এক মুঠো ভালোবাসা (১৭তম পর্ব)

ইঞ্জা ২৩ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার, ০৩:০৪:৩০অপরাহ্ন গল্প ৩০ মন্তব্য

 

ছায়ার বুকটা ঢিপঢিপ করছে, দ্রুত বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিলো, এরপর ফ্রেস হয়ে নিলো।
বাথরুম থেকে বেরুনোর সময় সেলফোনে রিং হচ্ছে শুনে এগিয়ে ফোন তুলে নিয়ে স্ক্রিনে দেখলো অনিক কল দিচ্ছে, ওর বুক আবার ধুকপুক করতে শুরু করলো, ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বললো।
হ্যালো ছায়া, ঘুম নষ্ট করলাম নাতো, অনিকের প্রশ্ন।
ছায়া জবাব দিতে গিয়ে বিষম খেলো, গলা খাকারি দিয়ে বললো, না কিছুক্ষণ আগে ঘুম থেকে উঠলাম।
ভালো, তোমাদের কোন অসুবিধা হচ্ছে নাতো?
না না কি অসুবিধা হবে, তু তু তুমি ঠিক আছো তো, তোতলালো ছায়া।
হাঁ আমি ঠিক আছি, ঘুমাতে যাবো এখন, তাই ভাবলাম একটু খবর নিই তোমাদের?
খালা খালুর সাথে কবে দেখা হবে?
কাল সন্ধ্যায় উনার‍্য পোঁছুবেন, রাতে আশা করছি দেখা করবো, পরশু তো আমাদের রিটার্ন ফ্লাইট।
পরশু আসতোছো?
না না সময় লাগবেনা, এরপরের দিন পোঁছুবো, ঠিক আছে তাহলে এখন রাখি, পরে কথা হবে।
ইয়ে মানে?
কি কিছু বলবে?
না মানে জিজ্ঞেস করছিলাম আফরিন কই?
ও আছে ওর রুমে।
বড় একটা নিশ্বাস ফেলে ছায়া বললো, ওহ তাই, আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমাও, শুভ সকাল।
শুভরাত্রি।
আবারও বড় একটা দম ছাড়লো ছায়া, অনিকের সাথে কথা বলতে গিয়েই ওর হাত পা কাঁপছিলো, আবার অন্য রকম ভালো লাগাও ছিলো।

বাবা আপনি ফ্রেস হয়ে নিয়েছেন, ছায়া জিজ্ঞেস করলো।
হাঁরে মা, আজ ভিষণ ক্ষিদে লেগেছে, ব্রেকফাস্ট রেডি?
হাঁ বাবা আপনি বসে যান, ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি।
কি করেছিস আজ?
আজ লুচি, হালুয়া আর মিক্সড ভেজিটেবল।
তা তুই কি আজ যাচ্ছিস?
বাবা আপনার সাথে কে থাকবে, আমি তো সন্ধ্যার আগে ফিরতে পারবোনা?
অসুবিধা হবেনা, তুই কয়েটা সেন্ডউইচ ফ্রিজে রেখে যা, আমি তাই খাবো।
ছায়া ব্রেকিফাস্ট গুলো টেবিলে দিয়ে নিজেও বসে বললো, বাবা আমাকে নয়টার মধ্যে পোঁছুতে হবে, আমি কাছের স্ন্যাক্স শপ থেকে চার পাঁচটা সেন্ডউইচ আর পেস্ট্রি নিয়ে ফ্রিজে রেখে যাবো।
ঠিক আছে, হ্যাঁরে মা অনিকের কোন খবর পেয়েছিস?
হাঁ বাবা, কল দিয়েছিলো।
কি বললো?
তেমন কিছুই না, শুধু খবর নিলো।
ওহ, ছেলেটা আসলেই ভালোরে।
ভালো নাহলে কি কেউ কাউকে এই বিদেশ বিভূঁইয়ে হেল্প করে বাবা?
হুম একদম ঠিক বলেছিস, ওকে কাছে পেয়ে যেন আমি আমার রওশনকে পেয়েছি।
ছায়ার গাল বেয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।
বাবা আর লুচি দেবো?
না মা অনেকটা খেয়ে ফেলেছি, তুই দ্রুত রেডি হয়ে নে, আমি সামনের রুমে বসছি।
ছায়া দ্রুত প্লেট বাটি সব ধুয়ে মুছে তুলে রাখতে শুরু করলো।

ওদিকে হংকংয়ে পরদিন সকাল আটটার সময় অনিকরা ব্রেকফাস্ট সেরেই বেরিয়ে পড়লো অনিকের অফিসের উদ্দেশ্যে, হংকংয়ে বড় একটা ডিল ফাইনালাইজ হবে আজ, অফিস থেকে গাড়ী পাঠিয়েছে ওদের পিক করার জন্য, এই অফিসটা অনিক গতবছর ওপেন করেছিলো এশিয়াটা কন্ট্রোল করার জন্য, এশিয়ার বেশ অনেক গুলো দেশ এখন বায়োকেমিক্যালের দিকে ঝুকে পড়েছে।
অফিসে পোঁছেই অনিক আর আফরিন ব্যস্ত হয়ে গেলো তাদের প্রেজেন্টেশনটা ফাইনাল চেকের জন্য, আফরিনকে হেল্প করছে হংকং ম্যানেজার।
কিছু সময় পর অফিস স্টাফ এসে খবর দিলো, দুইজন বাংলাদেশি গভার্মেন্ট অফিসার অনিকের সাথে দেখা করতে এসেছে।
সেন্ট দ্যাম ইন, অনিক বললো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই ভদ্রলোক এসে প্রবেশ করলো অনিকের কেবিনে, এসে পরিচয় দিলো দুই অফিসিয়াল।
আমি সোহেল চৌধুরি আর ও বরকত উল্লাহ, সিবিআই বাংলাদেশ।
জ্বি বসুন প্লিজ।
মি. অনিক, আমরা জানি আপনি একজন বাঙ্গালী এবং বায়ো কেমিক্যাল লাইনে খুব অল্প সময়ে খুব নাম করেছেন।
ধন্যবাদ, আসল কথা বলুন প্লিজ, আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যস্ত হয়ে পড়বো।
তাহলে আসল কথাতেই আসি, ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আমেরিকা থেকে ইম্পোটেড বায়ো হ্যাজার্ড কেমিকেল বাংলাদেশে যাচ্ছে ভিয়েতনাম থেকে।
তো?
আমরা কয়েকটা কন্টেইনার আটক করেছি, যার মধ্যে আপনার কোম্পানির সিল করা ড্রামও ছিলো।
হোয়াট, বলেন কি, অনিক উদ্বীগ্ন হলো।

জ্বি মি. অনিক, আমরা যখন ভালো করে চেক করলাম তখন দেখলাম আপনার সিল গালা অরিজিনাল না, এইটা মিস ইউজ হয়েছে।
ওহ মাই গড, তাহলে কি আমাকে ফাসানো হচ্ছে?
তা মনে হচ্ছেনা, আমরা ধারণা করছি আপনার থেকে ইম্পোর্ট করার পর ওরা আপনার কেমিকেল বের করে নিয়ে আবার রিফিল করছে।
না না এইটা উচিত না, তা কারা করছে এই কাজ, আমার ডিলার, অনিক বললো।
জ্বি এইখানেই সমস্যা, আপনার ডিলার কিনা আমরা জানিনা, কারণ বাংলাদেশে যারা ডাম্পিং করছে ওরা অন্য নামে এক্সপার্ট করেছে।
অনিক হাফ ছেড়ে বললো, আমি কিভাবে হেল্প করতে পারি?
দেখুন আমরা চাইছি আপনি ভিয়েতনামের দিকে একটু খেয়াল রাখুন, কেউ যদি ধরা পড়ে আমাদের জানান, বাকিটা আমর করবো।
ওয়েট আমি এখনি দেখছি কি করা যায়, অনিক নিজের সেলফোন নিয়ে লেভিনকে কল করলো, অপর পাশে রিং হতেই লেভিন রিসিভ করলো।
হাই লেভিন, কি খবর?
এভরিথিং ইজ ফাইন।
লিসেন লেভিন, আমি যতদূর জানি আমাদের ভিয়েতনাম ডিলার লাস্ট ইয়ার এবং দিস ইয়ার হিউজ পরিমানের বায়ো নিয়েছে বিভিন্ন ক্যাটাগরির।
হাঁ, তা ঠিক।
অনিক সব কিছু বুঝিয়ে বললো এইখানে কি হয়েছে, এরপর বললো, তুমি আমাদের এক্সপার্ট টিম নিয়ে ভিয়েতনাম যাও কিন্তু তা হবে সারপ্রাইজ ভিজিট, গিয়ে সব চেক করো ওরা ওখানে কি করছে, কাকে সেল করছে, ওদের ফ্যাক্টরি, ওয়েরহাউজ সব চেক করে দেখো কোন বায়ো হ্যাজার্ড কেমিকেল পাও কিনা, এরপর আমাকে লিখিতে রিপোর্ট করো।
তুমি কখন আসছো?
কাল ফ্লাইট আমার।
ওকে দ্যান সি ইউ।
বাই।
অনিক সোহেল চৌধুরির দিকে ফিরে বললো, আই হোপ খুব দ্রুত আপনারা রেজাল্ট পাবেন।
ধন্যবাদ, আমার কার্ড রাখুন, আমি আজ উঠছি, আপনার মেইলের অপেক্ষায় রইলাম।
বাই।
বাই বাই।

......... চলবে।
ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৩০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ