এই গৃহবন্দী অলস সময়টা বিষন্ন বদনে হাপিয়ে উঠছি। কি করব বুঝে উঠার আগেই সাইনাসে মাথা ব্যাথাটা চাড়া দিয়ে উঠছে। উপায়ন্তরহীন হয়ে বাসা থেকে রাত ৯ টায় যখন বের হলাম তখন চতুর্দিকে শুনসান নিরবতা। চেনা শহর বড়ই অচেনা লাগে।
জনমানব শুন্য, রাস্তায় দাড়োয়ান গুলো মুখে মাস্ক লাগিয়ে কর্তব্য কাজে ব্যস্ত। পাড়ার দোকানগুলো আলোর নিচে কাস্টমারের প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে। বড় রাস্তায় ঔষধের দোকান গুলো মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

এমন সময় পুলিশ মিলিটারির কনভয় আলো ঝলমলে বাতি জ্বেলে সাইরেন বাজিয়ে বিপরীত দিক থেকে ধেয়ে আসছে। পিছন ফিরে দেখলাম ২/৩ টা রিক্সা , কার ও একজন দম্পতি হাটছে দেখে সাহস পেলাম। যাক তারা পাশ দিয়ে চলে গেলো। এক ঘন্টা হাটার পর ফুড়ফুড়ে মেজাজে বাসায় ফিরে আসলাম। অবশ্য আদর মাখানো আদা লেবু গরম জলের কথা না বললে অন্যায় হবে।

বাসার দাড়োয়ান হাসি মুখে অভয় দিলেন, স্যার কিছুই হবে না নিশ্চিত থাকুন। এই যে আমরা জীবাণু নাশক পানি ছিটাচ্ছি, গ্যারেজ সিড়ি ঘর, সিড়ি পরিষ্কার করছি। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা যথারীতি ময়লা আবর্জনা নিয়ে যায়, পেপার ওয়ালা পেপার দিয়ে যায়। সবজী ওয়ালা সবজী আনে। সবাই ভালো আছে , কিছুই হবে না। ভাবলাম সবাই কাজ করছে আমরাই শুধু হাত পা গুটিয়ে করোনা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।

আজ দাড়োয়ানের কথা শুনে সদ্যপ্রয়াত ডাক্তার নীহার দার কথা মনে পড়ছে। যিনি সারাজীবন মানুষের প্রশংসা আর অভয় দিয়ে গেছেন। যিনি বলতেন , সবার কাছে কিছু না কিছু ভাল গুণ আছে বের করে আনতে হয়। পাড়ার পরিত্যক্ত বখাটে ছেলে মুখোমুখি হতেই আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ”তুই তো খুব ব্রিলিয়েন্ট সমাজের অসংগতি গুলো কত সুন্দর করে বলতে পারিস। (গ্রামে সবাই পাগল বলত) এই গুণগুলো কারও কাছে নাই। তোর কাছেই আছে।” একটা গল্পের বই হাতে দিয়ে বললো, “প্রতিদিন ১০ পাতা পড়ে আমাকে বলবি আর আমার সাথে চা খেয়ে যাবি।” সত্যি সত্যিই সেই ছেলেটা মেধাবী হয়ে উঠল।

কোন রোগী দাদার কাছে গেলে দেখেই বলতেন তোর কোন কিছুই হয় নি। ঔষধ গুলো খাও কাজ কর্ম করো বিশ্রাম নাও ভাল হয়ে যাবে। সত্যি সত্যি রোগীরা সেদিন থেকে ফুরফুরে মেজাজে থাকে। দাদার প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে , সকল মানুষের কাছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে সেটা সচল রাখতে হয়। মনোবল ভেঙে দেয়া যাবেনা।

এখন আসি করোনা নিয়ে। এতো আলোচনা সমালোচনা ধারনাটা কি হলো।
করোনা ঘাতক ব্যাধি, বিস্তার লাভ করে সংস্পর্শে , ১৪ দিন পড়ে বুঝা যায়।
ফেব্রুয়ারী থেকে কয়েক লক্ষ লোক বিদেশ থেকে আসা যাওয়া করেছে।
ধরে নিলাম ২০ জন লোক করোনা আক্রান্ত ছিল ধরা পরে নি এবং ৫ জন লোকের সাথে মিশেছে এবং করোনা রোগ ছড়ালে বৈজ্ঞানিক ব্যাখায় কি হল আসুন দেখি।

1. 20 X 5 = 100 1st day
2. 100 x 5 = 500 2nd day
3. 500 x 5 = 2500 3rd day
4. 2500 x 5 = 25000 4th day
5. 25000 x 5 = 125000 5th day
6. 125000 x 5 = 625000 6th day
7. 625000 x 5 = 3125000 7 th day
8. 3125000 x 5 = 15625000 8th day
9. 15625000 x 5 = 78125000 9th day
10. 78125000 x 5 = 390625000 10th day

মানে দশম দিনে ৪০ কোটি লোক আক্রান্ত হওয়ার কথা । ৫% যদি মারা যায় এতদিনে ২ কোটি লোক মারা যাওয়ার কথা যা হয়নি।

আসুন আতঙ্কিত না হয়ে
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে,
নিজের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যা যা করবেনঃ

১. ধূমপান বাদ দিন।
২. অ্যালকোহল পান করবেন না।
৩. প্রতিদিন গোসল করুন। সম্ভব হলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান কিংবা বডিওয়াস (ডেটল, লাইফবয়) ব্যবহার করুন।
৪. ঠাণ্ডা-জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুন যেমন : আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিঙ্কস, জুস।
৫. ভিটামিন সি যুক্ত খাবার/ফল খান। যেমন : অরেঞ্জ জুস, লেবু।
৬. সূর্যের আলো ত্বকে নিন। (ভিটামিন ডি)
৭. ঘনঘন হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
৮. ভালভাবে সেদ্ধ করা খাবার খান। যেমন : ডিম, মুরগির মাংস।
৯. অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
১০. আদা চা, তুলসী চা, মধু ইত্যাদি পান করুন।
১১. ইয়োগা বা ব্যায়াম করুন।

করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম। এটা সবাইকে আক্রমণ করতে পারলেও সবার মৃত্যু ঘটাতে পারবে না। আপনার শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা আপনাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পারে। তাই আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্ক হোন। জনসমাগম এড়িয়ে চলুন,

বারবার হাত ধোয়া ও হাত নাকে-মুখে-চোখে না লাগানোই সবচেয়ে ভালো প্রতিরোধ। হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে সাবান-পানি সবচেয়ে কার্যকর। করোনাভাইরাসের বাইরের আবরণটি চর্বির। কাজেই ক্ষারযুক্ত যেকোনো সাধারণ সাবান এ ক্ষেত্রে কার্যকর। কারণ, ক্ষারে চর্বির আবরণটি ভেঙে যায়, হাত ভাইরাসমুক্ত হয়। সাবান-পানি না থাকলে অ্যান্টিসেপটিক হ্যান্ডওয়াশ বা অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে পারেন।

করোনা ছড়ায় যেভাবে: সংক্রমিত ব্যক্তির শ্বাসপ্রশ্বাস, হাঁচি-কাশি কিংবা কথা বলার সময় মুখ থেকে নিঃসৃত তরল কণা বা ড্রপলেটের মাধ্যমে বেরিয়ে এসে যেকোনো বস্তু বা তলে লেগে যায় করোনাভাইরাস। সে জায়গা স্পর্শ করলে হাত থেকে ভাইরাসটি নাক-চোখ-মুখ দিয়ে সুস্থ ব্যক্তিও আক্রান্ত হতে পারে। তাই পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। অন্তত তিন ফুট দূরে থাকতে হবে।

গরম জলে লেবু খান
*******************
লেবু খেতে পরামর্শ চাইনিজ গবেষকের
করোনাভাইরাসের মহামারীতে যখন স্তব্ধ পুরো বিশ্ব তখন এ থেকে সুস্থ হওয়ার পথ্য জানালো গবেষক জিয়াও সেনমি মিনজি। চীনের জানজান ইউনিভার্সিটির মেডিকেল সাইন্স বিভাগের এই গবেষক বলছেন, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে যাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ।

করোনা থেকে বাঁচাতে পারে এক টুকরা লেবু আর এক কাপ গরম পানি। এক্ষেত্রে একটি লেবু টুকরা করে কেটে এক কাপ গরম পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে। লেবুর এই পানীয়টি শরীরে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকায়।

প্রতিদিন এই পানীয় পান করার পরামর্শ দিয়েছেন এই চাইনিজ গবেষক। এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক ও চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি জানিয়ে এর প্রতিরোধের উপায় জানিয়ে মিনজি আরও জানান, লেবুর এই পানীয়টি করোনা প্রতিরোধের পাশাপাশি প্রতিষেধক হিসেবেও কাজ করবে। এছাড়াও এটি শরীরের অন্যান্য ভাইরাস এবং ফ্লুর বিরুদ্ধেও লড়াই করতে সহায়তা করবে। লেবুর রসে রয়েছে কার্বলিক এসিড, যা উচ্চ রক্তচাপ কমায়। এমনকি বাতের ব্যথা ও রক্ত জমাট বাধার সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।

আসুন আতন্ক নয়, সচেতন থাকি। ফুর ফুরে মেজাজে কাজে কর্মে ব্যস্ত থাকি। করোনাকে করি প্রতিরোধ।
সুযোগ পেলে পরে লিখব কে কি করছি ?
সবাই ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।

0 Shares

৪২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ