হরতাল অবরোধ এর সুবাধে দীর্ঘদিন ক্লাসে যাওয়া হয় না। ব্যাস্ততা তাই নেই বললেই চলে। সারাদিন শুয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। এক ঘেয়েমিয়তা কাটানোর জন্য কাল সন্ধ্যায় হাটছিলাম খুলনা নগরীর বেশ ব্যাস্ততম রোড “ আহসান আহমেদ রোড” ধরে । হালকা ঠান্ডা পরেছে , তবুও হাঁটছিলাম। মাঝে মাঝে এই অনর্থক হাঁটাহাঁটিতে বেশ আনন্দ পাই। তো আস্তে আস্তে আগাচ্ছিলাম আর চারপাশের ব্যাস্তময় নগর জীবনের বাস্তব চিত্র উপভোগ করছিলাম।
হটাৎ আমার সামনে একটি রিকশা এসে থামলো । আমিও আমার গতিপথের কিঞ্চিৎ পরিবর্তন করলাম। আনমনা হয়েই পিছে ফিরে তাকালাম, দেখলাম রিকশাআরোহী বেশ উত্তপ্ত ভাষায় বাক্য বিনিময় করছেন রিকশাওয়ালার সাথে । মানব মনের নিদারুন কৌতূহল এর ফলশ্রুতিতে দাড়িয়ে পরলাম কি ঘটছে দেখার জন্য। তখন বেশ খানিকটা দূরে চলে এসেছি। লক্ষ্য করলাম ততক্ষনে রিকশা আরোহী রিকশাওয়ালার কলার চেপে ধরেছে । বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হলো । পিছে ফিরে গেলাম । খুব কাছ থেকে দেখতে লাগলাম তাদের ধস্তাধস্তি। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম আমার মত বেশ কিছু উৎসুক জনতা উপভোগ করছে তাদের ধস্তাধস্তি অথচ তা থামানোর জন্য কেউই অগ্রসর হচ্ছে না। তখন একজন এসে তাদের কে একে অপর থেকে আলাদা করলেন । জানতে চাইলেন কি হয়েছে ।
রিকশাওয়ালা : ভাই , হাজী মহসিন রোড থেকে আসছে, ভাড়া ঠিক করেনি, দশ টাহা চাইছি, সেই জন্যি আমারে মারতিছে ।
সেই ভদ্রলোক : ঐ ***** এর বাচ্চা। হাজী মহসিন রোড থেকে এইখানে দশ টাকা ভাড়া ?? আট টাকা দিছি , কম কি???
রিকশাওয়ালা : কম না তা কি ?? সেই মেয়রের বাড়ির সামনে থেকে আইছেন । ঐখানে থেকে সবাই দশ টাকায় দেয় ।
সেই ভদ্রলোক : সবাই দেয় তাতে কি ?? মুখের উপর কথা ?? রিকশা চালানো বন্ধ করে দিবো
তখন একজনের মাধ্যমে জানলাম ভদ্রলোক , খুলনা সিটি এর নামকরা একটি কলেজ এর শিক্ষক।
এই তথ্য শুনার পর বেশ হচকিত হয়ে গেলাম। আরও আশ্চর্য হইলাম যখন তার নাম শুনলাম। পাশে তাকিয়ে দেখলাম তার নামের একটি ব্যনার , অমুক স্যারের ব্যাচ।
শত শত স্টুডেন্ট পড়িয়ে হাজার হাজার টাকা কামিয়ে নিচ্ছে এইধরনের নিচু মনের কিছু শিক্ষক। অথচ মাত্র দুই টাকার জন্য একজন হত দরিদ্র রিকশাওয়ালা এর গায়ে হাত রাখতে দ্বিধাবোধ করেন নি । আর রিকশাওয়ালা তো ভুল ছিল না। ঐ খান থেকে সবায় দশ টাকাই দেয়। আমিও দিয়েছি কয়েকবার। এমন কি বারো টাকাও দিয়েছি ।
তো মানবতা আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে ??? সামান্য দুই টাকার জন্য আজ আমরা এমন মানুষদের কে আঘাত করছি যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের কে সেবা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। কি হত ঐ রিকশা ওয়ালা কে দুইটা টাকা বেশি দিলে ?? এই মানুষ গুলো কে মাঝেমাঝেই দেখা যায় । আমার কথা হচ্ছে আপনি কম দিবেন ক্যান ?? ন্যায্য টা দেন । পারলে বেশি দেন । রেস্টুরেন্ট এ খাওয়ার পর তো সম্মান রক্ষাত্রে ওয়েটারকে বিশ - ত্রিশ টাকা দিতে পারি , আর সামান্য দুইটাকা বেশিদিতে পারিনা ঐসব মানুষ গুলো কে যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হার ভাঙ্গা পরিশ্রম করে।
Thumbnails managed by ThumbPress
৭টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
এরা মানুষ নামের কলঙ্ক
মানুষ এদের হুদাই শ্রদ্ধা করে ।
অদ্ভুত সেই ছেলেটি
ঠিক বলছেন ভাই (y)
সুহাসিনী
খুলনা আমার প্রিয় শহর/ আমার জন্মভুমি/ ওখানকার মানুষ এমন করে শুনলে লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যায়/
অদ্ভুত সেই ছেলেটি
হুম। আমি লজ্জিত , বিস্মিত 🙁
রিমি রুম্মান
মানুষ মানুসের জন্য___ কথাটা দিন দিন ফিকে হয়ে যাচ্ছে।
অদ্ভুত সেই ছেলেটি
ঠিক বলেছেন আপু (y) । মানবতা আজ বিলুপ্তপ্রায় 🙁
খসড়া
মানুষ নিজের জন্য বাচে নিজের জন্যই অন্যকে বাচায়। মানবতা বহুদূরে। সারভাইবের পর।:(