কৃষ্ণকলীর ঈদ

রোকসানা খন্দকার রুকু ১৪ মে ২০২১, শুক্রবার, ০৮:৩৭:৪০অপরাহ্ন গল্প ২৪ মন্তব্য

রুটিন মেনে চলা কষ্টকর, অন্তত আমি পারিনা। আমার মনে হয় মাঝামাঝে রুটিন ব্রেক হলে জীবনে টেষ্ট ফিরে আসে। এবারের রুটিন ব্রেকের জন্য  করোনাকে ধন্যবাদ কারন এবার ঈদে গাদা গাদা রান্নার চাপ নেই। মাঝে মাঝে একাকিত্বও আনন্দের তাই ইচ্ছেমতো ঘুমিয়ে উঠবার পরিকল্পনায় শুয়েছি। কিন্তু আটটা না বাজতেই মামীমা দরজা ভেঙ্গে ফেলার উপক্রম। একগাদা মিষ্টি খাবার গিলতে হবে। ঈদের দিনের মিষ্টি খাবার আমার একদম পছন্দ না। কোনমতে তাকে বিদায় করে দিলাম আবার ঘুম। কিন্তু শান্তি নেই!

বারোটার দিকে পাশের ফ্ল্যাটের সুনয়না এলো। কি রকম বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। অবশ্য সে কান্নাতেও যেন মিশ্রিত এক বন্য সৌন্দর্য।

কেঁদে কেঁদে বলছে- “আপু বলেন তো এমন করে বললে সহ্য হয়। পরশু কেনাকাটায় গিয়েছি আমার লাল- হলুদ এসব রঙ পছন্দ হয়। আতিক সবার সামনেই বলে, তোমার সাথে এসব রঙ যায় না, অন্যটা নাও। আজ সকালে হলুদ ড্রেস পড়েছি সে বলে, “ তোমার আর কোন জামা ছিলো না? এমন করে সাজলে বিকেলে বেড়াতে নিয়ে যাবো না।”

সাতসকালে উঠে ওর জন্য কতো খাবার রান্না করলাম। অথচ খেতে বসে লাচছা সেমাই দেখিয়ে বলে, “ কি সুন্দর কালার দুধে-আলতা।”

বুকের ভেতরটা খচখচ করে উঠলো তবুও হেসে বললাম, “বোকা মেয়ে হয়তো এমনি বলেছে। তুমি অযথাই সন্দেহ করছো।”

না আপু মোটেও এমনি নয়। কাল পাশের বাসার ভাবী এসেছিলো কেনাকাটা দেখাতে। অনেকক্ষন গল্প করলো। তিনি যাবার পরই শুরু হয়েছে। একবার বলেই ফেললো, “ শুনে নিও তো ভাবী কি ক্রিম মাখেন।”

আমাকে কিসে খোঁটা দেয়া যায় তার এই বাহানা। আর ঝগড়া লাগলে পেত্নী, হাঁড়ির তলা, তোর মন কালো ইত্যাদি তো বলেই। অথচ ওর একটা চোখ লক্ষী টেরা আমি তো বলি না। বরং আমার ভালোই লাগে।

শোনো মেয়ে, জামাইদের পাত্তা কম দেবে। সে যা বলবে বলুক। বরং নেগেটিভ হলে বেশি খুশি হবে এবং সাপোর্ট করবে। উল্টো প্যাচে পড়লে দেখবে ঠিক হয়ে যাবে। আর এরপর কলিগদের নিয়ে কেনাকাটায় যাবে কিংবা তাকে নিয়ে গেলেও তার কোনটা পছন্দ জানতে চাইবে না। লাচ্ছা দুধে আলতা বললে বলবে, ”ধন্যবাদ আমি ভালো রাঁধুনি।”

কথায় কথায় কাঁদবে না। ফিজিক্স এর মেয়ে এতো কাঁদো কেন? এতে ব্যাক্তিত্ব নষ্ট হয়। কথায় কথায় রাগও করবে না। তার কাছে প্রত্যাশা কমিয়ে দাও সব ঠিক হবে। তুমি তো নিজেকে চেনো? কোথাও অবমূল্যায়ন হলে তা নিয়ে দুক্খ করে লাভ হয় না। নিজের জগতে ব্যস্ত থাকো, কষ্ট হবে না।

আর তুমি অনেক সুন্দর। তোমার চোখের দিকে ঠিকমতো তাকালে পুরো পৃথিবী অন্ধ হবে, প্রেমে পড়ে যাবে। যেমন- আমি তোমার প্রেমে পড়েছি প্রথম দিনেই।

যাই হোক, একা বোধ করছিলাম। তুমি এসে ভালোই হলো চলো দুজনে খেয়ে নিই। শুটকি রান্না আছে,ডিম আর বেগুন ভাজি চলবে? খেয়ে দেয়ে বিকেলে বেড়াতে যাবো । তখন তোমার অনেকগুলো কবিতা শুনবো। তোমার জামাই খুঁজে খুঁজে হয়রান হবে। দেখা পেলে বাইক নিয়ে রিকসার পিছু পিছু ছুটবে। তুমি তবুও নামবে না।

দুধে- আলতা রংটা আমারও ভীষন পছন্দের। যেমন- আমার মা, শুধু রঙে নয়। মেধা, মনন, সৃজনশীলতা, নাক, চোখ, ফিগার সবমিলিয়ে মাশআল্লাহ।

আর পাশের বাসার ভাবী। যার একমাত্র কাজ কেনাকাটা করা, সবার বাড়ি বেড়ানো আর অন্যের সংসারে অশান্তি লাগানো। তিনিও দুধে-আলতা কিন্তু লম্বা পাঁচ ফুটের বেশি হবেন না। নাকের পাতা বেধরোক মোটা কেউ বোধহয় ভাত উঠিয়ে লাকডির জ্বাল দিয়েছিলো। নাকের মাঝখানটা ট্যাপ খেয়ে গেছে।

অত্যন্ত সুন্দরী এ মহিলার নাম ‘আকতারা বানু’ হলেও তিনি ‘বানু’ থেকে হয়েছেন ‘জানু’। আর ‘আক’ থেকে আখি,পাখি, নয়ন, মনি এসব।‘তারা’ থেকে স্টার,মুন এসব হয়েছেন। স্বামীধন নাকি আরও হাজার নামে ডাকেন তিনি গল্প করেন।

তেলবাজ স্বামী নিজে রেঁধে বউ এর নামে চালান। যেখানে সেখানে অপ্রাসঙ্গিক হলেও বউ এর প্রশংসায় ভাসিয়ে দেন। লোকজন সেটা নিয়ে বেশ হাসাহাসি করলেও বুঝতে পারেন না। ব্যাক্তিত্বহীন স্বামীধন সাজুনি বউ এর বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবি তুলে দেন। বউ সেগুলো পোষ্ট করেন ফেসবুকে। প্রথম লাইক তিনিই মারেন এবং স্টিকার কমেন্টেও ভরিয়ে দেন। ফেসবুকের বেহাল পুরুষ সমাজও  দশমিনিটে লক্ষলক্ষ লাইক মারে।

পুরো বাড়ি অগোছালো থাকে কাজের মানুষের আসা- যাবার আগে পরে। কেউ বাসায় গেলে শাড়ী গয়নাই বেশি দেখান। বাবুব বাবা ‘বাবু’ কত্তো ভালোবাসে। যেন পুরা রাজ্যই বউয়ের জন্য এনে দিয়েছে।

জানেন ভাবী, ও বলে আমাকে সব মানায়। পৃথিবী কোনদিকে যাচ্ছে কি হচ্ছে তার আগ্রহ নেই। শুধু পারলে পরামর্শ দেয় কি কি ক্রিম মাখবেন আর ফরসা হবেন। তার কিছু ব্রান্ড নাকি ঐশ্বরিয়া ব্যবহার করেন।

ও আল্লাহ, কিসের সাথেকি পান্তা ভাতে ঘি।

কবিতা, গল্পে তার অরুচি শুধু খাবারে বড্ড রুচি। তিনটে কাজের মেয়ের বদৌলতে খেয়ে খেয়ে পেটে চড়ে ঢাকা শহর পুরোই দেখা যায়। তবুও তার শাড়ির প্যাঁচ যায় না। বিশালাকার মেদভুডিটা লোকজনকে দেখাতেই যেন সুখ। তিনি বলেন, মোম সুন্দরী না হলে স্বামীরা ভালোবাসে না।

পুরুষ ও নারী শরীর নিয়েই তার অধিকাংশ গল্প। আরও পরামর্শ দেন স্বামীর সাথে সবসময় গায়ে গা লাগিয়ে চলতে হবে। সপ্তাহের প্রতিদিন ভালোবাসা- বাসী জরুরী তা না হলে সমস্যা।

ও আচ্ছা, তার মোবাইলের কথায় আসি। স্মামীধনের নাম নয় ”লাভ, জানু, জান, বাবু” এসব দিয়ে সেভ করা। কদিন পরপর সেগুলো চেন্জ করেন। কারও সামনে ফোন এলে দেখিয়ে বলেন “ও ফোন করেছে”। যেন পৃথিবী জয় করে ফেলেছেন।

আর এসবে আশেপাশের কৃষ্নকলীদের স্বামীরা বড়ই বিচলিত হন। বউদের ভালোবাসতে দ্বিধায় পড়ে যান।তাদের ঈদ নষ্ট হয়ে যায়। প্রকৃত সূখ যেহেতু শাড়ি- গয়না, টাকা, বাড়ি, গাড়ি, রঙ জৌলুসে নয়। মনকে সুখী করা জরুরী! তাই ঈদকে নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। তাই সারা বিকেল ঘুরবার প্ল্যানে তারা নদীপাড়ের উদ্দেশ্যে বেডিয়ে পরলো। বিকেলের নরম রোদ গায়ে লাগতেই মন ভালো হয়ে গেলো।

নদীপাড়ের বিশালতায় সুনয়না গান গেয়ে ওঠলো “ যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলোরে,,,,,,???

ছবি নেটের

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ