
মিটিংরুমে অনিক যখন বায়ারদের সামনে প্রেজেন্টেশন দিচ্ছিলো তখন আফরিন নোট নেওয়ার সাথে সাথে মুগ্ধ হয়ে শুনছিলো অনিকের কথা, মনে মনে ভাবছিলো কি ট্যালেন্ট অনিকের যা অন্য কোম্পানিতে থাকাকালীন সময়ে এমন বস পাইনি সে, অনিকের বাচনভঙ্গি, কনভেন্সিং কমেন্ট, প্রডাক্ট বিশ্লেষণ, সবই যেন অনন্য এক স্টাইল আছে।
অনিকের প্রেজেন্টেশন শেষ হলে বললো, জেন্টেলম্যান এন্ড লেডিস আজ আমরা সবাই লাঞ্চ এক সাথে করবো, আফরিন প্লিজ আমাদের লাঞ্চ দিতে বলো ডাইনিংয়ে।
সিউর বলে আফরিন উঠে গেলো।
সো আই থিংক আপনারা আমাদের প্রডাক্ট নেবেন বুঝে শুনে, আমিও সেইভাবে প্রেজেন্টেশন দেওয়ার চেষ্টা করেছি, এখন বলুন আপনাদের মতামত।
বায়ারদের চিফ মি. জ্যাং বললেন, উই আর সো প্লিজড, আপনার প্রেজেন্টেশন সত্যি মন্ত্রমুগ্ধ করেছে, আমরা এইবার দশ কন্টেইনার ডিফারেন্ট প্রডাক্ট নেবো, ব্যাগ থেকে এক পেপার নিয়ে অনিকের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, এইটা হলো আমাদের প্রডাক্ট লিস্ট।
অনিক কিছুক্ষণ চোখ ভুলিয়ে নিয়ে হংকং ম্যানেজারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, আপনি ওদের সাথে করার জন্য এগ্রিমেন্ট রেডি করে ফেলুন।
ম্যানেজার উঠে যাচ্ছিলো তখন মি. জ্যাং একটা চেক এগিয়ে দিলো অনিকের দিকে আর বললো, এইটা সাইনিং মানি।
ধন্যবাদ মি. জ্যাং, বলে চেকে চোখ ভুলিয়ে নিয়ে ম্যানেজারকে দিলো।
আফরিন এসে সবাইকে আমন্ত্রণ জানালো লাঞ্চ করার জন্য।
লাঞ্চ শেষে এগ্রিমেন্টের ছোটখাটো করে সাইনিং প্রোগ্রাম, কিছু ছবি তোলা, এরপর হলো বিদায়ী পালা, সব কিছু শেষ করে অনিক নিজ ক্যাবিনে গিয়ে আরাম করে একটা ডানহিল সিগারেট জ্বালিয়ে টান দিলো, আফরিন নক করে ভিতরে আসতে চাইলে অনিক বললো, আমি সিগারেট শেষ করে নিই, প্লিজ।
নেভার মাইন্ড, আমার সিগারেটে অভ্যাস আছে, আফরিন জবাবে বললো।
তাই তাহলে নাও বলেই প্যাকেটটা এগিয়ে দিলো অনিক, আফরিন হেসে সিগারেট নিয়ে ঠোঁটে দিলে অনিক উঠে জ্বালিয়ে দিলো।
তা খবর বলো।
আনকেল, আন্টি ল্যান্ড করেছেন দুই ঘন্টা আগে, উনাদেরকে রিটজ কার্লটন হোটেলে রুম দিয়েছে থাই এয়ারলাইনস, রুম নাম্বার ৬০৪।
বাহ এতো সব ইনফরমেশন নিয়ে ফেলেছো, বেশ।
তুমি কি ফোনে কথা বলতে চাও?
নাহ, এক কাজ করি আমরা, চলো উনাদের হোটেলেই যায়, কাগজপত্র সব নিয়েছো?
হাঁ।
ওকে ড্রাইভারকে বলো আমরা আসছি, প্রথমে আমাদের হোটেল থেকে চেক আউট করে রিটজে উঠবো।
ওকে অনিক স্যার।
গাড়ীতে উঠে আফরিন রিটজ কার্লটন হোটেলে ফোন দিয়ে রুম রিজার্ভেশন করতে চাইলে অনিক বললো, শুধু একটা রুম নাও, আমি বাবার সাথে আর তুমি মাকে নিয়ে থেকো।
ওকে অনিক স্যার।
বারবার স্যার স্যার করোনাতো, ভালো লাগেনা।
আফরিন মিষ্টি করে হাসলো।
অনিক দরজা নক করে অপেক্ষা করছে, ওর মাই দরজা খুলে অবাক হলো, এরপর চিৎকার করে অনিককে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলেন।
মা কান্না করছো কেন?
কতদিন পর দেখছি তোকে, তুই এমন শুকিয়ে গেছিস কেন বাবা, এ সময় উনার চোখ গেলো আফরিনের দিকে, আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, মেয়েটা কে?
মা ও আমার সেক্রেটারি আফরিন, আফরিন ইনি আমার মা।
আফরিন সালাম দিলে অনিকের মা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, বাঙ্গালী?
জ্বি আন্টি।
মা বাবা কই, অনিক জিজ্ঞেস করলো।
তোর বাবা বাথরুমে, অনিকের মা বলতেই বলতেই অনিকের বাবা বেরিয়ে এসে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কিরে তুই এইখানে?
হাঁ বাবা, অফিসিয়াল মিটিংয়ে এসেছিলাম, বলেই অনিক কদমবুচি করলো।
উনি জড়িয়ে ধরলেন অনিককে, কেমন আছিস তুই?
হাঁ বাবা, তুমি কেমন আছো?
তোলে দেখে আরও ভালো হয়ে গেছি, বোস বোস।
আফরিন ইনি আমার বাবা।
আফরিন এসে সালাম দিয়ে বললো, কেমন আছেন আনকেল?
হাঁ ভালো, তুমি?
বাবা ও আমার নতুন সেক্রেটারি।
ওদিকে ছায়া বাসায় ফিরে এলো সন্ধ্যায়, চাবি দিয়ে নিজেই দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে টলতে টলতে এগিয়ে যেতে গেলো ওর শ্বশুরের রুমের দিকে, কানে এলো ড্রয়িংরুমের টিভি চলছে, আবার ফিরে ড্রয়িংরুমে এসে দেখে রওশনের বাবা টিভি দেখছেন, ছায়া সালাম দিয়ে সোফায় বসে পড়লো।
কিরে মা ফিরে এসেছিস, আজ তো তোর লাস্ট সেশন ছিলো, তা কিছু বলেছে কি ওরা।
বাবা আগামী সপ্তাহের তারিখ দিয়েছে, আপনি কিছু খেয়েছেন?
হ্যারে মা, সেন্ডউইচ খেয়েছি, তুই খেয়েছিস?
হাঁ ওখানে ওরাই খাওয়ালো, জানেন তো এই সময় কিছুই খেতে ভালো লাগেনা, শুধু স্যুপ খেয়েছি।
আহা, তা সেন্ডউইচ আছে ফ্রিজে, খেয়েনে।
না বাবা, আমার এখন ভালো লাগছেনা, আমি যায় রুমে একটু ঘুমাবো।
নাহ একটু বোস, আমি আসছি এখনই, বলেই রওশনের বাবা উঠে গেলেন, একটু পর ফিরে এলেন প্লেটে করে সেন্ডউইচ আর এক গ্লাস পানি নিয়ে, তা ছায়ার সামনে দিয়ে বললেন, খেয়েনে এইটা, জুসটাও খা শরীরে শক্তি পাবি।
বাবা আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা।
আমি বলছি খেয়েনে।
আচ্ছা ঠিক আছে বলে সেন্ডউইচ নিয়ে খেতে শুরু করলো, খাচ্ছে কম জুস দিয়ে জবরদস্তি গিলছে বেশি, খাওয়া শেষে উঠে গেলো রুমের উদ্দেশ্যে, এখন ওর ঘুম দরকার, না ঘুমালে নির্ঘাত বেহুশ হয়ে যাবে।
চলবে.......
ছবিঃ গুগল।
আগের পর্ব যারা পড়েননিঃ
Thumbnails managed by ThumbPress
২৬টি মন্তব্য
আরজু মুক্তা
চলুক…..
শুভকামনা
ইঞ্জা
চলবেই, ধন্যবাদ প্রিয় বোনটি। 💕
ছাইরাছ হেলাল
আল্লাহ এর অশেষ মেহেরবানিতে আবার আমরা এখানে,
এতদিন পর লিখলেন, তাও খেই হারায়নি দেখে ভাল লাগল।
সামনে চলুক চমক নিয়ে, সেই অপেক্ষায় রইলাম।
ইঞ্জা
মাঝে ডেঙ্গু নিয়ে ব্যাক টু ব্যাক লেখা দিলাম, এরপর অসুস্থ হয়ে পড়লাম, সব কিছু মিলিয়েই একটু দেরি হয়ে গেলো ভাইজান, দোয়া রাখবেন।
তৌহিদ
অনিকের সাথে মা বাবার এটাচমেন্ট দারুন। মায়েরা এমনি আবেগী হয়। তবে একটা প্রশ্ন আছে ছায়াকে নিয়ে- আচ্ছা সেকি মানসিক ভাবে অসুস্থ নাকি? ডাক্তারের ট্রিটমেন্ট আর সেশন চলছে মনে হচ্ছে? রওশনের মৃত্যুর পিছনে তার হাত নেইতো??
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ইঞ্জা
এই তিনি এসেছেন কিরিটি রায় হয়ে, রওশনের মৃত্যুর পিছনে ছায়ার হাত নাই তো? 😜
রহস্য গল্প লিখছি নাকি ভাই, ছায়া তার স্বামীরে কেন মারবে?
মানষিক অসুস্থতা, তা অবশ্য খারাপ বলেননি, মাথায় একটা বুদ্ধি দিলেন এর জন্য ধন্যবাদ। 😁 😂
তৌহিদ
লেখক যে কি গুল খাওয়াচ্ছেন!!
ইঞ্জা
হি হি হি 😄😄
সাবিনা ইয়াসমিন
ছায়ার অসুস্থতা কি নিয়ে হতে পারে ভাবছি…আচ্ছা, আমরা না ভাবলেওতো পারি। আপনি নেক্সট পর্বে বলে দিলেইতো হয়ে যায় 😀😀
অনিকের সব কিছুই আফরিনের ভালো লাগবে, এটাই স্বাভাবিক। যাকে ভালো লাগে তার সব কিছুই মহোনীয় হয়। তবে, বায়ারদের যেহেতু ভালো লেগেছে, তারমানে অনিক আসলেই দারুন লোক। এখন আমারও অনিককে একটু দেখতে ইচ্ছে করছে।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাইজান। শুভ কামনা 🌹🌹
ইঞ্জা
বাহ আমি এতো দ্রুত বলে দিই ছায়ার কি হয়েছে আর আমার গল্প কেঁচে যাক, না না এতো তাড়াহুড়ো করা যাবেনা, মোটেও না। 😄
মন দিয়ে পড়ছেন দেখে খুব ভালো লাগলো আপু, ধন্যবাদ।
সাবিনা ইয়াসমিন
হাহাহাহা, ছায়ার অসুখটা শর্টকাটে জেনে নিয়ে সবার সামনে একটু ভাব দেখাতে চেয়েছিলাম। তা আর হলো না 🙆
ইঞ্জা
হো হো হো হি হি হি 😆😆😆
মোঃ মজিবর রহমান
ছায়া টাল্মাতাল কেন ভাই? ছায়া এখন কি কএবে? ভাবনা কি? মায়ের আবেগি ভালবাসা! চলুক।
ইঞ্জা
ছায়া কি করবে, কেন সে টালমাতাল, জানতে হলে রেগুলার পড়তে হবে, এক মুঠো ভালোবাসা। 😁
ধন্যবাদ প্রিয় ভাই। 💕
মোঃ মজিবর রহমান
সংগে আছি একটু ঝামেলা দূর হোক আল্লার রহমতে
ইঞ্জা
ইনশা আল্লাহ, দ্রুতই সমস্যা সমাধানে দোয়া রইলো।
শামীম চৌধুরী
লেখাটা দিনের বেলায় ঘুর ঘুর করছিলো। সময় নিয়ে রাতে পড়বো বলো চোখ দেই নি। কারন বেশী নজরে আসলে পড়ার লোভ সামলাতে পারবো না। আর দিনে মনযোগ দিয়ে পড়া হবে না বলে নজর দেই নেই। মন দিয়ে সময় নিয়ে পড়লাম। বরাবরের মতন ভালো লাগলো। অনিকের সাথে কথা বলার খুব ইচ্ছে হচ্ছে ভাইজান। যদি একটু সুযোগ করে দিতেন। হা হা হা।
পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
ইঞ্জা
এইনা হলে আমার ভাই হোন, গল্পই যদি শান্তি মতো পড়তে না পারেন তাহলে গল্পের মজা পাবেননা, good going.
ভাই আপনি তো ব্যবসায়ী মানুষ, চাইলে অনিকের কাছ থেকে বায়ো ডিজেল কিনতে পারেন। 😂
ওর নাম্বার নিতে হলে ইনবক্সে যোগাযোগ করুন। 😜
মনির হোসেন মমি
গল্পে ছায়ার মন খারাপ দেখেতো মনে হচৃছে আগামী পর্বে চমক থাকবে।অপেক্ষা।
ইঞ্জা
মন খারাপ কই দেখলেন, অসুস্থবোধ করছে ছায়া, দেখা যাক আগামীতে কি হয়।
মনির হোসেন মমি
ভাইজান গল্প লেখার বিচক্ষণাতার তুলনা নেই। পাঠক কেবল ক্লো খুজেঁ কি হয় কি হবে আমিও তাই।অপেক্ষা।
ইঞ্জা
গল্পের আকর্ষণ ধরে রাখাটাই মূখ্য, এতে পাঠক ধরে রাখা যায়, ধন্যবাদ ভাই।
রেজওয়ান
ছায়াকি সুস্থ হবে না ভাই?🙄আপনার লেখাগুলো পড়তে খুব ভাল লাগে! ব্যস্ততার কারণে অনেকদিন আসা হয়নি ব্লগে🐸
ইঞ্জা
অনুরোধ করবো দ্রুতই ব্লগে লেখার জন্য ছোট ভাই।
কামাল উদ্দিন
ছায়া কোথায় গিয়েছিল সেখানে কি হলো এই ব্যপারটা বুঝে উঠতে পারলাম না, যাই পরের পর্বে।
ইঞ্জা
বুঝবেন ভাই, সামনে আগান একটু সময় লাগবে।