এক মুঠো ভালোবাসা (১৯তম পর্ব)

ইঞ্জা ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শনিবার, ০২:১৩:৪৬অপরাহ্ন গল্প ৩৮ মন্তব্য

অনিকের কানের কাছে এসে অনিকের বাবা ফিস ফিস করে বললেন, বাহ আজকাল দেখছি তুই সুন্দরী সেক্রেটারি নিয়েও ঘুরিস, বলেই উনি অনিকের মার কাছে গিয়ে বললেন, দেখলে তোমার ছেলে অনেক চেইঞ্জ হয়েছে।

এই তুমি কি যে বলো, আমার ছেলের আর কি চেইঞ্জ হয়েছে, শুধু একটু শুকিয়ে গেছে, অনিকের মা বললেন।
আমি কই কি আর আমার সারিন্দা কয় কি, অনিক তোরা দাঁড়িয়ে কেন, আফরিন বসো তুমি।
এই তুমি কি যেন বললে?
আমি আবার কি বললাম?
ঐ সারিন্দা নিয়ে?
না না তেমন কিছু না, অনিক তুই ড্রিংকস নিবি, স্রিনফ বদকা আছে সাথে।
এই তুমি কি শুরু করেছো, দেখছোনা সাথে মেহমান আছে।
অনিক হেসে মার হাত হাতে নিয়ে বললো, মা তুমি চিন্তা করোনা, ও আমেরিকান মেয়ে বাঙ্গালী নয়।
অনিকের মা অবাক হয়ে বললেন, কি বলিস, মেয়েটা তো বাংলায় কথা বলে।
আফরিন মিষ্টি হেসে বলিলো, আন্টি আমি বাঙ্গালী হলেও আমার জন্ম আমেরিকায়, অনিক স্যার আপনারা খান আমি আন্টিকে নিয়ে কিছু শপিং করে আসি।
তাই চলো মা, এই বাপ বেটা কিছুক্ষণ পর ড্রানক হয়ে যাবে।
তোমরা এই সময়ে কোথায় যাবে, অনিক জিজ্ঞেস করলো।
এই পাশেই বড় একটা শপিংমল আছে, হেটেই যাবো।
ওকে যাও, তাড়াতাড়ি চলে আসবে।
আফরিনরা বেরিয়ে গেলে অনিকের বাবা ড্রিংকস গ্লাসে ঢালতে ঢালতে জিজ্ঞেস করলেন, মেয়েটা তো বেশ সুন্দর, কতদূর এগিয়েছিস?
দূর বাবা, তুমি সবসময় ফালতু কথা বলো।
হো হো হো হো করে হাসতে শুরু করলেন উনি।

জান ও জান চলোনা ঘুরে আসি।
ধ্যাত তোমার শুধু ঘুরাঘুরি ছাড়া আর কিছুই করার নেই?
না না জান, আমি এইবার তোমাকে নিয়ে যাবো আমার অনিকের কাছে, জানো তো ও তোমাকে খুব ভালোবাসে৷ আমি ওর কাছেই তোমাকে দিয়ে আসবো।
হটাৎ ছায়ার ঘুম ভেঙ্গে গেলে এদিক ওদিক তাকালো, রওশনকে খুঁজছে সে, ধীরে ধীরে ধাতস্ত হিয়ে দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো, সকাল আটটা আর তা দেখেই এক ঝটকায় উঠে বসলো।
একি দেখলাম আমি, অনেকদিন পর রওশন এলো স্বপ্নে, কি আবোল তাবোল বললো ও?
ছায়া বিছানা ছেড়ে উঠে বাথরুমে গেলো, কিন্তু মনে রয়ে গেলো স্বপ্নের কথা, রওশন আমৃত্য অনিকের কথা বলতো, কিন্তু আজ কি বলে গেলো ও?
বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসলো ফোনের রিং শুনে, ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে অনিকের কল, রিসিভ করে হ্যালো বললো।
ছায়া কেমন আছো, অপরপ্রান্ত থেকে অনিক জিজ্ঞেস করলো।
পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে কার্পেট খুটতে খুটতে ছায়া বললো, ভালো আছি।
আনকেল কি ঘুম?
হাঁ।
কোন অসুবিধা হচ্ছেনা তো?
না।
তোমার কিছু লাগবে?
না।
কি ব্যাপার, শুধু হাঁ না বলেই যাচ্ছো?
নাহ এমনি।
ওহ তাহলে রাখছি।
নাহ।
কি কিছু বলবে?
ছায়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, কবে আসবে?
কাল রাতেই পোঁছে যাবো।
আনকেল আন্টি কি খাবেন, মানে উনাদের কি পছন্দ?
বাবা গরুর মাংস, মা মাছ খেতে পছন্দ করে।
ঠিক আছে।
রাখছি, বাই।
বাই।

ফোন রেখে ছায়া রুম থেকে বেরিয়ে কিচেনে এলো, ফ্রিজ থেকে কিছু ভেজিটেবল নিয়ে কাটতে বসলো ব্রেকফাস্টের জন্য রেডি করবে।
মনের মাঝে ওর ঝড় চলছে আজ, এ কেমন স্বপ্ন দেখলো আজ, রওশন কেন ওকে অনিকের কাছে দিয়ে আসবে, আহ আজ আমি কি করলাম, অনিকের সাথে ঠিক মতো কথা বললামনা?
কি মা, আজ অন্যমনস্ক কেন, হাত কাটা পড়বে তো।
বাবার ডাক শুনে চমকে উঠলো ছায়া, চোখ তুলে বললো, বাবা কিছু বলছিলেন?
বলছি সাবধানে কাজ কর, তোর হাত কাটা পড়তো, কি ব্যাপার এতো অন্যমনস্ক কেন তুই?
না বাবা কিছু না, আপনি আজ এতো তাড়াতাড়ি জেগে গেলেন?
খিদে লেগেছে তাই জেগে উঠলাম, বলেই হো হো হো করে হেসে উঠলেন।
বাবা আপনি অনেকদিন পর হাসছেন।
হাঁ মা, আজ অনেকদিন পর মনের ভারটা নেমে গেলো।
মানে, ছায়া অবাক হলো।
ও তুই বুঝবিনা৷ তা আজ কি তৈয়ার করছিস?
বাবা আজ সবজি করছি শুধু।
তা দেরি হবে?
না বাবা, পনেরো মিনিটের মধ্যেই ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি।
শুন আজ পরোটা করনা।
বাবা আপনার তো তেলের কিছু খাওয়া নিষেধ?
আজ একদিন খেলে কিছু হবেনা।
ওকে, শুধু আজ।
মিষ্টি হাসলেন রওশনের বাবা।

পরোটা দিয়ে মিক্সড ভেজিটেবল মুখে দিয়ে তৃপ্তির সাথে খেতে খেতে রওশনের বাবা বলেন, আমি ভাবছি কি মা, কতো আর অনিককে কষ্ট দেবো, ওরা আসার আগেই একটা বাসা ভাড়া নিলে ভালো হতোনা?
বাবা আমি চেয়েছিলাম, অনিক না করলো।
কেন?
বললো আনকেল সুস্থ হয়ে উঠুক, এও বললো এতো বড় ফ্লাটে থাকতে অসুবিধা তো নেই, ও এমন করে বলাতে আমি কিছু বলতে পারিনি বাবা।
তাই, তাহলে থাক এখন, ও কবে আসবে?
আগামীকাল রাতে।
বাবা আমি আপনার মেডিসিন নিয়ে আসছি, ছায়া বললো।
না থাক মা আমিই যাচ্ছি, একটু রেস্ট নেবো।
রওশনের বাবা রুমে চলে গেলে ছায়া ঘরদোর পরিস্কার করা শুরু করলো, ড্রয়িং ডাইনিং করে প্রথমে অনিকের রুমে গেলো, পুরা রুম পরিস্কার করে বেডসিট, পিলো কভার চেইঞ্জ করে বেড টেবিল পরিস্কার করতে লাগলো, হটাৎ বেড টেবিলের ড্রয়ারে চাপ পড়তেই ড্রয়ার খুলে গেল, ছায়া প্রথমে অবাক হলেও পরে উঁকি দিলো ভিতরে, কিছুই নেই শুধু একটি ফটোফ্রেম উল্টো করে রাখা আছে, ছায়া ফটোফ্রেমটি বের করে উল্টিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, ইউনিভার্সিটির নারিকেল গাছের নিচে দাঁড়ানো অবস্থায় ওর ছবি।
ছায়া অবেক হয়ে ভাবছে এই ছবি অনিক কখন তুললো আর ছবিট এখনো কেন ওর কাছে, এর অর্থ কি অনিক এখনো ওকে ভালোবাসে?
ছায়ার চেহেরা রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো, চোখের পানি টলটল করছে।

........ চলবে।
ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৩৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ