কুকুর নিধন আর আমার টম সমাচার।

সুপায়ন বড়ুয়া ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, শনিবার, ১২:৫৮:১৯অপরাহ্ন সমসাময়িক ২৬ মন্তব্য

সেদিন খবরের কাগজে চোখ পড়তেই চোখের কোণে এসে যায় এক ফোঁটা অশ্রু জল। ঢাকা নগরীর বেওয়ারীশ কুকুর গুলো নিধন করে আবেদন জানিয়ে কিছু লোক ব্যানার নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। তড়িৎকর্মা কর্পোরেশন তাদের স্থানান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছে ।আদালত কতৃক নিষেধাজ্ঞা। ক্ষীণ প্রাণ এই লোকটির মনে এলো স্বস্তি

মনে পড়ে গেল শৈশবে প্রিয় টমকে নিয়ে বাড়ির লম্বা উঠানে দৌঁড় প্রতিযোগীতা দিচ্ছি। আমি তখন ক্লাস ফোর কি ফাইভ। যে টম সবার আগে দৌঁড়ায় সে কখনো আমাকে পারে না হারাতে। সেই থেকে আমার প্রিয় টম যাকে বারবার হারানো যায়। হয়ত স্বার্থপরতার মতো শোনায়। আসছি পরের গল্পে।

একদিন স্কুলের তরুণ শিক্ষক গ্রামের শ্রদ্ধেয় ভুলা (প্রয়াত) স্যার ক্লাসে এসে বললো। আজকে তোমরা আমাকে একটু ছুটি দাও আমার ব্যক্তিগত কাজ আছে । তোমাদের একটা মজার কাজ দেব ২০ নম্বরের পরীক্ষা। তোমরা নীরবে লিখবে আমি আমার কাজটা সেরে নেব তোমাদের সামনে বসে। এক ঘন্টা পরে আমিই খাতা নেব।

এর আগে মানুষের শখ নিয়ে ১০ মিনিট কথা বললেন। বলেন তোমাদের পোষা প্রাণী নিয়ে যা খুশি লিখবে। কুকুর বিড়াল পাখিগরু ছাগল নিয়ে। সবাই মহা খুশি গরু রচনা মুখস্ত আছে লিখে ফেলবে।
আমার মাথায় দুষ্টবুদ্ধি খেল গেল। আমার শখের টমকে নিয়ে লিখব।

আমার প্রিয় টম !

আমার মন আজ খুব খারাপ, আমার প্রিয় টম আজ আমার সাথে স্কুলে আসে নি। প্রতিদিন সে আমার সাথে স্কুলে আসে।আজ অনেক বার পিছনে ফিরেও না দেখাতে মনটা খারাপ লাগছে। যার সাথে আমি প্রতিদিন বাড়ির উঠানে দৌঁড়াই। সে আমাকে কোনদিন হারাতে পারে না। অথচ তাকে কেউ হারাতে পারে না এতো ভাল দৌঁড়ায়। তাই আমি প্রতিদিন লুকিয়ে আমার রুটি খেতে দিই। আমার সাথে পুকুরে সাঁতার কাটে। বল নদীতে পড়ে গেলে নিয়ে আসে। আমি ওর সাথে মিশি বলে মা বকা দিত কারণ সে নাকি ময়লা আবর্জনা খায়। আমি কিন্তু কোনদিন খেতে দেখি নি।

সন্ধ্যা বেলা কুপি জ্বালিয়ে পড়তে বসলে ভয় পেতাম বলে সে দরজার পাশে বসে আমার দিকে তাকিয়ে থাকত আর আমি নিশ্চিন্ত মনে পড়তাম।
একদিন পুকুড় পাড়ে খেলতে গিয়ে পাশের বাবুটা পুকুরে পড়ে গেলে সে সবার আগে ঝাপ দিয়ে তুলে আনে। রাত বেশী হলে বাবাকে বাজার থেকে নিয়ে আসতো।

আমার টম রাতের মুরগী শিকারি শৃগাল আসলেই গন্ধ শুকে দৌঁড়ে তাড়াত। সাপ ইদুঁরের উৎপাত থেকে রক্ষা করতো। তাতে মুরগীর বাচ্চা রক্ষা পেত আর গোলার ধানও রক্ষা পেত।

কয়েকদিন আগে বাড়িতে চোর আসাতে আমার টমের কি চিৎকার ! পাড়ার সব কুকুর গুলো একজোট হয়ে ঘেউ ঘেউ করে চোরতাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আমার টম কে সবাই এখন খেতে দেয়। তাই আমার মনে ভয় ছিল আমার টম যদি আমাকে ভুলে যায়। কিন্তু আমার টম আমাকে খুব ভালবাসে আমার সাথেই আছে। মানুষ আমার প্রিয় টমকে কুকুর বলে তাড়াতে চাইলে আমার খুব কষ্ট হয়।

বন্ধুরা তোমরা আমার টমের জন্য আশীর্বাদ করো।
স্যার আপনি ও আমার টম স্কুলে আমাকে দেখতে আসলে রাগ করে তাড়িয়ে দেবেন না।

সুপায়ন বড়ুয়া
৪র্থ শ্রেনী।

স্যার খুশি মনে সবার খাতা নিয়ে আগামীকাল দেবে বলে বাড়িতে নিয়ে গেলেন। পরদিন আমার মন খুব খারাপ। মা বকা দেবে বলে গায়ে জ্বর নিয়ে স্কুলে গেলাম। সেই ভুলা স্যার সবাইকে অবাক করে দিয়ে এসেম্বলি শেষে বলেন, আজকে অনেক আনন্দ নিয়ে তোমাদের কাছে একটা সেরা জিনিস উপহার দিতে চাই। গতকাল তাৎক্ষণিক পরীক্ষায় সবাই গরু রচনা লিখলেন। একজন শুধু ব্যতিক্রম সে তার প্রিয় টমকে নিয়ে লিখলেন। দুই একটা বানান ভুল থাকলে ও তাকে আমি ২০ শে ২০ নাম্বারই দিলাম।আমি তাকে সবার সামনে এসে লেখাটা পড়ার জন্য ডাকছি।
সবাই যাতে তাকে অনুসরন করে।

আমি একটু অন্যমনস্কই ছিলাম। সবার হাততালিতে একজন ম্যাডাম এসে কোলে করেই সামনে নিয়ে গেলেন লেখাটা পড়ার জন্য।
পড়া শেষ করে আমি আমার কান্না থামাতে পাড়ছি না। স্যার গতকাল রাতে আমার টমকে চোরেরা মেরে ফেলেছে। যাদেরকে সে কিছুদিন আগে তাড়িয়ে দিয়েছিল। তাই সে গতকাল আর আজ আমার সাথে স্কুলে আসতে পারে নি। স্যার আপনি চোরকে আমার টমের খুনীকে শাস্তি দিবেন। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। সবাই সেদিন একযোগে কেঁদেছিল।

তাই আজকে কুকুর নিধন করার জন্য যারা উঠে পড়ে লেগেছেন। তাদেরকে বলি একটু খাবার আর আদর দেন সে বিশ্বস্ত আপন হয়ে চোর বাটপার থেকে সুরক্ষা দেবে। সে কোনদিন বেঈমানি করবে না। পরিবেশ ভাল ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখবে।
চোর বাটপার আর বেঈমানদের হাত থেকে কুকুরকে রক্ষা করুন।

ছবি বন্ধুর ওয়াল থেকে।

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ