ক্যান্টন ফেয়ার (১ম পর্ব)

ইঞ্জা ১৩ জুলাই ২০১৮, শুক্রবার, ১০:৫৫:২৬অপরাহ্ন ভ্রমণ ২০ মন্তব্য

আমার ব্যবসায়ীক জীবনের শুরু থেকেই বিভিন্ন জনের কাছে ক্যান্টন ফেয়ার এই শব্দটি শুনতাম, কিন্তু কখনো জিজ্ঞাসা করিনি কি সেইটা, খায় নাকি মাথায় দেয়?
চায়নার সাথে ব্যবসা করতে গিয়ে আবার শুনলাম ক্যান্টন ফেয়ারের কথা, ২০১০ সালে ইস্টেফেন, আমাকে এবং আমার কোম্পানি সিইওর জন্য সরাসরি ইনভাইটেশন পাঠিয়ে দিলো, যেতেই হবে এইবার, সিইও রাজী, প্ল্যান হলো প্রথমে ক্যান্টন ফেয়ার এটেন্ড করবো, এরপর যাবো চংকিং, সেইভাবেই এয়ার টিকেট কনফার্ম করা হলো, ইস্টেফেনরা যে হোটেলে থাকবে সেই হোটেলে আমাদের জন্য রুম রিজার্ভেশন করে দিলো ইস্টেফেন।

ক্যান্টন ফেয়ার, এ এক বিশাল যজ্ঞ, সেপ্টেমবরের শেষের দিকে শুরু হয়, শেষ হয় অক্টোবরের মাঝ বরাবর, যদিও বছরের প্রায় প্রতি মাসেই ক্যান্টন ফেয়ার চলে, যা স্বল্প পরিসরে হয়, হয়ত কোন মাসে সিরামিকসের হয় তো অন্য মাসে হয় টয়লেট এসেসরিজের, কিন্তু সেপ্টেম্বর - অক্টোবর মাসে হয় বিশাল পরিসরে, এইসময় চায়নার এমন কোন পন্য নেই যা এই ফেয়ার বা মেলায় শো করতে আসেনা, এই মেলাকে কেন্দ্র করে দেশ বিদেশের প্রচুর ব্যবসায়ীরা আসে, এই ফেয়ার হয় চায়নার গুয়াংজুতে, এই সময় গুয়াংজুর সকল হোটেল, ফ্ল্যাট ভরপুর থাকে, ফলশ্রুতিতে এই সময়েই সকল হোটেল, ফ্ল্যাটের প্রতিদিনের ভাড়া থাকে তিন চার গুণ বেশি।

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে আমরা দুজন গুয়াংজুতে, মধ্যরাতের ফ্লাইট থাকায় গুয়াংজুর ভোরবেলায় পোঁছালাম আমরা, বিশাল এয়ারপোর্ট দেখে অভিভূত না হয়ে পারলামনা।
সিইও সাহেব লোকাল সিম কিনতে চাইলে আমি বাধা দিলাম, কারণ এয়ারপোর্ট থেকে না নিয়ে বাইরে থেকে বুঝে শুনে নেওয়া যাবে সময় করে।
এয়ারপোর্ট টেক্সি ক্যাব নিলাম আমাদের জন্য নির্ধারিত হোটেলের উদ্দেশ্যে, হোটেলে পোঁছে আমাদের রুম প্রবেশ করে গোসল নিয়ে ফ্রেস হয়ে শেষে নিচে আসলাম ব্রেকফার্স্ট করতে, ফ্রন্ট ডেস্কে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় ব্রেকফাস্ট করবো?
যা বললো শুনে ভিরমি খেলাম দুজনে, একি বিল্ডিংয়ের পাশেই আছে কেএফসি, সেখানেই প্রতিদিন ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা আছে যা কম্পলিমেন্টরি, হোটেলের নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে ৩য় তলায় যাতে শুধু লাঞ্চ ডিনার খাওয়া যাবে যা আবার অথেনটিক চায়নিজ খাবার, শুনে দুজনেরই মন খাট্টা হয়ে গেলো, জিজ্ঞেস করলাম, ডিএফএসকের ইস্টেফেন কি আছে রুমে, চেক করে বললো ওরা ঘন্টা দুয়েক আগে ফেয়ারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছে।

আমরা দুজন বিরসবদনে বেরুলাম, পাশের কেএফসিতে গেলাম ব্রেকফাস্ট করার জন্য, অর্ডার দিতে গেলাম, ইংরেজিতে বললাম ব্রোস্ট চিকেন দাও, কফি দাও, আমার সামনের কেএফসির মেয়েটা বললো, নি-হাউ (শরীলডা ভালা), নো ইংলিশ।
আমি হা হয়ে গেলাম, বলে কি ইংরেজি জানেনা!
আমার সিইও ব্যাটা কয়, তার ভাত হলে ভালোই হয় (ঐ শালা আবার খ্যাত কিনা)।
আমি ছবি দেখতে লাগলাম, চিকেন পেয়ে দুইটা চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, কোক, কফি নিলাম, সিইওর জন্য খুঁজে পেতে যা পেলাম, ফ্রাইড রাইস সাথে মাংস, কিসের মাংস প্লিজ জিজ্ঞেস কইরেননা, আমি আজ পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখিনি ভয়ে, যদি পর্ক (শুয়োরের মাংস) হয় তো মরছি, উনার জন্যও কফি নিলাম।
সিইও খেতে খেতে মজা মজা বলছে, এক পর্যায় জিজ্ঞেস করলো এই মাংস কিসের?
আমি অভয় দিলাম, কেএফসিতে গরুর বস মুরগীর মাংস ছাড়া আর কি থাকবে?  :p
দুজনে খেয়ে উঠলাম নিজ রুমে যেতে, ফ্রন্টডেস্কে জিজ্ঞেস করলাম, আসেপাশে ব্যাংক আছে কিনা, ফ্রন্ট ডেস্কের মেয়েটি ইংরেজি জানেনা বিধায় ডেকে দিলো হোটেলের মহিলা মালিককে, উনি এসে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলেন কোথা থেকে এসেছি?
বললাম বাংলাদেশ থেকে।
সেই বেটি বলে কিনা, মুঞ্জালা?
মুঞ্জালা কি?
বললো, তোমার দেশ মুঞ্জালা।
আমরা অবাক, বললাম আমাদের দেশের নাম মুঞ্জালা নয়, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ।
সে বললো, তোমাদের দেশকে আমরা মুঞ্জালা বলি, বুঝেছো?
হরে বইন বুঝছি, আমরা মুঞ্জালা থেকে এসেছি।  ;(

চলবে।

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ