
অনিকের মা উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন, কি কি বলছেন?
মিসেস রাশেদ, সত্যি দুঃখের সাথে বলছি, মি. অনিক আজ বিকেলে পার্ক স্ট্রীটের পার্কিং লট থেকে কিডন্যাপ হয়েছেন, সোহেল চৌধুরি বললো।
ওগো শুনছো উনি কি বলছেন, অনিকের বাবাকে ধাক্কা দিয়ে কান্না করতে করতে অনিকের মা বললেন, ওদিকে অনিকের বাবা সকড হয়ে শক্ত হয়ে গেলেন, রওশনের বাবা অনিকের বাবার হাত ধরে অভয় দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করলেন।
ছায়া দাঁড়িয়ে ছিলো, ও মাটিতে বসে পড়লো কলহন বুঝতেই পারেনি, চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে, নিজের মাথায় নিজেই হাত মারলো, কেন সে অনিককে ওখানে ডাকলো সে, নিজেকে নিজে দোষী মনে হচ্ছে ওর।
আপনারা একটু শক্ত হোন প্লিজ, এইভাবে করলে আপনাদের ক্ষতি হয়ে যাবে, সোহেল চৌধুরি স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলো।
আপনি সিউর হয়ে বলছেন, ভুল হচ্ছে নাতো, রওশনের বাবা জিজ্ঞেস করলেন।
জ্বি, আমরা সিউর হয়েই বলছি।
রওশনের বাবার চোখ ছলছল করে উঠলো।
মি. রাশেদ, মি. রাশেদ, আর ইউ ওকে?
পুলিশ অফিসারের ডাকে অনিকের বাবা ফিরে তাকালেন।
অফিসার আবার বললেন ইংরেজিতে, আপনারা নিরাশ হবেন না, অলরেডি সিআইএর টিম মাঠে নেমেছে, উনাকে আমরা দ্রুতই খুঁজে বের করবো।
এখন আমাদের কি করা উচিত, অনিকের বাবা কাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করলেন?
অফিসার সোহেল চৌধুরির দিকে তাকালেন, সোহেল চৌধুরি বলে উঠলো, মি. রাশেদ আসলে এখন আপনারা ঘর থেকে বেরুবেন না প্লিজ, সময়টা ক্রিটিকাল, আমাদের টিমও কাজে লেগে গেছে, আশা করছি দ্রুতই উনাকে আমরা উদ্ধার করে ফেলবো।
অনিকের মা কান্নাকাটি করছে দেখে আবার বললো, মিসেস রাশেদ, আপনি চিন্তা করবেন না, অনিক দ্রুতই আপনাদের মাঝে ফিরে আসবে, এখন আমরা উঠছি, বাইরে আমাদের লোকজন আপনাদের দিকে খেয়াল রাখবে, এই ফ্লোরেই দুজন লোক দিচ্ছি আমরা, যদি কিছুর দরকার হয়, ওরাই এনে দেবে, নিজের বিজন্রস কার্ড এগিয়ে দিয়ে বললো, এইটি আমার কন্টাক ইনফরমেশন, দরকার হলে যোগাযোগ করবেন।
ওরা বের হয়ে গেলে রওশনের বাবা দরজা বন্ধ করে এসে অনিকের বাবার পাশে বসলেন।
অনিকের বাবা বাচ্চাদের মতো করে কান্না করতে লাগলেন দেখে উনি পিটে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ভাই আপনি শান্ত হোন, আপনি ভেঙ্গে পড়লে ভাবীকে কে সামলাবে?
রাতে আর কারও খাওয়া হলোনা, কেউ খেতে রাজিনা হওয়াতে ছায়া বুকে পাথর বাঁধলো।
আজ ওর জন্যই এতো বড় বিপদ হলো অনিকের, নিজের চুল নিজে ছিড়তে লাগলো ছায়া, চোখ ফেটে পানি বের হচ্ছে ওর।
অনিকের মা উঠে এসে ছায়াকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলেন, সাথে ছায়াও নিজেকে আটকাতে পারলোনা, সেও কান্না করতে লাগলো, ওই শুধু জানে অনিকের এই বিপদের জন্য ওই একমাত্র দায়ী।
ওমা মারে, কই যাবো বল, কই গেলে আমার বুকের ধনকে ফিরে পাবো, অনিকের মার আহাজারি।
অনিকের বাবা নিজেও উঠে এসে দুজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন।
ওদিকে রওশনের বাবা শোকে পাথর হয়ে রইলেন।
সারা রাত আর কারো ঘুম হলোনা, মাঝ রাত তিনটার দিকে ছায়া জোর করে সবাইকে ঘুমাতে পাঠালেও সত্যিকার অর্থে কারোরিই ঘুমানোর মতো অবস্থা ছিলোনা।
ভোরের দিকে সবার ঘুম লেগে এসেছিলো কিন্তু ছায়া উঠে গেলো নামাজ পড়ার জন্য, ওয়াসরুমে গিয়ে অজু করে নিয়ে ড্রয়িংরুমের এক কোণায় নামাজ পড়তে শুরু করলো।
নামাজের শেষে সালাম ফিরাতে গিয়ে দেখলো অনিকের মাও উঠে এসে নামাজ পড়তে দাঁড়ালেন, ছায়া মুনাজাত শেষে কোরআন শরিফ নিয়ে সুরা ইয়াসিন পড়তে লাগলো এক মনে, এগারোবার পড়া শেষে মুনাজাত করতে শুরু করলো, চোখ ভরা পানি আর বাধ মানলো না ওর, অঝোরে কাঁদছে আর আল্লাহর কাছে অনিককে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছে, অনেকখন মুনাজাত শেষে উঠতে যাবে, দেখলো অনিকের বাবা এবং ওর শ্বশুরও নামাজ পড়ছে।
ছায়া উঠে গিয়ে সবার জন্য সকালের নাস্তা রেডি করলো, সবার নামাজ শেষ হলে সবাইকে জোর করে ডাইনিংয়ে এনে বসিয়ে খেতে দিলো।
মা আমি খেতে পারবোনা, অনিকের মা না করলেন, জানিনা আমার ছেলেটা খেয়েছে কিনা?
ছায়া বড়ভেকটা নিশ্বাস ফেলে বললো, আন্টি আপনি না খেলে কেমনে চলবে, অনিক ফিরে এলে এইসব শুনলে ও কষ্ট পাবেনা, নিন আমি খাইয়ে দিচ্ছি, বলেই রুটি ছিড়ে ভেজিটেবল নিয়ে উনার মুখের সামনে তুলে ধরলো, অনিকের মা কিছুক্ষণ ছায়ার দিকে তাকিয়ে থেকে খাবারটা মুখে নিলেন।
ছায়া সবাইকে খাইয়ে সব ধুয়ে মুছে তুলে রাখছে, এইসময় সেলফোনে রিং হচ্ছে দেখে এগিয়ে গিয়ে রিসিভ করলো।
ছায়া অনিক এসেছে, আফরিনের কণ্ঠ শুনা গেলো।
ছায়া ফুঁফিয়ে কান্না করতে লাগলো।
ছায়া, ছায়া কি হয়েছে, অনিক ঠিক আছে তো?
ছায়া কাঁদতে কাঁদতে সব খুলে বললো, সব শুনে আফরিনও ফুঁফিয়ে কাঁদতে লাগলো।
আমি আসছি ছায়া, আল্লাহকে ডাকো যেন অনিককে ফিরিয়ে দেয়।
ঠিক আছে, লেভিনকে জানিয়ে দিও, বলে ছায়া ফোন ডিসকানেট করে চোখ মুছলো।
টিকেটের কথা মনে পড়ায় ছায়া ল্যাপটপ বের করে অনলাইনে টিকেট ক্যান্সেল করিয়ে দিয়ে নিজে রেডি হলো ঘরের জন্য বাজার করতে যাবে।
আন্টি ঘরে কিছুই নেই, আমি গ্রোসারি শপ থেকে কিছু নিয়ে আসি।
ছায়া টাকা নিয়ে যাও, অনিকের বাবা বললেন।
না আনকেল, অনিকের টাকা আছে আমার কাছে।
ঠিক আছে যাও।
ছায়া দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসতেই দুইজন বাঙ্গালী পথরোধ করে দাঁড়িয়ে বললো, ম্যাডাম আপনাদের কারো বেরুনো নিষেধ।
আমাদের তো বাজার সদাই লাগবে, ছায়া বললো।
তাহলে কি লাগবে তার লিস্ট দিন আমরাই এনে দেবো।
ছায়া অনিচ্ছা শর্তেও ভিতরে চলে গেলো এবং কিছুক্ষণ পর লিস্ট এনে তাদের একজনের হাতে দিয়ে কিছু টাকা (ডলার) দিলো।
আধা ঘন্টার মধ্যে একজন কলিংবেলে চাপ দিলে ছায়া দরজা খুললে ওর হাতে বাজার সদাই বুঝিয়ে দিয়ে গেলো।
আপনারা কিছু খেয়েছেন, ছায়া জিজ্ঞাসা করলো।
আমাদের কথা চিন্তা করবেন না প্লিজ, আমাদের সব ব্যবস্থা আছে।
………. চলবে।
ছবিঃ গুগল।
জনস্বার্থেঃ
২৭টি মন্তব্য
তৌহিদ
অনিকের খবরে সবার মাঝেই শোকের ছায়া নেমেছে। এটাই আসলে হয়। নিজের বাবা মা ছাড়াও রওশনের বাবাও অনিককে নিজের ছেলের মত ভালোবাসতো। ছায়া যেন নিজের মনে সাহস ধরে রাখতে পারে। এখন ছায়াকেই সামলাতে হবে পরিবারের সদস্যদের।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দাদা। ভালো থাকবেন।
ইঞ্জা
সত্যিকার অর্থে আমি চাইনা কারো জীবনে এমন ঘটুক, আল্লাহ সবাইকে রক্ষা করুন, আমীন।
ধন্যবাদ ভাই।
তৌহিদ
জ্বী ভাই, অবশ্যই।
ইঞ্জা
ভালোবাসা জানবেন ভাই
সুরাইয়া পারভীন
একজন সন্তানকে হারানোর শোক চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন ভাইয়া। এই পর্বও দারুণ।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম
ইঞ্জা
শোক আমি দেখেছি, আমার আব্বার হটাৎ মৃত্যু আমাদেরকে শোকে আচ্ছন্ন করেছিলো, এরপর আমার ছোট খালাম্মা, বড় বোনের হাসবেন্ড, আমার আম্মা, আমি সেইসব শোককে এইখানে তুলে ধরলাম আপু।
ধন্যবাদ।
সুরাইয়া পারভীন
তাই তো বলি গল্প এতো জীবন হলো কি করে।
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময় ভাইয়া
ইঞ্জা
দোয়া রাখবেন আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনার বর্ণনা গুলো একদম বাস্তব মনে হয়। সত্যি টা উপলদ্ধি করলে মন খারাপ হয়ে যায়। আছি সাথে। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা রইলো
ইঞ্জা
আমি শোক করেছি, দেখেছি আমার প্রিয়জনদের মৃত্যুতে, সেই শোক আমি গল্পে তুলে ধরেছি।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
ছাইরাছ হেলাল
অনিক ফিরছে জেনে ভাল লাগল, তবে কী অবস্থায় ফিরে এসেছে তা জানার অপেক্ষায়।
ইঞ্জা
অনিক ফিরছে, কই বললাম ভাইজান?
ছাইরাছ হেলাল
‘ছায়া অনিক এসেছে, আফরিনের কণ্ঠ শুনা গেলো।
ছায়া ফুঁফিয়ে কান্না করতে লাগলো।
ছায়া, ছায়া কি হয়েছে, অনিক ঠিক আছে তো?
ছায়া কাঁদতে কাঁদতে সব খুলে বললো, সব শুনে আফরিনও ফুঁফিয়ে কাঁদতে লাগলো।
আমি আসছি ছায়া, আল্লাহকে ডাকো যেন অনিককে ফিরিয়ে দেয়।’
এখান থেকে মনে হয়েছে, ফিরেছে/ফিরবে। যদিও স্পষ্ট না।
ইঞ্জা
হে হে হে, ভাইজান এমন পাঠক পাওয়াটাই ভাগ্যের ব্যাপার।
ধন্যবাদ ভাইজান।
সুপায়ন বড়ুয়া
গল্পেও করোনা লক ডাউন নিয়ে এলেন ?
অনিক কি সুস্থ ফিরে আসছে ?
ভালো লাগলো।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
গত পর্ব থেকেই জনস্বার্থে ছবিটা প্রতি লেখাতেই দিচ্ছি দাদা।
ধন্যবাদ।
রেহানা বীথি
এমন পরিস্থিতি যেন কারও জীবনে না আসে। বর্ণনা ভালো লাগলো ভাইয়া। আশাকরি আগামী পর্বে সংকট থেকে উত্তরণ ঘটবে। ভালো থাকবেন ভাইয়া।
ইঞ্জা
আমিও দোয়া করি যেন কারো জীবনে এমন বিপদ না আসে, আমীন।
দোয়া রাখবেন আপু।
ধন্যবাদ।
ফয়জুল মহী
বেশ মন ছুঁয়ে গেল লেখা। ভালোবাসা ও শুভ কামনা আপনার জন্য।
ইঞ্জা
অনিঃশেষ ধন্যবাদ ভাই।
সুরাইয়া নার্গিস
সব মিলিয়ে অসাধারন লাগলো দাদা, প্রিয়জন হারানোর কষ্ট সত্যি অনেক বেশি কাঁদায় মানুষকে।
গল্পের প্রতিটা লেখাটা বাস্তব ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন হৃদয় নাড়িয়ে দিল।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
শুভ কামনা রইল।
ইঞ্জা
আপনাদের হৃদয় নাড়িয়ে দিতে পারাটাই আমার লেখার স্বার্থকতা, নিরন্তর ধন্যবাদ আপু।
হালিম নজরুল
অনিকের ভাগ্য নিয়ে শংকিত আছি।
ইঞ্জা
শংকিত আমিও, ভাবছি গল্পটা কোন মোরে নিয়ে যাবো?
ধন্যবাদ ভাই।
জিসান শা ইকরাম
অনিকের পরিবারে শোকের মাতম,
সবার শোক আলাদা আলাদা করে খুব সুন্দর ভাবেই উপস্থাপন করেছেন।
গল্প মনে হচ্ছে না আর এটাকে, মনে হচ্ছে মুভি দেখছি।
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ইঞ্জা
এমন শোক আমি সয়েছি যখন বাবাকে, মাকে সহ প্রিয়জনদের হারিয়েছিলাম, তারই রূপ
ইঞ্জা
★ তারই রূপ আমি এই গল্পে নিয়ে এসেছি ভাইজান।
ধন্যবাদ অশেষ।