কল্পনা-০২

শামীম চৌধুরী ১ জুন ২০১৯, শনিবার, ০১:৪৪:০৬পূর্বাহ্ন গল্প ৩০ মন্তব্য

অবশেষে ছুটির ফাঁদ থেকে মুক্ত হলো দেশ। পুরোদ্দমে যার যার কর্মে ব্যাস্ত সবাই। শহরের রাস্তাগুলিও চিরচেনা জ্যামের শহরে রূপান্তরিত হচ্ছে । কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকা শহর। সমুদ্র সৈকত থেকে ঘুরে এসে রহিমও ব্যাস্ত তার নিজ অফিসে কর্মজীবনে। কিন্তু রহিমের মা’য়ের ব্যাস্ততা কমেনি একটুও। প্রতিক্ষায় ছিলো শবে-বরাতে আসবে তার নাড়িছেঁড়া ধন একমাত্র আদরের পুত্র। এখনও জানালার শিঁকের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে থাকেন রাস্তার পানে। এই বুঝি আসলো..!! কত মানুষ চলাফেরা করে। আসে-যায়। কিন্তু রহিম আসে না। মা’য়ের কান্না কেউ দেখতে পায় না। একটু ভয়ও পান স্বামীকে অর্থাৎ রহিমের বাবাকে। যদি বকা-ঝকা করেন। তাই রান্না ঘরে একা একা হাঁড়িতে খুঁন্তি দিয়ে ভাত নাড়া-চড়া করেন আর আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুঁছে ফেলেন। মনে মনে ভাবনে কেন এমন হয়? রহিমের বোন বানু’ মাঝে মাঝে শিঁকায় ঝুলানো কুমড়ার মোরব্বার বোয়ামের পানে তাকিয়ে থাকে। ইচ্ছে হয় একটুকরা মোরব্বার স্বাদ নেবার। কিন্তু অনেক কষ্টে লোভটি সংবরন করে রাখে। আর মনে মনে ভাবে তার একমাত্র ভাতিজি ফাতু’ আসবে। ফুফুর কাঁধে চড়ে শূণ্যে ঝুলানো বোয়াম থেকে কুমড়ার মোরব্বা নিজ হাতে নামিয়ে খাবে। চিনির রস বানুর মাথায় টপটপ করে ঝরবে। তাই নিয়ে ফুফু-ভাতিজির খুঁনসুঁটি লেগেই থাকবে। বানুর কল্পনা কল্পনাই রয়ে যায়। কক্সবাজার থেকে ফিরে এসে বউ তার শ্বাশুড়িকে ফোন কল দেয়। বলে আমরা ঢাকাতে এসেছি।

শ্বাশুড়ি মা’ বলেন বউ’মা বাড়িতে আসবা না?

রহিমের বউ  উত্তরে বলে কিযে বলেন আপনি?

এতটা দূরের পথ ঘুরে এসে শরীরটা খারাপ করেছে। আর আপনার ছেলের অফিসও খুলেছে। এখন আর আসতে পারবো না।

তাহলে ফাতুকে দিয়ে রহিমকে পাঠিয়ে দিও মা”। নারিকেলের নাড়ু আর কুমড়ার মোরব্বা রেখেছি। নিয়ে যাবে তোমার জন্য।

শ্বাশুড়ীর আবেগের কথা শুনে বউ বলে আমার মেয়ে তো এসব পছন্দ করে না। আর আমিও ছোটবেলায় এসব খাবার খাইনি। আপনার নাতনির পছন্দ পিৎজা, বার্গার, বারবিকিউ আর ফাষ্টফুড। কিছু না বুঝেই জবাব দিলেন খুব ভালো খাবার বউমা’।

আমার দাদা ( রহিমের বাবা ) এখন আর তেমনটা চিন্তা করেন না। মাঝে মাঝে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়েন আর বলেন-

আ ল্লা হ।

বানুর বিয়ের চিন্তা দাদাকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। আমাকে কল দিয়ে বললেন- ভালো একটা ছেলে দেখ বানুর জন্য।

আমি যেন ওর বিয়াডা দিয়া যবার পারি। ওর বিয়াডা অইলে মাইয়্যাডা আমার একটা ঠিহানা পাইবো।

উত্তরে আমি বললাম দেখবো।

আপনারাও দেখেবেন বানুর জন্য একজন সৎ ও চরিত্রবান ছেলে।

(চলবে)

0 Shares

৩০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ