“কাজের মেয়ে”–পর্ব১

জি.মাওলা ৭ অক্টোবর ২০১৩, সোমবার, ০৩:০৫:০৫অপরাহ্ন এদেশ ৮ মন্তব্য

“কাজের মেয়ে”--পর্ব১

কাজের মেয়ে বলতেই চোখে ভেসে উঠে গ্রামের দরিদ্র পীড়িত পাতলা খেতে না পাওয়া হাড়জিরজিরে একটি মেয়ে। গ্রামের দরিদ্র মা-বাবারা অনেক অনিচ্ছুক হয়ে বা একটু আর্থিক প্রলোভনে পড়ে বা মেয়েকে একটু ভাল রাখার জন্য নিজেদের আদরের ধন মেয়েকে ধনী শহুরে কোন পরিবারে কাজ করতে পাঠান।৫-১৩ বছরের এই মেয়েগুলি ধনী ঐ শহুরে পরিবারে গিয়ে নিজেদের পরিশ্রম দিয়ে গৃহ কর্ত্রীর মন যুগিয়ে চলার নিরন্তন চেষ্টা করে চলে। সেই সকাল ৬টা হতে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে এদের নিরন্তন পরিশ্রম। পান হতে চুন খসলে গালি ও মারধর যেন একটি কমন সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে আজ আমাদের শিক্ষিত মহিলা সমাজে। এই সামাজিক ব্যাধিতে আক্রান্ত আমাদের কম বেশি মা-বোনরা। শাশুড়ি-বৌ এর চিরন্তন ঝগড়ার আর একটা চিরন্তন কমেডি যেন এই গৃহ কর্ত্রী কর্তৃক কাজের মেয়েকে নির্যাতন। এই কমেডি যেন ঘরে ঘরে প্রতিনিয়ত নতুন মাত্রায় নির্মিত হচ্ছে।
এই যারা কাজের মেয়ে আনেন বা নেন এই সব মহিলারা কি একটু চিন্তা করে না একটুকুন একটা মেয়ে বাবা-মা ছেড়ে বিনা ওজরে ওকে সাহায্য করতে ওদের সাথে শহরে এসে বসবাস করছে, এটি ভাবলেই তো ঐ টুকুন একটা বাচ্চা মেয়ের উপর কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত।
আমার এই এত বয়স তাও মা-বাবা আর বাড়ির জন্য মন আইডাই করে। আর ঐ বাচ্চা মেয়ের মানসিক অবস্থা চিন্তা করুন। বাবা-মা ওর প্রিয় গ্রাম ছেড়ে একটু ভাল থাকার আশায় সব ছেড়ে আপনার সঙ্গে শহরে এসেছে অনিচ্ছায়, যে কিছুদিন আগেও গ্রামের মাঠ ঘাটে হৈ-হুল্লু করে খেলত বা বন্ধুদের সঙ্গে প্রাইমারি স্কুলে যেত। সে কি না আজ বন্দি জেলখানার মত শহরে (ঢাকা সহ অন্য শহরে) এসেছে তোমাকে সাহায্য করতে।
>> লেখাপড়া বা শিক্ষা বাদ দিয়ে ও আসছে তোমাকে সাহায্য করতে। তারমানে লেখাপড়া বা শিক্ষা তার একটি মৌলিক চাহিদা। যা আমাদের মহান সংবিধানে ৪ টি মৌলিক চাহিদার মধ্যে একটি। যা সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে অনুচ্ছেদ-১৫ তে মৌলিক চাহিদা এবং অনুচ্ছেদ- ১৭ তে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত।
>>সকাল ৬ টা হতে রাত ১০ টা পর্যন্ত ঐ পিচ্চি মেয়েটাকে খাটাও। যেখানে আন্তর্জাতিক লেবার-ল বলেছে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবেনা। আবার দেশের আইনে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ। আর তুমি এভাবে প্রতিনিয়ত আইন ভাঙছ।
নিজে দুপুরে খেয়ে ভারতের জি......... স্টার ...... টিভির পচা সিরিয়াল দেখতা দেখতে ভাত ঘুম দাও। আর কাজের মেয়েকে লাগিয়ে দাও পা হাত টিপতে। আরামে যাও ঘুমিয়ে। টিপনিতে একটু বিরতি হলেই ঠিক টের পাও। লাগাও দু একটা চড় থাপ্পড় বা ছোঁটাও গালের ফুয়ারি। কি একটু খারাপ লাগেনা না? একটু কি চক্ষু লজ্জা নেই তোমাদের ঐ টুকুন বাচ্চাকে খাটাও সারাদিন।

ওমা এটি ভাবলেই তো তোমার কৃতজ্ঞ হবার বদলে তুমি শালি( আমার হবু বউ এর বোনরা, মুখ বেশ খারাপ করতে পারলাম না, যদিও চাচ্ছিল) তার সঙ্গে কর খারাপ ব্যবহার।
তোমাদের কি একটু মনে থকেনে দেশের আইনের কথা, একটু কি ভয় কাজ করে না ধর্মীয় আইনের কথা। তোমরা কেমন করে পার ঐ টুকুন একটা বাচ্চা মেয়েকে মারতে বা বকতে।
ওকে একটা গ্লাস ভেঙ্গেছে, ঐটা যদি তোমার ঐ রকম বয়সের মেয়ে বা ছেলে ভাঙত তাকে তুমি ঐরকম ভাবে বকতে বা মারতে?
১০০% না । ভেঙ্গেছে, কয়-টাকা দাম ঐটির। একটু ভাব ভাব.........।
@@একটা ঘটনা না বললেই নয়: আমি তখন রাজশাহীতে(২-৩ বছর আগে) থাকি তখন পাশের ফ্লাটের আন্টির কাজের মেয়েকে সবসময় বকা ঝকা করত মাঝে মাঝে মারও চলত। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টা চোখে লাগত সেটি হল: কোথাও যাবার সময় দেখতাম আন্টি ও তার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে বসেছে রিক্সায় আর কাজের মেয়েকে বসিয়েছে পায়ের কাছে( রিক্সায় যেখানে আমরা পা রাখি) । পিচ্চি মেয়েটা হাসিমুখে ওখানে বসে রিকশাওয়ালার ছিটের পিছনের রড ধরে বসে। অথচ খুব সহজে ওকে বসানো যেত ছিটের ওপরে( আমরা ৩-৪ জন যেমন ওপর নিচ হয়ে বসি।) এই ঘটনা রাজশাহীতে বেশ দেখতাম।
এদের কি শিক্ষিত বলবেন, না মানুষ বলবেন? অনেকবার প্রতিবাদ করতে ছেয়েছি কিন্তু সাহস হয়নি। ঐ ঘটনা মনে হলে এখনো মন খারাপ হয়।
@@ আরেকটা ঘটনা না বললেই নয়: এক অফিসের বড় বাবু তার পিয়নের সঙ্গে খুব বাজে ব্যবহার করে। তো এই নিয়ে পিওন বেচারা খুব নাখোশ। তো সে তো আর বড় বাবুকে কিছু বলতে পারে না। তাই সে প্রতিশোধ নিত অন্য ভাবে। বেচারা করত কি জানেন। বড় বাবুর চা বানিয়ে তাতে দিত নিজের থুতু। (ওয়াক থু) আর পরিষ্কার পানিতে মিশিয়ে দিত কলের পানি।

তো নিজে তো কিছু কর না। চাটাও করতে বল কাজের মেয়েকে।ওর যদি তোমার প্রতি রাগ থাকে, আল্লাহ মালুম এমন কত কিছু তুমি খাবে। (ওয়াক থু)

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ