করোনাভাইরাস সংক্রমণ মানুষের কাছে তুলে এনেছে অনেক অজানা আশঙ্কা। পৃথিবীর সকল গবেষক থেকে শুরু করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) কর্মকর্তারা এখনো ভেবে পাচ্ছেননা ঠিক কোন পথে সমাধানসূত্র বেরোবে এসব অজানা আশঙ্কার। প্রথম বিষয় হলো, যদি করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয় সে ক্ষেত্রে অতি দ্রুত কোন পদ্ধতিতে এই ভ্যাকসিনের প্রোডাকশন করা সম্ভব। যদিও আজ WHO সভাপতি প্রস্তাব দিয়েছেন যেকোন দেশেই ভ্যাকসিন প্রস্তুত হোকনা কেন তা সমানভাবে সব দেশ পাবে। আর মজার বিষয় হচ্ছে বিশ্বনেতারা এতে সাড়া দিলেও যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি!

বাণিজ্যিকভাবে ভ্যাকসিন প্রস্তুতিকরণের নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি আছে এবং সেই পদ্ধতিতেই ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়। এখন যে পদ্ধতিতে ফ্লু বা অন্যসব মারাত্মক রোগের ভ্যাকসিন তৈরি করা হয় সেই প্ল্যান্ট ব্যবহার করেই কি এই ভ্যাকসিন তৈরি করা হবে নাকি বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে? সেক্ষেত্রে সময় এবং কর্মযজ্ঞতার একটি বিষয় আছে।

অন্যদিকে ভ্যাকসিন প্রস্তুত হলে তা কিভাবে সারা দুনিয়ার লক্ষ লক্ষ আক্রান্ত মানুষের কাছে অতি দ্রুতই ভ্যাকসিন পৌঁছে যাবে সে ব্যবস্থা করাটাও বিরাট চ্যালেঞ্জ হবে। কারন আজ আমরা কার্গো বিমান পাঠিয়ে দিলাম আর এক দুইদিনের মধ্যেই সে ভ্যাকসিন এসে পৌঁছালো এ বিষয়টি একদেশ থেকে অন্য দেশে যাত্রী আনা-নেয়ার মত বা সাধারণ পন্য বহনের মত এত সাধারণ বিষয় নয়। যারা মেডিকেল টার্মের সাথে জড়িত তারা এ বিষয়টি ভালো বুঝতে পারবেন।

যদি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুধুমাত্র করোনা ভ্যাকসিনই তৈরি করা হয় তখন ইনফ্লুয়েঞ্জা, রুবেলা, মাম্পস, মিজেলস (হাম) সহ অন্যান্য রোগের ভ্যাকসিনের ঘাটতি হবে কি না সেটাও সবার মাথায় রাখতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা ইতিমধ্যেই চেষ্টা করছেন যাতে করোনার কার্যকরী ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে তা সমানভাবে সব দেশের সব মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবে তা যে কি অসম্ভব একটা কাজ সেটা হু (WHO) এর সাথে অন্যান্য দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে করোনা বিষয়ক সম্পর্কের অবনতির কারনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই সংস্থাটিকে বিশাল অংকের বরাদ্দকৃত অর্থ দেয়া বন্ধ করেছে। করোনা ইস্যুতে চীনের সাথে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দহরমমহরম এবং চীন তাদেরকে দিয়ে পুরো বিশ্ববাসীকে করোনা সংক্রমণ নিয়ে প্রথম থেকেই ভূল পথে পরিচালিত করেছে এই কারন দেখিয়েছে অনেক ইউরোপীয় রাষ্ট্রও। ফলে চীনের সাথে অনেক দেশেরই কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে ইতিমধ্যেই। চীন হয়তো হতে যাচ্ছে ইদানিংকালের একছত্র পুঁজিবাদী রাষ্ট্র যা অন্যন্য দেশগুলো কিছুতেই ভালো চোখে দেখবেনা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এসব আশঙ্কা থেকেই ধারনা করছে, বিশ্বের পুঁজিবাদী দেশগুলো টাকার বিনিময়ে করোনা ভ্যাকিসিন তাদের জিম্মায় নেবার চেষ্টা করবে। সে কারনেই করোনার কার্যকরী ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে তারা সব দেশের সাথে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চায়।

বার্কলের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর করণীয় কতগুলো পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতিগুলোতেই গোলমাল বেঁধে যেতে পারে। প্রথমত, গোটা দুনিয়ার জন্য ভ্যাকসিন তৈরির টাকা কে দেবে? শুধুমাত্র বিল গেটস ফাউন্ডেশন ছাড়া আর কেউই তেমন কোন আগ্রহ দেখায়নি যারা অন্য দেশের মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে ভ্যাকসিন তৈরীতে মোটা অঙ্কের পুঁজির জোগান দিতে পারে।

দ্বিতীয়ত, ভ্যাকসিন কোন পদ্ধতিতে তৈরি হবে সেটাও একটা প্রশ্ন। এককভাবে কোনো দেশের ভ্যাকসিন উৎপাদন প্লান্টেই এই বিশাল পরিমাণ ভ্যাকসিন তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। আর এই জায়গাতেই সেসব দেশের সরকারের তরফ থেকে সাহায্য এবং সহযোগিতা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সে দেশের সরকার তাদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই ভ্যাকসিন ব্যবহার করবে কিনা এর নিশ্চয়তা কে দেবে? রাজনীতির রঙ বাদ দিয়ে সব দেশের সব মানুষের কাছে এই ভ্যাকসিন পৌঁছাবে কিনা এই সমস্যারও সমাধান করা জরুরী।

তৃতীয়ত, এই ভ্যাকসিন তৈরি করতে গিয়ে যেভাবে প্রোডাকশন এবং মানব সম্পদ ব্যবহার করতে হবে তাতে অন্যান্য অতিজরুরী প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনের সংকট দেখা দিতে পারে। যেসব দেশে ভ্যাকসিন প্লান্ট রয়েছে তারা যদি কোনোভাবেই ভ্যাকসিনের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে তাহলে তাদের মিত্র দেশ একভাবে ভ্যাকসিন পাবে আর শত্রু দেশের নাগরিকরা সে ভ্যাকসিন পাবে না সেক্ষেত্রে সময় নষ্ট হবে। আর এমনটা হওয়া অসম্ভব কিছুই নয়।

চলবে....

(তথ্যসূত্র এবং ছবি অনলাইন মাধ্যম থেকে নেয়া)

করোনা ভ্যাকসিন হতে পারে বিশ্ব রাজনীতির হাতিয়ার (প্রথম পর্ব)

0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ