শুনেছি কাল তিন প্রকার। এই তিন প্রকার কাল হলো: অতীতকাল, বর্তমানকাল, ভবিষ্যৎকাল। কাল অর্থ সময়। মানে ক্রিয়াপদ যে সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়, সেই সময়টাকেই কাল বলা হয়। অর্থাৎ ক্রিয়া সম্পাদনের সময়কে ক্রিয়ার কাল বলে। তবে আমার মনে হয় এই কাল কিন্তু শুধুই ক্রিয়ার কালই নয়। এই কাল আরও অনেক রূপে, অনেক নামে প্রচলিত।

তাই আমি এই লেখায় অন্তত ২৩ প্রকার কাল’র নাম-সহ কাল’র বিশদ বিবরণও উল্লেখ করেছি। কারণ কেউ কেউ এই কালকে অন্যরকমও মনে করে থাকে। তবে হ্যাঁ, কালে কালে এই মানবজাতির অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে। যেমন: বনমানুষ থেকে এপর্যন্ত মানুষ এখন সভ্যজগতে পদার্পণ। সেইসাথে সেসময় থেকে এসময় পর্যন্ত পৃথিবীর অনেককিছুই বদলে গেছে। তাই আবারও উল্লেখ করেছি, কাল কিন্তু একটা সময়। তা হোক সুসময়, দুঃসময়।

আর এই সময়ের কালগুলো হলো: ক্রিয়াকাল, আদিকাল, মহাকাল, শিশুকাল, বাল্যকাল, যুবককাল, অকাল, বয়সকাল, বৃদ্ধকাল, মরণকাল, চিরকাল, গতকাল, আগামীকাল, আজকাল, আধুনিককাল, সকাল, বিকাল, রাত্রিকাল, এযাবতকাল, একাল সেকাল, কলিকাল, করোনাকাল। উল্লেখিত এই ২৩ প্রকার কালগুলো কিন্তু একটা সময়।

আর এই সময়টা হতে পারে দীর্ঘ সময় বা অল্প সময়। যেমন: “গানে আছে, “কতকাল দেখিনি তোমায়”! এখানে একমাসও হতে পারে, আবার একযুগও হতে পারে। যা বারোমেসে একবছর। আবার বারো বছরে একযুগ গণনা করা হয়।

আবার অন্য মতে কাল হলো বিষাক্ত বা জম বা বিপদ! যেমন: কথায় আছে, “সাপের মুখ লাল, মানুষের মুখে কাল”। যদি কারোর উপর কুনজরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কেউ কিছু বলে থাকে, সেটা নাকি কাল হয়ে দাঁড়ায়। মানে জম হয়ে সম্মুখে উপস্থিত হয়।

যার কারণে কারোর শখের একটা নতুন গাছে ফল ধরলে, গাছের মালিক গাছের সাথে ছেঁড়া-ফাঁড়া জুতা বেঁধে রাখে। যাতে কারোর কুনজর শখের গাছের উপর না পড়ে।

আবার ভারতে দেখেছি অনেক গাড়ির মালিকরা তাদের গাড়ির সামনে পেছনে জুতা ঝুলিয়ে রাখে। যাতে কুদৃষ্টি থেকে গাড়িটাকে রক্ষা করা যায়। কিন্তু কেউ রক্ষা পায়, আবার কেউ রক্ষা পায় না। তা পাক আর না পাক তাতে অন্য কারোর কিছুই যায়-আসে না। আমারও না। আমি বরং উপরোল্লিখিত ২৩ প্রকার কালগুলো নিয়ে আলোচনায় আসি। আমার ধারণা থেকে ২৩ প্রকার কাল গুলো নিম্নরূপ:

১. ক্রিয়াকাল: ক্রিয়ার কাল বা ক্রিয়াকাল লেখার প্রথমাংশে উল্লেখ করেছি। এই কাল তিন ভাগে বিভক্ত। যথা: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। ক্রিয়াপদে এই তিন কাল মিলে ক্রিয়াকাল। ক্রিয়াপদ যে সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়, সেই সময়টাকেই বলা হয় কাল।

২. আদিকাল: আদিকালে আমার বাবার জন্মও হয়নি। তবে ইতিহাস পড়ে কিছু-না-কিছু জেনেছি। আর যারা আদিকালের ইতিকথার ইতিহাস লিখেছিলেন, তারাও মনে হয় একটু-আধটু আনুমানিক ধারণা থেকেই লিখেছিলেন। যা আমরা বর্তমানে ইতিহাস পড়ে জানতে পারছি।

৩. মহাকাল: যে কালে কোনও মহাপুরুষ, মহামানব ও মহামুনিগণ জন্মগ্রহণ করে, সেই কাল’কে মহাকাল বলতে পারি।

৪. শিশুকাল: আমার নিজেরও একসময় শিশুকাল ছিলো। শিশু কালে মা-বাবা, বড়দা’র হাতে কতো চড়থাপ্পড় খেয়েছি, তার কোনও হিসাব-নিকাশ নেই। তবে এখনো বেশ মনে আছে। এই শিশুকাল পেরিয়ে একসময় আমিও বয়স্কদের কাতারে এসে লাইন ধরেছিলাম। বর্তমানে আমি বৃদ্ধদের কাতারে।

৫. বাল্যকাল: জন্মের পর সবাই শিশুকাল অতিক্রম করে বাল্যকালে উত্তীর্ণ হয়। শিশুকালে সবারই মুখে চুষনী থাকে। আর বাল্যকালে ফুটে ওঠে মুখের বুলি।

৬. যুবককাল: যুবককালে সবাই এক অন্যরকম দিন অতিক্রম করে। কেউ হাসিতে মাতে। কেউ মাতে খেলায়। কেউ মনোনিবেশ করে লেখাপড়ায়। কেউবা আবার কাজে কর্মে। কেউ আবার অকালেই ঝরে পড়ে।

৭. অকাল: অকাল অর্থ অসময়। যা সময়তে হয় না, অসময়ে হয়। হঠাৎ কোনও সুস্থ মানুষ মৃত্যুবরণ করলে, লোকে বলে, “লোকটা অসময়ে চলে গেলো”। কোনও দুর্ঘটনায় কোনও যুবকের মৃত্যু হলে লোকে বলে, “অকালমৃত্যু” আবার অনেকেই বলে, “অকালে ঝরে গেলো”। কারোর দুর্দিনেও বলে, “অসময়ে আছি”। এটাও কিন্তু একটা সময়।

৮. বয়সকাল: যুবককাল পেরিয়ে বয়সকালের হাতছানি। এই বয়সকালে কেউ-না-কেউ খেলাধুলা, লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজকর্ম ও সংসার গড়ার পালায় পড়ে। তারমধ্যে আমি নিজেও একজন ছিলাম।

৯. বৃদ্ধকাল: এই বৃদ্ধকালে প্রত্যেক মানুষেই নিজের জীবনের কর্মফলের হিসেব-নিকেশ নিয়ে সময় কাটায়। এই বৃদ্ধকালে সব মানুষের দেহ-মনে শেষ বিদায়ের বার্তা অনুভূত হয়। যেমন: কারোর মাথার কালো কুচকুচে চুল সাদা হয়ে যায়। যাকে বলে পাকা চুল। আসলে কিন্তু শেষ বিদায়ের বার্তা। আবার কারোর মুখের ভেতরে থাকা ৩২টি দাঁতই পড়ে যায়। কারোর অবশিষ্ট দু’একটা আটকে থাকে। তা-ও নড়বড়ে অবস্থায়। এইরূপ অবস্থা কিন্তু শেষ বিদায়েরই বার্তা। এই বৃদ্ধকালে শরীরের টাইট চামড়া বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিবিহীন খড়ায় কাঠফাটা রোদে চৌচির হয়ে যাওয়া কৃষকদের ফসলী জমির মতো হয়ে যায়। যাকে বলে, শরীরের চামড়া মরে গেছে। এর মানেই হচ্ছে মরণের হাতছানি।

১০. মরণকাল: বৃদ্ধকাল মানেই জীবনের শেষকাল। আর বৃদ্ধকাল শেষে মরণ কালের মরণকামড় সবারই সইতে হয়, মরতে হয়। জীব মানেই মরণশীল। এই সুন্দর পৃথিবীর সকল জীবকেই একদিন-না-একদিন মরণকে বরণ করতে হয়। সে থাকুক রাজা, নাহয় বাদশা। হোক সে ফকির, হোক গুণধর সাধু অথবা কোনও হিংস্র প্রাণী। এই পৃথিবীতে যাকিছু আছে, সবকিছুই অনিশ্চিত, কেবল জীবের মরণই নিশ্চিত। মরণকালে অনেক মানুষের মুখের জবান বন্ধ হয়ে যায়। চোখের আলো নিভে যায়। পানাহার বন্ধ হয়ে যায়। অনুভব অনুভূতি হ্রাস পায়। কেউ কেউ প্রিয়জনের কাছে কিছু কথা বলার জন্য ছটফট করতে থাকে। কিন্তু কেউ বলে যেতে পারে, কেউ পারে না। না বলা কথা মরণের সাথে মিশিয়ে দেয়। মরণকালে কারোর প্রাণপাখী উড়ে যায় শান্ত স্বভাবে। কারোর প্রাণপাখী যাওয়ার সময় সমস্ত দেহটা ভেঙেচুরে তচনচ করে ফেলে। তখন মরণকে বরণকারী মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। তারপর একসময় প্রাণপাখী উড়ে যায়। দেহটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকে। সেই দেহটাকে বলে লাশ বা মরদেহ।

১১. চিরকাল: চিরকাল মানে ‘অনন্তকাল’। আর অনন্তকাল মানে চিরকাল, নিত্যতা, যুগযুগান্ত, অপরিমেয়, চিরস্থায়ী। অর্থাৎ যা ছিলো, তা থাকবে। যেমন: আকাশ, বাতাস, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র এমন। কিন্তু আমি থাকবো না। হয়তো আমার বংশধর কেউ থাকবে না।

১২. গতকাল: যে দিন গত হয়। দিন গত রাত শেষে আজও গতকাল হবে। সবার জীবনের কতকিছুই না গত হয়ে গেলো। তবুও মানুষ বেঁচে থাকে আগামী দিনের আশায়। কেউ আগামী দিনের নাগাল পায়, কেউবা হারায়। তবে এই নশ্বর ভবসংসারে কেউ আগামী দিন হারাতে চায় না। সবাই আশায় বুক বেঁধে রাখে আগামী দিনের আশায়।

১৩. আগামীকাল: রাত শেষে সূর্যোদয়ে সাথে শুরু হয় আগামীকাল। আজ নাহয় হলো না দেখা। তাতে কী! দেখা হবে আগামীকাল। তবে আজ যেই কাজটা শেষ করা যাবে, সেই কাজটা যেন কেউ আগামী কালের আশায় ফেলে না রাখে। কারণ, আগামী কালের নাগল পাওয়াটাই অনিশ্চিত!

১৪. আজকাল: আজকাল যা হচ্ছে তো হচ্ছেই। আজকাল মেয়েরা পরে ছেলেদের পোশাক। ছেলেরা পরে মেয়েদের গহনাগাঁটি। কানে ঝুলিয়ে রাখে কানপাশা। হাতে পরে চুড়ি। গলায় ঝুলিয়ে রাখে বড় সাইজের মুতির মালা। আজকাল কেউ কারোর কথা শুনে না। স্ত্রী শুনে না স্বামীর কথা। স্বামী শুনে না স্ত্রীর কথা। রাজা শুনে না প্রজার কথা। প্রজা শুনে না রাজার কথা। আর আজকাল তো ছেলেমেয়েদের কিছু বালাই যায় না। ওরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাই আজকাল’কে আধুনিককাল বলে।

১৫. আধুনিককাল: “আধুনিক” শব্দটির অর্থ এইমাত্র। আর কাল শব্দটির অর্থ সময়। দুটে মিলিয়ে হয় এইসময়। যা বর্তমান বা সাম্প্রতিক সময়কে নির্দেশ করার জন্য ব্যবহিত হয়। একসময় বুড়ে-বুড়িরা বলতো, “সামনের দিনগুলোতে আরাস্তা (রাস্তার উপযোগী নয় এমন) রাস্তা হবে। আঘাট (ঘাটের উপযোগী নয় এমন) ঘাট হবে। এই আধুনিককালে কিন্তু তা-ই হচ্ছে। তা শহর, বন্দর, গ্রামেও লক্ষনীয়। যেখানে নর্দমা ছিলো, সেটা এখন রাস্তা। যেসব জায়গা দিয়ে মানুষ হেঁটে যেতে ভয় পেতো, সেসব জায়গায় এখন দিনরাত ২৪ ঘণ্টা লোকে লোকারণ্য। এই আধুনিককালে শিল্প কলকারখানা তথা সমগ্র বাংলাদেশের যেমন উন্নতি সাধিত হয়েছে, তেমনি মানুষের জীবনধারণেরও উন্নীত হয়েছে।

১৬. সকাল: শুভ সকাল। আবার কথার কথা “সাতসকাল”। কিন্তু সকাল সাতটা নয়, একটাই। মানে সকাল। যা সূর্যোদয়ের সাথে সাথে আরম্ভ। কিন্তু সকালের সময় আছে। এর সময় সূর্যোদয় হতে ১১.৫৯ মিনিট পর্যন্ত। এই আধুনিককালে আমরা অনেকেই সকালবেলা হাতমুখ ধুয়ে মহান সৃষ্টিকর্তাকে শুভেচ্ছা না জানিয়ে ফেসবুকে থাকা সকল বন্ধুদের শুভ সকালের শুভেচ্ছা জানাই। না জানালে ফেসবুকে থাকা সকল বন্ধুদের মনে কষ্ট পাবে, তাই। যাইহোক, সকালের সময় পেরিয়ে তারপর দুপুর। যাকে বলে শুভ দুপুর। তারপর বিকাল।

১৭. বিকাল: এই বিকাল শুরু হয় দুপুর পেরিয়ে। আমারা কেউ-না-কেউ দুপুরবেলা খাওয়া-দাওয়া সেরে বিশ্রাম নিই। তারপর বিকাল হতে-না-হতেই কেউ-না-কেউ প্রিয় মানুষকে সাথে নিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে পড়ি। উদ্দেশ্য একটু হাওয়া-বাতাস গায়ে লাগানোর জন্য। কেউ শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে। কেউ চিত্তরঞ্জন পুকুর পাড়ে। কেউ রাস্তায়। কেউবা আবার মার্কেটে থাকা নামীদামী রেঁস্তোরায়। সকলেই মেতে ওঠে আড্ডায়। সেই আড্ডা চলে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতদুপুর পর্যন্ত।

১৮. রাত্রিকাল: সূর্যাস্তের পর সন্ধ্যা ঘোর হতেই নেমে আসে রাতের আঁধার। তবে শহরাঞ্চলের মানুষ কিন্তু রাতের আঁধার টের পায় না। কারণ এই আধুনিককালে বৈদ্যুতিক বাতির ঝলমল আলো শহরাঞ্চলের রাতের আঁধার কেড়ে নিয়েছে। তাই আমাবস্যা রাতের ঘোর অন্ধকারও কেউ টের পায় না। মোটকথা কেউ বুঝেও না পূর্ণিমা কী আর আমাবস্যা কী? কিন্তু গ্রামাঞ্চলের মানুষ ঠিকই বুঝে, জানে। সন্ধ্যা হতেই তারা তড়িঘড়ি করে বাড়ির সকলের সান্নিধ্যে পৌঁছায়। কারণ গ্রামাঞ্চলে চোর-ডাকাতদের উপদ্রব বেশি। চোর-ডাকাতদের কামাই রোজগারই হয় রাত্রিকালে।

১৯. এযাবতকাল: এ পর্যন্ত সময়ে। মানে শুরু থেকে এ পর্যন্ত। যেমন: “বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাশাপাশি বাংলাদেশের ইতিহাসে এযাবতকালের মধ্যে সর্ব্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৭.২৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে”। আর আমরা দেশবাসী আছি এযাবতকালের সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্যে। না পারি বলতে, না পারি সইতে, না পারি মরতে।

২০. একাল: এ সময়। একালে যার কিছুই নেই, তার একটা মোবাইল ফোন আছে। অনেকের আছে এন্ড্রয়েড টাচস্ক্রীন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির তৈরি স্মার্ট ফোন। এ সময়ে এই অত্যাধুনিক স্মার্ট ফোনের সাহায্যে হাতের মুঠোয় দুনিয়াদারী নিয়ে ঘোরাফেরা করে। মুহূর্তেই পৃথিবীর সব খবরাখবর জেনে যায়। এই অত্যাধুনিক ছোট যন্ত্রটার সাহায্যে সবকিছু দেখা যায়, শোনা যায়। কিন্তু সেকালে এসব কিছুই ছিলো না।

২১. সেকাল: যে কাল গত হয়েছে, তাকেই বলে সেকাল। সেকালে ঘরে ঘরে কালার টেলিভিশন ছিলো না। যা ছিলো, তা-ও সাদাকালো ছোট একটা টেলিভিশন। তা-ও ছিলো দশ গ্রামের ভেতরে দু’একটা বাড়িতে। সবার হাতে হাতঘড়ি ছিলো না। যাদের হাতে হাতঘড়ি থাকতো, তারা ছিলো বড় শিক্ষিত লোক। সবার গলায় ট্রাই বাঁধা ছিলো না। ছিলো রাষ্ট্রপ্রধান ও মন্ত্রীদের গলায়। আর আদালতে থাকা বিচারকের ও অ্যাডভোকেটদের গলায়। আর এখন রাস্তার টোকাইদের গলায়ও ট্রাই বাঁধা থাকে। হাতঘড়ির তো মানসম্মান আরও অনেক আগেই চলে গেছে।

২২. কলিকাল: কলিকাল বা কলির কাল বা করিরযুগ। এই কলিযুগ হিন্দু ধর্মে চার যুগের মধ্যে এক যুগ। যথা: সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ, দ্বাপরযুগ, ও কলির যুগ বা কলিযুগ। সত্য যুগের আয়ু ছিলো, ১৭.২৮.০০০ বছর। এই যুগে কোনও পাপ ছিলো না।
ত্রেতা যুগের আয়ু ছিলো, ১২.৯৬.০০০ বছর। এই যুগে পুণ্য ছিলো তিনভাগ, পাপ ছিলো একভাগ।
দ্বাপর যুগের আয়ু ৮.৬৪.০০০ বছর। এই যুগে পুণ্য অর্ধেক, পাপ অর্ধেক।
কলি যুগ বা কলির যুগ বা কলিকাল আক্ষরিকভাবে কলির যুগ, বা “পাপের যুগ।

এই কলির যুগ বা কলির কাল বা কলিকাল হলো হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী চার যুগের শেষ যুগ। এই কলি যুগের আয়ু হলো, ৪,৩২,০০০ বছর। কলি যুগে পুণ্য এক ভাগ, পাপ তিন ভাগ। মানুষের আয়ু প্রায় একশ বছর । মানুষের শরীরের দৈর্ঘ্য নিজের হাতে সাড়ে তিন হাত । প্রাণ বাঁচে ডালভাতে। তীর্থ গঙ্গার জলে। এই যুগে ধর্ম সংকোচিত। মানুষ তপস্যাহীন, সত্য থেকে দূরে অবস্থানরত। রাজনীতি কুটিল। শাসক ধনলোভী। ব্রাহ্মণ শাস্ত্রহীন। পুরুষ স্ত্রীর অনুগত। সৎ মানুষের কষ্ট বৃদ্ধি। দুষ্টের প্রভাব বৃদ্ধি। এই যুগে মানুষের ইচ্ছা পূর্ণ করা প্রায় অসম্ভব। মোটকথা পাপে অনুরক্ত। তাই এতো এতো রোগব্যাধি। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী দেখা দিয়েছে একপ্রকার প্রাণঘাতী ভাইরাস। বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের নাম রেখেছে করোনাভাইরাস।

২৩. করোনাকাল: সব কালের শেষকাল করোনাকাল। হিন্দু ধর্মে চার যুগের শেষ যুগ হলো কলির যুগ। অনেকেই বলে কলিকাল। আর কলি কালেরও শেষকাল হতে পারে করোনাকাল। এই করোনাকালের অবতার গণচীনের উহান শহরে। সময়টা ছিলো ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে। এই করোনাকালের আয়ু হবে কেয়ামত বা প্রলয় পর্যন্ত।এই প্রাণঘাতী ভাইরাস বাতাসে ভেসে বেড়ায়। মানুষের শরীরে প্রবেশ করে হাত-মুখ, চোখ ও নাককান দিয়ে। লক্ষ্মণ সর্দি-জ্বর,কাশি, মাথাব্যথা-সহ আরও কিছু উপসর্গ।

এই করোনাকাল আমাদের সামনে কবে থেকে কবে হাজির হয়েছে, তা এদেশের একটা মাসুম বাচ্চাও জানে। তবে কবে নাগাদ করোনাকাল শেষ হবে তা আর কেউ জানে না। এই করোনাকালে সারা বিশ্বই এখন বিপদগ্রস্ত। এই করোনাকালে সারাবিশ্বে কতো কতো মানুষ যে প্রাণ হারিয়েছে, তা প্রতিদিন খবরে প্রকাশ হচ্ছে। তবে কতো ব্যবসায়ী যে তার পূঁজি বাট্টা সহায়সম্বল শেষ করে দিয়েছে, তার কোনো হিসাব-কিতাব নেই। কতো শিশু যে লেখাপড়া ছেড়ে জীবন বাঁচানোর ধান্দায় রাস্তায় নেমেছে, তারও কোনও হিসাব নেই।

কতো গৃহিণী মা যে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে দিনের পর দিন না খেয়ে আছে, তারও কোনও হিসাব নেই। কতো বৃদ্ধ বাবা যে অবুঝ সন্তানের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দেয়ার জন্য হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করছে, তারও কোনও হিসাব নেই। হিসাব আছে শুধু মহামারি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কতজন মারা যাচ্ছে, তার হিসাব। কিন্তু কোটি কোটি অসহায় মানুষ যে জীবিত থেকেও নিজেকে মৃত ভাবছে, তার হিসাব কারোর কাছেই নেই।

তাছাড়া ১৬/১৭ কোটি মানুষের দেশে এই হিসাব রাখাও তো অসম্ভব হয়ে পরছে। তবে বর্তমান সরকার এই সময়ে এই করোনাকালে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে, যাতে কেউ যেন না খেয়ে থাকে। পাশাপাশি এই করোনাকালে করোনা সংক্রমণ থেকে মানুষ বাঁচতে সরকার নিরুপায় হয়ে একের পর এক লকডাউন ঘোষণা দিচ্ছে। তবুও কিছুতেই এই করোনা কালটাকে সামলাতে পারছে না। দিনদিন নতুন করে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেই। তা দেখে নিজের মনটাকে প্রশ্ন করি কলিকালে অবতার করোনাকাল কি এই পৃথিবীতে  চিরস্থায়ী হতে চলছে?

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ