গতবছর আর এই বছর ঈদের পুরো কাহিনিই পাল্টে গেছে। গত বছর করে ছিলাম হন্টন যুদ্ধ। এবছর চলছে করোনা যুদ্ধ।

গত বছরের ঘটনাঃ
বউ কিছুদিন ধরে ঘ্যান ঘ্যান প্যান প্যান করছিল মার্কেটে যেতে। সময় করে উঠতে পারিনি। কাল বউ নাছোর বান্দা। যেতেই হবে। বাহিরে প্রচন্ড রোদ রোজা রেখে কীভাবে যাই? বললাম আছর নামাজের পর বের হব। টোনাটুনি বাইরেই ইফতার সেরে ফেলব। কতদিন দুজনে একসাথে ঘোরা হয়নি। এ উছিলায় ঘুরাও হবে আর রেস্তোরায় বসে দুজনে লাচ্ছি টাচ্ছি খাব। ভাবনাটা ভালোই ছিল। কিন্তু বাদ সাদলো ঘরেফিরা মানুষের ঢল আর লোকাল বাস এর রিজার্ভ বাস হয়ে যাওয়া। রিক্সা আর টেম্পু গুলার হলো মওকা মারার দিন। গাজীপুরা থেকে টংগী ভাড়া ২০০ টাকা। বউ রে বললাম চল বাসায় যাইগা আজকা আর কাম নাই। বউও নাছোর বান্দা। দুইশ হোক পাচশ যাওন লাগব।
কি আর করা। রিক্সা করে গেলাম টংগী বাজার। কিন্তু
এই বাজারের পরিবেশ নয়তো মজার।
গাদা গাদা মানুষ হামলে পড়েছে। ঠ্যালা ঠ্যালি আর ভ্যপসা গরমে অসস্থী চরমে। কি বাজার করব। কোন দোকানের সামনে দারিয়ে কিছু কেনা তো দুরের কথা দেখতে গিযেই নাকাল । মহা ফাপর। এদিকে বউতো আমাকে নিয়ে এ দোকান সে দোকান করেই চলছে। কোন কিছু কেনা হচ্ছে না। এর মধ্যে হয়ে গেল ইফতারের সময়। একটি হোটেলে ঢুকে ইফতার সারলাম। তারপর চললাম উত্তরার দিকে। না গাড়ি নাই। আবরো রিক্সায়। ভাড়া ২০০ টাকা। কিছুই কিনলাম না টাকা সমানে খরচ। নামাজ পড়ে শুরু হল পুনরায় কেনা কাটার সংগ্রাম।
এখানে এসি। ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। আমার বউ যথারিতি দৌড়চ্ছে এ দোকান সে দোকান। আমি একটি চেয়ার বসে রইলাম। বাজেট কম তাই যেমন দৌড়াদৌড়ি হইল তেমন কেনা কাটা হইলো না। তারপরও এ কাজ করতে করতে বেজে গেল রাত সারে এগারটা পোনে বারোটা। দুজনে বের হলাম । রাস্তায়া একটা শুপ্রভাত বাস পেলাম। সিটিং সার্ভিস উঠে পড়লাম। ভাড়া নিল ডাবল। সেদিকে আর তাকালাম না । বাস পেয়েছি এতেই আমরা খুশি। কিন্তু এ খুশি বেশীক্ষন স্থায়ী হলা না। টংগী স্টেশন রোড এসে পড়লাম মহা মহা জ্যামে। রাত তখন বাজে সড়ে বারোটা। নেমে পড়লাম দুজনে ......। শুরু হলো হন্টন।

পার্কে হাত ধরে হাটতে হাটতে কপত কপতি চিনে বাদাম খায়। কি মজা। আমারা হাত ধরে হাটছি তবে বাদম খাওয়া সুখের হাটা নয় ঠেকায় পরা ফাপরের হাটা। রাস্তায় প্যাক কাদা, ডাস্টবিন ভাংগা এসব পার হয়ে সাবধানে হাটছি। মাঝে মাঝে মাঝ রাস্তাদিয়ে গাড়ি ফাঁক দিয়েও হাটতে হচ্ছে। ভয়ও করছে কখন গাড়ি ছেরে দেয়। তাহলে আর দেখতে হবে না দু গাড়ির চিপায় পড়ে সেন্ডুইচ। এমন হল্ দিল গাড়ি ছেড়ে। বউকে নিয়ে দিলাম দৌড়। না জম্যামতো গাড়ি আবার থেমে গেলো। আমরা কোন মতে রাস্তার সাইডে চলে আসলাম। এভাবে হন্টন যুদ্ধ শেষে রাত দেড়টায় আমরা গাজীপুরা পৌছলাম। এখান থেকে
আমাদের সাতাইশ এলাকার সাবরোড। রিক্সা পেয়ে গেলাম অনেক। কিন্তু ভাড়া অনেক বেশী। লোকের ভীরও বেশী। ক্লান্ত শরীর উঠে পড়লাম রিক্সায়। গত বছরের হন্টন যুদ্ধে জয় করা ঈদের আনন্দের মজাই ছিল অন্যরকম।

করোনায় ঈদ উল ফিতর২০২০ঃ
করোনার মাঝে এসেছে রমজান চলেও গেল। আজ রোজা ত্রিশটি পূর্ণ করে আসবে খুশির ঈদ।

ওমোর রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।

কিন্তু কথা হলো করোনা কালে ঈদটি কি খুশির হবে? ঈদগাহে নামাজ পড়া যাবে না। কোলাকুলি না করে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কারো বাসায় যাওয়া যাবে না। এমন একটি
উদ্ভট পরিবেশে ঈদ কতটা খুশির হবে। ঈদ আজ খুশি ময় নয়। করোনাময় ঈদ। সালাম করার জন্য পোলপান পা ছুতে পারবে না। যদিও ছুতে হয় হাত ধুতে হবে। কিন্তু পোলপান কি আর স্বাস্থ্যবিধী বোঝে? আমরা দামড়া বুড়ারাইতো বুঝি না। এ বছর ঈদ হবে স্বাস্থবিধীর ঈদ। এটা করা যাবে না। ওটা করা যাবে না টাইপ ঈদ। অবরিত আনন্দটা এবার গিলে খেলো করোনা। কেমন হবে এমন নিয়ন্ত্রিত ঈদ? গত বছর ঈদের আগের দিনটি ছিল বাজার করার টেনশন মানুষের ভীর ঠেলে হন্টন করে বাসা পৌছার টেনশন। কিন্তু সেটাতেও ছিল ঈদের আনন্দ মাখা একটা উত্তেজনা । কিন্তু এবার ঈদের আগের দিনটিতে তেমন কোন থ্রিল নেই। পানসে পানসে কেমন যেনো করোনাময় পরিবেশ। মনে হচ্ছে করোনা এখন আর মানুষের মাঝে শুধু নেই সে এখন আক্রান্ত করেছে আমাদের সকল খুশিগুলোকেও। যে ছেলে মা ছাড়া ঈদ করেনি আজ করোনার ট্রেপে পরে সেও আটকে আছে। মায়ের বুকে ফিরে তার হাতের সেমাই পায়েশ খেতে পারছে না। সন্তান পিতা ছাড়া ঈদ করছে। মোট কথা পারিবারিক শূন্যতার মাঝে গোৎতা খাচ্ছে এবারের ঈদ উল ফিতর । ডিজিটাল জমানার কারনে যাদের স্মার্ট ফোন আছে তারা হয়তো আপনজনের চেহারাটা দেখতে পাবেন। কিন্তু সেটা অনেকটা দুধের সাধ ঘোলে মিটানোর মত। কি আর করা এই ঘোল খেয়েই ঘোলা পরিবেশে ঈদের আনন্দ খুজে নেই সবাই। সবাইকে ঈদ মোবারক!

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ