গত কয়েকদিনে বিভিন্ন সংবাদপত্র পড়ে এবং ভিডিও দেখে মনটা খুবই বিষণ্ণ হয়ে আছে। কিছু কিছু কঠিন সত্য সামনে এসে দাড়িয়েছে, যা আসলে এমন ভাবে আসা ঠিক হয়নি। সর্বগ্রাসী করোনা আমাদের এই কঠিন সত্যের মুখোমুখি করে দিয়েছে যা সহ্য করার মত মানসিক শক্তি অর্জন করাটা একেবারেই অসম্ভব। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের এমন অসহায়ত্ব আগে হয়ত হয়েছে আরো, তবে আমার জীবিতাবস্থায় মানবতার এমন বিপর্যয় আর শুনিনি।
জীবনে বেঁচে থাকার চরম সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি নিজেই। অনুভুতি শূন্য জড় হলেও এর চেয়ে ভালো হতো। কিছুই স্পর্শ করতে পারত না আমাকে তাহলে।
মৃত্যুর সময়ে আমরা প্রিয়জনদের মাঝে থাকতে চাই। একাকী নিঃসঙ্গ মৃত্যু কারো কাম্য নয়। মৃত্যু পরবর্তী সময়ে যদিও মৃত ব্যাক্তি এসব অনুভবে থাকেন কিনা জানিনা, তারপরেও মৃতের কাছের আত্মীয় পরিজন যতটা সম্ভব অংশ নিয়ে মৃতের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সমাধান করেন। মৃতের আত্মীয় স্বজন এতে শান্তি লাভ করেন। কবরে নাম ফলক বা এপিটাফ লিখে রাখা হয়। মৃত্যু দিবসে স্বজনরা এসে দোয়া করেন, আত্মার শান্তি কামনা করেন, ফুল দেন, স্মরণ করেন।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা মানুষের এই চাওয়া পাওয়াকে কঠিন এবং নির্মম ভাবে পালটে দিয়েছে। ফিচার ছবিটা নিউইয়র্কের একটি গণকবরের ছবি। করোনায় মৃতদের নিউইয়র্কের হার্ট আইল্যান্ড এ গণকবর দেয়া হচ্ছে এভাবেই। সারিসারি কফিন, একটার উপর একটা সাজিয়ে মাটি চাপা দিয়ে রাখছে। গণকবরের ভিডিও দেখতে চাইলে দেখুন।
কিছু করারও নেই আসলে। প্রতিদিন এত মানুষ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছেন যে এর বিকল্পও নেই এখন আর। হাজার হাজার মানুষ এর কবর এভাবেই অচিহ্নিত থেকে যাবে। কঠিন সত্যটি এখানেই। আত্মীয় স্বজনরা ইচ্ছে করলেও যেতে পারছেন না তাদের প্রিয়জনের শেষকৃত্য সম্পাদন করতে।
আমাদের দেশও এর ব্যাতিক্রম নয়। বেঁচে থাকা স্বজনরা বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই যেতে পারছেন না করোনায় মৃত স্বজনদের শেষকৃত্যে। এ যে কতটা যন্ত্রণার তা কেবল ভুক্তভোগীরাই উপলব্ধি করছেন।
নারায়ণগঞ্জে এক গিটারিষ্টের লাশ পড়েছিল তার বাড়ির উঠোনে নয় ঘন্টা। বাঁচার তাগিদেই নির্মম হতে হয়েছে তার বাবা মা ভাই বোনদের। দরজা খুলে একবার দেখার মত সুযোগও তারা পান নি। কতটা নির্মম সত্যির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে আমাদের এই করোনা।
রাজবাড়িতে এক লোকের মৃতদেহ পড়েছিল এক বেলা। কাউ কাছে যায়নি ভয়ে। সবাই আতঙ্কিত স্পর্শে যে করোনা আক্রান্ত হতে পারে।
এই সময়ে কেউ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে বন্ধু, বান্ধব, আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী কেউ দেখতে আসবে না। চেনা জানা কেউ অসুস্থ্য হলেও আমরা দেখতে যেতে পারবো না। স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও কেউ দাফন করতে আসবে যাবে না।
কি একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ১৭ লাখের বেশী, মৃত্যু ছাড়িয়েছে এক লাখ। এই সংখ্যা কততে গিয়ে থামবে তা আমরা জানি না কেউ। আমরা কেবল সৃষ্টিকর্তার কাছে নতজানু হয়ে প্রার্থনাই করতে পারি ' হে প্রতিপালক, মানুষ সৃষ্টি করেছ তুমি, এমন কঠিন সত্যের মুখোমুখি তুমি আর কতদিন রাখবে আমাদের। আমাদের রক্ষা করো।'
৩২টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
এই শতাব্দীর মানবিক বিপর্যয়
বিশ্ব স্বাস্থ্য সস্থার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সকল মৃত্যুই বেদনাদায়ক।
কিন্তু আতঙ্কের পরিনতি টা ভাল হচ্ছে না।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
জিসান শা ইকরাম
অচেনা, অদেখা শত্রুর বিরুদ্ধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাই বা কি করবে দাদা।
সৃষ্টি কর্তাকেই স্মরণে রাখতে হবে আমাদের।
শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
হে প্রতিপালক, মানুষ সৃষ্টি করেছ তুমি, এমন কঠিন সত্যের মুখোমুখি তুমি আর কতদিন রাখবে আমাদের। আমাদের রক্ষা করো।
এমন মৃত্যু চাই না প্রভু
তুমিই আমাদের একমাত্র ভরসা
জিসান শা ইকরাম
এমন মৃত্যু কখনোই চাই না।
শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এ এক চরম বিপর্যয়, কষ্টের। সবচেয়ে নিষ্ঠুর বিষয়টি উপস্থাপন করলেন দাদা ভাই। জানিনা কি হবে , কি হচ্ছে! আর নিতে পারছিনা। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এটা ই প্রত্যাশা করি
জিসান শা ইকরাম
কঠিন সত্য এটি যা মেনে নিতে খুব কষ্টের।
শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে সত্যি সত্যি ভয় পাচ্ছি।
এই করোনা নিয়ে এত্ত এত্ত পড়াশোনা করেছি তাতে আশার কথা কেউ বলেনি। এটি চলমান থাকবে।
ঔষধ পেতে কমপক্ষে দেড় বছর লাগবে, এখন যা পাচ্ছি তা সব টেস্ট, এটি কিন্তু ভয়ানক বিষয়।
যাই হোক, আল্লাহ ছাড়া কেউ আমাদের সাহায্য করতে পারবে না;
জিসান শা ইকরাম
হ্যা ঔষধ পেতে পেতে আগামী বছরের শেষ চলে আসবে।
ততদিন কত মানুষ চলে যায় এই প্রিয় জগৎ থেকে কে জানে?
একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ আমাদের সাহায্য করতে পারবে না।
শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
বর্তমান পরিস্থিতিতে অতি নিকট স্বজনের কাছেও যেতে মানা। এইতো সেদিন পর্যন্ত যাদের সাথে দিনের বেশিরভাগ সময় পার করেছি, এখন তাদের খোঁজ-খবর দূর থেকেই নিতে হয়। জানি তারা কষ্ট পাচ্ছে, কষ্ট পাচ্ছি নিজেরাও। তবুও দূরত্বটা মেনে নিয়েছি ভালো থাকার জন্যে-ভালো রাখার প্রয়োজনে। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে কেবল প্রার্থনা করি আমাদের রক্ত-আত্মার বন্ধনে জড়ানো প্রিয়মুখ গুলো যেন ভালো থাকে, বেঁচে থাকে। আবারও যেন তাদেরকে কাছে পেতে পারি।
ভিডিও গুলো পুরোটা দেখার সাহস হলো না। এত নির্মম বাস্তবতা অনুভব করা যায়, কিন্তু চোখেরা তাদের সহ্যশক্তি হারিয়ে ফেলে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে বিপদে ধৈর্য রাখার শক্তি দিন। আমিন।
জিসান শা ইকরাম
কিছু করার নেই আমাদের, একটা চরম অসহায় অবস্থার মধ্যে দিন অতিবাহিত করছি। কে কখন আক্রান্তের শিকার হই কেউ জানি না।
দূরত্ব মেনে নিতেই হবে, সবার মঙ্গল যে এই দুরত্বের মাঝে।
” মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে কেবল প্রার্থনা করি আমাদের রক্ত-আত্মার বন্ধনে জড়ানো প্রিয়মুখ গুলো যেন ভালো থাকে, বেঁচে থাকে। আবারও যেন তাদেরকে কাছে পেতে পারি। ” – আপনার প্রার্থনা যেন আল্লাহ্ কবুল করেন। আমিন………
ভালো থাকবেন সারাক্ষণ,
শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
এ বিপর্যয়ে নির্বাক সৃষ্টিকর্তাও!
আমরা সবাই আজ অসহায়।
একান্তে ভাবলে নিজের চোখেরজল ধরে রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে হয়।
আমাদের কী হতে চলছে তা সৃষ্টিকর্তাই জানেন।
সবাই ভালো থাকুক।
শুভকামনা দাদা।
জিসান শা ইকরাম
গত কয়েকদিন আমি এসব ভেবে ভেবে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে গিয়েছি,
মানসিক শক্তি হাঁড়িয়ে ফেলেছি।
কবে এই অবস্থার অবসান হবে আমরা কেউ জানিনা।
ভালো থেকো সারাক্ষণ।
শুভ কামনা।
নীরা সাদীয়া
সত্যিই শুনতে/পড়তে বড্ড নির্মম লাগে। কিন্তু কি করার? সময়টাই এখন এরকম।
জিসান শা ইকরাম
কিছু করার নেই অবশ্য,
শুধুই ঘরে থেকে অপেক্ষা।
শুভ কামনা।
ফয়জুল মহী
সুকোমল ভাবনার অনন্যসাধারণ লেখা। দোয়া করবেন।
জিসান শা ইকরাম
ভালো থাকবেন মহী।
শুভ কামনা।
রেহানা বীথি
অসহায় তাকিয়ে আছে পুরো পৃথিবী। পরিজনহীন এমন মৃত্যু হতবাক করে দিয়েছে আমাদের। পরম করুণাময় ছাড়া এ মুহূর্তে আমাদের আর কোনও আশ্রয় নেই। সবাই তাঁকে স্মরণ করি।
জিসান শা ইকরাম
পরম করুণাময়ের দয়া ব্যাতিত এই দুর্যোগ হতে পরিত্রাণের কোন উপায় নেই আপু।
শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
ভাইয়া লেখাটা পড়ে খুব খারাপ লাগছে।
আল্লাহ্ আমাদের এই মহামারী থেকে রক্ষা করুন, আমাদের ক্ষমা করুন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
সাবধানে থাকুন, নিরাপদ থাকুন।
জিসান শা ইকরাম
আল্লাহ্ আমাদের এই মহামারী থেকে রক্ষা করুন, আমাদের ক্ষমা করুন…… আমিন।
ভালো থাকবেন আপু,
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
আসলে আমরা এখন সবাই হতভাগ্য, এমন অবস্থার কথা বাপ দাদার মুখেও শুনিনি, দেখিবো তো দূরের কথা ভাইজান।
এমন মৃত্যু সত্যি কাম্য নয়, আজ আমার প্রোফাইলে একটা লেখা শেয়ার দিয়েছি যা আমেরিকার বাঙ্গালীর মৃত্যু নিয়ে, কি যে করুণ অবস্থা।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, রহমানুর রহিম আমাদের হেফাজত করুন।
এমন মৃত্যু আমরা কেউই চাইনা ভাইজান, দোয়া রাখবেন।
জিসান শা ইকরাম
একমাত্র আল্লাহ্ই পারেন এই বিপদ থেকে আমাদের হেফাজত করতে।
ভালো থাকবেন ভাইজান।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
আল্লাহ ভরসা ভাইজান।
শুভকামনা নিরন্তর।
কামাল উদ্দিন
চেনা জানা কেউ অসুস্থ্য হলেও আমরা দেখতে যেতে পারবো না, এমনটাও না। অসুস্থ্য হওয়ার কারণে ঐ লোকের পুরো ফ্যামেলিকেই আমাদের জন্য বিপদ মনে করে ওদের থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। দুই দিন আগে আমার এলাকায় একজন প্রবীন মারা গিয়াছেন, জানাজা পড়ার লোক পাওয়াই কঠিন হয়ে গিেছিলো বলে জানি। অথচ শেষ দেখা শেষ বিদায়ে সব সময় আমরা প্রতিবেশীদের সাথেই থাকতাম।
এটাতো শুরু, এর সুদূর প্রসারি ফল কতটা নির্মম হবে কে জানে?
জিসান শা ইকরাম
কারো মৃত্যুতে কাছে যাওয়া যাবে না, এটা মেনে নিতে খুব কষ্ট কামাল ভাই।
ফলাফল খুবই নির্মম হবে, ভালো হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
ভালো থাকবেন ভাই।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
ভিডিওটি দেখে স্তব্দ হয়ে গেলাম। কি এক দুঃসময় নেমে এসেছে সবার মাঝে। যাকে ভালবাসি, যার ছায়াতলে জীবন পার করেছি শেষবারের মতন তাকে দেখতে পারছিনা, স্পর্শ করতে পারছিনা এর চেয়ে মর্মবেদনা আর কিছু হতে পারেনা।
লাশের মিছিল কবে যে থামবে তার কোন সঠিক ক্ষণ নেই। গগনবিদারী আহাজারি সহ্য করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। লেখা পড়ে আপ্লুত হলাম ভাই।
ভালো থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
খুবই কষ্টকর এক অনুভুতি এটা, প্রিয়জনদের কাছে যেতে না পারা।
মন খুবই খারাপ এ নিয়ে, ফেইসবুকে যাচ্ছি না গতকাল থেকে, ভালো লাগছে না কিছুই।
ভালো থাকবেন,
শুভ কামনা।
হালিম নজরুল
পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, ভাবলে গা শিউরে উঠছে।
জিসান শা ইকরাম
জানিনা কোথায় গিয়ে থামবে এই করোনা।
শুভ কামনা হালিম নজরুল ভাই।
ইসিয়াক
একমাত্র আল্লাহ পারেন আমাদের এই বিপদ থেকে মুক্তি দিতে।
আল্লাহ ভরসা। ভালো থাকুন ভাইয়া।
সঞ্জয় মালাকার
পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, ভাবলে গা শিউরে উঠছে।
এখন ঈশ্বর আল্লাহ সহায় ।
আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো🌹🌹
নৃ মাসুদ রানা
আহারে! সত্যি, এজীবন বড়ই অচেনা অদ্ভুত অতিথি