এক মুঠো ভালোবাসা (৮ম পর্ব)

ইঞ্জা ১০ এপ্রিল ২০১৯, বুধবার, ০৩:৩৭:২৪অপরাহ্ন গল্প ৫৪ মন্তব্য

 

অনিকের সেলফোনে রিং হচ্ছে দেখে ফোন রিসিভ করে হ্যালো বললো, অপর প্রান্ত থেকে ছায়া বললো, অনিক বাবার সেন্স আসতেছে, ডাক্তাররা বললো সেন্স আসার ঘন্টা খানেক পর ঘুম পারাবে, আপনি আসবেন?
তাই, আচ্ছা আমি এখনই রওনা দিচ্ছি, বলেই ফোন ডিস্কানেক্ট করে এলভিনকে বললো, মাই ফ্রেন্ড আমার বেরুতে হচ্ছে, দ্রুত ফিরে আসবো।
ওকে টেইক কেয়ার, জবাবে এলভিন বললো।
অনিক বেরুনোর সময় দেখলো আফরিন মেয়েটি বসে আছে মামা লুসির সামনে, অনিক বললো আমি বেরুচ্ছি, ঘন্টা দুয়েক পর আসবো।
কিন্তু এপয়েন্টমেন্ট লেটারে তোমার সিগনেচার লাগবে অনিক।
ওটা কি রেডি?
না মাত্র ধরলাম।
ওকে আফরিন তুমি কাল এসে নিয়ে গেলে চলবে?
নো প্রবলেম, মিষ্টি হেসে আফরিন বললো।
ওকে মামা তুমি রেডি করে আমার টেবিলে দিয়ে দাও, আমি আসছি।
ওকে সি ইউ।
সি ইউ।
ওহ আফরিন আপনার গাড়ী আছে সাথে, অনিক জিজ্ঞেস করলো?
না আমি আনিনি, আমি বাসে চলে যাবো, এইতো উডল্যান্ড এস্টেইটে যাবো।
ওহ, তাহলে আমার সাথে চলুন, আমি ঐ পথ দিয়েই যাবো।
ধন্যবাদ।
আফরিনকে নিয়ে গাড়ী পার্কিংয়ে এসে গাড়ীর দরজা খুলে দিলো অনিক, আফরিন উঠে বসলে অনিক নিজে উঠে গাড়ীর চাবি দিয়ে এরপর ইগনিশনে চাপ দিলো, এরপর পার্কিং থেকে বেড়িয়ে গলি পথ পেরিয়ে হাইওয়ে উঠে গাড়ীর স্পীড বাড়ালো।

আপনার ফ্যামিলিতে কে কে আছে, অনিক জিজ্ঞেস করলো।
আমার ড্যাড নেই, উনি কয়েক বছর আগে ইন্তেকাল করেছেন, মম আর আমি এক সাথে থাকি।
আপনি একাই আপনার মমের সাথে থাকেন?
আমার কোন ভাই বোন নেই, বলে একটা নিশ্বাস ফেললো আফরিন।
আই এম সরি।
না না অসুবিধা নেই, আমার ড্যাড এই দেশে এসেছিলেন খুব অল্প বয়সে, আমার মমকে বিয়ে করে নিয়ে আসেন এইখানে, আমার জন্ম এইখানেই।
হুম, আচ্ছা আমি কোন লেইন ধরলে ভালো হয়, আমরা কাছাকাছি চলে এসেছি।
আপনি আরো দুই কিলোমিটার পর বামে লেইন পাবেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অনিক বামের লেইন দিয়ে প্রবেশ করে আফরিনের দেখানো পথে পোঁছে গেল ওর বাসার সামনে।
মি. অনিক আসুননা বাসায়, এক কাপ কফি হতে পারে আমার মমের সাথে?
সরি আজ না, আমাকে দ্রুত যেতে হবে, আপনার মমকে আমার সালাম জানাবেন।
ওকে ধন্যবাদ লিফটের জন্য, বলে আফরিন নেমে গেল।
অনিক দ্রুত গাড়ী ছোটালো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে, মনে মনে খুশি সে, অনেকদিন পর আনকেলের সাথে দেখা হবে, লাস্ট মুহূর্তে আনকেলের সাথে দেখা করে না আসাতে নিজের মনে অনু সূচনা ছিলো অনেক, উনি কখনো অনিককে দেখে বিরক্ত বোধ করতেননা, বরঞ্চ রওশনের থেকে যেন ওকেই বেশি পছন্দ করতেন।

আফরিন কলিংবেল চাপ দিতেই ডিংডং করে শব্দ হলো, একটু পর আফরিনের মা দরজা খুলে ধরলে আফরিন মাকে খুব করে জড়িয়ে ধরলো।
আরে আরে ছাড়, ছাড়, কি হয়েছে তা বল, আফরিনের মা হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলেন।
ওহ মম, তুমি বিশ্বাস করবেনা আজ কি হয়েছে।
কি হয়েছে তাই বল, দরজা লাগিয়ে প্রশ্ন করলেন উনি।
মম, আমার চাকরি হয়ে গেছে, ইয়াহু বলেই আবার মাকে জড়িয়ে ধরলো।
আগে চল বসি এরপর তোর গল্প শুনবো, আমি পানি নিয়ে আসছি।
একটু পর পানি নিয়ে এসে আফরিনকে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কোনটাতে বল?
এবি বায়ো ইন্ডাস্ট্রিতে, তুমি জানো ওরা এই মুহূর্তে খুব ভালো করছে এই লাইনে, হয়ত আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ওরা টপে চলে আসবে।
তাই, তা কত দেবে তোকে, আপাতত ২৫০০, ডলার দেবে প্রবেশনাল হিসাবে, সাথে ফ্রিঞ্চ বেনেফিট তো আছেই।
মাত্র ২৫০০ এতে কি হবে, উদ্বীগ্ন হলেন আফরিনের মা।
মম তুমি তো জানোই এই দেশে এই টাকা অনেক, এছাড়া আমার কাজ দেখে ওরা শর্টলি বাড়াবে বলেছে।
তাহলে ঠিক আছে।
আরেকটা খবর আছে মম, বলে চোখের ভ্রু নাচালো আফরিন।
কি, বলেই অধীর আগ্রহে তাকালেন উনি।
এই কোম্পানিতে যে মালিকের সেক্রেটারির জব হয়েছে আমার, উনি বাঙ্গালী।
কি বলিস?
হাঁ... এবং খুব হ্যান্ডসাম।
বিবাহিত?
না মম, তা জানিনা, কিন্তু যেমন উনি তেমন উনার গাড়ী, অডি A3।
আর এতেই তুই ফিদা হয়ে যাসনা, বাংলাদেশের ছেলেরা অত সুবিধার না, বলেই উনি গন গন করে চলে গেলেন কিচেনের উদ্দেশ্যে।

অনিক আর ছায়া অপেক্ষা করছে তাদের ডাক আসার জন্য, দশ মিনিট পর নার্স এসে ডাক দিলো, দুজনেই এক সাথে এগিয়ে গেল, রুমের ভিতরে প্রবেশ করে ওরা রওশনের বাবার বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
রওশনের বাবা খুব ধীরেধীরে ছায়াকে বললেন, কেমন আছিস মা।
বাবা কেমনে ভালো থাকি তোমাকে ছাড়া?
পাগল মেয়ে আমার বলে উনি ছায়ার মাথায় হাত দিয়ে চুল এলোমেলো করে দিলেন, তোর পিছনে কে ছেলেটা?
ছায়ার পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিলো অনিক, সামনে এগিয়ে এলো ও, বললো আনকেল আমি অনিক।
অনিক, অনিক, বাপ আমার তুই কোথা থেকে বলে হাত বাড়ালেন, চোখে উনার জল।
অনিক উনার হাত ধরে বললো, আনকেল আপনি কান্না করবেননা, আমি আছি।
নার্স এসে উনাকে ইঞ্জেকশন দিলো ঘুমের, সাথে এও বললো, উনার ঘুমের প্রয়োজন।
বাবা তুই ফিরে এসেছিস, আবার প্রশ্ন করলেন উনি।
আনকেল আমি আছি।
তুই আমার মাকে দেখে রাখিস।
আপনি চিন্তা করবেননা।
ছায়া আমার ব্যাগে টাকা আছে, বলতে বলতে বলতেই উনার ঘুমে চোখ জড়িয়ে এলো, কিছুক্ষণের মধ্যে উনি ঘুমিয়ে পড়লেন।
ছায়া, চলো বাইরে বসি, অনিক বললো।
আপনি যান আমি আসছি, বলেই ছায়া রওশনের বাবার মাথায় হাত ভুলাতে লাগলো।
আমি নিচের পার্কিংলটে আছি, বলে অনিক বাইরে বেরিয়ে এলো, পার্কিং লটের পাশেই স্মোকিং রুমে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো, চোখের পানি বাধ মানছেনা ওর, বাবার কথা মনে পড়ছে, ঘড়ি দেখলো ও, বাংলাদেশে মধ্যরাত এখনো, পাশে রাখা টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে চোখ মুছলো, সিগারেটটা বিস্বাদ লাগায় এস্ট্রেতে চেপে আগুন নিভিয়ে দিলো।

............ চলবে।
ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৫৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ