এক মুঠো ভালোবাসা (৩৩তম পর্ব)

ইঞ্জা ১৪ এপ্রিল ২০২০, মঙ্গলবার, ০৬:২০:২৫অপরাহ্ন গল্প ২৬ মন্তব্য

জীবন্মৃত অনিককে শিলিংয়ে শিকল বাধা অবস্থা থেকে নামাতে বলে চ্যাং সিগার ধরালো, তা দাঁতের ভাঁজে চেপে ধরে ফিলিপিনো ভাষায় বললো, ওকে গুদাম ঘরে ফেলে রাখো আর ডাক্তারকে বলো আজকে ট্রিটমেন্ট দিতে, ও মরে গেলে তো আর আমার ক্ষতি পোষাতে পারবোনা।

অনিককে ছ্যাঁচড়ে দুজন নিয়ে গেলো গোডাউনে ফেলে রাখার জন্য, গোডাউনটা অন্ধকার এক জায়গা, যেইখানে সহজে আলো পোঁছায়না, সেখানেই ষন্ডারা ছুঁড়ে ফেললো অনিককে, ছুঁড়ে ফেলার গতি বেশি থাকায় অনিক গুঁগিয়ে উঠলো।
জ্ঞান পুরাপুরি হারায়নি ও, কানে আওয়াজ এলো ট্যাঁ ট্যাঁট ট্রাঁট ট্যাঁট শব্দ, যেন মেসিন পিস্তল বা মেসিনগানের আওয়াজ, কয়েকটা গুলির আওয়াজও শুনলো মনে হয়, এরপর জ্ঞান হারালো।
কতক্ষণ পর আবার জ্ঞান ফিরলে মনে হলো কেউ ওর মুখের উপর যেন দেখছে, এরপর আবার জ্ঞান হারালো।

অনিকের মার প্রচন্ড জ্বর, কয়েকদিন উনি শুধু জায়নামাজেই পড়ে ছিলেন, খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করতেন না, ছায়া জোর করে খাওয়ালে অল্প খেতেন, ছেলের চিন্তায় চিন্তায় উনি অসুস্থ হয়ে গেলেন।
অনিকের বাবার অবস্থা তথৈবচ, পুরুষ মানুষ বিধায় এখনো শক্ত আছেন, হয়ত বেশিদিন গেলে উনিও অসুস্থ হয়ে যাবেন।
আজ অনিক নেই এক সপ্তাহ, ছায়া মাঝে মাঝে সোহেল চৌধুরীকে ফোন দেয়, পরে হতাশ হয়ে সবার সেবাতে লেগে থাকে, লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে সে, মাঝে মাঝে অনিকের বিছানায় মরার মতো পড়ে থাকে, নাহয় কেঁদে বিছানা ভিজায়, চোখের নিচে কালি পড়েছে যেন চোখ গর্তে লুকাতে চাইছে।
ছায়া অনিকের মাকে জলপট্টি দিচ্ছে, অনিকের বাবা পাশেই বসে ছিলেন।
আন্টি আপনি এইভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে কি করে, অনিক যখন ফিরবে তখন কি জবাব দেবেন?
মাগো, আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেলো, অনিক তো ফিরে এলোনা, আল্লাহই জানেন কিডন্যাপাররা আমার ছেলেকে কি করছে, বলেই হু হু করে কাঁদতে শুরু করলেন অনিকের মা, অনিকের বাবা মাথায় হাত ভুলাতে ভুলাতে চোখের পানি ফেলছেন।
এই সময় দরজায় নক শুনে ছায়া বললো, বাবা আসছি।
ছায়া উঠে গিয়ে দরজা খুললে রওশনের বাবা জিজ্ঞেস করলেন, ভাবী এখন কেমন আছে?
জ্বর একটু নামছে বাবা।

ভাই আপনার ফোন এসেছিলো।
তাই বলে অনিকের বাবা উঠে গিয়ে সেলফোন নিয়ে চেক করে দ্রুত কল ব্যাক করলো।
অপর প্রান্ত থেকে সোহেল চৌধুরী কণ্ঠ, মি. রাশেদ আপনাদের জন্য গুড নিউজ আছে।
কি কি বলুন প্লিজ।
মি. অনিককে উদ্ধার করা হয়েছে, এই মুহূর্তে ল্যানগন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
কেন কেন ওর কি হয়েছে অনিকের?
না তেমন কিছু না, উনাকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে, আপনাদেরকে আমার লোকজন নিয়ে আসবে, রাখছি।
জি জি, ওগো শুনছো তোমার ছেলেকে পেয়েছে ওরা।
ইতিমধ্যে অনিকের মা বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন, উনি হাউমাউ করে কাঁনা শুরু করে ছায়াকে জড়িয়ে ধরলেন, সাথে ছায়াও কাঁদতে লাগলো।
কোথায় আছে অনিক, ওকে কি নিয়ে আসছে ঘরে, রওশনের বাবার উদ্বীগ্ন জিজ্ঞাসা?
না ভাই সাহেব, ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে, অনিকের মা, ছায়া চলো সবাই, নিচে আমাদের জন্য গাড়ি অপেক্ষা করছে, ভাই চলেন চলেন।
জ্বি ভাই চলেন, ছায়া তুই ভাবীকে রেডি করে নে, তুইও চেইঞ্জ করে নে মা।

ঘন্টা খানেকের মধ্যেই সবাইকে নিয়ে অনিকের বাবা হাসপাতালে এলেন, ইমারজেন্সির সামনেই সোহেল চৌধুরীকে পেয়ে উদ্বীগ্ন ভাবে জিজ্ঞেস করলেন, ও কোথায় আছে?
ওকে ফার্স্ট ফ্লোরে আইসিইউতে রাখা হয়েছে, চলুন উপরে যায়।
ছায়ার আর বাঁধ মানলোনা সে যেন দৌড় দিলো, দ্রুত উপরে উঠে আইসিইউ নির্দেশিত স্থানে গেলো অনিককে দেখতে, বাইরে থেকেই গ্লাসের ওপারে অনিককে নিয়ে ব্যস্ত ডাক্তাররা, সারা শরীরে দগদগে ঘাঁ গুলো পরিস্কার করছে ওরা, এইসব দেখে ছায়া আর সহ্য করতে পারলোনা, ওদিকেই লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারালো।
ইতিমধ্যে দূর থেকে সবাই খেয়াল করলো ছায়ার লুটিয়ে পড়া, সবাই দৌড়ে গিয়ে ধরলো ছায়াকে, কয়েকজন ডাক্তার নার্স এসে ছায়াকে দ্রুত একটা রুমে নিয়ে গিয়ে শোয়ায়ে দিলো।
ডাক্তাররা চেক করে অবাক হলো ওর অবস্থা দেখে, বের হয়ে এসেছে বললো, ও তো কিছুদিন ধরে অভুক্ত।
ডাক্তারের কথা শুনে রওশনের বাবাও অবাক হলেন, এরপর বুঝিয়ে বললেন কেন এমন হলো।
ডাক্তার বললেন ওকে পুষ্টিকর কিছু খেতে দিন, এতে সে ভালো ফিল করবে।

ওদিকে অনিকের অবস্থা দেখে ওর মা বাবা ভেঙ্গে পড়লেন, সোহেল চৌধুরী উনাদেরকে বললেন, আপনারা এমন করলে তো হবেনা, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করুন যে ও বেঁচে আছে এবং ওর শত্রুদেরকে বিনাশ করা হয়েছে, আশা করছি ও দিয়ে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
এই সময় ডাক্তারদের বেরুতে দেখে সোহেল সহ সবাই এগিয়ে গেলো অনিকের অবস্থা জানতে।
কেমন দেখলেন, ইংরেজিতে সোহেল জিজ্ঞেস করলো।
ও প্রচন্ড শকে আছে, শরীরে গুরুতর কিছু ক্ষত আছে, হাতে পায়ে নক তুলে ফেলাতে ক্ষতিটা বেশি হয়েছে, এরপরেও আমরা হোপফুল যে ও দ্রুত সেরে উঠবে। ইংরেজিতে ডাক্তার সব খুলে বললো।
ওর জ্ঞান কি ফিরেছে?
একবার ফিরেছিলো, আমরা ওকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েছি, যত ঘুমাবেন ততই ভালো হবে।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ বলে ডাক্তার ফিরে গেলো।

ছায়াকে ওর বাবা (শ্বশুর জোর করে স্যুপ আর চিকেন স্যান্ডউইচ খাইয়ে দিলেন, সাথে বকাও দিলেন কেন ও এতোদিন কিছু খায়নি।
বাবা ও কেমন আছে এখন?
সুস্থ তো নেই, কিন্তু ভালো আছে, ঘুমাচ্ছে এখন।
বাবা আমি দেখবো।
আগে সব খেয়ে নে, এরপর দেখতে যাবি।
ঠিক আছে বলে সব খেলো, নার্স এসে ওকে মিক্সড ফ্রুট জুস দিয়ে গেলো হাসপাতালের তরফ থেকে।
এইটাও খেয়ে নে, শরীরে শক্তি পাবি।
ছায়া চুমুক দিয়ে খেয়ে নিলো, এরপর ও রওশনের বাবাকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।
ওকে দেখে অনিকের মা জড়িয়ে ধরে বললেন, কিরে মা তুমি নাকি কিছু খাওনি এ কদিন, আসো দেখে যাও অনিককে, ছায়া ধরে গ্লাসের অন্য পাশে দাঁড়ালেন উনি।
অসংখ্য তার এবং নলের মাঝে অনিক মরার মতো পড়ে আছে দেখে ছায়ার দু-চোখ বেয়ে টপটপ করে চোখের পানি পড়তে লাগলো।

....... চলবে।

ছবিঃ গুগল।

জনস্বার্থেঃঃ

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ