কে সে সেফুদা?

মনির হোসেন মমি ১৭ নভেম্বর ২০২১, বুধবার, ০৯:২৬:১৩অপরাহ্ন সমসাময়িক ১৬ মন্তব্য

দেশ মার্তৃকার তরে বাঙালী জাতি ইতিহাসে অসংখ্য সাহসী স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন।বিশ্বে একমাত্র বাঙালী জাতিই ভাষা আন্দোলনের জন্য রক্ত দিয়েছিলো।সেই আমাদের মুখের ভাষা যখন হয় অশ্লীল,চরিত্রে দেশ প্রেমে হই যখন টাউট বাটপার,মুখে এক কথা-কাজে কর্মে অন্য কথা,মানবতা সততা বিশ্বাস,অতিথেয়তা,মমতাবোধ,সন্মান সব কিছুই যেন এখন আর আগের মতন বাঙালীদের মাঝে নেই।৫২’,৭১’ বাঙালীর যেমন মনমানষিকতা ছিলো তার সিকি ভাগও বর্তমানে নেই।বিশেষ করে দেশপ্রেম,দেশকে বহিঃবিশ্বে ভাল ভাবে উপস্থাপন করা এখন অনেকাংশে বলা চলে নেই।অনেকে যে দেশটি স্বাধীন হলো রক্তস্রোতের বিনিময়ে সেই দেশটিকে দেশের মানুষকে কটাক্ষ করে বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করে তার ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করতে একটুও কুন্ঠাবোধ করে না।অনেকে বলেই ফেলেন আগে পাকিস্থান আমলইতো ভালো ছিলো!আশ্চর্য হই বিস্মিত হই এরা আসলে দেশপ্রেম স্বাধীনতা কি বুঝে? কতটা ত্যাগে অর্জিত হয় স্বাধীনতা?
যাই হোক ভালমন্দ মিলিয়েই আমরা একটি স্বাধীন দেশে বসবাস করছি।দুঃখে কষ্টে নিয়মে অনিয়মে খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করছি কিন্তু যখন কিছু মানুষরূপী জানোয়ার দেশ এবং দেশের মানুষকে নিয়ে লাইভে এসে আবোল তাবল কথা বলে তখন মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।আবার আশ্চর্য হই সেই গালাগলি আবোল তাবল লাইভ অনুষ্ঠানে এই আমরাই লাইক দেই লাইভে সঙ্গ দেই।আমাদের চরিত্রের কতটা অধঃপতন হলে আমরা এমন জগন্য কাজেও প্রতিবাদতো করিনাই না বরং সহযোগীতা করছি।

ইতি মধ্যে জিরো থেকে তথাকথিত লোকের কাছে হিরো হয়ে গেছেন।বিশেষ করে অনলাইনে তার লাইভ মানে হিট।অথচ অনেকে আমরা জানিনা তার পিছনের ঘটনা বা বর্তমান তার মন মানষিকতা কোন পর্যায়ে আছে অথবা সে কী আসলেই সুস্থ জ্ঞানসম্পর্ন মানুষ নাকি অসুস্থ ব্রেনে যা মন চায় তাই করেন।তবে সে যাই হোক তার কিছু কিছু লাইভ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসী প্রতিবাদ বলা চলে তবে আবার কমনসেন্স বলে অসুস্থ ব্রেন কখনো সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না।

আসুন একটু জেনে নেই তার সম্পর্কে এবং তার পরিবার এবং অন্যেরা কে কি বলে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি লাইভে এসে নানান ধরণের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি,অসঙ্গতিপূর্ণ,ভিডিও বার্তায় এসে হাজির হন তার নাম সিফাত উল্লাহ মজুমদার ওরফে সেফুদা।তার কিছু নিক নামও আছে৴যেমন- প্রেম সম্রাট, কবি, গায়ক, সাহিত্যিক।।

বর্তমান বিশ্বে অনলাইনে ভাইরাল নামের একটি শব্দ আছে যা পেতে বা ভাইরাল হতে অনলাইন দুনিয়া কে না চায়।কখন কী ভাবে কি করে যে ভাইরাল হয়ে যাবে ঠিক এই মুহূর্তে বলা মুশকিল।তবে কেউ ভাইরাল হয় সুনামে কেউ বা দুর্নামে।আমাদের ফেবুদা অনেকটা দুর্নামে ভাইরাল।সে যদি লাইভে এসে অশ্লীল কথাবার্তা বিভিন্ন অসঙ্গতিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি না করে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে তথাকথিত বিষয় নিয়েই লাইভে আসতো তাহলে সে ছিলো পারফেক্ট প্রতিবাদী বক্তা।আবার এটাও ঠিক সে হয়তো আমাদের চরিত্রের সাথে মিল রেখে যে ভাবে লাইভে আসছে তা ভাইরাল হওয়ার জন্য উপযুক্ত নতুবা ঠিক অন্যান্য প্রতিবাদী বক্তব্যের ন্যায় তার বক্তব্যও অকেজু হয়ে আমাদের নজরে অদেখাই রয়ে যেত।

সেফুদা ১৯৪৬ খুনলার সোনাডঙ্গায় ৫ নভেম্বর জন্ম গ্রহন করেন।তবে তার পিতৃবাড়ী চাদপুর।

১৯৯০ সাল হতে অস্ট্রেলায়া ভিয়েনায় সে একাই বসবাস করছেন।সেখানকার কমিউনিটির এক অতি পরিচিত মুখ।তার গ্রামের বাড়ী চাদপুর।জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যায়ে তিনি লেখা পড়া করেন।ভিয়েনায় স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর পদে কাজ করছেন।যতটুকু জানা যায় ১৯৭৯/৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি শিক্ষকতা করেছেন।

একজন সুস্থ মানুষ কেনো এমন আচরন করে লাইভে আসেন?

কেউ বলেন ২০১০ সালে তিনি বড় ধরনের স্ট্রোক করেন।যৌবন কালে ঘারে রাখা লম্বা বাবরি চুলগুলো আবছাভাবে পড়ে যায় এবং স্ট্রোকের পর হতেই তার মাথা হঠাৎ হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং তিনি তখন উল্টাপাল্টা করে বসেন।

ভিয়েনার অতি পরিচিত প্রবাসী সাংবাদিক ফিরোজ আহমেদ হতে জানা যায়৴ ভিয়েনায় বাংলাদেশের কমিউনিটির এক পারিবারিক ঝগড়ার কারনে কোর্টে তার নামে মামলা হয় এবং কোর্টের রায়ে তার দীর্ঘদিনের জেল হয়।ভিয়েনা জেলে জেল খেটে মুক্ত হবার পর অস্ট্রিয়ার আইন অনুযায়ী তার লিগ্যাল হবার সব পথ বন্ধ হয়ে গেলে তার প্রভাব পড়ে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে।ঘর সংসার হতে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।সে মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন।অতিরিক্ত মদপানে তিনি মানষিক বিকারগ্রস্ত হয়ে লাইভে এসে আবোল তাবোল বলা শুরু করেন।

একজন মানষিক বিকারগ্রস্ত মানুষ কী ভাবে সাহিত্য রচনা কবিতা গল্প লিখেন? লাইভে এসে কী ভাবে মানুষের চরিত্র হনন করেন?শুধু তাই নয় যার সমালোচনা করে লাইভে আসেন তার বাপ দাদা চৌদ্দগোষ্টির নাম ও ইতিহাস কী ভাবে মনে আসে?প্রশ্ন আসতেই পারে তাহলে সে কী ভাবে চাকুরী করেন?

তার লাইভে আসার ধরণটাও আর সবার চেয়ে একটু অন্যরকম।সবুজ টি শার্ট আর সর্ট প্যান্ট পড়ে।সাধারনতঃ নেশা জাতীয় কোন দ্রব্য সেবন করাই নিন্দনীয় সেই নিন্দনীয় নেশা মদ পান করতে করতে লাইভে আসেন সাথে থাকে তার প্রিয় খাবার চেরিফল যা মদুতিরা খেয়ে থাকেন।আমাদের দেশে পূর্বে যখন বাংলা মদ খাওয়ার প্রচলন ছিলো তখন মদ খেয়ে মাতালেরা এ ঘর ওঘরে উকি দিতো যাকে তাকেই আবোল তাবোল বলতো এ ক্ষেত্রে সেফুদার সাথে পার্থক্য হলো আগে প্রকাশ্যে গ্রামের মানুষরা খেয়ে মাতলামী করতো আর সে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মদ খেয়ে মাতলামি করেন।তবে একথা সত্য যে মদতির সামনে কুকুর পড়লে কুকুর তার খবর কইরা ছাড়তো।আরো একটি বিষয় হলো মদুতিরা মদ খেয়ে যতই মাতাল হউক না কেনো-জাতে মাতাল তালে ঠিক’ বাড়ীর পথ কখনো হারায় না।

তার সামালোচনা হতে বাদ যায়নি বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু।সর্বশেষ এক ক্রিকেটারকে নিয়ে লাইভে আসেন।তবে সে যে অবস্থায়ই লাইভে আসুক না কেনো তার প্রতিটি লাইভ ছিলো সমসাময়িক ঘটে যাওয়া ব্যক্তি বিশেষদের যারা তার চেয়ে বদ্ধ উম্মাদ তাদের স্বরূপ উম্মোচিত করেন অত্যান্ত সাহসিকতার সহিত।

২০১৩/১৪ সাল হতে দেশে যখন মুসলিম নামধারী কিছু জঙ্গিগোষ্টি একের পর এক হত্যা করে চলছেন।কেউ যখন প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না বিশেষ করে নামধারী জঙ্গি মুসলিমদের বিরুদ্ধে তখন সে অত্যান্ত সাহসীকতায় লাইভে আসেন।লাইভে এসে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করার ঘোষনা দেন।তখন সে নাস্তিক হিসাবে আখ্যা পান অথচ তার ভাষ্য মতে সে একজন মুসলমান,নামাজ পড়েন,এবং হজ্বও করবেন বলেও বলে বেড়ান।

তার পরিবার তার প্রতি বিরক্ত এবং এসব অশ্লীল লাইভের প্রতিকার চান।তার পরিবার বলেন দীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ সে সংসার হতে বিচ্ছিন্ন।

“এবার জানা যাক তার কিছু জনপ্রিয় আবোল তাবোল কথাগুলো।

আমি তোদের মত শ্রমিক না,আমি বলিউডে অভিনয় করি ইউরোপের অনেক দেশে অভিনয় করি,থিয়েটার করি,ঐশ্বরিয়া রাই আমাকে বুকে জড়ে চুমো খেয়েছে।“

৴মদ খাবি মানুষ হবি
৴আমি প্রেম সম্রাট
৴মদ খাও আর….(অশ্লীল)
৴Love is power love is peace love is happiness love is live love is never dies!
৴অকেয়
৴আমি তিন বিষয়ে মাস্টার্স করেছি।ডক্টরেট করেছি।তোর জন্মের আগে আমি ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়াইছি।
৴আমি জাতি সর্ঘের উপদেষ্টা ছিলাম।
৴আমার শুধু একটাই দুর্বলতা কচি কচি…..
৴জয় বঙ্গ,জয় জনতা, জয় মানবতা।

ইত্যাদি আরো অসংখ্য উক্তি তার রয়েছে যা প্রায় লাইভেই বলে থাকেন।তবে তার অসংখ্য অশ্লীল বাক্যের মধ্যে কিছু ভাল বাক্যও আছে।
৴এরকম এক হাজারটা পৃথিবীর হিরাদানা সোনা আমাকে কিনতে পারবি না।

আমরাও ঠিক এমনিই চাই।তবে শালীনতায় শুদ্ধ ভাষায়।কারন তার লাইভ এখন পুরো বিশ্ববসী দেখেন।দেখেন দেশের অসংখ্য নতুন প্রজন্মের তরুন তরুনীরা।সুতরাং অশ্লীল উৎশৃঙ্খল অকথ্য ভাষা দেশের প্রতি বহি বিশ্ববাসীর খারাপ ধারনার জন্ম নেয়।

প্রতিবাদ করুন ন্যায়ের পথে অন্যায়ের বিরুদ্ধে উত্তেজিত তবে অশ্লীল ভাষায় নয় তাহলে আরো অনেকেই আপনাকে ভালো জানবে আরো বেশী ভালোবাসবে।

------------------------------------------

তথ্য ও ছবি
অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যম হতে।

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ