এক মুঠো ভালোবাসা (৪৫তম পর্ব)

ইঞ্জা ৩০ মে ২০২০, শনিবার, ০৮:১৬:২৭অপরাহ্ন গল্প ২২ মন্তব্য

এক মাস পরঃ

অনিক ছায়া গত সপ্তাহে ফিরে এসেছে নিউইয়র্কে, ছায়া ব্রেকফাস্ট রেডি করে অনিককে ডাক দিলো, অনিক এসে বসলে ছায়া ব্রেকফাস্ট সামনে এগিয়ে দিয়ে নিজের প্লেটে অল্প ভেজিটেবল নিয়ে লুচি দিয়ে খেতে শুরু করলো।

কি ব্যাপার তুমি আজ অল্প ভেজিটেবল নিলে?

শরীরটা তেমন ভালো লাগছেনা অনিক।

অনিক দ্রুত ছায়ার মাথায় হাত দিয়ে দেখলো, কই কোনো জ্বর তো নেই।

না জ্বর বোধ হচ্ছেনা, কেমন যেন গা গুলাচ্ছে।

কি বলো, তাহলে চলো ডাক্তার দেখিয়ে আসি।

না তোমার আজ মিটিং আছে বললে না, আমি নিজেই যাবো। 

ক্ষনিক চিন্তা করে অনিক বললো, আচ্ছা আমি আফরিনকে আসতে বলছি, ও নিয়ে যাবে তোমাকে। 

ঠিক আছে।

অনিক সেলফোনটা নিয়ে কল দিলো আফরিনকে, অপর পাশে কয়েক রিং হতেই আফরিন রিসিভ করে বললো, হাই অনিক।

হাই আফরিন, তুমি কি বেরিয়ে গেছো?

না বেরুচ্ছি।

তাহলে প্লিজ একটা কাজ করে দাও।

হুকুম মেরি আকা?

এইটা আবার কি? 

গতকাল হিন্দি সিরিয়াল থেকে শিখলাম।

ইশ তুমি যে কি না, ওসব ছাইপাশ না দেখলে কি হয় তোমাদের, ছায়াও দেখি সারাক্ষণ তাই দেখে, এনিওয়ে তুমি বাসায় আসো, ছায়া অসুস্থ ফিল করছে, একটু সাথে যাবে কি ডাক্তারের কাছে?

তুমি অমন করে বলোনা, আমি গলে যাবো।

আবার শুরু করলে?

আচ্ছা আসছি।

ওকে বাই বলেই ফোন ডিসকানেট করে ছায়াকে জানালো সব। 

 

অনিক ছায়ার থেকে বিদায় নিয়ে অফিসে চলে গেলে ছায়া ঘরের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

অনিক অফিসে পোঁছানোর কিছু পরই মিটিং শুরু হলো মেক্সিকোর বায়ারের সাথে, মিটিং শেষ হতে হতে দুপুর হয়ে এলো, অনিক লেভিনকে অনুরোধ করলো বায়ারদের লাঞ্চ করাতে, লেভিনরা চলে গেলে অনিক নিজ কেবিনে যাওয়ার আগে পাশের এক শপ থেকে নিজের জন্য সেন্ডউইচ নিয়ে কেবিনে ফিরে গেলো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজায় হাল্কা নক শুনে চোখ তুলে তাকালো। 

আফরিন রুমে প্রবেশ করে চেয়ারে বসলো।

লাঞ্চ করেছো? 

না করিনি, কিছুক্ষণ পর করবো। 

তা গিয়েছিলে ডাক্তারের কাছে?

হাঁ, ডাক্তার কিছু টেস্ট করতে দিয়েছে, সন্ধ্যায় আমি নিয়ে আসবো।

গুড, তাহলে তুমি লাঞ্চ করে নাও।

বাই দ্যা ওয়ে মিটিং কেমন হলো?

মোটামুটি, ওরা আরও কম দামে কেমিক্যাল চাই যা আমাদের দ্বারা সম্ভব নয়।

তাহলে তো এইটা লস। 

নাহ, পরে ওদের অন্যদের প্রাইস লিস্ট দিয়ে দেখিয়ে দিলাম কেন আমরা ভালো।

তারপর?

অনিক টেবিল থেকে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বললো, দেখো ওদের অর্ডার, ফাইলেই চেক আছে, ডিপোজিট করে দাও।

ওয়াও ভেরি গুড। 

 

সন্ধ্যার আগেই অনিক ফিরে এলো অফিস থেকে, ছায়া হাসিমুখে দরজা খুলে দিলে অনিক জড়িয়ে ধরলো।

কি গো এখন কেমন লাগছে?

দুপুরের আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছি, দেখছোনা তোমার জন্য সেজে গুঁজে রয়েছি।

অনিক ভালো করে ছায়াকে দেখে বললো, আমার তো লোভ হচ্ছে।

ছায়া দ্রুত নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, উঁহু এখন কিচ্ছু হবেনা, যাও শাওয়ার সেরে নাও আমি নাস্তা রেডি করছি।

ওকে ম্যাডাম, এই যাচ্ছি আর আসছি, বলেই অনিক চোখ টিপলো।

তুমি গেলে বলেই ছায়া মারার ভঙ্গি করলো, অনিক পালালো নিজ রুমে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ছায়া নাস্তা রেডি করে ডাক দিলো অনিককে।

রুমের ভিতর থেকে অনিক বললো, আসছি।

ছায়া কফি রেডি করতে শুরু করলো, নিজের কফিতে ভালো করে ক্রিম দিয়ে এবং অনিকেরটা ব্ল্যাক কফি করলো, অনিক কিভাবে যে ব্ল্যাক কফি খায় তা ছায়া অবাক হয়ে ভাবে।

 

অনিক বের হয়ে আসলে ছায়া টেবিলে সব সাজিয়ে দিলো, অনিক কুকিজে কামড় দিয়ে চাবাতে লাগলো, এরপর এক চুমুক কফি খেলো। 

তারপর বলো, তোমার ডাক্তার কি বললো?

আসলে আমি আজ গিয়েছিলাম আমার সেই হাসপাতালে যেখানে আমার চিকিৎসা হয়েছিলো।

তাই, তারপর?

ওরা কিছু টেস্ট দিয়েছে, গাইনোকলজিস্ট বললো টেস্টের রেজাল্ট হলে আগামীকাল দেখাতে বললো।

মানে কি? 

মানে তেমন কিছু না, আমার একটা থরর চেকআপ করছে ওরা। 

ওহ তাই বলো।

আচ্ছা ভালো কথা, বাবা ফোন দিয়েছিলেন।

কখন?

এই তুমি আসার আগে।

তা কি বললো? 

এই আমাদের খবরাখবর নিলেন, মা আর সায়মাও কথা বললো, রবিন মেসেঞ্জারে প্রচুর ছবি পাঠিয়েছে অনুষ্টানের? 

তাই, কই দেখাও তো?

ছায়া নিজের ফোনটা দিয়ে বললো, তুমি চেক করো, আমি এগুলো ঘুচিয়ে রাখছি। 

 

অনিক ছায়ার ফোনটা নিয়ে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসলো, ওখান থেকে হাঁক দিয়ে বললো, ছায়া শুনো তো।

ছায়া এলে বললো, তোমার জন্য একটা বাংলো দেখেছি।

মানে কি?

বড় একটা বাড়ি বাংলোর মতো।

তাই?

হাঁ, আসার পথে কথা বলে এলাম, দোতলা বাড়ির উপরে নিচে ছয়টা বেডরুম উইথ এটাচ বাথরুম, বাড়িটার মাঝখানে ছোটো এক সুইমিংপুল আছে, সামনে গার্ডেন আছে।

তাই, তা কত দাম পড়বে?

দুই মিলিয়ন?

ওরে বাবা, এতো অনেক দাম। 

কি যে বলোনা, এই ফ্ল্যাটের দামই তো আছে দুই লক্ষ ডলার, ফার্নিচার সহ আরও পঞ্চাশ হাজার ধরো, বাকিটা ব্যাংক লোন দেবে। 

ব্যাংক লোনের কি দরকার আর বাড়িও কেনার কি দরকার, অযথা।

অযথা নয় ছায়া, এ সব আমার এ্যাসেট, ভাবছি এই ফ্ল্যাট রেখে দেবো, ভাড়া দিলেও মাসে পাঁচ ছয় হাজার পাবো।

তুমিই ভালো বুঝো।

আগামীকাল উইকডে আছে, তোমাকে দেখিয়ে নিয়ে আসবো, সাথে সাইনিং মানিও দিয়ে আসবো। 

ওকে জনাব। 

 

কলিংবেলের শব্দ হলে ছায়া গিয়ে দরজা খুলে ধরলে আফরিনকে দেখে ফিক করে হেসে দিয়ে বললো, হাই বন্ধু। 

হাই, তুমি এখন কেমন ফিল করছো?

বেটার, আসো প্লিজ।

সিউর বলেই আফরিন ভিতরে এলে ছায়া দরজা বন্ধ করে আফরিনকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে এসে বললো, বসো, কি খাবে বলো?

সকালে বললে না বাংলাদেশ থেকে মিষ্টি নিয়ে এসেছো?

ও তো অনেক দিন হয়ে গেলো, এতোদিন থাকে নাকি?

হুম জানতাম বলেই ছায়া পলিব্যাগ একটা এগিয়ে দিয়ে বললো, চেক করো মিষ্টি আছে।

তাই, ছায়া অবাক হলো। 

কনগ্রাজুলেশন তোমাদেরকে।

অনিকও অবাক হয়ে তাকালো আফরিনের দিকে।

হটাৎ অভিনন্দনের কি হলো।

আফরিন দুষ্টামির চোখে অনিক ছায়াকে দেখতে লাগলো।

কি ব্যাপার বলবে নাকি, অনিক জিজ্ঞেস করলো।

আগে মিষ্টি খাওয়াও।

তাতো খাওয়াবোই, আগে বলো কি হয়েছে, ওহহো তুমি তো ছায়ার রিপোর্ট নিয়ে এসেছো, দেখি দেখি।

দেখাচ্ছি, তার আগে সুসংবাদটা আমিই দিই। 

বলো, বলেই অনিক আর ছায়া আগ্রহ ভরে তাকালো আফরিনের দিকে।

ছায়া মা হতে চলেছে। 

অনিক আর ছায়া কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে রইলো আফরিনের দিকে, ক্ষনিকের মধ্যেই অনিক ইয়াহু চিৎকার দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো এবং সাথে সাথে ছায়াকে কোলে তুলে নিয়ে এক পাক ঘুরলো। 

 

........ চলবে। 

ছবিঃ গুগল।

 

জনস্বার্থেঃ

 

0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ