
সেদিন খবরের কাগজে চোখ পড়তেই চোখের কোণে এসে যায় এক ফোঁটা অশ্রু জল। ঢাকা নগরীর বেওয়ারীশ কুকুর গুলো নিধন করে আবেদন জানিয়ে কিছু লোক ব্যানার নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। তড়িৎকর্মা কর্পোরেশন তাদের স্থানান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছে ।আদালত কতৃক নিষেধাজ্ঞা। ক্ষীণ প্রাণ এই লোকটির মনে এলো স্বস্তি
মনে পড়ে গেল শৈশবে প্রিয় টমকে নিয়ে বাড়ির লম্বা উঠানে দৌঁড় প্রতিযোগীতা দিচ্ছি। আমি তখন ক্লাস ফোর কি ফাইভ। যে টম সবার আগে দৌঁড়ায় সে কখনো আমাকে পারে না হারাতে। সেই থেকে আমার প্রিয় টম যাকে বারবার হারানো যায়। হয়ত স্বার্থপরতার মতো শোনায়। আসছি পরের গল্পে।
একদিন স্কুলের তরুণ শিক্ষক গ্রামের শ্রদ্ধেয় ভুলা (প্রয়াত) স্যার ক্লাসে এসে বললো। আজকে তোমরা আমাকে একটু ছুটি দাও আমার ব্যক্তিগত কাজ আছে । তোমাদের একটা মজার কাজ দেব ২০ নম্বরের পরীক্ষা। তোমরা নীরবে লিখবে আমি আমার কাজটা সেরে নেব তোমাদের সামনে বসে। এক ঘন্টা পরে আমিই খাতা নেব।
এর আগে মানুষের শখ নিয়ে ১০ মিনিট কথা বললেন। বলেন তোমাদের পোষা প্রাণী নিয়ে যা খুশি লিখবে। কুকুর বিড়াল পাখিগরু ছাগল নিয়ে। সবাই মহা খুশি গরু রচনা মুখস্ত আছে লিখে ফেলবে।
আমার মাথায় দুষ্টবুদ্ধি খেল গেল। আমার শখের টমকে নিয়ে লিখব।
আমার প্রিয় টম !
আমার মন আজ খুব খারাপ, আমার প্রিয় টম আজ আমার সাথে স্কুলে আসে নি। প্রতিদিন সে আমার সাথে স্কুলে আসে।আজ অনেক বার পিছনে ফিরেও না দেখাতে মনটা খারাপ লাগছে। যার সাথে আমি প্রতিদিন বাড়ির উঠানে দৌঁড়াই। সে আমাকে কোনদিন হারাতে পারে না। অথচ তাকে কেউ হারাতে পারে না এতো ভাল দৌঁড়ায়। তাই আমি প্রতিদিন লুকিয়ে আমার রুটি খেতে দিই। আমার সাথে পুকুরে সাঁতার কাটে। বল নদীতে পড়ে গেলে নিয়ে আসে। আমি ওর সাথে মিশি বলে মা বকা দিত কারণ সে নাকি ময়লা আবর্জনা খায়। আমি কিন্তু কোনদিন খেতে দেখি নি।
সন্ধ্যা বেলা কুপি জ্বালিয়ে পড়তে বসলে ভয় পেতাম বলে সে দরজার পাশে বসে আমার দিকে তাকিয়ে থাকত আর আমি নিশ্চিন্ত মনে পড়তাম।
একদিন পুকুড় পাড়ে খেলতে গিয়ে পাশের বাবুটা পুকুরে পড়ে গেলে সে সবার আগে ঝাপ দিয়ে তুলে আনে। রাত বেশী হলে বাবাকে বাজার থেকে নিয়ে আসতো।
আমার টম রাতের মুরগী শিকারি শৃগাল আসলেই গন্ধ শুকে দৌঁড়ে তাড়াত। সাপ ইদুঁরের উৎপাত থেকে রক্ষা করতো। তাতে মুরগীর বাচ্চা রক্ষা পেত আর গোলার ধানও রক্ষা পেত।
কয়েকদিন আগে বাড়িতে চোর আসাতে আমার টমের কি চিৎকার ! পাড়ার সব কুকুর গুলো একজোট হয়ে ঘেউ ঘেউ করে চোরতাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আমার টম কে সবাই এখন খেতে দেয়। তাই আমার মনে ভয় ছিল আমার টম যদি আমাকে ভুলে যায়। কিন্তু আমার টম আমাকে খুব ভালবাসে আমার সাথেই আছে। মানুষ আমার প্রিয় টমকে কুকুর বলে তাড়াতে চাইলে আমার খুব কষ্ট হয়।
বন্ধুরা তোমরা আমার টমের জন্য আশীর্বাদ করো।
স্যার আপনি ও আমার টম স্কুলে আমাকে দেখতে আসলে রাগ করে তাড়িয়ে দেবেন না।
সুপায়ন বড়ুয়া
৪র্থ শ্রেনী।
স্যার খুশি মনে সবার খাতা নিয়ে আগামীকাল দেবে বলে বাড়িতে নিয়ে গেলেন। পরদিন আমার মন খুব খারাপ। মা বকা দেবে বলে গায়ে জ্বর নিয়ে স্কুলে গেলাম। সেই ভুলা স্যার সবাইকে অবাক করে দিয়ে এসেম্বলি শেষে বলেন, আজকে অনেক আনন্দ নিয়ে তোমাদের কাছে একটা সেরা জিনিস উপহার দিতে চাই। গতকাল তাৎক্ষণিক পরীক্ষায় সবাই গরু রচনা লিখলেন। একজন শুধু ব্যতিক্রম সে তার প্রিয় টমকে নিয়ে লিখলেন। দুই একটা বানান ভুল থাকলে ও তাকে আমি ২০ শে ২০ নাম্বারই দিলাম।আমি তাকে সবার সামনে এসে লেখাটা পড়ার জন্য ডাকছি।
সবাই যাতে তাকে অনুসরন করে।
আমি একটু অন্যমনস্কই ছিলাম। সবার হাততালিতে একজন ম্যাডাম এসে কোলে করেই সামনে নিয়ে গেলেন লেখাটা পড়ার জন্য।
পড়া শেষ করে আমি আমার কান্না থামাতে পাড়ছি না। স্যার গতকাল রাতে আমার টমকে চোরেরা মেরে ফেলেছে। যাদেরকে সে কিছুদিন আগে তাড়িয়ে দিয়েছিল। তাই সে গতকাল আর আজ আমার সাথে স্কুলে আসতে পারে নি। স্যার আপনি চোরকে আমার টমের খুনীকে শাস্তি দিবেন। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম। সবাই সেদিন একযোগে কেঁদেছিল।
তাই আজকে কুকুর নিধন করার জন্য যারা উঠে পড়ে লেগেছেন। তাদেরকে বলি একটু খাবার আর আদর দেন সে বিশ্বস্ত আপন হয়ে চোর বাটপার থেকে সুরক্ষা দেবে। সে কোনদিন বেঈমানি করবে না। পরিবেশ ভাল ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখবে।
চোর বাটপার আর বেঈমানদের হাত থেকে কুকুরকে রক্ষা করুন।
ছবি বন্ধুর ওয়াল থেকে।
২৬টি মন্তব্য
শামীম চৌধুরী
বাড়িতে পোষা কুকুর থাকলে সে অতন্দ্র প্রহরীর মতন কাজ করে। প্রভু ভক্ত এই প্রাণীটি তার জীবন বাজি রেখে বাহিরের শত্রুদের হাত থেকে তার প্রভুকে রক্ষা করতে নিজের জীবন বলিদানে কুন্ঠবোধ করে না।
চোরেরা যদি চুরি করতে বেগ পায় তবে তারা অভিনব পন্থা কুকুরকে মেরে তাদের অপকর্ম হাসিল করতে দ্বিধাবোধ করে না। এই রূপী মানুষগুলি পশুর চেয়েও অধম।
ভালো লাগলো কবি।
সুপায়ন বড়ুয়া
মন্তব্যে প্রথম হওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনি আমার অনুভুতিটা আমার ছেয়ে ভাল ভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন। কুকুর হলো রাতের অত্যন্দ্র প্রহরী। যাদের জন্য দুষ্কৃতিকারীরা অপকর্ম করতে ভয় পায়।
তাই আগে কুকুর মারে কোন অপরাধ করার আগে।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
তৌহিদ
আপনার লেখা পড়ে আমার প্রিয় টাইগারের কথা মনে পড়ে গেলো। তাকেও কে বা কারা যেন হত্যা করেছিলো দাদা।
গৃহপালিত কুকুর এক জিনিস আর রাস্তার অগনিত কুকুর যারা বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী তারা আরেক জিনিস। পৃথিবীর অনেক দেশের উদ্বৃত্ত কুকুর মেরে ফেলা হয়। অনেক কুকুর জটলা করে একজন পথচারীকে হেনস্তা করে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
আবার গণহার কুকুর হত্যাও কাম্য নয়। এতে পরিবেশের উপরে বিরুপ প্রভাব আসতে পারে। ক্লাস ফোরেই এমন আবেগী লেখা লিখেছিলেন! আসলে পশুপ্রেম জন্ম থেকেই আমাদের অন্তরে।
শুভকামনা রইলো দাদা।
সুপায়ন বড়ুয়া
সত্য ঘটনাই তুলে ধরলাম ভাই।
হয়তো গুছানো ছিল না। শ্রদ্ধেয় ভুলা স্যার অল্প কয়েক বছর পরে মারা ও গেলেন।
আজও রহে গেছে স্মৃতির অগোচরে।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
আলমগীর সরকার লিটন
আমরা কথায় গিয়ে দাঁড়ায়েছি একবার চিন্তা করি না আমাদের মানবতা হারিয়ে যাচ্ছে
সুপায়ন বড়ুয়া
ঠিক তাই প্রভু ভক্ত কুকুর একটু খাবার আর আদর দিলেই হয়। মেরে ফেলা সমাধান নয়।
বিকল্প পথ বের করা দরকার। ভ্যকসিন আর জন্মনিয়ন্ত্রন করা যেতে পারে।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
ফয়জুল মহী
অসামান্য ও অতুলীয় লেখনী । সুখময় হোক বিচরণ ।
সুপায়ন বড়ুয়া
ধন্যবাদ ভাইজান। ভাল লাগলো জেনে।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
আসলে যে বা যারা পশু বা পাখি পোষেনি তারা এর মায়া-মমতা বুঝতে অপারগ।
একবার আমাদের বিড়াল হারালে মেয়ে কেঁদেকেটে অস্থির হয়ে পড়েছিল।
আপনার লেখা পড়ে অনেক আনন্দ-বেদনার কথা মনে পড়ে গেল।
সুপায়ন বড়ুয়া
ঠিক বলেছেন ভাইজান।
হঠাৎ করে আমার হারানো টমের কথা মনে পড়ে গেল। চুরি করতে দিতো না বলেই তাকেই হত্যা করল। এরকম সমাজে আজ অনেক চোর মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছে।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
হালিম নজরুল
আপনার টম আমার “কালু”র কথা মনে করিয়ে দিল।
চমৎকার লিখেছেন দাদা। তবে খুব তাড়াহুড়ো করে লিখেছেন বলে মনে হল।
সুপায়ন বড়ুয়া
ঠিক ধরেছেন ভাইজান।
মোবাইলে টাইপ করা আবার শৈশবে স্মৃতিচারণ করা।
আবার লেখা আপলোড করতে সমস্যা।
আবার এসব লেখাতে অভ্যস্ত না হওয়া।
আর বানান ভুলতো আছেই।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
সুপায়ন বড়ুয়া
আবার দেখলাম ভাইজান। আপলোড করার করে কিছু শব্দ জোড়া লেগে গেছে। ঠিক হলো কিনা দেখেন ভাইজান। ধন্যবাদ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কষ্ট পেলাম। আমার লালুকে এমনি করে কারা যেন বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছিল।ভাবছি আমিও লিখে ফেলব।
শুভ কামনা দাদা।
সুপায়ন বড়ুয়া
স্বাগত জানাচ্ছি আপু লিখেন।
এক শ্রেনীর চোর চ্যাচরা লোক সমাজে প্রথমে কুকুরকে টার্গেট করে। কারণ বিশ্বস্ত কুকুর অন্যায় সহ্য করে না। তাই তাদেরকে মারার জন্য তৈরী থাকে।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
আমাদের টমিকেও মেরে ফেলেছিলো। যারা পশুপাখি পোষে না, তারা এর মর্ম বুঝবে না। এরা একটু ভালোবাসা পেলে তিনগুণ ফেরায় দেয়।
মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
সুপায়ন বড়ুয়া
ঠিক বলেছেন আপু।
কুকুর একটু আদর আর খাবার পেলেই
ওরা বিশ্বস্ত হয়ে উঠে।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
খাদিজাতুল কুবরা
আমাদের গ্রামের বাড়িতে সবসময় একটি কুকুর একটি বিড়াল পোষা হতো। বাড়ির সবাই ওদেরকে খুব ভালোবাসতো,যত্ন নিতো।
তাই দাদা আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি।
ওদেরকে কে আদর ভালোবাসা দেবে!
এদেশে রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষেরই কদর নেই।
সুপায়ন বড়ুয়া
ঠিক বলেছেন আপু। মানুষেরই কদর নেই।
মানুষ মানুষকে বিশ্বাষ করতে পারে না।
একটু সুযোগ পেলে মাথায় উঠে।
কাউকে বিপদে সাহায্য করবেন আপনাকে পেয়ে বসবে।
কিন্তু কুকুর মনিবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে না।
মানুষের সাথে কুকুরের তুলনা করাটাও পাপ।
কুকুর একটু যত্ন পেলে কুকুর মনিবের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
কুকুর অতন্দ্র প্রহরী। মানুষের চেয়ে কুকুর অনেক ভালো।তবে রাস্তার কুকুর গুলো ভয়াবহ, খুব ভয় লাগে। আপনার লেখাটি পড়ে আমার ও কান্না পেল। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন শুভ কামনা রইলো
সুপায়ন বড়ুয়া
ধন্যবাদ দিদি।
কুকুর মনিবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে না।
মানুষের সাথে কুকুরের তুলনা করাটাও পাপ।
রাস্তার কুকুর একটু যত্ন পেলে মানুষের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে। চোর চ্যচরের প্রতি ভয়ন্কর হয়।
বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না। ৩ বছর আগে রাত দুপুরে বাস থেকে নামার পরে রাস্তার কুকুর বাসা পর্যন্ত নিয়ে আসছে। কুকুর নিধন সমাধান নয়। ভ্যাকসিন আর জন্মনিয়ন্ত্রন সমাধান হতে পারে।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
ইঞ্জা
আপনার লেখা পড়ে আমি নিজেকে হারালাম স্মৃতির অতলে, আমারও ছিলো এক পোষা কুকুর, নাম মায়া, তাকে নিয়ে লিখেও ছিলাম ব্লগে, আসলে নিজের প্রিয় টমকে হারিয়ে যে কষ্ট আপনি পেয়েছিলেন, সেই কষ্ট আমি বুঝি দাদা।
সুপায়ন বড়ুয়া
ধন্যবাদ ভাইজান।
টমকে হারিয়ে আবেগের বসবতি হয়ে শৈশবে
আবিস্কার করেছিলাম অন্য রকমে।
শিক্ষকের প্রিয় পাত্রে।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
ইঞ্জা
খুবই সুন্দর অনুভব দাদা
সুরাইয়া পারভীন
একজন মানুষ বন্ধুর চেয়ে একজন কুকুর বন্ধু অনেক ভালো। মানুষ বৈমানি করে কিন্তু কুকুর সেটা কখনোই করে না। খুব খারাপ লাগলো দাদা লেখাটা পড়ে।
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
সুপায়ন বড়ুয়া
ধন্যবাদ আপু।
মানুষের সাথে কোন কিছুর তুলনা না করে বলি
একটা বিশ্বস্ত কুকুর কখনো বেঈমানি করবে না
জীবন দিয়ে মনিবকে রক্ষা করবে।
ওদের একটু খাবার আর আদর দিলেই হয়।
ভাল মন্দ মানুষ গন্ধ শুখে বলতে পারে।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।