
দুই মাস পরের ঘটনা
অনিক ছায়া লাঞ্চ করছিলো, আজ রোববার বলে অনিকের অফিস নেই, দুজনেই বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে, অনিক খাওয়ার মাঝে ছায়ার সাথে খুনসুটি করছিলো, ছায়া পাল্টা অভিমান দেখিয়ে বললো, আরেকবার জ্বালাবে তো এই মোটা চামুচ দিয়ে মাথা ফাটাবো বলে দিলাম।
অনিক মাথাটা এগিয়ে দিয়ে ইশারা করলো যেন ছায়া ফাটাতে পারে, ছায়াও কম না, নিজেই হাত দিয়ে মাথায় ধীরে একটা চটকানা দিয়ে বললো, কি বলছি শুনবে?
জ্বি ম্যাডাম বলুন শুনি।
আমি তোমাকে না বলেই আজ একটা কাজ করেছি।
যা করেছো তা ভালোই করেছো।
নাহ আসলে আজ রওশনের মৃত্যুবার্ষিকী ছিলো।
কি বলো, তুমি আগে বলোনি কেন?
আসলে আজ গ্রোসারি আনতে যখন গেলাম তখন মনে পড়লো।
তো?
আমি আসার পথে ওয়েলিংটন মসজিদের ঈমামের সাথে দেখা হলো, উনাকে একশ ডলার দিয়ে বলেছি কোরআন শরীফ খতম করে দেওয়ার জন্য।
খুব ভালো করেছো, আমিও তাই ভাবছিলাম।
আচ্ছা আমার খাওয়া শেষ, আমি উঠছি বলে ছায়া উঠে গিয়ে প্লেট বাটি দুয়ে তুলে রাখতে লাগলো, অনিকও উঠে গিয়ে হেল্প করতে লাগলো।
ছায়া হটাৎ কান খাড়া করে বললো, কি ব্যাপার তোমার ফোন কি রুমে?
হাঁ রুমেই।
তোমার ফোনে রিং হচ্ছে।
কি বলো, অনিক দ্রুত হাত ধুয়ে নিয়ে টাওয়ালটা নিয়ে নিজের রুমে দিকে এগুলো হাত মুছতে মুছতে।
ছায়া কাজ শেষ করে রুমে গিয়ে দেখলো অনিক শক্ত হয়ে বসে আছে, চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
ছায়া দ্রুত এগিয়ে অনিককে জড়িয়ে ধরে বলল, কি হয়েছে বাবু (ছায়া আদর কিরে বাবু ডাকে অনিককে), তুমি কাঁদছো কেন?
অনিক এক হাত দিয়ে চোখ মুছে বললো, বাবার ম্যাসিভ হার্ট এটাক হয়েছে।
ছায়া আঁতকে উঠে বললো, না না এইসব কি বলছো, বাবা তো কতো ফিট মানুষ।
আমাদের দেশে যেতে হবে ছায়া, বলেই অনিক ফোন করলো আফরিনকে, কয়েকটা রিং হতেই আফরিন রিসিভ করে হ্যালো বললো।
আফরিন তুমি আজকের যে কোনো ফ্লাইটে বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য দুইটা টিকেট করো, আমি ছায়া পাসপোর্ট কপির স্ক্যান কপি পাঠাচ্ছি।
কি হয়েছে অনিক, এনিথিং সিরিয়াস?
হাঁ আমার বাবা হার্ট এটাক করেছে, আমাদেরকে আজকেই যেতে হবে।
ওহ গড, আচ্ছা আমি দেখছি, তুমি কপিটা পাঠাও, আমি রাখছি।
অনিক ল্যাপটপ খুলে ছায়ার পাসপোর্ট কপি ইমেইলে পাঠিয়ে দিলো।
আধা ঘন্টার মধ্যেই আফরিন কল দিয়ে জানালো, আজ রাত নয়টায় সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে টিকেট কাটা হয়েছে, স্ক্যান কপি পাঠাচ্ছি তোমার মেইলে।
ওকে ধন্যবাদ, বলে অনিক ফোন ডিসকানেট করে ছায়াকে বললো, তুমি ব্যাগপত্র ঘুচিয়ে নাও, আমাদেরকে এইখান থেকে পাঁচটাই বেরুতে হবে।
ছায়া উঠে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো, অনিক মেইল চেক করে কল দিলো দেশে।
ওর ছোটো ভাই রিসিভ করতেই অনিক জিজ্ঞেস করলো, বাবা কই এখন, কেমন আছে?
ভাইয়া, বাবাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে, বাহাত্তর ঘন্টার আগে ডাক্তাররা কিছু বলতে পারবেন না বললো।
মা কই?
মা কান্নাকাটি করছেন।
আচ্ছা মাকে বলিস আমরা আজকে উঠবো, আগামী পরশুদিন ভোরে পোঁছাবো।
ঠিক আছে ভাইয়া।
টাকা লাগবে?
ভাইয়া আপাতত আছে, শুধু তুমি আর ভাবী চলে আসো।
আচ্ছা রাখছি।
আল্লাহ্ হাফেজ।
বাংলাদেশে বিমান ল্যান্ড করলো ভোর পাঁচটায়, এয়ারপোর্টের ফরমালেটিজ শেষে বের হতে হতে সাড়ে ছয়টা বাজলো, এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়েই অবাক হলো ওর নামে প্লাকার্ড হাতে একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।
ও এগিয়ে গিয়ে পরিচয় দিতেই ওকে সালাম দিয়ে বললো, স্যার এক মিনিট বলেই সে ফোন দিয়ে বললো, জ্বি উনাদেরকে পেয়েছি, কথা বলুন, ফোনটা এগিয়ে দিলো অনিকের দিকে।
হ্যালো।
হ্যালো মি. অনিক, আমি সোহানা বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স থেকে, সোহেল ভাই জানালো আপনার দেশে আসার খবর।
সোহেল সাহেব জানেন কিভাবে যে আমি আসছি।
ও আমাদের জানতে হয়, আপনার জন্য গাড়ি পাঠিয়েছি, আপনি নিশ্চয় এখন ইউনাইটেড হাসপাতালে যেতে চাইবেন।
জ্বি।
আচ্ছা ও আপনাদেরকে ওখানে ড্রপ করে দেবে।
আপনারা কি আমাদের ফলো করছেন?
না ফলো করছিনা কিন্তু খেয়াল রাখছি, ভালো থাকবেন, শুভ সকাল।
সকাল সকাল হওয়াতে অনিকরা দ্রুতই পোঁছে গেলো হাসপাতালে, ড্রাইভার বললো লাগেজ গুলো থাক, আমরা আপনার বাসায় পোঁছে দেবো।
অনিক কথা না বাড়িয়ে ছায়াকে নিয়ে এগুলো হাসপাতালের ভিতর।
অনিক ছায়াকে আসতে দেখে অনিকের মা দ্রুত এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলেন।
মা বাবা কেমন আছেন?
তোর বাবা এখন কিছুটা সুস্থ আছেন, ডাক্তার বললো এইভাবে যদি আরও ইম্প্রুভ করেন তা হলে এঞ্জিওগ্রাম করে ফেলবে।
ছেলেকে ছেড়ে অনিকের মা ছায়াকে জড়িয়ে ধরে বললেন, মা তুমি এসেছো, আসো দুজনেই আসো বাবাকে দেখবে।
দুজনকেই নিয়ে অনিকের মা আইসিইউর ভিতরে যেতে চাইলে গেইটম্যান বাধা দিয়ে বললো, যেকোনো দুজন যান।
অনিকের মা বাইরে রয়ে গেলে অনিক আর ছায়া দুজন ভিতরে গেলো অনিকের বাবাকে দেখতে, বাবার পাশে গিয়ে অনিক দাঁড়াতেই অনিকের বাবা চোখ খুলে তাকিয়ে হাসলেন।
ইশারা করে কাছে ডাকলেন, অনিক কাছে ঝুকে বাবার মাথায় হাত ভুলিয়ে বললো, বাবা চিন্তা করোনা, আমরা এসে গেছি।
উনি ধীরেধীরে বললেন, তোরা চিন্তা করিস না, আমি নাতি নাতনি না দেখে যাবোনা বাবা।
অনিক চমকে উঠে তাকালো বাবার দিকে, হাসির চেষ্টা করে বললো, ওসব পরে হবে বাবা, আপনি সুস্থ হয়ে নিন, ছায়া ইশারা করে কাছে ডাকলো, বাবাকে বললো, বাবা তোমাদের বউ এসেছে।
ছায়া ছলছল চোখে শ্বশুরের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো, বাবা কেমন লাগছে আপনার?
তোমাদেরকে দেখে আমি আরও সুস্থ হয়ে গেছি।
বাবা আপনি রেস্ট করুন, আমরা বাইরে আছি।
অনিক ওর বাবার চোখে বিলি কেটে বললো, বাবা তুমি সুস্থ হয়ে যাও, আমরা অনেক মজা করবো।
যা বাবা বাসায় যা, রেস্ট করে পরে আসিস।
না বাবা, আমি আছি।
এদিক আয়, অনিক ঝুকলে বললেন, আমি ঠিক আছি, তোরা বাসায় যা।
অনিক ছায়া বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো আইসিইউ থেকে, দরজার সামনেই মাকে পেয়ে বললো, মা আমি ডাক্তারদের সাথে কথা বলে আসি।
এখন ডাক্তারদের কোথায় পাবি, উনারা দশটার আগে আসবেনা।
তাই, আচ্ছা ঠিক আছে, ছোটো ভাইকে আসতে দেখে অনিক বললো, ও কোথা থেকে আসছে?
রাতে তো থাকতে দেয়না এইখানে, তাই জোর করে ওকে বাসায় পাঠিয়েছিলাম, রাত্রে আমি ছিলাম।
কি বলো মা, তুমি রাতে এইখানে ছিলে?
আমি না থাকলে তোর বাবাও যে অস্বস্তি করতো, এখন চল তোদেরকে নিয়ে আমি বাসায় যাবো।
মা তুমি ছায়াকে নিয়ে যাও, আমি ডাক্তারদের সাথে দেখা করে আসবো।
কিন্তু?
কোনো কিন্তু নয়, তোমরা যাও আমি আছি, রবিন যা ওদেরকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আয়।
অনিকের মা ছায়াকে নিয়ে চলে গেলে অনিক ওর বন্ধু তৌফিককে ফোন দিলো, তৌফিক এখন নামকরা হার্ট স্পেসালিস্ট।
কয়েকটা রিং হতেই ডাঃ তৌফিক রিসিভ করেই বললো, বন্ধু ঘুমাসনি?
বন্ধু আমি এখন ঢাকায়, তুই কোথায় এখন?
কি বলিস, ঢাকায় কি?
অনিক সব খুলে বললে তৌফিক বললো, আমি তো এখন ইউনাইটেড হাসপাতালের হেড, আচ্ছা আমি আসছি, এই কাছেই বাসা, পাঁচ মিনিট লাগবে।
…….. চলবে।
ছবিঃ গুগল।
জনস্বার্থেঃ
১৬টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আছি সাথে, দেখি বাংলাদেশ পর্ব কোন দিকে যায়।
ইঞ্জা
জ্বি ভাইজান, আমিও আছি।
ধন্যবাদ নিরন্তর।
ফয়জুল মহী
অনন্য , লেখা পড়ে বিমোহিত হলাম।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অহর্নিশ ভাই।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এবার বাংলাদেশের পর্ব! চলুক গল্প, আমরাও বাংলাদেশ এ এসে পড়লাম। ধন্যবাদ ভাইয়া শুভ কামনা রইলো
ইঞ্জা
জ্বি আপু, বাংলাদেশ পর্ব নিয়েই কিছুটা এগুবো।
ধন্যবাদ সতত।
সুরাইয়া নার্গিস
গতপর্বটা পড়া হয়নি,সময় করে পড়ে নিব।
আজকের পর্বটাও দারুন হয়েছে।
পাশে আছে ভাইজান পরের পর্বের অপেক্ষায় রইল।
ইঞ্জা
পাশে থাকার জন্য অক্লান্ত কৃতজ্ঞতা।
তৌহিদ
অনিকের বাবার খবরে দুঃখ পেলাম। যাক তবু যেন তিন সুস্থ্য হয়ে ওঠেন। সোহেল, সোহানা এগুলো আমার প্রিয় চরিত্র। আপনার গল্পে পেয়েও আবার ভালো লাগা তৈরি হচ্ছে।
শুভকামনা রইলো দাদা।
ইঞ্জা
সোহেল, রানা, রুপা, সোহানা সবই আমাদের প্রিয় নাম ভাই, ভালো লাগছে শুনে আনন্দিত হলাম, ধন্যবাদ।
সুপায়ন বড়ুয়া
বাংলাদেশ পর্বটা উপভোগ্য হবে মনে হয়
চেনা জানা পথে ঘাটে।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
ইঞ্জা
বাংলাদেশের পর্ব কম রাখবো দাদা, বিশেষ কারণে আজকের গল্পের অবতারণা যা আগামীতে বুঝতে পারবেন, ধন্যবাদ।
হালিম নজরুল
অনিকের বাবা সুস্থ হোক।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই।
জিসান শা ইকরাম
দেশে আসলো অনিক ছায়া, অনিকের বাবার হার্ট এটাক আশাকরি খুব কঠিন হবে না। দ্রুত সুস্থ হয়ে যাক উনি।
অনিকের ডাক্তার বন্ধুর নাম একবার তৌফিক, একবার তৌহিদ হয়েছে। ঠিক করে দিয়েন।
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম,
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
জ্বি ধন্যবাদ ভাইজান, আমি এখনি ঠিক করে দিচ্ছি।