
ছেলেটি বাবার সাথে কথা বলে না বেশ কিছুদিন ধরেই কারন তার স্মার্ট ফোন নেই। এবার সে ইন্টারমিডিয়েটে অটোপাশ দিয়েছে। ম্যাট্রিকে জিপিএ ফাইভ ছিল, এবারও পাবে। সামনে ভার্সিটি এডমিশান টেস্ট । বন্ধুদের সবাই অনলাইন কোচিং এ ভর্তি হয়েছে। দিব্যি অনলাইন ক্লাস করছে। তারা হয়ত চান্সও পাবে আর সে কিনা নিজে নিজে প্রিপারেশান নিচ্ছে। এভাবে হবে কিনা সে জানেনা। মনের দুঃখে সে বাবার সাথে কথা বলেনা।
তার বাবা এনজিওতে কর্মরত। করোনার সময় বৈদেশিক সাহায্য কমে যাওয়াও এনজিও গুলোতে কিছু ছাঁটাই-বাছাই চলেছে। তাতে তিনি কয়েকমাস কর্মহীন ছিলেন। বাসাভাড়া ও অন্যান্য খরচে বেশ ঋণ- দেনা হয়েছে। তাই এখনও শোধ দিতে পারেননি। ফোন কেনা, অনলাইন কোচিং ভর্তি মিলে অনেক টাকার প্রয়োজন। এই সময়ে তিনি কোথায় পাবেন? ছেলে মেধাবী যা থাকে কপালে! এদিকে আবার রাতের ঘুমও হারাম যদি কিছু অঘটন হয়, তাহলে তো ছেলের উচ্চশিক্ষার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। অবশেষে বেতনের উপর লোন নিয়ে ছেলেকে ভর্তি করালেন কোচিংএ ও ফোন কিনে দিলেন!
********
বিকেলের শেষ রোদ পোহাতে পোহাতে, আপা ভাবীদের হাতে ঝকঝকে স্মার্টফোন। বলতে- শুনতে ভালোই লাগে-
*আর বইলেন না ভাবী, যা কষ্ট গেল বাচ্চাদের নিয়ে। অনলাইন ক্লাস আর অনলাইন পরীক্ষা কি যে একটা অবস্থা।”
*আমাদের তো একটাই স্মার্টফোন ছিল, বাবুর বাবাকে বলে একটা নতুন আনালাম; সারাক্ষন অনলাইন থাকতে হয়ে, কেউ কেউ তো ভাবে ফেসবুক চ্যাটিং এসব করি”
*হ্যাঁ সেটাই ভাবী, ব্যাটারা তো অনলাইন দেখলেই ম্যাসেজ দেয়, বিরক্তিকর!”
*আমি তো অনেকগুলারে ব্লক মারছি। তবে এটা ঠিক বাবুদের পড়ানোর নাম করে সবার সাথে মন খুলে কথা বলতে পারছি; কত কথা যে জমা ছিল”!
* আমিও ভাবী, ও তো কিছু কইতেও পারে না। আবার চা বানায়েও খাওয়ায়”।
হা হা হা হা।হি হি হি হি।
স্বামী বেচারাদের আয় উন্নতি করোনায় একেবারে তলানীতে। তাতে কি? বাচ্চা বলে কথা! স্মার্টফোন এর সাথে ওয়াই ফাই কানেকশান কিংবা প্রতিদিন জিবি।
না হলে বউ এর চিৎকার,এই তোমার ছেলে ক্লাস করবে এখুনি ১০০ জিবি পাঠাও”। স্বামী বেচারা পড়িমরি করে ভোঁ দৌড়!
১০০ জিবি পেয়েই তিনি ইউটিউব এ ঢুকে শিখলেন; কিভাবে গোল আলু রান্না করতে হয় কিন্তু কেউ খেয়ে বুঝতেই পারবেনা এটা গোলআলু না ডিম।
******
মা-বাচ্চাসহ ফোনের সামনে উপুর; কিছুক্ষনের মধ্যেই ক্লাস শুরু হবে। অবশেষে মেকাপের সাথে ম্যাডাম হাজির। শাড়ির ভাঁজ আর লিপষ্টিক এর চিন্তায় কি যে বলবেন বলে এসেছিলেন তাই মনে নেই। কি আর করা ” কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ” এমন হবেই! সবটা মেনে- মানিয়ে চলতে হবে।
রাতে ফিরে বাবা ছেলেকে প্রশ্ন করল,” বাবা আজ কি শিখলে?
ছেলের উত্তর, হ্যাঁ বাবা প্রথমে শিখলাম ম্যাডাম সুন্দর নীল শাড়ি পড়েছিল আর,,আর ,,, মনে নেই। তুমি মাকে জিজ্ঞেস কর? মা ভালো বলতে পারবে।
এবার অনলাইনে পরীক্ষা শুরু হবে। অনেক খেটেখুটে, গবেষণা করে প্রশ্ন কর্তাগণ প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন। বাবা-মা, পরীক্ষার্থী সবাই টেনশানে বাথরুম যায় আর আসে। কারন শিক্ষক নিজেই জানেন না; করোনাকালীন অনলাইন প্রশিক্ষণের, অনলাইন বোঝাপড়ায়, অনলাইন প্রশ্ন তিনি ক্যামনে করেছেন। একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন!
*******
যে কোনভাবেই হোক মোটামুটি স্বচ্ছল যারা তাদের বাচ্চাদের পড়াশুনা, পরীক্ষা সব শেষ। কিন্তু তাদের কি হবে যাদের ওয়াই-ফাই বা নেট নেই, স্মার্টফোন নেই? দুবেলা ভালো করে খেতে পারেনা, ভালো কাপড়-চোপড পরতে পারেনা। নেই কোন অনলাইন জ্ঞান কিংবা সৃজনশীল প্রশ্নও যাদের বাবা-মা বোঝেনা। তাদের কি স্মার্টফোন ছিল কিংবা তারা অনলাইন ক্লাস করেছে? পরীক্ষা দিয়েছে?
করোনা নাকি এসেছে বড়লোক, অসাধু, ঠক-বাটপার কমাতে! আসলে আমরা দেখছি উল্টোটা। কেউ ফায়দায়- কায়দায় ভরপুর। আর সেই কলোনী, বস্তি, গ্রামের গরীব, সাধারণ কৃষকের ছেলেমেয়েরা তারা আরও নিস্পেষিত। সমাজতন্ত্র আর সাম্যবাদ হাহাকার করছে তাদের ঘরে ঘরে!!!কেইবা দেখবে!!!
১৭টি মন্তব্য
তৌহিদ
অনলাইন ক্লাসে সুবিধে অসুবিধে দুইটাই আছে। আমরা বাচ্চাদের মাঝে এই অনলাইনে নিজেরা কে কিরকম আচরণ করছি বাচ্চারা তার উপরেই দীক্ষিত হচ্ছে। এছাড়া কিছু এডাল্ট কন্টেন্ট চলে আসে যা বিব্রতকর। এসব নজরে রাখতে হবে।
যাদের আয়রোজগার কম তারা হারে হারে টের পাচ্ছে নিত্যদিন মেগাবাইট কেনার জ্বালা। ফোর টুইন্টিতো আছেই অনেকের।
ভালো লিখেছেন আপু। শুভকামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সুবিধা অসুবিধা দুটোই। সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইলো ভাইয়া।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
মানবিকতায় অত্যন্ত সময়ের উপযোগী পোষ্ট।
কথায় আছে গরীবের কষ্ট নাকি কোন কালেই যায় না
করোনা কালেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
খাদ্য বস্ত্র শিক্ষা চিকিৎসা সবদিকেই অসহায়ীরা আজ বিপর্যস্ত।
ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল পাশ
কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ।
মূল্যবান উপস্থাপনায় মুগ্ধতা ও ভালোলাগা একরাশ।
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রইল অন্তহীণ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
শুভ কামনা রইলো।
ফয়জুল মহী
দেশটা চলছে অনলাইনে এখন সুখটা অনলাইলে কিনতে পারলে হলো
রোকসানা খন্দকার রুকু
সুখ কি আর অনলাইনে পাওয়া যায়।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
শুভ কামনা রইলো।
আলমগীর সরকার লিটন
সময়উপযোগি লেখা ভাল লেগেছে রুকু আপু অনেক শুভেচ্ছা রইল
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ লিটন ভাই। আপনিও ভালো থাকবেন। শুভ কামনা রইলো।
খাদিজাতুল কুবরা
আহা!
কি লিখলে বন্ধু!
কাল আবার পড়বো তারপর দেখি মাস্টার মশাইকে কি বলা যায়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা। ঠিক আছে। লিখতে বললে তাই লিখলাম। এখন উল্টো এসে আমারেই,,, অপেক্ষায় রইলাম🥰🥰
খাদিজাতুল কুবরা
এই দেখো, নীল শাড়ীতে মাস্টার মশাইকে কতো সুন্দর লেগেছে সেটাই বলতে চেয়েছি ভাই আর কিছু না।
সত্যিটা হচ্ছে এই অনলাইন ক্লাসের জ্বালায় জীবন তেজপাতা হইয়া গেছে। বিচ্ছু বাহিনীকে স্কুলে পাঠিয়ে তবু একটু তিষ্ঠোনো যেন। অনলাইন তো মাম্মাকে সহ ক্লাস করায়।
খুব ভালো লিখেছ বন্ধু!
রোকসানা খন্দকার রুকু
আর নতুন ঝকঝকে স্মার্টফোন আগেরটা চলছে না, এ অজুহাতে বরের কাছ থেকে পেলে তার কি হবে? তার জন্য তো একটু কষ্ট করতে হবে।
হাজার হাজার শিক্ষার্থী ক্লাস ও পরীক্ষা কিছুই দেয়নি তাদের কি হবে? আইবুড়ো হয়ে আগের ক্লাসেই থাকবে কিংবা পড়াশুনা ছেড়ে দেবে।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য❤️❤️❤️
খাদিজাতুল কুবরা
তা অবশ্য ঠিক। অনলাইন ক্লাস শিক্ষার্থীদের দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতোই।
বর ফোন কিনে দেওয়ার লোক নয় বন্ধু!
তাই তো এতো রাগ!
যা হোক আমাদের সবার একটাই চাওয়া এই স্থবিরতা আর ভালো লাগেনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হায়রে অনলাইন ক্লাস !! জীবন এক্কেরে তেজপাতা করে দিয়েছে।যারা এমবি কিনে ক্লাস করেছে তারা জানে কতটা কষ্টের এই এমবি কেনা, কত কষ্ট করতে হয়েছে বাপ-মাকে এই টাকা জোগাড় করতে। কারো পৌষ মাস আর কারো সর্বনাশ এটাই হয়েছে করোনাতে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু এই বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য। শুভ রাত্রি
রোকসানা খন্দকার রুকু
একদম ঠিক বলেছেন দিদিভাই। জীবন তেজপাতা। এমনি চাল তেল পেয়াজে জীবন শেষ তারউপর মরার উপর খরার ঘা। ধন্যবাদ ও ভালোবাসা রইল।🥰🥰
আরজু মুক্তা
আমার যা মনে হয়, বাচ্চারা কিছুই শেখেনি এবছর। শুধু টাকা মাটি। আর সাধারণ জনগণ বরাবরি উপেক্ষিত।
অনলাইন ক্লাসের একটাই সমস্যা সব বাচ্চারা ক্লাস করতে পারেনা। আর যারা বুঝলো, তারা শেয়ারিং করতে পারেনা, কী বুঝলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ক্লাস ছাড়া কি পড়া হয়! তারাতারি সমস্যা শেষ হোক এই কামনা করি। শুভ কামনা রইলো। শুভ সকাল❤️❤️