এনগেজমেন্ট রিং

মহানন্দ ৫ মার্চ ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১১:০৬:৩১অপরাহ্ন ছোটগল্প ৭ মন্তব্য

২০১৬।

ঢাকা থেকে রাজশাহীর বিমানে সিটে বসার সময় খেয়াল করলাম জানালার দিকে বসা চশমা পরা শ্যামা  বর্নের মেয়েটিকে একটু চেনা চেনা লাগছে। খুব অল্প সময় লাগে রাজশাহী যেতে ..৪০ মিনিটের মত । ৩০ মিনিট পর পাইলট ঘোষনা করলেন landing gear প্রবলেম করায় safe landing করার জন্য আমরা ঢাকার দিকে ফিরে যাচ্ছি । সবার ভেতরে আতংক শুরু হয়ে গেল , অনেকে কান্না শুরু করে দিল। পাশের মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বললো - বড় ধরনের বিপদ হবে মনে হচ্ছে । ওর দিকে তাকাতেই চিনতে পেরে বললো ..আপনি...!।

২০০৫।

সায়রার মায়ের কাছ থেকে বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে বাবা আমাকে বললেন উনাদের আমি খুব ভাল করে চিনি , তুই অমত করিস না। আমার দাদীর তখন ৮৫ বছর বয়স, উনিও বিয়েটা দেখে দুনিয়া থেকে যেতে  চান। সায়রা তখন রংপুর মেডিক্যাল কলেজে ইন্টারনি করছিল। Engagement টা হয়ে গেল সন্ধ্যার সময়। সায়রাকে ভালই লাগছিল । ওর ফ্যামিলি থেকে সেইদিনই আকদ করার কথা বলেছিল।আব্বাকে আমি বললাম অনেক কাছের মানুষ উপস্হিত নেই আজকে বাদ  দেন।

বিমানবালাদের মেকআপ ভেদ করে চেহারায় আতংকের ছাপ দেখা যেতে শুরু করলো। সবাই দোয়া-দরুদ পড়া শুরু করলো। 

সায়রা বলা শুরু করলো.....ঐ দিন আপনার সাথে প্রথম দৃষ্টি বিনিময়ের সময় মনে হল আপনাকে জোর করে এখানে আনা হয়েছে । আপনার ভেতরে কোন উচ্ছাস ছিলনা। পরেরদিন রাত পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলাম আপনার ফোনের কিন্তু কোন ফোন পেলামনা। সকালবেলা আম্মাকে বললাম উনাকে একটু আসতে বলেন । 

সকালবেলা ওদের বাড়ী যেতেই চাচী বললেন গতকাল ফোন করনি কেন? ওর সাথে কথা বলো। আজকে খুবই সাধারন জামা কাপড় পরে আছে, মনটা একটু খারাপ মনে হলো। সায়রা বললো- আমরা নিজেরা কিছুদিন কথাবার্তা না বলে হুট করে engagement করাটা ভালো হয়নি। দেখলাম একটা টেবিলে দাবার বোর্ড সাজানো আছে ,ওটা সামনে এনে বললাম খেলতে পারো? ....হাঁ । এবার দুজন মুখোমুখী বসা মাঝখানে দাবার বোর্ড । বললাম দাবা খেলায় একটা নিয়ম আছে ---offensive mode এ খেললে defensive mode এ আসা যায়না, তুমি এটা জানতে?। আমার জানা ছিলনা। আমি engagement য়ের রিংটা খুলে বোর্ডের উপড় রেখে বললাম এবার তোমার পালা, আমি বুঝতে পারছি তুমি বিয়েটা হোক এটা চাওনা ।

অনেক লোক জানে ,সবাই কী ভাববে,আপনি এত সহজে রিংটা খুলে দিলেন!

বললাম ,তোমার ব্যাপারটা আগে তারপর অন্য কিছু। পরের দিন ঢাকা চলে গেলাম । চাচী বেশ কয়েকবার ফোন দিয়ে ওর সাথে কথা বলতে বললেন কিন্তু আমি রাজী হলাম না, বললেন কোন কারনে তোমার উপড় খুব রাগ করেছে,একটু রংপুর যেয়ে দেখা করে আসতে পার। চাচীকে বললাম মাফ করবেন, আমি যাব না।

সায়রা বললো engagement য়ের রাতে আপনি মোবাইল ফেলে গিয়েছিলেন আমাদের বাসায়, silent mode এ ছিল। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম G নামে সেভ করা একটি নাম্বার  থেকে ঐ দিন ১৩টা মিসড কল। G য়ের সাথে SMS গুলো পড়ে বুঝতে পারলাম আপনাদের মধ্যে একটা গভীর সম্পর্ক  আছে। আমাকে মাফ করবেন এরপর আর আমার মাথা কাজ করেনি।তখন কাউকে বলতেও পারিনি এসব কথা । আমার ভাই পরে মোবাইলটা আপনাদের বাসায় দিয়ে আসে।

পাইলট ঘোষণা দিলেন আমরা কিছুক্ষনের মধ্যে ল্যানড করবো ,ইনশাআল্লাহ আমরা বিপদ মুক্ত থাকব।  সায়রা বললো খুব ভয় লাগছে, আপনার হাতটা একটু ধরতে পারি? হাতটা এগিয়ে দিলাম, অনামিকাতে রিং দেখে বললো এটা কিসের রিং ?।উত্তর না দিয়ে ওর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলাম| বিমান একটু বেশী ঝাঁকুনি দিয়ে ল্যানড করলো তবে  তেমন কোন বিপদ হলোনা। সায়রা হাতটা ছেড়ে দিয়ে জানতে চাইলো এটা কী G য়ের দেয়া রিং? বললাম 'না', এটা GF য়ের দেওয়া।

0 Shares

৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ