কল্পনা-০৩

শামীম চৌধুরী ২ জুন ২০১৯, রবিবার, ০২:১০:৩৬পূর্বাহ্ন গল্প ২০ মন্তব্য

আমার দাদা কুদ্দুস বয়াতী আর উনার সহধর্মিনী (রহিমের বাবা ও মা) অাজ ঢাকায় আসেন আমার বাসায়। জুম্মার নামাজের পর বানুর জন্য ছেলে দেখতে যাবো। গতকাল রাতেই রহিম ও তার বউকে সংবাদটা জানাই। বউমা’কে সাথে নিয়ে সকাল সকাল বাসায় চলে আসতে বলি। নামাজ পরেই চলে যাবো ছেলের বাসায়। দুপুরের আপ্যায়নও ছেলের বাসায়। রহিম কথা শেষ না হতেই বউমা’র হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিলো। সব বলার পর রহিমের বউ (ফারাহ) বলে চাচা, আজতো আমার ছোট বোন মারিয়াকে দেখতে আসবে। আমাকে মা’র বাসায় থাকতে হবে। বুঝতেই পারছেন আমি বড় মেয়ে। সবদিকটা আমাকেই দেখতে হয়। ফাতেমার বাবা যাবে। ও ছেলে দেখেই চলে আসবে আম্মার বাসায়। আপনি আমার শ্বশুড় শ্বাশুড়ীকে একটু বুঝিয়ে বলবেন। উনারা যেন অন্য কিছু মনে না করেন। আমি ফারাহ’র সাথে কথা না বাড়িয়ে বলি আচ্ছা। শুধু এতটুকু বলি যে, তুমি বাড়ির একমাত্র বউ। তুমিও না হয় ছেলে দেখে রহিমের সাথে চলে যেও। এতটুকু বলেই ফোন লাইনটা কেটে দেই। পাশেই ভাবী দাঁড়িয়ে ছিলেন।

হাসিমাখা মুখে বললেন, বউমা’ আসবে তো জর্জ ? ( দাদা ও ভাবী আমাকে জর্জ নামেই ডাকেন।)

আমার ফাতুকে নিয়ে..!!

আমি ভাবীর প্রতুত্তোরে বললাম এত প্রশ্ন করো নাতো ভাবী। ভাবীও আর কথা বাড়ালেন না। চুপ করে পাশের রুমে চলে গেলেন। জুম্মার নামাজ শেষে বাসায় অপেক্ষা করছি রহিমের জন্যে। নামাজের আগে আমাকে কল দিয়ে রহিম বললো চাচা, আমি নামাজ পড়েই চলে আসবো। অতঃপর রহিমের আগমন বেলা ৩.০০মিঃ। এদিকে কয়েকবার কল দেয়া হয়ে গেছে ছেলের বাবার। আলীগড়ের সাদা পায়জামা, আদ্দি কাপড়ের ধবধবে সফেদ পাঞ্জাবী। কাঁধে হাজী রুমাল ও চোখে রোদ চশমা। কলাপাতা রঙয়ের শাড়ী আর মাথায় ঘুমটা। দারুন লাগছে দাদা ও ভাবীকে। অনেক্ষন ধরে দাদা ভাবীর দিকে তাকিয়ে আছি। আর দেখছি আজ কতই না সুখ ও পরম শান্তি উনাদের চোখে মুখে ফুঁটে উঠেছে । ঘরে বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে থাকলে বৃদ্ধ বাবার যে কি করুন দশা তা আজ হাঁড়ে হাঁড়ে টের পেলাম। ভাই ভাবীদের চেহারায় প্রশান্তির আলো বলে দিচ্ছে এবার বহুদিনের অপেক্ষার শেষ ঘন্টা বাঁজবে। বানুর বর দেখার জন্য আল্লাহর নামে যাত্রা শুরু করিলাম। বাড়ির গেটের সামনে ছেলের বাবা,চাচা, ও আত্মীয়-স্বজনরা অপেক্ষা করছেন আমাদেরকে সানন্দে গ্রহন করার জন্য । উনাদের গতিবিধি বলে দিচ্ছে আমাদের দেরী দেখে খুব অস্থির হয়ে আছেন । ছেলের বাবা মাতাব্বুর শেখ দাদাকে জড়িয়ে ধরে শাহী কায়দায় বাড়ির অন্দর মহলে নিয়ে গেলেন। পিছু পিছু আমারও দাদাকে অনুসরন করলাম। গল্প গুজবের পাশা-পাশি শাহী খানায় দুপুরের আপ্যায়ন হলো। খাবারের পর ছেলের হাতে রহিম একটি খাম ধরিয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। ছেলের বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হন্ত-দন্ত হয়ে রহিম বের হয়ে গেল। ছেলের মা’ আমার ভাবীকে নিয়ে এমন রসালো গল্প শুরু করে দিলেন,দেখে মনে হচ্ছিল দুজন যেন কত হাজার বছরের পরিচিতা। রহিমের ব্যাস্ততা, অনেকদিন পর ভাবীর হাসি-মাখা মুখ,দাদার ভিতরে আনন্দের বন্যা আমি দূর থেকে দেখছি আর ভাবছি দাদা বুঝি এবার কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা থেকে মুক্ত হচ্ছেন। বিদায় পর্বের আগ মুহুর্তে দাদা ছেলের পাশে যেয়ে বসলেন। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি লক্ষ্য করলাম দাদার চোখ থেকে সবার অজান্তে পানি গড়িয়ে পড়ছে। দাদার সুন্দর চেহারাটা আরো গোলাপ বর্ণীল হয়ে উঠলো। দাতের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে আসলো পূর্ণিমার চাঁদের  রূপালী  হাসি। তারপর দাদা নিজের পাঞ্জাবীর পকেট থেকে একটা কৌটা বের করলেন। কৌটায় স্বযত্নে রাখা সোনার আংটিটি ছেলের হাতের আঙ্গুল টান দিয়ে ধরে আংটিটি পড়িয়ে দিলেন এবং উপস্থিত সম্মানিত অতিথির সামনে চিৎকার করে বললেন-

হে আল্লাহ তুমি দয়ালু ও দাতা। একমাত্র তোমার কাছেই ভিক্ষা চাইলে কেউ ফেরত যায় না । তুমি মহান।

সবাই দোয়া করবেন বানুর জন্য। আল্লাহ যেন নিকাহ্ কবুল করেন।

আমীন।।

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ