
“আদরের রাগী ছেলে”,
“প্রেমে পড়া বারণ,
কারণে অকারণ,
ওই মায়া চোখে চোখ রাখলেও ফিরে তাকানো বারণ
প্রেমে পড়া বারণ,
কারণে অকারণ,
মনে পড়লেও আজকে তোমায় মনে করা বারণ
তাই মুখ লুকিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে, বসন্তের এই স্মৃতিচারণ”।
গানটি মোবাইলে বাঁজতেই ভাবলাম এই শুভ্র ভোরের মিষ্টি আবেশ গায়ে মেখে খোলা বারান্দায় তোমার স্মৃতিচারন লিখতে বসি। অনেকদিন ধরে লিখবো লিখবো করে তোমায় লেখা হয়ে উঠছে না। লেখায় মনোযোগ আনার জন্য আসন পেতে কত আয়োজন করছি কিন্তু লিখতে না পারার ডিজিটাল সুরে মাথার ভিতর পাখির কিঁচির মিঁচির শব্দ বাঁজছে আর মনে হচ্ছে, মস্তিষ্কের নিউরনগুলোকে কে যেন পদ্মা সেতুর নাট বল্টু খোলার মত খুলে দিচ্ছে! তাই লেখার জন্য শব্দ পাওয়ার বদলে পেয়ে যাচ্ছি অ-শব্দের কিছু বিচিত্র বাক্যাবলী।
ফেসবুক মেসেঞ্জারের টুং টাং এর যুগে চিঠি লিখতে আমার বেশ লাগে তবে সেজন্য লাগে কিছু জমানো অনুভূতি। আগে কিন্তু ভালোই লিখতে পারতাম বলো!
আজ যতযাইহোক নিজের সাথে এক প্রকার স্নায়ুবিক যুদ্ধ করে হলেও লিখতে বসলাম তোমাকে এক টুকরো চিঠি।
কেমন আছো তুমি?
অনুভূতির বাক্সটা বের করতেই ভাবছি রাংতা পাতায় মোড়াঁনো সুখ স্মৃতিগুলো লিখবো নাকি বৃষ্টিতে লুটোপুটি শেষে ভেঁজা চাঁদরের সুবাসে তোমার আমার জড়িয়ে থাকা গল্প লিখবো নাকি তোমার ভিতরের সেই স্বত্তাটাকে নিয়ে লিখবো যে মানুষটা আজ আমার কাছে বড্ড বেশি অচেনা? লিখতে থাকি দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়!
বাইরে প্রচন্ড গরমে মানুষ অতিষ্ঠ কিন্তু এইসময় ও তোমার স্মৃতিগুলো আমার অবসন্ন শহরটাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে ,অন্তঃবৃষ্টির টুপটাপ আওয়াজ শুনতে শুনতেই কিছুটা দিনলিপির বিক্ষিপ্ত ছক আঁকতে গিয়ে কোন ফাঁকে তুমি এসে ভর করলে আমার সমস্ত ভাবনা জুড়ে টেরই পেলাম না । নষ্টালজিয়ার সমস্ত ডালপালা ছঁড়িয়ে ভাবনারা পুরোনো ফিল্মস্ট্রিপের রোলের মতো রিউয়াইন্ড হতে হতে পেছনে টেনে নিয়ে গেল সেই তোমার-আমার কাটানো দিনগুলিতে,,,,
মনে পড়ে তোমার,আমি বনের নামহারা ফুল ছিলাম, একটুখানি তোমার ছোঁয়ায় আমিও হতাম পারিজাত, হঠাৎ চলতি পথে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার আগেই আমি নির্ভরতার আলিঙ্গনে তোমাকে বেঁধে রাখতাম! বাইক চালানোর সময় তোমার সিগারেটের ধোঁয়ায় যেন চোখ ধাঁধিয়ে না যায় সেজন্য পিছে লেগে থাকতাম। কোন দুঃখ কষ্ট তোমায় যেন ভড় করতে না পারে সেজন্য সব নিজের ভিতর শুষে নিতাম! সারাদিন কিভাবে তোমার যত্ন নেয়া যায়? কিভাবে তোমাকে ভালো রাখা যায় সেই প্রচেষ্টার জাল বুনতাম! তোমাকে আবিস্কারের নেশায় আকন্ঠ ডুবে রইতাম সর্বদা।
শরৎ এর কাশফুলগুলো যেমন নতুন কলি নিয়ে প্রস্ফুটিত হয়ে নরম হিমেলিমায় ছোঁয়ায় মনকে পুলকিত করে, তেমনি আমার কাছে তোমার মুখের ঐ মিষ্টি হাসিটা ছিল সদ্য ফোঁটা কাঁশফুলের মত। তোমাকে প্রকাশ করবার জন্য আমার কাছে যথেষ্ট শব্দ সঞ্চিত নেই,প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর কোন ভাষাই তোমাকে প্রকাশ করবার জন্য যথেষ্ট নয়। তোমাকে শব্দে,সংলাপে,বিবরনে, বাক্যের পর বাক্যে প্রকাশিত করা সম্ভব নয় শুধুমাত্র অনুভবেই তোমার প্রকাশ সম্ভব।
ভুলে গেছো জানি! কিন্তু আমি ভুলি নি তোমার আমার প্রথম দেখা, প্রথম তোমার বাঁড়ানো হাতে বিশ্বাস খুঁজে পেয়ে শক্ত করে হাতটি ধরার কথা,একসাথে দেখা জ্যোৎস্না, বৃষ্টি ফোটা,কুয়াশা ভোর,নিস্বর্গ সূর্যোদয়, পাতা ঝরার শব্দের মতো তোমার ভালোবাসার আকূতি,বাইকে তোমায় শক্ত করে ধরে আমার ভেজা চুল উড়িয়ে তোমার কাছে বেপরোয়া আহ্লাদী আহবান,একসাথে অচেনা শহরে ঘুরে বেড়ানো, রোদ্দুর দুপুরে তরুছায়ার তলে হাতে হাত রেখে রক্তিম মুখে আড়ষ্ট হয়ে পাশাপাশি বসে থাকা,তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়া,তোমার শরীরের জোৎস্নামাখা গন্ধ নেয়া,খারাপ সময়ে তোমার জন্য নামাজ পড়া,এরকম তোমার আমার কতশত সুখ দুখের সাতকাহন যেসবের রোমন্থনে এখনো আমার ভিতর সেই আগের আলোড়ন জাগে, ঠোঁটে, চোখে অপ্রতিভ হাসির সঞ্চার হয়। কিন্তু কোন কারন ছাড়াই তোমার তৈরী সাতকাহন থেকে তুমি নিজেই মুখ ফিরিয়ে নিলে!
অথচ এই তুমি একদিন বলেছিলে আমাকে ছেড়ে কখনো যাবে না, আমি তোমার জন্য নাকি শুভ!তোমার কাছে আমি সবার চেয়ে সেরা!!!আশ্চর্যজনকভাবে হলেও বিষয়টা আজ সত্যিতে পরিনত হলো তবে একটু ভিন্নভাবে, সেরা হলাম বটে ভালোবাসার অপরাধে বেহায়া নামক উপাধিতে সেরা!
হঠাৎ তোমার প্রতি প্রতিনিয়ত তিলে তিলে গঁজিয়ে ওঠা প্রেমকে দুহাতে মুঁচরে, ছুড়ে, আস্তাকুঁড়ে ফেলে তোমার আমার একসাথে চলার পথ আলাদা করে দিলে তুমি। সম্পর্কের মসৃণ পথে বিষাদের কাঁটা গঁজালো, সেই কাঁটায় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেল আমাদের ভালোবাসা। ঘনিয়ে এলো বিরহ-বিচ্ছেদের সুর, হয়ে গেলাম তুমি ছাড়া আমি।।
রাগী ছেলে,তোমাকে ভুলে যাওয়ার জন্য যেমন কোন কারন নেই তেমনি মনে রাখার জন্য রয়েছে অজস্র কারন। আমাদের সম্পর্কের ছন্দ পতন ঘটার কোন কারন তুমি বলোনি! তাই ভেবে নিলাম সম্পর্কের সুর কোথায় যেন ছিঁড়ে গেছে।
তুমি ছিলে বলেই করেছিলাম জোৎস্না আর বৃষ্টির সাথে সখ্যতা। আজকাল সেই সখ্যতা খুঁজে পাই না। খাঁলি পায়ে ঘাসের মাঝে হেঁটে যাওয়াতে যে আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলাম সেই আনন্দ ও এখন নিরানন্দে পরিনত হয়েছে। তোমার দেয়া দুঃখগুলো আজ আমার কাছে এক রাশ ভালোবাসা, শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটাই বাস্তব । তুমি যেমন বুক ফুলিয়ে এখন বলো,এক সেকেন্ডের জন্য ভালোবাসো নি কখনোই আমাকে, আমিও তেমন একইভাবে বলতে পারি আজও বড্ড ভালোবাসি তোমায়❤️। তবে মাঝে খানিক পরিস্থিতি পালটে গেছে, পাল্টে গেছে সময়।
আমার কবিতার খাতা,গল্পের পাতা,বইয়ের তাক,পড়ার টেবিল স্নিগ্ধ সকালের মিষ্টি আদুরে রোদে,মন খারাপের আকাশে রাত পাখির ডানা ঝাপটানোতে, অলস দুপুরের নীল আকাশটাতে, গোধুলী লগ্নে,নিস্তব্ধ রাতে,অমাবশ্যার কালো ছায়ায়, চাঁদনী রাত সহ সবটা জুড়ে এখনো তোমার অস্তিত্ব চরমভাবে দৃশ্যমান।
কেমন আছো তুমি? এ কথা জানবার আগেই এখন মনে হয়, আমি কেমন আছি!! আমি এখন পূবের আকাশে রাত্রির অবকাশ যাপন দেখি আর ভাবি,ক্ষতি কি, তুমি কেমন আছো না জানলে! আমার তো সকাল হবেই, আবার তা মিলাবেও সন্ধ্যার উষ্ণ বুকে। ধীরে সুস্থে রাতও আসবে চুপি চুপি ছাদের কার্নিশে!! তবুও আমি জানবার অপেক্ষায় চুপিচুপি তোমায় ভেবে গভীর শ্বাস গোপন করি বাঁধানো স্বপ্নের সাতরঙা ফ্রেমে।
রাগী ছেলে,অনেকদিন হলো দুরত্বের ওপাড়ে হীম লাগা রোজ সকালে তোমার শান্ত গভীর শ্বাসে শ্বাস মিলিয়ে বলা হয় না ” ভালোবাসি। তবুও আমি তোমাকে না পাওয়ার দুঃখ ভুলে গেলেও ঐশ্বর্যে ভরা সুখের খাজানার বাক্স নিয়ে কাটিয়ে দিতে পারি বাকিটা জীবন।
জানি তুমি সহজেই আমায় ভুলে গেছো! তবে আমি তোমাকে প্রতি মূহুর্ত মনে রেখেই ভুলে যাই! আজও তোমার উচ্চারিত এবং অনুচ্চারিত প্রতিটি বাক্য আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে যায়,অনেক অব্যক্ত অনুভূতি। তুমি না হয় আজ আমার অতীত তাতে কি? জীবনের বাকি বর্ষণমুখর মুহুর্ত না হয় কাঁটুক তোমার ভাবনায় বুঁদ হয়ে। আমি না হয় এখন হলুদ চাপা ঘাস হয়ে বেঁচে থাকবো,শুধু সময় আর স্মৃতির কফিনটা আমার কাছেই থাক।
এখনও আমাদের ঠিক একই জায়গায়,একই রাস্তায় একইভাবে দেখা হয় তবে আগের মত কোনো টানটান উত্তেজনা থাকে না, থাকে শুধু ভেতরে জমতে থাকা বারুদ যা মূহুর্তেই দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে।
নিয়তির দারুন পরিনতি, আজ তুমি আমি মুখোমুখি,একই শহরে আমাদের বসবাস অথচ কেউ কারো নই। এখন শুধু আমার ইচ্ছা,স্পৃহা, অভিরুচি, ভালোবাসা,আবেগ, অভিযোগ, অভিমান কল্পনার ক্যানভাসে জঁড়িয়ে, যার উপস্থিতি ম্লান করে দিতে পারে সব হারানোর গ্লানি। এখন শুধু তোমাকে না পাওয়ার সব আকাঙ্খা শেষপর্যন্ত কেবলমাত্র একটি বাক্যে মিলিত হয়েছে,
” তোমার ভালো থাকার প্রত্যাশায় ”
“ছন্ন-ছাড়া আগের সেই আমি।।।।
১২টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
হারানো প্রিয়জনের সাথে দেখা হলে মনে হয় যেনো বিশাল সমুদ্র এক টুকরো ঢিল মেরে জাগিয়ে দিলো ঢেউ।কোন কারন ছাড়াই কিছু ঘটে না।দেখি চিঠি পড়ে বদমাইমটায় কি উত্তর দেয়।
চিঠির ভাষা উপস্থাপনা চমৎকার হয়েছে।
রেজওয়ানা কবির
তাও ভালো বিশাল ঢেউ জাগাতে পেরেছি। ভাইয়া কিছু মানুষ কারন থাকলেও সেটা না বলেই চলে যায় হয়ত সে জানে কিন্তু অপরপ্রান্তের মানুষটা কারনটা জানেন না জন্যই এত কষ্ট পায়। আর বদমাইশটা কি আর চিঠির উত্তর দিবে!!!চিঠিই তার কাছে কখনো পৌছায় না, চিঠির উত্তর দিলে তো থেকেই যেত😭।ধন্যবাদ আর শুভকামনা ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনি নাকি লিখতেই পারেন না!!
আর এখানে দেখছি আবেগ, অভিমান, অভিযোগ, ভালোবাসার ছড়াছড়ি চিঠি। ভালোই লাগে পড়তে।
কাউকে কাউকে ছ্যাচড়া বলতেও মন চায়। ভালোবাসলে তো করা হয়ই ছ্যাচড়ামী, পাগলামী।
তবুও যে ভালোবাসা অপবাদে, অবহেলায় ফেলে যায়, আশা করি সে আর ফিরে না আসুক। একতরফা ভালোবেসে যাওয়াতেই আনন্দ ঢের!!
চিঠি রান্না মিষ্টি হয়েছে। আরও দুচারখানা এমন মিষ্টি চিঠি পড়তে চাই!!!
রেজওয়ানা কবির
কি জানি অবচেতন মন তবুও চায় ফিরে আসুক। একতরফা ভালোবাসায় মজা আছে একটা যে অপরপ্রান্তের মানুষটা আর জানবে না বেশ মজা কিন্তু ব্যাপারটা🥰।লেখা তো সত্যি আগের মত আর আসে না, আপনার জোড়াজুড়িতে লিখি আর কি!!!
চিঠি রান্না তবে আবার করতে হবে যদি চিঠি খেয়ে তৃপ্তি পান তবে তাই করব আবার রান্না।
শুভকামনা ❤️
সৌবর্ণ বাঁধন
চমৎকার আবেগে মোড়া প্রতিটি লাইন। এরকম সুখপাঠ্য লেখা পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য অভিনন্দন।
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যের জন্য। আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগল। শুভকামনা।
নার্গিস রশিদ
ছোটবেলার ভালবাসা । আসে যায় । মাঝে মাঝে মনে হয়। শুভ কামনা অনেক।
রেজওয়ানা কবির
ভালোবাসা এরকমই আসে যায়, বার বার স্মৃতিতে কঁড়া নাড়ে,ধন্যবাদ আপু শুভকামনা সবসময়।
হালিমা আক্তার
বোঝেনা সে বোঝেনা। আবেগ, অভিমান, অনবদ্য ভালোবাসার বিরহী চিঠি। শুভ কামনা রইলো।
রেজওয়ানা কবির
বোঝে না সে বোঝে না 🤣🤣🤣🤣
ধন্যবাদ আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
এই চিঠি পড়ে রাগী ছেলের রাগ ভাঙার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। প্রথম দিনের প্রথম দেখার স্মৃতি অনুভূতি গুলোই সম্পর্ক গুলোকে জিইয়ে রাখে।
আবেগ অনুভূতির সুন্দর প্রকাশ ঘটেছে চিঠিতে।
শুভ কামনা 🌹🌹
রেজওয়ানা কবির
রাগী ছেলের কাছে চিঠি পৌছাবেই না আর 🤣🤣🤣 ছেড়ে চলে গেলেও স্মৃতি অনুভূতিগুলোই থেকে যায় বেঁচে থাকার জন্য।
ধন্যবাদ আর শুভকামনা আপু।