এক মুঠো ভালোবাসা (৩৭তম পর্ব)

ইঞ্জা ২৫ এপ্রিল ২০২০, শনিবার, ০৩:৩১:১০অপরাহ্ন গল্প ২৭ মন্তব্য

অনিকের বাসা থেকে সবাই দ্রুত চলে এলেন হাসপাতালে, অনিকের মা তো ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলেন, সবার চোখেই পানি।

মা তুমি কাঁদছো কেন, আমি ঠিক আছি তো।

অনিকের মা চোখ মুখ মুছে বললেন, না আর কাঁদবোনা বাবা, তুই একদম সুস্থ হয়ে যা, বাসায় ফিরেই তোদের বিয়ের আয়োজন করবো, রবিন, সায়মা (অনিকের ভাই বোন) ওরা খুব টেনশনে আছে, ওগো তুমি ওদের ফোন করে বলে দাও। 

হাঁ হাঁ আমি বলে দিচ্ছি, বলেই অনিকের বাবা চোখের পানি মুছে বাইরে চলে গেলেন। 

আমি তোমাদেরকে টেনশনে ফেলে দিয়েছিলাম না মা?

বাবারে টেনশন থাকবেনা, ছায়া তো এ কদিন খাওয়া দাওয়ায় ছেড়ে দিয়েছিলো।

ছায়া লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ফেরালো।

মেয়েটা না থাকলে কি যে হতোনা আমাদের, খুব সেবা যত্ন করেছে ও। 

অনিক হাসলো।

অনিকের বাবা ফিরে এলেন,চসাথে লেভিন ও আফরিন সাথে। 

এসেছো তোমরা, দেখো আমার ছেলে সুস্থ হয়ে উঠছে, অনিকের মা বললেন। 

লেভিন অনিকের পাশে এসে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলো, কেমন আছো বন্ধু।

এখন একটু ভালো আছি, তোমার খবর কি, ব্যবসার কি অবস্থা?.

অল ইজ আন্ডার কন্ট্রোল মাই ফ্রেন্ড, তুমি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠো, অনেক কাজ বাকি পড়ে আছে। 

আফরিন তুমি ভালো আছো?

আফরিন পাশে এসে কেঁদে ফেললো, আমরা ভালো আছি, তুমি ঠিক আছো তো? 

তোমাদের সবাইকে দেখে খুব ভালো লাগছে।

ডাক্তারকে আসতে দেখে সবাই সরে গেলো, ডাক্তার আবার চেক করে নার্সকে কিছু নির্দেশনা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় অনিকের বাবাও সাথে গেলেন। 

নার্স সবাইকে ওয়েটিংরুমে বসতে বলে নিজে মন দিলো ড্রেসিং করতে, কাজ শেষ করে সে বেরিয়ে এলো। 

অনিকের বাবা ফিরে এসে অনিকের মাকে বললো, ডাক্তার বললো আর কয়েকদিন পর রিলিজ দেবে। 

খুব ভালো কথা ভাই, আচ্ছা এইখানে ভীড় না করে থেকে এখন আমি থাকি, আপনারা সন্ধ্যায় আসেন, কি বলেন ভাই সাহেব, রওশনের বাবা বললেন। 

আনকেল আপনাদের আপত্তি না থাকলে এখন আমি  থাকি, আপনারা রেস্ট করুন, আফরিন বললো।

হাঁ আফরিন, তুমিই থাকো, ছায়া বললো।

 

এক সপ্তাহ পরঃ

আজ অনিককে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে, পুরা ঘর জুড়েই আজ আনন্দের বন্যা, অনিকের মা নিজেই আজ রান্না করছেন ছেলের জন্য, ছায়াকে দ্বায়িত্ব দিয়েছেন অনিককে দেখা শুনার।

ছায়া অনিককে ভেজা কাপড় দিয়ে পুরা শরীর মুছে দিয়ে ফ্রেস কাপড় পড়িয়ে দিলে অনিক বললো, আমি একটু ড্রয়িংরুমে বসতে চাই। 

ঠিক আছে চললো বলে ছায়া অনিকের ক্রাচটা ধরিয়ে দিয়ে নিজে হেল্প করলো উঠে দাঁড়াতে, এরপর নিজে ধরে ধরে নিয়ে গেলো অনিককে।

কিচেন থেকে অনিকের মা দৌড়ে এলেন আর জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার তুই বেরিয়ে এলি কেন বাবা?

মা কতক্ষণ এইভাবে বসে থাকবো, তাই একটু বেরুলাম, তুমি পোলাও করছো মা, পুরা ঘর মৌ মৌ করছে, খেতে পারবো তো?

হাঁরে বাবা, ডাক্তার বলেছে তুই সব ধরণের খাবার খেতে পারবি, কোনো অসুবিধা নেই।

মা তাহলে মুরগির রোস্ট হচ্ছে নিশ্চয়?

আমি তোর পছন্দের সব করছি বাবা। 

আন্টি আমি ওকে বসিয়ে আসছি।

এই মেয়ে, তুমি আমাকে আবার আন্টি ডাকলে মার খাবে, এখন থেকে মা ডাকবে। 

ছায়ার মুখ রক্তিম হয়ে উঠলো। 

অনিক ওর বাবা এবং রওশনের বাবার সাথে গল্প করছে, কিছুক্ষণ আগেই সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করেছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই ছায়া ও অনিকের মাও এসে যোগ দিলেন বাকি সবার সাথে।

তা বাবা অনিক, তোমার ঘটনা খুলে বলো শুনি আমরা, অনিকের বাবা জিজ্ঞেস করলেন।

বাবা এগুলো তোমাদের না জানাই ভালো, ও সময় গুলো খুবই জঘন্য ও নৃশংস ছিলো।

কিন্তু তোর মতো ডেয়ার ডেভিল ছেলেকে ওরা কিডন্যাপ কিভাবে করলো, তুই বাধা দিস নাই?

অনিক ছায়ার দিকে একবার তাকালো, এরপর চোখ সরিয়ে বললো, বাবা ওরা যে অস্ত্র তাক করেছিলো।

তাই বল, জানেন সুলতান ভাই, ছেলেটার কারণে দেশে সারাক্ষণ ভয়ে জড়সড় হয়ে থাকতাম, ওকে ঘরে দেখতাম নম্র ভদ্র আর বাইরে সবার কাছে ছিলো বাঘ, ওর ছেলেবেলায় একদিন খুব মেরেছিলাম, কারণ ও পাড়ার এক মাস্তানকে ইট দিয়ে এমন মার মেরেছিলো যে প্রায় মর মর অবস্থা, এরপরেও অনিককে আমি ঠেকিয়ে রাখতে পারিনি।

রওশনের বাবা হাসলেন।

কি ভাই হাসছেন কেন?

হাসলাম কারণ আমিই জানি অনিক জুয়েল একটা ছেলে, ও আজ পর্যন্ত কাউকে অন্যায় ভাবে মারেনি, রওশন বলেছিলো আমাকে। 

যাও বাবা কিছুক্ষণ রেস্ট করো, মা ছায়া নিয়ে যাও ওকে।

জ্বি আনকেল বলে ছায়া উঠে গিয়ে অনিককে ধরলো, অনিককে উঠতে সাহায্য করে এরপর নিয়ে গেলো অনিকের রুমে, অনিককে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বললো, তুমি ঘুমাও আমি যাচ্ছি।

বসোনা পাশে, কথা বলি। 

ছায়া পাশে বসে বললো, তুমি কিডন্যাপারদের হাতে ইচ্ছাকৃতই ধরা দিয়েছিলে না?

কেন এমন ভাবলে?

কারণ আমি আগেও দেখেছি তুমি অস্ত্র দেখে ভয় পাওয়ার মানুষ না, তুমি আমার উপর রাগ করেই আত্মসমর্পণ করেছিলে, পায়ের নক দিয়ে কার্পেট খুটতে খুটতে ছায়া বললো।

আরেহ না, ধুর কি যে বলো না, আগের সেই দিন আছে নাকি, অনিক মিথ্যে বললো ছায়ার কাছে।

ছায়ার চোখ দিয়ে টপ করে পানি পড়তে দেখে বুকে টেনে নিলো আর বললো, তুমি কাঁদছো কেন, আমি তো এখন তোমার কাছেই ফিরে এসেছি।

দরজায় নক শুনে ছায়া দ্রুত উঠে চোখ মুছে নিয়ে দরজা খুলে ধরলো, অনিকের বাবা এসেছেন।

অনিক তোর সাথে বাংলাদেশ এম্বেসি থেকে সোহেল চৌধুরি সাহেব এসেছেন, রুমে নিয়ে আসবো?

ঠিক আছে বাবা নিয়ে আসো।

আমি যাচ্ছি বলেই ছায়া বেরিয়ে গেলো। 

সোহেল চৌধুরি রুমে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললো, হ্যালো মি. অনিক, এখন কেমন আছেন?

জ্বি অনেকটা ভালো, আপনি এইখানে?

হাঁ একটু দরকার ছিলো, বলেই একটা চেয়ার টেনে অনিকের সামনে বসলো। 

মি. অনিক, আসলে আমাদের কিছু জিজ্ঞাসা ছিলো।

জ্বি বলুন। 

ওরা আপনাকে কিডন্যাপ করার পর থেকে এ পর্যন্ত কি কি হয়েছে খুলে বলুন প্লিজ। 

অনিক একে একে সব খুলে বলতে শুরু করলো, ওর শেষ হলে সোহেল চৌধুরি বললো, এর অর্থ হলো ওরা জানতে চাইছিলো আমাদের পরিচয়।

হাঁ।

আপনাকে এতো নির্যাতন করার পরও আপনি আমাদের পরিচয় কেন বলেননি?

প্রথমতঃ ওদেরকে বলে ফেললে ওরা আমাকে মেরে ফেলতো।

আর?

দ্বিতীয়তঃ আমি চাইনি আমার দেশের কারো ক্ষতি হোক। 

জেনে খুশি হলাম, ওরা বড় ধরণের সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে রেখেছে, চাইলে সত্যি ওরা আমাদের ক্ষতি করতে পারতো, এনিওয়ে আমি আজ উঠছি, যদি কখনো দরকার হয়, বাংলাদেশ সরকার সবসময় আপনার পাশে থাকবে, শুধু একটি ফোন কল মাত্র। 

ধন্যবাদ।

আসি তাহলে, get well soon. 

 

....... চলবে। 

সমাপ্ত।

ছবিঃ গুগল।

জনস্বার্থেঃ

0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ