করোনায় রদবদল

রোকসানা খন্দকার রুকু ২২ জানুয়ারি ২০২১, শুক্রবার, ০৯:২৩:১৫অপরাহ্ন সমসাময়িক ২২ মন্তব্য

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাচ্ছে এমনটা আশা করা যায় কারন হাইকোর্ট রুল জারি করেছে কিংবা নির্দেশ দিয়েছে। আর না খুলে কিইবা করার আছে। এগার মাসে স্টুডেন্টরা কি পড়েছে নিজেই জানে না। পড়াশুনা না করে সব খরগোস হয়ে যাচ্ছে।

আটকে থাকা অনার্স ফোর্থ ইয়ার পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সামায়রা হক বেশ ফুরফুরে মেজাজে, আনন্দিত হয়েই আজ কলেজে এসেছেন। বাকি শিক্ষকদেরও একই অবস্থা। সবাই এই হাড়কাঁপানো শীতে হাজির কলেজে এবং বেশ আনন্দিত। যেন নতুন নতুন এক আমেজ।

করোনায়  চারিদিকে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গেটে স্যানিটাইজার সহ সকল করোনার বিধি অনুযায়ী স্টুডেন্টদের ভেতরে নেয়া হচ্ছে। পরীক্ষা দিতে পেরে তারাও উৎফুল্ল। তিনফুট দুরত্ব মেইনটেন করে পরীক্ষার হল সাজানো হয়েছে।

সিনিয়র শিক্ষকদের দুএকজন মারা গেছেন করোনায়। সেটা নিয়ে সবার মাঝে একটা কষ্টবোধ তো আছেই; সাথে সৃতিচারণও হচ্ছে। ভালো মানুষদের হারানোটা বড়ই বেদনার।

অনেকদিন কলেজ বন্ধের এই ফাঁকে সব রঙ করে ফেলা হয়েছে। বেশ ঝকঝকে সুন্দর লাগছে সবকিছু। ফুলের বাগানগুলো বেশ পরিস্কার ও বাহারী ফুলে ভরে গেছে। কিছু গাছে গোলাপ ফুটে টকটকে সিঁদুর কালার হয়ে আছে। মেয়েদের ক্যান্টিনটা বন্ধ তাই সেখানে কারুর আড্ডা নেই। হোষ্টেল বন্ধ ছিল তারপরও মাদী কুকুরগুলো ঠিকই ফুটফুটে বাচ্চা দিয়েছে। কি খেয়েছে আল্লাই জানে, তবুও ছেড়ে যায়নি প্রিয় আবাস। মাঠে স্টুডেন্টদের গার্ডিয়ান ও বাচ্চা আগের তুলনায় খুব কম দেখা যাচ্ছে। করোনার জন্যই হয়ত আসেনি।

সবচেয়ে মজার ও লক্ষণীয় বিষয় হল, ফোর্থইয়ারের মেয়েরা যেহেতু মোটামুটি ম্যাচিউরড হয়। তাই করোনায় বসে না থেকে তারা ঝটপট বিয়েটা সেরে সময়কে কাজে লাগিয়েছে। অনেক মেয়েকে প্রেগন্যান্ট দেখা গেল। প্রায় সময় হয়ে এসেছে বেবী হবার। তারা ঘনঘন বাথরুমে যাচ্ছে।

করোনায় ইমিউনিটি বাড়াতে সবাই পুষ্টিকর খাবার বোধহয় একটু বেশিই খেয়েছেন। তাই অধিকাংশ শিক্ষকের গাল ফুলে টুসটুসে, ভুঁড়ির অবস্থাও কুমড়ো। কাউকে কাউকে বেশ সুন্দরও লাগছে। কলেজ স্টাফদের কেউ কেউ দাঁড়ি রেখেছেন; সাথে পাকা হলে মেহেদী কালারও করেছেন। কারও কারও মাথায় টুপি, তারমানে নামাজও শুরু করেছেন।

এতকিছু বদলালেও একটি বিষয় ঠিক আগের মতই আছে। মানুষের চরিত্র একই রকম রয়ে গেল। করোনা চরিত্র বদলাতে পারল না। বিগত চারবছর ধরে সামায়রা হক কলেজের এই একই দৃশ্য দেখছেন। আর এ দৃশ্য দেখার সময় তার চেয়াল শক্ত হয়, তিনি ভেতরে ভেতরে কাঁপতে থাকেন। শিক্ষকতা জীবনের পুরোটাই হয়ত এ চিরাচরিত দৃশ্য দেখেই অসহায়ের মত কাটাতে হবে।

পরীক্ষা শুরু হবার ঘন্টা খানেক পর মুল ফটক পেরিয়ে পরিচিত কজন ছেলে ঢুকল। তারা প্রতিবছরই আসে। সিনিয়র অধ্যাপকদের সঙ্গে সালাম বিনিময় করে। কিছুক্ষন পরে তারা রুমে রুমে যায় এবং তাদের পরীক্ষার্থী দের পরিচয় করিয়ে দেয় কিংবা রোলনম্বরের চিরকুট ধরিয়ে দেয়। পিয়নদের দিয়ে চেয়ার এনে তাদের বসতে দেয়া হয়। কেউ বসে, কেউ দাঁড়িয়ে থাকে। কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা হয়। কিছুক্ষন পরে দায়িত্বরত একজন শিক্ষককে ডেকে নেয়া হয়। তাকে কোন একটা বিষয় বোঝানো হয়। তিনি কিছু বুঝলেন কিনা সেটা বেশ ঘোলাটে। কারন তিনি ঘনঘন মাথা চুলকাচ্ছেন। প্রচন্ড শীতেও ঘেমে গেলেন বলে মনে হল। কিছুক্ষন পরে তিনি পাশ থেকে একটি চেয়ার টেনে নিয়ে একটু দুরে বসে কি যেন ভাবতে থাকলেন। আর মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের ডিউটি রুমের দরজার দিকে তাকাচ্ছেন। ডিউটিরত পুলিশের দিকে তাকাচ্ছেন। পুলিশকেও অসহায় পায়চারী করতে দেখা যাচ্ছে। যেন আশেপাশে কোথাও কিছু ঘটছে না, সব পারফেক্ট।

হ্যাঁ, যারা পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে গেটের ভেতরে ঢুকলেন; তাদের ক্যান্ডিডেট আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্যান্ডিডেট ইংরেজীতে অনার্স পড়ে। প্রথম বর্ষ থেকে শুরু করে অদ্যবদীও মেয়েটি পড়াশুনা করে পরীক্ষায় বসেনি। পরীক্ষা শুরু হবার পর পিয়ন দ্বারা নেতার কাছে কোয়েশ্চেন চলে যায়। তিনি সেটা খুঁজে খুঁজে সলুশন গুলোকে পাশেই ফটোকপি মেশিন কম্পোজ করে ঘন্টাখানেকের মধ্যে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসেন । অতঃপর পিয়নকে দিয়ে রুমে পৌঁছে দেন। পরীক্ষার্থী খাতার নিচে রেখে কপি করতে থাকে। শিক্ষকরা দেখেও না দেখার ভান করে তাদের দায়িত্ব পালন করেন। যে শিক্ষককে ডেকে নেয়া হয়েছে তিনি একটু আপোষহীন। নেতা কিংবা তার বউ চেনেন না। তিনি মেয়েটিকে ডিস্টার্ব করছিলেন। তাই তাকে ডেকে নিয়ে ভদ্র ভাবে চিনিয়ে দেয়া হল সবাইকে নজর দিতে নেই। আর তিনি এ দৃশ্য দেখবেন না কিংবা সহ্য করতে পারবেন না বলেই মাঠেই বসে রইলেন।

বহুসময় হাস্যরসের পর দলটি পরীক্ষার হলের সামনে গিয়ে ক্যান্ডিডেটকে হাত নেড়ে বিদায় নিল। এই পডুয়া শিক্ষার্থী নাকি এবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবার জন্য আবেদনও করেছে।(এ বছর করোনার কারনে চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা আটকে থাকা শিক্ষার্থীদের আবেদন করার সুযোগ দিয়েছ)। হয়ত তার বিসিএস ও হয়ে যাবে। কারন তার স্বামী একজন নেতা এবং তিনিও সরকারী চাকুরী করেন। এ সময় তার অফিসে থাকবার কথা হলেও তিনি কলেজে বউ এর ভবিষ্যৎ গড়তে ব্যস্ত।

একটি ছেলে চোখ মুছতে মুছতে বেড়িয়ে যাচ্ছে। দুবার স্যারের পায়ে ধরার পরও তার খাতাটা ফেরত দেয়া হয়নি। তার অপরাধ যে গুরুতর, সেও ছোট্ট কাগজের টুকরো দেখে দেখে লিখতে গিয়েছিল। শিক্ষক সেটা হাতে নাতে ধরে ফেলেছেন। সবার অপরাধ মানায় না , মেনে নেয়াও যায় না। সাধারণ কৃষকের ছেলে সে; কেইবা তার জন্য সুপারিশ করবে। সব ইয়ারেই তার জিপিএ থ্রি। প্রথম শ্রেনীর মেধাবী ছাত্রটিও বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন করেছে। আর তার পরীক্ষা দেয়া হল না।

সামায়রা হক ছেলেটির চলে যাওয়া দেখলেন। পাশ ফিরে নিজের চোখের জল লুকোলেন।এ ছাড়া আর কিছুই করার নেই। এই সামায়রা হকদের মত দুপয়সার শিক্ষকরা এসব সহ্য করতে পারে না কেন কে জানে? যত সব নেকামী দেখার সময় আছে? সবার সব অধিকার থাকে না। শুধু মহৎ কাজের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের পরিবার-পরিজন এমনকি বাড়ির কাজের মানুষেরও যেকোন সুযোগ- সুবিধা পাবার অধিকার থাকে। এটা সাধারণের খুব ভালোভাবে মনে রাখা উচিত!

 

এই তো হয়ে গেল মার্কিন নির্বাচন। শপথ অনুষ্ঠানও শেষ। রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত জো বাইডেন এর প্রথম বক্তব্য এমন ছিল-

 

"আমি দেশ সার্ভ করতে এসেছি, ব্যাংক-ব্যালেন্স বাড়াতে নয়। যদি ব্যাংক-ব্যালেন্স বাড়ানোর ইচ্ছা থাকতো তবে ব্যবসায়ী হতাম, রাজনীতিবিদ নয়। রাজনীতি হলো বিলিয়ে দেওয়ার জায়গা,বিলিয়নিয়ার হবার নয়। ব্যবসায় মুনাফা থাকে,রাজনীতিতে থাকে শুধু সেবা। এই সেবাটাই হলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় মুনাফা!"

_______________জো বাইডেন।

আমরা কি এমনটা আশা করতে পারি কোনদিন, কোন রাজনীতিবিদদের কাছে? 😢😢

ছবি- নেট থেকে।

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ