যেদিন পৃথিবীতে প্রথম নিজের সর্বশক্তি দিয়ে সূর্যালোক সুধা পান করেছিলাম সেদিন নাকি আমি এতটুকুও কাঁদিনি। পিঠে কত চাপড় পড়েছে, নরম তুলতুলে দেহ আঘাতে জর্জরিত হয়ে নীল বেগুনি বর্ণ ধারণ করেছিল তবুও আমি কাঁদিনি। আমাকে কাঁদানোর জন্য সকলের সে প্রাণান্ত চেষ্টাকে বিফল করে আমি ড্যাব ড্যাব করে চেয়েছিলাম আর নিঃশব্দে মিটিমিটি হেসেছিলাম।
আমার চিন্তারেখায় মাঝেমধ্যেই ছেদ পড়ে, অস্পষ্ট খাপছাড়া এসব স্মৃতি নিজের মানসপটে ভেসে ওঠে। বহু যুগ আগে মহাকাশে নক্ষত্ররাজির ঠোকাঠুকিতে যে প্রলয় ঘটেছিল সেই বিস্ফোরণে আমি ছিটকে এসে পড়েছিলাম পৃথিবীর সমুদ্রতটে। জনমানবহীন বেলাভূমিতে শোঁ শোঁ উপচেপড়া ঢেউয়ের শব্দ যেন সেতারের সুর হয়ে কানে বেজেছিলো আমার। নিকষকালো অন্ধকার থেকে আলোতে এসে প্রথম চোখে পড়েছে নীলাম্বরী নৃত্য।
তরুণী পৃথিবী আমাকে লালন করেছে, দুগ্ধরসে অবগাহন সুযোগে দুষ্টুমিষ্টি কানামাছি খেলতে খেলতে সাবালক হয়েছি। মূঢ় আনন্দ বিষমে হোঁচট খেয়েছি তবে দমে যাইনি। আবার উঠে দাঁড়িয়েছি, নরম অববাহিকায় ধুম্রজালের সে বন্ধন ছিন্ন করে নিজের শেকড় বিস্তৃত করেছি দেহতত্ত্বের গভীরে। জন্মলগ্নে যারা আমাকে কাঁদানোর জন্য প্রাণান্ত চেষ্টার কোন ত্রুটি করেনি তারা এখনো স্বপ্নে এসে চিৎকার করে মনোসংযোগ ব্যাহত করে আমার। ভীতসন্ত্রস্ত আমি শিহরিত হই, নতুন সূর্যের সোনালী আলোকছটায় নবউদ্যমে প্রসারিত করি নিজের হাত।
শ্যামবর্ণ দেহের প্রতিটি রোমকূপ থেকে যৌবনের সুগন্ধি উত্তাপ ছড়িয়েছিল যে মায়া কালের বিবর্তনে সে এখন কুহকিনী। শরতের শুভ্র কাশফুলে দোলা দেয় তার রিনঝিন হাসির শব্দ। পুলকিত হৃদয়ে দূর-দূরান্তর কত দেশ-দেশান্তর জলে স্থলে নিজের জীবনীশক্তিকে বিস্তৃত করেছি, নাড়ির বন্ধনকে আরও শক্ত করেছি তা শুধু আমি জানি আর জানে মহাজাগতিক সেই বিস্ফোরণ। আচ্ছা! সেখানে কি ইশ্বর ছিল? আমাকে এই ধরাধামে ছিটকে ফেলে নিশ্চিত মুচকি হেসেছিলেন তিনি। সে হাসির অর্থ আমি এখন বুঝতে পারি।
অব্যক্ত অর্ধচেতনে মনে যে প্রকাণ্ড বৃহৎভাব সঞ্চারিত হয় এটাই আমাকে পৃথিবীতে আগমনের কারণ জানান দিয়ে যায়। আমার এই ভাব অঙ্কুরিত মুকুলের প্রথম সূর্যাগাহণের আদিম অকৃমতার অনন্যরূপ। শেকড়ে শেকড়ে শিরা-উপশিরার চেতনাপ্রবাহে সমস্ত শস্যক্ষেত্রকে রোমাঞ্চিত করার যে ক্ষমতা ধারণ করেছি সেটাইতো ইশ্বরের আরেকরুপ!
মনেরেখো এই পৃথিবীতে আমি কাঁদতে নয়, তোমাদের হাসাতে এসেছি।
৩০টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
নীলাম্বরী নৃত্য চোখে পড়া নিয়ে যে এসেছে তাকে নিয়ে তো চিন্তার বিষয় আছে।
তও ভাল অন্যান্য কাজের সাথে হাসতে ও হাসাতে পৰ চাট্টিখানি কথা না।
চালু থাকুক হাহা হিহি। আমরাও সাথে থাকি।
তৌহিদ
চোখে যখন দুরাশার অশ্রু ঝরে চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। কোন কিছুর দিকে তাকালেই মনে হয় সেটি নৃত্যের মত দুলছে। সেটা দেখেই মনে পুলক জাগে, আনন্দিত হই।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইজান।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
যারা কাঁদাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা স্বপ্নে এসে হানা দেয় মনঃসংযোগ ব্যহত করতে তখন দুহাত প্রসারিত করে দেন, প্রথমেই নীলাম্বরী নৃত্যের দর্শন । আপনি হাসাবেন নাতো আর কি করবেন! আপনার মতো কালপুরুষেরা কাঁদতে আসেনা। আমরাও হাসতে চাই। শুভ কামনা রইলো
তৌহিদ
মানুষকে একটু হাসানোর মাঝে যে সুখ তা আর অন্য কিছুতেই নেই আপু। সুন্দর মন্তব্যে অনেক ভালোলাগা।
শুভকামনা রইলো।
মনির হোসেন মমি
মহৎ উদ্দ্যেশ্য কিন্তু সফল হওয়া বেশ কঠিন ।জন্ম মৃত্যু সত্যের মাঝে ভাগ্যের দরজারও কথা থাকে ।অনেকের লক্ষ্যে পৌছতে সময় লাগেনা অনেকের আবার শত চেষ্টাও কিছুইতে কিছু হয় না।চমৎকার অনুভুতি।এমন হৃদয় স্পর্শী লেখা কেমনে লিখেন।
তৌহিদ
দারুণ বললেনতো ভাইয়া! আসলেও তাই, সফলতা এবং বিফলতার মাঝামাঝি অবস্থান করা সেই ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ সবাই করতে পারেননা। যারা পারেন তারাই সার্থক।
ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকুন সবসময়।
সুপায়ন বড়ুয়া
এই নশ্বর পৃথিবীতে সবাই যদি অন্যের কল্যানে নিজেকে উৎসর্গ করতো। তবে দ্বন্ধ বিবাদ বিসংবাদ কিছুই থাকতো না।
আপনার মনোবাসনা পূর্ণ হোক এই কামনায়।
তৌহিদ
সুন্দর বললেন দাদা, ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
অব্যক্ত অর্ধচেতনে মনে যে প্রকাণ্ড বৃহৎভাব সঞ্চারিত হয় এটাই আমাকে পৃথিবীতে আগমনের কারণ জানান দিয়ে যায়। আমার এই ভাব অঙ্কুরিত মুকুলের প্রথম সূর্যাগাহণের আদিম অকৃমতার অনন্যরূপ। শেকড়ে শেকড়ে শিরা-উপশিরার চেতনাপ্রবাহে সমস্ত শস্যক্ষেত্রকে রোমাঞ্চিত করার যে ক্ষমতা ধারণ করেছি সেটাইতো ইশ্বরের আরেকরুপ!
মনেরেখো এই পৃথিবীতে আমি কাঁদতে নয়, তোমাদের হাসাতে এসেছি।
অনবদ্য, যাস্ট অনবদ্য একটি লেখা পড়লাম আজ।
স্যালুট ভাই।
তৌহিদ
আলুথালু লেখার মাঝেমধ্যে এরকম এক আধটুকু বের হয় মাথা থেকে দাদা। পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন ভাই।
ইঞ্জা
এ যদি আলুথালু লেখা হয়ে থাকে, তাহলে আলুথালুই ভালো। 😆
তৌহিদ
সবসময় আলুথালু লেখা আসেনা কিন্তুক!!
মোঃ মজিবর রহমান
এই ধরায় হাসাতে পারা খুবই কঠিন বিষয়।
নিলাম্বরি নাচে অতি সুখানুভুতি।
তৌহিদ
অন্যকে হাসাতে পারা একটা শিল্প, সবাই পারেনা মজিবর ভাই। আমি চেষ্টা করি।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
আপনার লেখার আমি ভক্ত
তৌহিদ
আমার লেখার ভক্ত আপনি জেনে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। কৃতজ্ঞতা রইলো ভাই।
ফয়জুল মহী
অনবদ্য লেখা ,পড়ে মোহিত হলাম।
ভালো থাকুন।শুভ কামনা I
তৌহিদ
ধন্যবাদ মহীভাই, আপনিও ভালো থাকুন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সুখ,দুঃখের সাথে ওতপ্রোতভাবে হাসি,কান্না জড়িত।
যা আমাদের জীবনের উপর প্রতিফলিত করে।
বৃক্ষ বেড়ে উঠার তাগিদে নানা জ্বালাযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। তেমনি আমাদেরও।
একদিন শিকড় বেয়ে উঠে দাঁড়াতে পারলে আমরা জয়ী।
আর এ জয়িতে আমরা হাসি এবং সুখের হাসিতেও কান্না করি।
তবে আমাদের হাসতে হবে অন্যকে হাসাতে হবে।
অসাধারণ একটা লেখা পড়লাম দাদা।
তৌহিদ
জয়পরাজয় যাই আসুক আমাদের হাসতে হবে দাদা। মন খারাপের মাঝে সুখ নেই। তবে কিছুটা অভিনয় সকলেই করি।
ভালো থাকুন দাদা।
খাদিজাতুল কুবরা
খুব ইতিবাচকএকটি লেখা।
যদি কেউ আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা না করে নিজ কর্তব্য পালন কর,অবশ্যই সে বাকিদের হাসির কারণ হতে পারে।
যে ব্যাক্তি অন্যদের মুখে হাসি ফোটাতে পারে তাঁর কান্নার প্রয়োজন পড়েনা।
এটা আমার বিশ্বাস।
লেখাটি পড়ে ভালো লাগলো।
খুব ভালো লিখেছেন৷
তৌহিদ
বাহ! সুন্দর বললেনতো! আসলেই আমাদের আত্মকেন্দ্রিকতা পরিহার করে দশের জন্য কাজ করতে হবে। অন্যের মুখে একটু হাসি ফোটালেও অনেক সুখ প্রাপ্রি হয়।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু। শুভকামনা রইলো।
আলমগীর সরকার লিটন
বেশ ভাবনার গভীরে থেকে তুলা এক অনুভূতির ছুঁয়া কবি দা
তৌহিদ
পড়েছেন দেখে ভালো লাগলো ভাইয়া। শুভকামনা রইলো।
নিতাই বাবু
পৃথিবীতে আসার ক্ষন নিয়ে চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন, শ্রদ্ধেয় তৌহিদ দাদা। তখন সবার বেলাই একই অবস্থা হয়েছিল। সেসময় আমি কাঁদিনি দেখে সবাই চিন্তিত চিল। হতাশায় ছিল। যখন ওয়া ওয়া করে কেঁদেছিলাম, তখন সবাই চিন্তামুক্ত হলো।
শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা।
তৌহিদ
এই পৃথিবীতে নিজের আগমনের কারন সবাইকেই বুঝতে হবে। কিছু এমন কাজ করা উচিত যাতে মৃত্যুর পরেও সবাই মনে রাখেন।
শুভকামনা রইলো দাদাভাই।
বন্যা লিপি
কোনো কোনো লেখা পড়লে বিমূঢ় হতে হয়, এ লেখা তেমন এক লেখা।উপলব্ধি করা যায়, সঠিক ভাষায় যোগ্য ভাষা ব্যাক্ত করা কঠিন হয়ে পরে। সৃষ্টির শুরু থেকে ধাপে ধাপে পরিক্রমার পর্যায়ক্রমিক বোধ তুলে ধরেছেন নিপূণ ভাবে।কাঁদতে নয় হাসাতে এসেছি……শুভ কামনা।
তৌহিদ
পড়েছেন দেখে ভালো লাগলো আপু। শুভকামনা সবসময়।
আরজু মুক্তা
ঈশ্বর মনে হয় এভাবে পৃথিবীতে নামিয়ে দিয়ে বাঁকা হাসি হাসেন। সমাজে যারা হাসিমুখ দিয়ে দুঃখ জয় করে। তারাই তো শ্রেষ্ঠ আসন পায়।
ভালো লাগলো জীবন বোধের লেখাটি।
ধন্যবাদ আপনাকে।
তৌহিদ
একদম ঠিক, সুন্দর বলেছেন আপু। অনেক ধন্যবাদ।