এখনো নদীটা কাঁদে, পোড়া জল ছুঁয়ে হাঁটে পুন্ড্রের- ভাস্কর্যে মোড়া হস্তী! কতো বিচিত্র শ্লোগানের পরিশেষ দেখে নিয়েছে নারী, শহরের নাগরিক পদ্মের সরোবর- টেরাকোটার প্রেমের বিসর্জিত মূর্তিতে ভর্তি! তবুও ভালোবাসা মরে গেলে গবাক্ষের আর্দ্র বাতাসে- বাঁচেনা তেমন কিছুই! মেয়ে তুমিতো তা জানোই! এই শহর এখন পদানত, উপকণ্ঠের মৃত নদীটার মতো! তুমিতো তা জানোই! এখনো এই শহর ভাসে; সোনালী শাড়ির পাড়ের মতো- ঘাসে ছোঁয়া রাস্তায়, কফির ধোঁয়ার সাথে বৃষ্টির ঝলমলে- জল লুটোপুটি খায়! ভাবছি একদিন ব্যস্ততা ছুড়ে, ছিঁড়ে ফেলে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার শাসন, তোমার সাথেই হাঁটবো না হয়! সকাল ও রাত! একদিন দুজনে ছুঁয়ে দিব আনমনে গভীরতম পাগলাটে- বর্ষণে, এই শহরের চিত্রকল্পময় হাত! তার তীব্রতম কান্নার ধারায়, নিরাসক্ত ছাতাটাকে উড়িয়ে- ফানুসের মতো, কাঁদবো কিছুক্ষণ! জানি নির্বাণ পাবেনা এখন আর কেঊ! অবদমনের ঘরে, শোনা যাচ্ছে বুভুক্ষু সরীসৃপের ফোঁসফাঁস, তবুও নদীটা কাঁদলে, শহরটা কাঁদলে আমারো কান্না পায় খুব, একদিন ভিজবই! একদিন আকাশী জলেই দিব ডুব! বৃদ্ধ আকাশ নেমে পায়ের পাতা দুটো ভিজিয়ে নিয়েছে, এলোচুলে একাকিনী তুমি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো- বিকাল বিলাসে মত্ত! কোন ছাদে আজ সুমেরুর ছোঁয়া লাগল অজান্তে, এখনো জলেরা কাঁদে, মাঝে মাঝে শুনো নাকি কলকল? নিহত অরণ্য ডাকে বিলুপ্ত বনসাইয়ের তীক্ষ ফাঁকে ফাঁকে, চোরাগলিগুলোর বাঁকে বাঁকে! ওইখানে ফোঁটা ফোঁটা- সঞ্চিত প্রেম ফুটে আছে! জানালায় ল্যাম্পপোস্টে- পুঁথি-পালার রাতজাগা নায়িকার মতো- তোমার চোখের কোণে, রহস্য আছে, অস্পষ্টতা আছে! কাছে এসে বারবার দূরে চলে যাও, অনেকটা কুয়াশার মতো ভিজিয়েও ভিজাও নাতো! কদমের কলি হাতে শ্যামাঙ্গ যুবক দাঁড়িয়ে রয়েছে একা, চারপাশে দ্রবীভূত মিথেনের সঞ্চিত আগুনের গোলা! সে চলে গেলে ফিরবেনা, ভালোবেসে যদি ডাক ঝুলন্ত বাগানে তবুও সে চলে যাবে, এই শহর জানে, তুমিও জানো সে ফিরবেনা আর! এই শহর-বন্দর এখনো নদীর মতো, বিকালের আলোয় ক্লান্ত বিরহে টুপ টুপ করে গলে পড়ে- মৃত বুড়িগঙ্গায়! আলোর মিছিলে স্রোত আর রক্তের মাখামাখি, প্রতিটি গলিতে সূর্য্য ডোবে! প্রতিটি বাসায় দেয় উঁকি- বুড়িমার চাঁদ! বিচিত্র থালায় সাজিয়ে রেখেছে সব! সবই আছে এই নগরের ডিনারে; তবুও কি যেনো নেই! আকাশের মতো নীল প্রেম খেয়ে নেয় শঙ্খিনী সাপ, এই শহরে পাতা আছে সুনিপুণ সজারূ ধরার ফাঁদ! মেয়ে সেইসব চোরা জলে, তুমিও তো ভেসে যাও মাঝে মাঝে! আবার ফোয়ারার মতো- ভেসে উঠো! আমিও হাভানা চুরুটের মতো পুড়ে এশট্রেতে ঢুকে যাই! তবুও আজো আনমনে হেঁটে যেতে যেতে ইতিউতি খুঁজি, ঘঁষামাজা কাগজের মাঝে, তোমার হৃদয়ের পোস্টার! ছোট পদক্ষেপে সাথে হেঁটে যায় যক্ষাক্রান্ত রুগীর মতো- ক্ষয়ে যাওয়া রাস্তার পিচ এবং অশ্রুত নাগরিক ধিক্কার! জানি কাঁচের জানালায় প্রতিচ্ছবির মতো এখনো আছ তুমি, আমি পালাতে পারিনা আজো! আমি উড়তে পারিনা আজো! অথচ নির্বোধ মঞ্চের জোকারটা বারবার দিচ্ছে ঘোষণা, এসো আজ যেমন খুশি তেমনটা সাজো!
২০টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনার কবিতায় কি মন্তব্য করবো বুঝিনা! শুধু বলে যাই আপনার লেখনী অসাধারণ, অনবদ্য। এতো উচ্চস্তরের লেখা সত্যিই মুগ্ধতা ছাড়া আর কিছুই দেবার নেই। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
সৌবর্ণ বাঁধন
দিদি আপনাকে ধন্যবাদ ও শুভকামনা!
রেজওয়ানা কবির
ভাষাগুলো সুন্দর ও কঠিন।
সৌবর্ণ বাঁধন
ধন্যবাদ অনেক।
বন্যা লিপি
কোনো কোনো লেখার ময়না তদন্ত করা যায়না, দৃশ্যকল্পে চিত্রায়িত হতে থাকে কল্প গল্প! সেটাই লেখকের মুন্সিয়ানার পরিচয়। পুরো লেখায় প্রকৃতির অবলুপ্ততার কাহিনী বর্ননা নিপূনতার স্বাক্ষর!
আপনার নামের মতই আপনার লেখাও সৌবর্ণ।
শুভ কামনা।
সৌবর্ণ বাঁধন
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
ফয়জুল মহী
মুগ্ধকর কথামালায় প্রতিশ্রুতিশীল লেখা ।
সৌবর্ণ বাঁধন
অশেষ ধন্যবাদ।
উর্বশী
অনেক বড় কবিতা। ৪০ লাইন লিখলে ১০০ লাইনে টাচ করা হতো। মা শা আল্লাহ। অনেক সুন্দর সাবলীল উল্লেখযোগ্য ভাবে লেখার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন।দুইবার পড়েছি।
চমৎকার লিখেন আপনি। অফুরান শুভ কামনা।
সৌবর্ণ বাঁধন
আপনিও ওনেক সুন্দর লিখেন। শুভকামনা নিরন্তর।
তৌহিদ
নাগরিক জীবনের প্রেম কাব্য কবিতায় ফুটে ঊঠেছে। চমৎকার লিখেছেন। প্রেমিকের এমন আকুল আহবানে সাড়া না দেয়া প্রেমিকারা নিশ্চিত কঠিন হৃদয়ের অধিকারী।
ভালো থাকুন সবসময়।
সৌবর্ণ বাঁধন
প্রেমিক বা প্রেমিকা অথবা প্রেম সবই বদলায় রূপ! অনেক ধন্যবাদ।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভালো লাগলো বরাবরের মতো। কিছু কিছু লেখা পড়তে ভালো লাগে, কিন্তু প্রতিক্রিয়া জানাতে অক্ষম।
আপনার লেখা গুলো তেমনই।
** সে চলে গেলে ফিরবেনা,
ভালোবেসে যদি ডাক ঝুলন্ত বাগানে তবুও সে চলে যাবে,
এই শহর জানে, তুমিও জানো সে ফিরবেনা আর! **
★ লেখার অক্ষর গুলো খুব ছোট, আরেকটু বড় করে লিখলে পড়তে সুবিধে হয়।
শুভ কামনা 🌹🌹
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক ধন্যবাদ এতো মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য। ফ্রন্টের সমস্যার ব্যাপারে অবশ্যই খেয়াল রাখব।
আলমগীর সরকার লিটন
বেশ অনুভূতির ছোঁয়া কবি দা
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক ধন্যবাদ ভাই।
আরজু মুক্তা
কার্ভ লিখা আমি পড়তে পারিনা।
চোখ ব্যথা করে
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক ধন্যবাদ। সোজা করে দিয়েছি।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
অনেক সুন্দর।।
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক ধন্যবাদ!