এক মুঠো ভালোবাসা (১৫তম পর্ব)

ইঞ্জা ১৯ জুন ২০১৯, বুধবার, ০৯:৪২:১৯অপরাহ্ন গল্প ৪০ মন্তব্য

 

অফিসে প্রবেশ করেই অনিক মামা লুসিকে জড়িয়ে ধরে বললো, মামা তুমি নাকি যাচ্ছোনা, কেন?
মাই বয় ইউ হ্যাভ বিউটিফুল সেক্রেটারি, তুমি ওকেই নিয়ে যাও?
অনিক অবাক্নহয়ে তাকালো মামা লুসির দিকে এরপর বললো, তুমি ছাড়া এই পৃথিবীতে আর কোন সুন্দর নারী তো আর দেখিনা?
নটি বয়, আসলে আমার একটু ঝামেলা আছে, এ ছাড়া তুমি জানো আমি রিজাইন করেছি।
ওহ সো সেড, মামা কবে তুমি যাচ্ছো?
আজই আমার লাস্ট ডে।
ওহ নো, আচ্ছা তাহলে তোমার ফেয়ারওয়েল পার্টি আমি দেবো।
নো মাই চাইল্ড, তোমরা ফেয়ারওয়েল পার্টি দিলে আমার বিদায় নিতে কষ্ট হবে।
মামা বলে অনিক জড়িয়ে ধরলো লুসিকে।
আমি সব কিছু আফরিনকে বুঝিয়ে দিয়েছি, এরপরেও কোন সমস্যা হলে ডাক দিও।
ওকে মামা, আচ্ছা আসো আমার রুমে, বলেই অনিক হাত ধরে নিজ কেবিনে নিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসিয়ে নিজের মানিব্যাগ থেকে দুই হাজার ডলার বের করে লুসিকে দিয়ে বললো, মামা এইটা তোমার জন্য, আ গিফট ফ্রম ইউর সান।
লুসি উঠে জড়িয়ে ধরে বললো, তুমিই তো সবচেয়ে বড় গিফট, বলে অনিকের কপালে চুমু খেলো, এরপর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
দরজায় নক শুনে অনিক চোখ তুলে তাকালো, আফরিনকে দেখে বললো, হাঁ আফরিন কি খবর বলো?
মি. অনিক টিকেট হয়েছে আগামী ভোর রাত চারটায় ফ্লাইট আর রিটার্ন আপনার ডিজায়ার্ড ফ্লাইটে হয়নি।
কি বলো?
হাঁ অনিক স্যার, ওই ফ্লাইটের পাঁচ ঘন্টা আগে রিটার্ন ফ্লাইট আছে, আমি কি ওইটাতে বুক করবো?
কি আর করা, করে ফেলো।
ওকে, তাহলে যায় করে নিই।
এক কাজ করো, তুমি ডিনার আজ আমার বাসায় করো, আমার গাড়ীটা এয়ার্পোট পার্কিংয়ে রেখে যাবো।
ওকে অনিক স্যার।

সন্ধ্যার আগেই অনিক ফিরে এলো ওর ফ্ল্যাটে, ছায়া দরজা খুলে হাই বললে অনিকও হাই বলে জিজ্ঞেস করলো, কি খবর?
এই আছি।
আনকেল কেমন আছেন এখন?
বেটার, হয়ত ঘুম থেকে উঠেছেন, আপনি যান ফ্রেস হয়ে আসুন, আমি চা রেডি করছি।
ওকে আসছি বলে অনিক নিজ রুমে চলে গেলে ছায়া কিচেনে গেলো, সকালেই পিঠা বানানোর জন্য নারিকেল নিয়ে এসেছিলো ও, এখন তাই দিয়ে পিঠা তৈরিতে লেগে গেলো।
কিছুক্ষণের মধ্যে অনিক ডাইনিংয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো, কি ভাজা হচ্ছে?
পিঠা, মিষ্টি হেসে ছায়া জবাব দিলো।
কি বলো পিঠা, কেমনে?
কেমনে কি, আজ শপিংমল থেকে নারিকেল নিয়ে এসেছিলাম, তাই দিয়ে পিঠা বানাচ্ছি।
গুড, অনেক দিন পর পিঠা খাওয়া হবে, আমি আনকেলকে নিয়ে আসি।
আমি এসে গেছি বাবা, রওশনের বাবা রুম থেকে বেরিয়ে এসেছেন, অনিক দ্রুত উঠে গিয়ে উনাকে ধরে নিয়ে এসে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।
ছায়া সবার জন্য চা এবং পিঠা দিয়ে নিজেও বসলো সাথে।
বাহ চমৎকার হয়েছে, মাও এমন পিঠা বানান, জানোনা আমি কিন্তু এক সময় পিঠার পাগল ছিলাম, অনিক বললো।
তাই, আমার বানানো পিঠা কি খালাম্মার মতো স্বাদ হয়েছে, ছায়া জিজ্ঞেস করলো।
শতভাগ হয়েছে, পাটিসাপটা তো অসাধারণ হয়েছে, জবাবে অনিক বললো।

আনকেল আমি আজ ভোর রাত্রে হংকং যাচ্ছি।
কবে আসবি বাবা?
আগামী সাত তারিখ আসবো, ঐদিন আমি আসার কয়েক ঘন্টা পর বাবা আর মা এসে পোঁছুবেন, উনাদের রিসিভ করে এক সাথে ফিরবো, আনকেল কোন অসুবিধা হবেনা তো?
কিসের অসুবিধা, আমার মা আছেনা?
আনকেল কিছু আনতে হবে আপনার জন্য?
না বাবা তুই সহি সালামতে ফিরে আয় এইটাই আমার বড় পাওয়া হবে, বলেই উনি অনিকের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিলেন।
ছায়া তোমার কিছু লাগবে?
নাহ, আপনি ফিরে আসুন, মাথা নিচু করে জবাব দিলো ছায়া।
চল বাবা ড্রয়িংরুমে বসি।
চলুন আনকেল বলে অনিক রওশনের বাবাকে ধরে এগুলো সাথে ছায়ার দিকে ফিরে বললো, ছায়া আজ একজনের খাওয়া বেশি করতে হবে, আফরিন আসবে।
ঠিক আছে।
ড্রয়িংরুমে বসে রওশনের বাবা পকেট থেকে একটা এনভেলপ বের করে অনিকের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, বাবা তুই এইটা রাখ।
অনিক অবাক হয়ে এনভেলপটা নিয়ে খুলে দেখে অনেক গুলো ডলার, জিজ্ঞেস করলো, আনকেল এগুলো কেন?
এগুলো তুই লোন দিলিনা ছায়াকে, ওগুলোই।
আনকেল এ আমি আপনার জন্যই দিয়েছি, ছায়ার জন্য নয়।
তা ঠিক, এখন গুণে দেখ ঠিক আছে কিনা।
আনকেল এতো তাড়াতাড়ি হুড়োর দরকার নেই, আপনার কাছে রাখুন, আমার লাগলে চেয়ে নেবো।
না বাবা এইটা তোর, তুই রাখ।
অনিক চুপ করে এনভেলপটা নিজের কাছে রেখে দিলো।
ছায়া এসে ওদের সঙ্গে বসে অনিককে বললো, গরুর মাংস চুলায় চড়িয়েছি, মাছ মুরগী কিছু করা লাগবে?
না না যা করেছো তাতেই চলবে, তুমি অনেক কষ্ট করছো ছায়া।
না কিসের কষ্ট, এ কাজ আমি ভালোই পারি।
অনিক হেসে দিলো।

কলিংবেলের শব্দ শুনে ছায়া উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই আফরিন বললো, হাই ছায়া।
ছায়া দুই হাত প্রসারিত করে জড়িয়ে ধরলো আফরিনকে আর বললো, কেমন আছো তুমি?
খুব ভালো।
তুমিও যাচ্ছো নাকি?
হাঁ।
আচ্ছা আসো ঘরে, আজ গরুর মাংস করেছি বাংলাদেশি স্টাইলে।
ওয়াও দারুণ হবে।
ছায়া আফরিনকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে এলে আফরিন রওশনের বাবাকে সালাম দিলো, উনিও ফিরতি ওয়ালাইকুম আসসালাম বলে বললো, বসো মামনি।
অনিক স্যার, আমি ডকুমেন্টস গুলো রেডি করে এনেছি, সাথে মি. জিয়াংকে কপি ডকুমেন্টস মেইল করেছি।
গুড, তাহলে তোমরা গল্প করো আমি আমার ট্রাভেল কিট গুলো রেডি করে নিই, ছায়া একটু আসবে, অনিক ছায়াকে ডাকলো।
নিজ রুমে এসে ছায়াকে রওশনের বাবার দেওয়া এনভেলপটা দিয়ে বললো, এইটা আনকেল দিয়েছিলো, উনাকে না করতে পারিনি, তুমি রাখো টাকা গুলো।
ছায়া অবাক হয়ে বললো, না না আমি কেন রাখবো এইটা আপনার?
শুনোনা, ঘরে অনেক খরচাপাতি লাগে, তুমি রাখো প্লিজ, না করোনা।
ছায়া চুপ করে গেলো।
দেখো আনকেলকে আমি অনেক সম্মান করি, জীবনেও উনার ঋণ আমি শোধ করতে পারবোনা, আমি উনার ছেলের মতোই, এই দ্বায়িত্বটা না হয় আমি ছেলে হিসাবে পালন করলাম।
আপনি কখন আসবেন?
এই তোমার না তুমি করে বলার ছিলো?
ছায়া চুপ করে গেলো।
আচ্ছা তোমার ইচ্ছে না হলে থাক।
কবে ফিরবে তুমি, ছায়া তুমি করে বললো।
হেসে দিলো অনিক আর বললো, এই সাত তারিখ চলে আসবো, বাবা মাকে সাথে নিয়েই বাসায় ফিরবো।
সাবধানে থেকো।

......... চলবে।
ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৪০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ