এক মুঠো ভালোবাসা (৯ম পর্ব)

ইঞ্জা ২৪ এপ্রিল ২০১৯, বুধবার, ১১:৪৫:৫৭পূর্বাহ্ন গল্প ৩৪ মন্তব্য

 

ছায়াকে লিফট থেকে বেরুতে দেখে এগিয়ে গেলো অনিক।
আনকেল ঘুমিয়ে পড়েছে, জিজ্ঞেস করলো অনিক।
হাঁ, নার্স বললো বাবা আজ সারা রাত ঘুমাবে, সকালে জ্ঞান ফিরলে ডাক্তাররা দেখবেন, এরপর বলবেন বাবার ইমপ্রুভমেন্ট হচ্ছে কিনা, থামলো ছায়া।
তাহলে এখন কি করবে, চলো বাসায় পোঁছে দিই।
আপনি কই যাবেন?
আমি অফিসে যাবো, প্রচুর কাজ পড়ে আছে।
তাহলে আপনার সময় নষ্ট না করি, আপনি অফিসে চলে যান, আমি মেট্রোতে করে চলে যাবো।
তাই, তাহলে বাসার চাবি তুমি নিয়ে যাও, আমি সন্ধ্যায় আসবো, যদি কিছু লাগে ফোন দিও।
ওকে।
ওকে আসি তাহলে, আর হাঁ তোমার কাছে টাকা পয়সা কিছু আছে?
হাঁ অল্প কিছু আছে, এতেই হয়ে যাবে আপাতত।
ঠিক আছে, আমি আসি।
ওকে আল্লাহ্ হাফেজ।
অনিক গাড়ীতে উঠে হাত নাড়লো, অনিক চলে গেলে ছায়া এগিয়ে গেল সামনের মেট্রোরেলের স্টেশনের উদ্দেশ্যে, ভাবছে কত দ্রুত অনিকের টাকা ফেরত দিতে পারবে, জানে সে অনিক অনেক হেল্প করেছে যার ঋণ শোধ হবার নয়, এরপরেও ছায়া চাই অনিককের টাকা গুলো ফেরত দিয়ে দ্রুত দূরে কোথাও বাসা নিতে, ওর জীবন থেকে রওশন দূরে সরে গেলেও মন থেকে সরে যায় নাই, অনিক জানে রওশন নেই কিন্তু এরপরেও ছেলেটা সকল রাগ অভিমান ফেলে সকল ধরণের হেল্প করছে, কিন্তু ও যখন শুনবে ছায়াও বড় ঝামেলায় আছে তখন ও আরো বেশি জড়িয়ে পড়বে ওর ঝামেলায়, উদ্বীগ্ন ছায়া আন্ডারগ্রাউন্ডে নেমে এগুলো অপেক্ষমাণ ট্রেনের উদ্দেশ্যে।

আফরিন বেডরুমে প্রবেশ করে বিছানায় এলিয়ে দিলো নিজেকে, ওর মাথায় এখন অনিক, ওর মা কি বললো তা গায়েও মাখেনি, লুসির কাছে শুনেছে সে অনিক বস হিসাবে যেমন কঠোর, তেমনি মানুষ হিসাবে খুবই ভালো, ওর মতো মানুষই হয়না নাকি আজকাল।
অনিকের কথা বলার স্টাইল, ওর ড্রেস সেন্স সব কিছুতেই একটা আভিজাত্য আছে।
আফরিন, দরজায় নক করে ওর মা ডাক দিলো।
সম্বিত ফিরে পেয়ে ও জবাব দিলো, মম কিছু চাই?
তুই তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আয়, লাঞ্চ রেডি করছি।
মম আমার এখনো শাওয়ার নেওয়া বাকি।
অসুবিধা নেই, তাড়াতাড়ি আসিস।
ওকে মম, বলেই আফরিন দ্রুত বিজনেস স্যুট খুলে রেখে কাপড় চেইঞ্জ করে নিলো, এরপর শাওয়ার নিতে গেল বাথরুমে।
আধা ঘন্টা পর আফরিনকে নিচে নামতে দেখলো ওর মা, দেখেই বললেন আয় আয় আজ তোর ফেবারিট গরুর ভুনা মাংস করেছি।
আফরিন এসে জড়িয়ে ধরলো মাকে, মম ইউ আর টু সুইট, দাও খেতে খিদে লেগেছে।
তুই বসে যা, আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।
আফরিন এগিয়ে গেলো ডাইনিং টেবিলে, নিজের চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসলো, মম মাংসের সাথে আর কি রান্না করেছো?
করলা ভাজি, বেগুন ভাজা, পটলের দোলমা, আর কিছু চাই?
কি বলো এতো খাবারের পরেও আর কি চাইবো?
কেন বুটের ডাল লাগবেনা, আজ কিছু মাংস ও হাঁড় দিয়ে বুটের ডাল রান্না করেছি।
ওয়াও মম আজ তো রাজভোগ দেখছি, তা আজ এতো কিছুর আয়োজন কি কারণে জানতে পারি?
কি বলিস, তুই নতুন চাকরি পেয়েছিস, তা সেলিব্রেট করতে হবেনা?
আফরিন খিলখিল করে হেসে দিলো।

খাবার খেতে খেতে আফরিন মায়ের রান্নার ভূয়সী প্রশংসা করতে লাগলো, এর ফাঁকে জিজ্ঞেস করলো, মম আসলেই কি বাংলাদেশের ছেলেরা ভালোনা?
আফরিনের মা মুচকি হেসে বললেন, তোর মাথায় এখনো ঐ বিষয়টা রয়ে গেছে?
না মম এমনিতেই জিজ্ঞেস করলাম।
আসলে হাতের পাঁচ আঙ্গুল তো সব সমান নয়, সব ছেলেই যে খারাপ তাও নয়, কিন্তু হাঁ আজকাল নিউজ, নেটে যা দেখছি শুনছি তাতে মনে হচ্ছে আমার জন্মভূমির মানুষ দিনকে দিন জংলি হয়ে যাচ্ছে, কেউ একটি কথা বলে শেষ করতে পারেনা, বাকি সব মিলে ওর উপর ঝাপিয়ে পড়ছে, রিসেন্ট একটা বিষয় আমাকে এতো বেশি নাড়া দিয়েছে যে তুই বিশ্বাস করবিনা, আমি সত্যি হতবাক হয়ে গেছি।
কি হয়েছে মম, তুমি এতো চিন্তিত কেন?
আগের সেই সোনার বাংলা নেইরে, এখন ঐ দেশে মুড়ি মুড়কির মতো রেইপ হচ্ছে মেয়েরা।
কি বলো?
হুম, এখন শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক মহিলাও রেইপের শিকার হচ্ছে, পিতা তার সন্তানকে রেইপ করছে, শিক্ষক তার ছাত্রীকে, যে যেভাবে পারছে রেইপ করছে, এ যেন আরেক '৭১ এর পাক হানাদারদের মতো, যারা মানুষ মারার সাথে সাথে অগুণতি মা, বোন, মেয়েদের রেইপ করে নির্যাতন করে মেরে ফেলতো।
ও দেশের সরকার কিছু করছেনা কেন, আফরিন উদ্বীগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
বুঝতে পারছিনা, আমি তো বলি সরকার এমন আইন প্রণয়ন করুক যাতে ধর্ষক যেই হোক তার বিচার হবে মৃত্যুদন্ড, এছাড়া ধর্ষণের বিচার করতে হবে দ্রুত বিচার আইনের মাধ্যমে, তাহলেই মনে হয় ধর্ষণের হার কমতে পারে বাংলাদেশে।
আফরিন বড় এক নিশ্বাস ফেলে বললো, এতো ভয়ানক ব্যাপার, আশা করি বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।
আমিও তাই চাই মা।
ওকে মম আমার খাওয়া শেষ, বলেই আফরিন নিজের প্লেট নিয়ে উঠে গেলো, বেশিনে রেখে বাকি খালি বাটি প্লেট নিয়ে বেশিনে রেখে ধুয়ে পরিস্কার করতে লাগলো।

কলিংবেলের শব্দে ছায়া পিপহোলে চেক করে দরজা খুললে অনিক বললো, হাই।
জবাবে ছায়াও হাই বলে বললো, আপনি ফ্রেস হয়ে আসুন, কফি রেডি করছি।
ওকে আসছি বলে অনিক নিজ রুমে চলে গেলো, পনের মিনিট পর ড্রেস চেইঞ্জ করে এসে ড্রয়িং রুমে বসলো টিভিতে মুভি চ্যানেল অন করে দিলো।
ছায়া এসে কফির একটা কাপ অনিকের পাশের টেবিলে রাখলো সাথে একটা প্লেটে কিছু কুকিজ দিলো এবং নিজেও এক কাপ নিয়ে সোফায় বসলো।
কি খবর তোমার, অনিক জিজ্ঞেস করলো।
আজ বাবার ব্যাগ খুলার জন্য চাবি খুঁজে পাচ্ছিলামনা, পরে দেখি ছোট একটা বক্সে সব খুটিনাটি তুলে আমার ব্যাগে ভরে দিয়েছিলো মহিলাটা।
তাই?
হাঁ, বাবার ব্যাগ খুলে দশ হাজার ডলার পেয়েছি, বসুন নিয়ে আসছি বলেই ছায়া উঠতে গেলো, অনিক বললো বসো, টাকা গুলো কেন আনতে হচ্ছে?
মানে পুরা তো এখন হাতে নেই, এখন যা আছে দিয়ে দিই?
সে পরে দেখা যাবে, এখন ওগুলো থাক তোমার কাছে, আনকেল সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক আগে।
ছায়া একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললো, বাবা ফিরে আসলে তো বাকিটা দিয়ে দেবো।
আচ্ছা থাক এখন, আনকেল ফিরে আসুক এরপর না হয় দেখা যাবে, কফিতে চুমুক দিলো অনিক।
হটাৎ অনিকের শিরদাঁড়া শক্ত হয়ে উঠলো, ওরা দুজনেই মাটির কম্পন অনুভব করলো, ছায়া চিৎকার করে উঠলো, অনিক বুঝতে পারলো ভূমিকম্প হচ্ছে এবং কম্পনটা বাড়ছে, অনিক ঝট করে উঠে দাঁড়িয়ে ছায়ার হাত ধরে টান দিয়ে বললো দৌঁড় দাও, সাথে নিজেও দৌঁড় লাগালো নিজ রুমের উদ্দেশ্যে, ও আগেও এমন ভূমিকম্প দেখেছে, তাই জানে কি করতে হবে, চারিদিকের জিনিষপত্র ধুমধাম আওয়াজ করে পড়ছে, ওরা পড়তে উঠতে করতে করতে অনিকের রুমে প্রবেশ করলো, রুমে প্রবেশ করেই অনিক ছায়াকে নিয়ে ওর রিডিং টেবিলের নিচে মাথা গুজে বসে পড়লো।

....... চলবে।
ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৩৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ