল আমাকে হয়তো হারাতে চাই তাদেরই আড়ালে!
স্তব্ধ রাজপথে চুপচাপ আঁচড়াবে পালক হীরামন পাখি,
হয়তো অনন্তকাল আমি হাঁটবো রাস্তায় স্রেফ একাকী! 

হয়তো ক্লান্তির শেষে দীর্ঘ অপেক্ষায় আছে এক বনভূমি
সবুজে মিশে হৃদয়ের রঙ পালটাবে পলি মিশ্রিত জমি!
বিচিত্র অর্কিডে মিশে থাকবে মুক্তির গাঁড়তম নিঃশ্বাস,
শুষে কষ্টের রেশ আকাশে ছোঁয়াবে মাথা সব বনস্পতি, 
তাদের মূলের কাছে জাগবে বিচিত্র আলোকের আভাস!
সবটুকু ক্লান্তি নিয়ে একদিন সেইখানে বসে যাব আমি,
হয়তো বাতাস বলবে মেলানকোলিয়ার কথা ফিসফাস!
পুরাণের অমৃতভাষিণীদের মতো সব ক্লান্তি ছুড়ে ফেলে,
ক্রমশ পৃথিবীরে মূলে চলে যাব অনেকটা বৃক্ষের মতো,
লিখে দিব নোট- ‘দরকার নেই অনুগ্রহের অমৃতে!’

হয়তো ক্লান্তির শেষে অপেক্ষায় আছে হাওরের জল,
অদ্ভুত সে স্রোতে প্রায়ই নেমে আসে গ্রহ নক্ষত্রের ঢল!
টুপ করে হাঁসেদের মতো ডুব দেয় নেশাগ্রস্ত শোকে,
নিঃসঙ্গ যাত্রীরা পথ ভুলে এসে সেইসব দৃশ্যাবলী দ্যাখে,
বেদুইন রাত্রির চোখ তন্দ্রায় আচ্ছন্ন রাখে অলৌকিকে!
হয়তো ক্লান্তির চরম প্রহরে পৌঁছে যাব সেই উপত্যকায়,
মহেন্দ্রক্ষণে আমিও মিশে যাব গ্রহদের তীব্র মিলনে,
তারপর আরো বেশি ডুবে যাব হ্রদের অতল মনে,
আমিও হ্রদের মতো জল হবো! হবো এক ঘুমন্ত ঢেউ,
ঘুরবো নিজের স্রোতে! থামাতে পারবেনা আর কেউ!

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ