এক মুঠো ভালোবাসা (৭ম)

ইঞ্জা ১ এপ্রিল ২০১৯, সোমবার, ০৯:২৮:৪৬অপরাহ্ন গল্প ৩৮ মন্তব্য

 

আজ অনেকদিন পর ভালো করে গোসল করলো ছায়া, গত আট নয়দিন গোসল কি তাই ভালো করে দেখেনি ও, হাসপাতালের জেনারেল টয়লেটেই গোসল করতে হতো।
ফ্রেস হয়ে রেডি হতে হতেই অনেক সময় লেগে গেলো ছায়ার, দ্রুত রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে দেখে অনিক কিচেনে রান্না করছে, তা দেখে বললো সরি আমার দেরি হয়ে গেলো।
না অসুবিধা নেই, খিদে লেগেছে নিশ্চয়?
হাঁ।
এই রান্না প্রায় হয়ে এসেছে, ফ্রিজে কিছু কিউই ফ্রুট, আপেল সহ কিছু অন্য ফ্রুট আছে, চাইলে খেতে পার।
ছায়া এগিয়ে গিয়ে ফ্রিজ খুলে দেখতে লাগলো এরপর একটা পিচ ফল নিয়ে কিচেন টেবিলের উপর রাখা ফ্রুট নাইফ নিয়ে ছিলতে লাগলো।
আমি হসপিটালে ফোন দিয়েছিলাম আনকেলের খবর নিতে, বললো এখনো সেন্স আসতে দেরি আছে।
কোন অসুবিধা হচ্ছে নাতো বাবার, ছায়া উদ্বীগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
না না, কোন অসুবিধা হচ্ছেনা উনার।
ছায়া পিচ ফলটি স্লাইস করে কেটে একটা প্লেটে রেখে এগিয়ে ধরলো অনিকের দিকে, অনিকে বললো তুমি খাও, আমি আপেল একটা খেয়েছি।
ছায়া এক স্লাইস নিয়ে মুখে দিয়ে বললো, কি রান্না করছেন?
তেমন কিছুনা, রুই মাছ, মুরগী আর ভাত।
ওহ।

ছায়া টিভি রুমে বসে একটা ফ্যাশন ম্যাগাজিন পড়ছিলো, এই সময় অনিক ডাক দিলো, চলে আসো ডিনার রেডি।
ছায়া উঠে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলো।
অনিক আরেকটা চেয়ারে বসে বললো, নাও শুরু কর, মাছ গুলো বোনলেস।
কি মাছ এইটা?
কোরাল।
তাহলে বোনলেস কেন?
আসলে আমি বীচ সাইড ফিস মার্কেট থেকে এনেছিলাম, ওরা কাটার সময় বোন গুলো খুলে ফেলে।
তাই?
হুম।
আমি ভাত বেড়ে দিই, ছায়া বললো।
আরেহ নানা, এইখানে ফরমালিটির কিছুই নেই।
ইতিমধ্যে ছায়া অনিকের প্লেটে ভাত বেড়ে দিলো, এরপর নিজেও নিলো।
অনেকদিন পর মাছ খাচ্ছি তাও দেশিয় রান্নায়।
আসলে দেশিয় রান্না আমি খুবই কম করি, আজ তুমি থাকায় ভাবলাম এই স্টাইলেই করি।
মুরগীটা একটু অন্য স্টাইলে মনে হচ্ছে, ছায়া জিজ্ঞেস করলো।
নিয়ে দেখো, এ রান্না অবশ্য খুলনা থেকে আম্মা শিখেছিলেন, এতে টমেটো, গোল মরিচ, কাঁচা মরিচ দিয়ে রান্না, রান্নাটা বেশ ইজি, খেতেও ভালো।
তাই, একটু মিষ্টি টাইপের।
হাঁ একটু চিনি দিয়েছি।
বাহ বেশ টেস্টি।
খাওয়া শেষে ছায়া প্লেট নিয়ে উঠে গেল বেসিনে।

পরদিন সকালে ছায়া ব্রেকফাস্ট করেই ছায়া চলে গেলো হাসপাতেলে, অনিক অফিসে পোঁছেই নিজ কেবিনে ব্যস্ত হয়ে পড়লো, দরজায় নক শুনে মাথা তুলে তাকিয়ে বললো, মামা প্লিজ কাম।
লুসি রুমে প্রবেশ করে বললো, অনিক একটা মেয়ে চাকরির খোঁজে এসেছে, আমেরিকান বাট তোমার দেশের।
তাই, তুমি তাড়াতাড়ি বিদায় নিতে চাও কেন মামা লুসি?
নট দ্যাট, কিন্তু মেয়েটা এই জবের জন্য ফিট।
কিভাবে বুঝলে?
ও বায়োকেমিস্ট।
রিয়েলি!
হুম, দেখা করবে?
ঠিক আছে আসতে বলো।
একটু পর নক শুনে চোখ তুলে তাকালো অনিক, সাথে সাথে চোখ নামিয়ে বললো, কাম ইন।
ইংরেজিতে বললো, বসো।
মেয়েটি বসার পর একটা ফাইল এগিয়ে দিলো, অনিক হাত বাড়িয়ে নিয়ে ফাইল উল্টে পাল্টে দেখতে লাগলো এরপর বললো, বাংলা জানো?
জ্বি জানি।
ওকে তোমার সম্পর্কে ব্রিফ ভাবে বলো।
আমি আফরিন শেখ, জন্মগত ভাবে আমেরিকান হলেও আমি বাঙ্গালী, আমি বায়ো ও পেট্রো কেমিকেলিস্ট, আমার ইউনিভার্সিটি এবং রেজাল্ট সব ফাইলে আছে, আমি এক বছর এভারগ্রীন অয়েল কোম্পানিতে জব করেছি, কিন্তু কোম্পানির এমডির ইন্ডিসেন্ট প্রপোজালের কারণে জব ছাড়তে বাধ্য হই, বলে আফরিন চুপ করলো।
তুমি কি জানো একজন সেক্রেটারির কি কি কাজ হতে পারে, অনিক প্রশ্ন করলো।
জ্বি আমি ওখানে এমডির সেক্রেটারি ছিলাম।

অনিক উঠে গিয়ে কফি পট থেকে কফি নিলো, তুমি কফি নেবে, অনিক জিজ্ঞেস করলো।
না ধন্যবাদ।
অনিক কফিতে চুমুক দিয়ে চেয়ারে বসলো, তুমি জানো তোমাকে আমার সাথে বিভিন্ন দেশে যেতে হবে, বিভিন্ন বিজনেস ডিল, মিটিং এইসব করতে হবে?
জ্বি জানি।
তা তোমার এক্সপেক্টেশন কত?
আপনাদের নিয়ম অনুযায়ী দেবেন, ঝটপট উত্তর আফরিনের।
আমরা উইকলি সেলারি লোয়ার গ্রেডদের দিই।
জ্বি এইখানে তাই আশা করছিলাম।
ওকে ওয়েট বলেই লেভিনকে কল দিলো, কয়েকটা রিং হতেই অপর পাশে রিসিভ করলো লেভিন, বললো হাই অনিক।
হাই, লেভিন তুমি কি ব্যস্ত, যদি সমস্যা না থাকে একটু আসোনা।
ওকে আসছি।
একটু পরেই লেভিন এলো, এসে একটা চেয়ার দখল করে বসলো, বলো কি খবর বন্ধু?
লেভিন, এ হলো আফরিন।
হাই বিউটিফুল বলে লেভিন হ্যান্ডসেইক করলো আফরিনের সাথে।
শুনো ওক্ব মামা লুসির স্থলে নিয়োগ দিতে চাই।
ভেরি গুড, আমার আপত্তি নেই।
ওকে আফরিন, তোমার প্রাথমিক সেলারি হবে দুই হাজার ডলার প্রথম ছয় মাসের জন্য যা প্রবেশনারি পিরিয়ড হবে, এরপর সেলারি হবে তিন হাজার পাঁচশো, সাথে ফ্রিঞ্চ বেনেফিট পাবে কাজ অনুসারে, ইজ দিস ওকে উইত ইউ?
নো প্রবলেম, আফরিন বললো।
ওকে তাহলে তুমি একটু ওয়েটিং রুমে বসো, মামা লুসিকে বলে দিচ্ছি তোমাকে এপয়নমেন্ট লেটার দেওয়ার জন্য।
ধন্যবাদ, আমি এখন আসি।
ওকে, সি ইউ।
আফরিন বেরিয়ে যাওয়ার পর লেভিন বললো, বন্ধু এতো সুন্দর মেয়েকে কিভাবে পেলি?
অনিক হেসে বললো, তুই চাইলে ওকে তোর সেক্রেটারি করে দিই।
না না না, আমার বউ দেখলে স্রেফ গলা কাটবে আমার।
অনিক হো হো হো করে হাসতে লাগলো।

......... চলবে।
ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৩৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ