এক মুঠো ভালোবাসা (১১তম পর্ব)

ইঞ্জা ৩ মে ২০১৯, শুক্রবার, ১১:৩০:৩৫অপরাহ্ন গল্প ৫১ মন্তব্য

 

এক সপ্তাহ পর
--------------------

সন্ধ্যায় নিজ ফ্ল্যাটে ফিরে অনিক কলিংবেল চাপ দিয়ে অপেক্ষা করছে, একটু বিরতি দিয়ে আবার চাপ দিলো, ছায়া দরজা খুলে দিলে অনিক ওকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কি ব্যাপার চেহেরার এই অবস্থা কেন?
মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে, সহ্য করতে পারছিনা, আহ।
কি বলো এতো মাথা ব্যাথা কেন, সাইনাসের সমস্যা আছে, দরজা বন্ধ করে অনিক জিজ্ঞেস করলো।
হাঁ সাইনাসেরই সমস্যা, আপনি ফ্রেস হয়ে নিন আমি কফি করছি।
না থাক এখন, তুমি এখন রেস্ট করো, কোনো মেডিসিন নিয়েছো?
হাঁ খেয়েছি।
কফি খাবে?
না না এ কফি খেলে যাবেনা, আহ কি যে ব্যাথা সহ্যই করতে পারছিনা, আমি রুমে যায়।
ওকে যাও, পারলে একটু ঘুমাও।
ছায়া টলতে টলতে রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।
অনিক নিজ রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসলো, ফ্রিজে রাখা একটা সেন্ডউইচ বের করে সস দিয়ে খেলো, এরপর নিজের মিনিবার থেকে হুইস্কির বোতল, আইস আর গ্লাস নিয়ে ড্রয়িং রুমে বসলো।
এক লার্জপেগ গ্লাসে ঢেলে চুমুক দিয়ে টিভি অন করে নিউজ চ্যানেল চালু করে দিলো।
কিছুক্ষণ পর ফোনের রিং হচ্ছে দেখে ফোন তুলে দেখলো লেভিন ফোন দিচ্ছে, রিসিভ করে হ্যালো বললো।
মাই ফ্রেন্ড তুমি কই আছো, লেভিনের প্রশ্ন।
ফ্ল্যাটেই আছি লেভিন।
ওকে আমি কাছেই আছি আসবো?
আসো, সাথে কে আছে?
না বন্ধু সাথে কেউ নেই কিন্তু একটা ব্লু লেভেল আছে।
ওকে চলে আসো।
কিছুক্ষণ পর কলিংবেলের শব্দে অনিক দরজা খুলে দিলে লেভিন ঘরে প্রবেশ করলো।
আসো ড্রয়িংরুমে বসো আমি গ্লাস নিয়ে আসছি।

অনিক গ্লাস নিয়ে এসে লেভিনের সামনে রাখলো।
তারপর কি খবর বলো, নিশ্চয় তোমার ওয়াইফ ঘর থেকে বের করে দিয়েছে তোমাকে, অনিক খোঁচা দিলো।
নো মাই ফ্রেন্ড, ও সিটির বাইরে গেছে, কাল ফিরবে।
তাই, ওকে চিয়ার্স।
শুনো আমি কিন্তু ডিনারের অর্ডার দেবো, ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড।
সিউর ইট'স মাই প্লেজার, কিন্তু আমার সাথে আরেকজন গেস্ট আছে।
ওয়াও ওয়ান্ডার, তা মেয়েটি কে, তোর নতুন সেক্রেটারি, উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো লেভিন।
তুমি কিভাবে জানলে আমার গেস্ট একজন মেয়ে?
আরে বন্ধু তোমাকে খোঁচা দিলাম আর একজন ইয়াং এলিজেবেল ব্যাচেলারে কাছে কি মেয়ে গেস্ট আসতে পারেনা?
তুমি তো আমাকে চিনো লেভিন, এরপরেও তুমি খোঁচাও কেন বন্ধু?
সরি সরি বন্ধু, তা কে এসেছে?
আমার পরিচিত একজন বাংলাদেশ থেকে এসেছে, ওর বাবা এইখানে হসপিটালাইজড।
ওহ সেড।
হুম, এনিওয়ে আরেক পেগ বানাও বন্ধু।
অনিক দুজনের জন্য উইস্কি ঢেলে নিলো।
ফোনের রিং বাজতেছে দেখে অনিক ডায়ালে দেখে রিসিভ করে বললো, সালামালেকুম বাবা।
কেমন আছিস অনিক?
ভালো বাবা।
তুই ড্রিংক করতেছিস?
তুমি কেমনে বুঝলে, অনিক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
তোর গলার আওয়াজই বলছে।
বাবা তুমিওনা, এখনো আগের মতো রয়ে গেছো।
আচ্ছা শুন, আমি আগামি সপ্তাহ দশ দিন পর আসবো ভাবছি।
তাই, ভিসার জন্য এপ্লাই করেছো?
কেন করবো, আমার আগেরবারের ভিসার মেয়াদ রয়ে গেছে, মনে নাই পাঁচ বছরের মাল্টিপল ছিলো।
ওহ হো তাই তো, আমি ভুলেই গেছি।
আচ্ছা আমি আসলে অসুবিধা হবেনাতো?
কেন অসুবিধা হবে বাবা?
না তোর ঘরে মেয়েটা আছেনা?
বাবা, তিন বেডের বাসাতে তোমার সমস্যা হবে কেন, চলে আসো।
ওকে দেখি এদিকে ঘুচিয়ে রওনা হবো, এখন রাখছি।
ওকে বাবা, সালামালেকুম।

তুমি বেঙ্গলীতে কথা বলছিলে, নিশ্চয় বাংলাদেশের কল ছিলো, লেভিন জিজ্ঞেস করলো।
হাঁ আমার বাবা কল দিয়েছিলো।
বাবা মিন্স ড্যাড?
ইয়াপ।
আচ্ছা কি খাবে বলো, কেবাব বেটার হবে, কি বলো?
ওটা কেবাব না কাবাব, আচ্ছা ওয়েট করো আমিই কল দিয়ে অর্ডার করছি বলেই অনিক কল করে চিকেন তন্দুরি, শিক কাবাব সহ নান আর ফ্রুট রাইতার অর্ডার দিলো তিনজনের জন্য, এরপর ড্রিংক্সের গ্লাসে চুমুক দিলো।
আগামীকাল তো থাইল্যান্ডের ক্লায়েন্ট আসতেছে, অফিস থেকে কাউকে পাঠানো উচিত ওদের রিসিভ করার জন্য, লেভিন বললো।
কয়টাই ফ্লাইট ওদের?
দুপুর বারটার দিকে।
তোমার সেক্রেটারিকে পাঠিয়ে দাও।
ও তো আজ চলে গেলো ফ্লোরিডাতে মেটেরিয়ালস গুলো লোড দেওয়ার জন্য।
ওহ, তাহলে মামা লুসিকে পাঠিয়ে দাও।
হুম সেটাই ভালো হবে, গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে লেভিন বললো।
আধা ঘন্টা পর কলিংবেলের শব্দ শুনে লেভিন উঠে গেলো, একটু পর ফিরে এসে বললো, খাবার এসে গেছে।
তাই, আরেকটু পর খাবো, আমার গেস্ট রেস্ট করছে, তুমি কি খুধার্থ?
না না, কোন অসুবিধা নেই।
কিছুক্ষণ পর অনিক শুনলো ছায়া ডাকছে, অনিক উঠে গেলো, দেখনো ছায়া ড্রয়িংরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে, জিজ্ঞেস করলো মাথা ব্যাথার কি অবস্থা?
হাল্কা ব্যাথা আছে, ড্রয়িংরুমে কেউ আছে আপনার সাথে?
হাঁ আমার পার্টনার এসেছে, তুমি কি এখন খাবে?
রান্না করে ফেলেছেন, অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো ছায়া।
না রান্না করিনি, লেভিন অর্ডার করে আনিয়েছে, আসুন লেভিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।
অনিক ছায়াকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে এসে ছায়াকে পরিচয় করিয়ে দিলো।
হ্যালো ছায়া, আমি লেভিন।
হ্যালো।

অনিক ডায়নিং টেবিলে খাবার রেডি করে ডাক দিলো ছায়া ও লেভিনকে, ওরা এসে বসলে অনিক বললো, লেভিন ওরা ডোনা কাবাব বেশি দিয়েছে।
নো মাই ফ্রেন্ড, ওরা কম্পলিমেন্টারি দিয়েছে বললো।
তাই, আচ্ছা শুরু করো, ছায়া তোমাকে কি দেবো?
আমি নিজেই নিচ্ছি, ধন্যবাদ।
শুনলাম ও তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডের ওয়াইফ?
হাঁ রওশন মানে, ওর হাসবেন্ড এক রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে।
ওহ সো সেড, ছায়া আই এম রিয়েলি সরি।
অসুবিধা নেই।
ছায়া আনকেলের রিলিজের সময় কি দিয়েছে, অনিক কথা ঘুরালো।
হাঁ আগামীকাল বিকেল চারটার পর।
ওহ তাই, ঠিক আছে আমি তাহলে চারটার সময় হসপিটালে চলে যাবো।
ঠিক আছে।
এখন কেমন লাগছে, মাথা ব্যাথাটা আছে, অনিক জিজ্ঞেস করলো।
নাহ এখনো হাল্কা ব্যাথা করছে, ঘুমুলে ঠিক হয়ে যাবে।
কতদিন ধরে এই সমস্যা?
এই প্রায় বছর দুয়েক ধরে।
ডাক্তার দেখিয়েছিলে?
হাঁ, মেডিসিন দিয়েছে।
কাল হসপিটালে গেলে একবার ডাক্তার দেখিয়ে নিও।
দরকার নেই, এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।
ডিনার শেষে লেভিন ও অনিক সব ডিস ধুয়ে রেখে ড্রয়িংরুমে বসলো, ছায়া ওদের থেকে বিদায় নিয়ে রুমে গেলো রেস্ট করার জন্য, সাথে ওর অসুস্থতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলো লেভিনের কাছে।
সত্যিই দুঃখিত বন্ধু, মেয়েটির জন্য আমার মন খারাপ হলো, এই বয়সে হাসবেন্ডকে হারিয়েছে, আহা।
হুম আসলেই দুঃখি ও, অনিক জবাবে বললো।
কিছুক্ষণ পর লেভিন বিদায় নিলো অনিকের কাছ থেকে, লেভিন চলে যাওয়ার পর অনিক গেস্টরুমে গেলো সব কিছু চেইঞ্জ করার জন্য, টুইন বেডের রুমটা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করলো, নতুন বেডশিট, কভার দিলো বিছানাতে, এরপর ঘুমাতে গেলো ও।

...........চলবে।
ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৫১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ