
যেদিন প্রথম নিগূঢ় মানব রহস্যের অস্তিত্ব সম্পর্কে জেনেছিলাম, সেদিন হতেই আমার ভাব কল্পনা চিন্তা বিচিত্র কাব্যগুলি প্রকাশিত করতে শিখেছি ডায়েরির পাতায়। মানুষের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ভীষণতা এর রহস্য মাধুর্যতাকে আমি অনুভব করতে শিখতে পেরেছি জীবনযাপনের দৈবিক সত্য প্রকাশে। চিন্তা ভয় ডরে আক্রান্ত হই, ডায়েরিতে একদিন আমার লেখার সব শব্দগুলি হারিয়ে যাবে। নিত্য লেখার ব্যাধিতে আক্রান্ত আমি হয়তো সেদিন আর লিখতে পারবোনা। ইদানিং এসব কথা মনে আসলেই আমার ভাব-কল্পনাগুলি প্রবলভাবে আলোড়িত হয়। যখনই এরূপ ভাবনা আসে তখন উদ্বেলিত হয়ে আরো বেশি করে লেখার তাগিদ অনুভূত হয় আমার। যদি সত্যিই সেদিন আর লিখতে না পারি আমাকে তোমরা সমাধিত করো নিজেদের লেখায়,উদিত সূর্যালোকের প্রাতঃসৌন্দর্যবেষ্টিত মনের মন্দিরের গুপ্তগুহায়। তোমাদের লেখকীয় অনুভবে ধূম্রচারিকার চোরাবালিতে।
অসুস্থ দেহ-মনের নানাবিধ বিক্ষোভ, বিকারে অস্থির দৃষ্টিবিভ্রম, দেহের ও জীবনের নানা সঞ্চয়ের ভঙ্গুরতা আর লিখতে না পারার এই সত্যরূপ আমাকে বেঁচে থাকার সার্থকতা বুঝিয়ে দেয় বারংবার। আমার লেখার রসদ খুঁজি মানবতার অমরত্বে অবিচলিত বিশ্বাসকে সাক্ষী করে। পৃথিবীর সৌন্দর্যকে নিত্য নতুন দৃষ্টিতে দেখার মাঝেই নিজেকে নিয়োজিত করে ভরে চলেছি আমার একান্ত অনুভূতির ডায়েরির পাতা।
মানব স্নেহ প্রেমের নিত্যনূতন মুখ্য নির্ধারণ করতে গিয়েইতো খুঁজে পেয়েছি লেখার অমরত্ব। সেগুলোকে কবিতা নয়, আমি তাদের নাম দিয়েছি একান্ত অনুভূতি। কবিতার মাঝে কবির কল্পনার কিছু বিশেষ স্বাতন্ত্র্যবোধ আছে। কিন্তু একান্ত অনুভূতিতে কল্পনার জলস্থলসঞ্চারী সেই লীলাখেলা নেই। কল্পনাপ্রসূ প্রকাশের সচেতন শিল্প নৈপুণ্যতা নেই। যা আছে তা হলো মনের ভাব প্রকাশের নানা বৈচিত্র্যের সমারোহ, আভাস ইঙ্গিতের ব্যঞ্জনার মোহ।
একান্ত অনুভূতিতে দৃষ্টির স্বচ্ছতা আছে, সুস্পষ্ট অনুভূতিগুলোর প্রকাশ আছে। কবিতার মত অন্তমিলের দরকার কি? মনের ভাব প্রকাশের অনিয়মিত মুক্ত ছন্দেই নাহয় লিখব আমার নিজস্ব অনুভূতিগুলো। আমার একান্ত অনুভূতিগুলো সব আমার হৃদয়ের কথা, আমার অন্তর্নিহিত শক্তি। শব্দের ঐন্দ্রজালিকতার গন্ডিতে থেকে পাঠকদের কেউ হয় মুগ্ধ, কেউ হয় বিস্মিত। আর আমি পাঠকের মুগ্ধতায় নিজে হই আনন্দিত। আমার ডায়েরি তখন স্মিত হেসে আমাকে নিজের লজ্জাবতীতা জানান দিয়ে যায় আর এটাইতো পরম প্রাপ্তি।
আমার গোপন ইচ্ছেগুলোর একটি হলো চিরবিদায়ের গোধূলিলগ্নে আমার শিয়রে একান্ত অনুভূতির সেই ডায়েরিখানা থাকবে আর লেখার কলমটি থাকবে ঠিক তার মলিন মলাটের উপরে। আমার ঝাপসা হয়ে ওঠা কাঁচের চশমাখানি সেদিন নিজের আঁচল দিয়ে মুছে রেখো তোমরা যাতে লেখাগুলি পড়তে পারি।
এই পৃথিবীর মানুষ রোগ-শোকের কঠিনাবরন আমায় আক্রান্ত করেনি কখনো। তবে ইদানিং একান্ত অনুভূতিগুলি লিখতে না পারার বেদনায় আজ যেন আমি হয়েছি মূর্তিমান এক মমিকৃত নিঃসাড় দেহ। তোমরা নিজেদের হৃদয়ের প্রশান্ততা দিয়ে ডায়েরিতে লেখা প্রতিটি শব্দের গম্ভীরতাগুলিকে অনুভবে নিয়ে আমার অশ্রু ছলছল চোখমুখের দিকে একবার তাকিয়ে দ্যাখো তোমাদের একান্ত অনুভূতিরা ফিসফিসিয়ে বাতাসে শিস্ কেটে কানে কানে আমার কথাই বলবে।
বলবে- আমি ভালো নেই, সত্যিই ভালো নেই।
২৯টি মন্তব্য
ইঞ্জা
ভাই এই লেখার কমেন্ট দিতে হলে নিজেকে প্রথমে কবি বানাতে হবে, যা এই ইহজীবনে হবে কিনা সন্দেহ আছে। 😢
তৌহিদ
এত সহজ লেখা তবুও!! নাহহ! আপনি ভীষণ ঝামেলার মধ্যে আছেন বুঝতে পারছি। মাথায় পানি ঢালেন দাদা, গরম মাথা নিয়ে একান্ত অনুভূতি পড়ার অনুভব মনে কোনও প্রভাব ফেলবেনা নাহলে।
ভালো থাকবেন দাদা।☺☺
ইঞ্জা
ভাই আপনি তো জানেন কি ঝামেলাতে আছি, দোয়া রাখবেন ভাই।
তৌহিদ
অবশ্যই দাদা।
মোহাম্মদ দিদার
অসাধারণ লিখেছেন দাদা ।
গভীরে হারিয়ে গেলাম
তৌহিদ
পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই।
শবনম মোস্তারী
একান্ত অনুভূতি আর কবিতা নিয়ে খুব সুন্দর বিশ্লেষন।
ভালো লিখেছেন।
তৌহিদ
লেখা পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন প্রিয় 💜
রেহানা বীথি
এই বেদনাবোধ একান্ত নিজস্ব। কেন তাকে ছন্দে বেঁধে কষ্ট দেয়া? মুক্তির মিছিলে ছড়িয়ে দিই একান্ত ভাবনা। আর কিছু নয়, ওটুকুতেই সন্তুষ্ট হয় মন। অনেকখানি হালকা লাগে নিজেকে।
মন ছোঁয়া সুন্দর লেখা ভাই।
তৌহিদ
নিজের ভাবনাগুলিকে বেঁধে রাখার মাঝে সুখ নেই, সবার সাথে ভাগাভাগি করাতেই আনন্দ।
মন্তব্যে ভালোলাগা আপু।
আরজু মুক্তা
একান্ত অনুভূতি ই ভালো। ডানা মেলা যায় চারিদিকে।
ভাবনার জানালা গুলো মেলে যাক! লেখক তার সমস্ত মাধুরি নিয়ে আবার লিখুক, কলম চলুক দুর্বার গতিতে।
শুভকামনা!
তৌহিদ
যতদিন নিঃশ্বাসে আছে প্রাণ কলম চলবেই। পাশে থাকবেন আপু।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
রোবায়দা নাসরীন
এই অনুভব এই আকুতি সত্যি মানবে মনের অস্থিরতারই প্রকাশ । আমরা ঠিক কিসের জন্য , কার জন্য ধাবিত হচ্ছি জানা নেই । তবুও অগ্রসর হই প্রতিনিয়ত ।
তৌহিদ
সুন্দর বলেছেন আপু। মন্তব্যে অনেক ভালোলাগা রইলো।
নিতাই বাবু
আপনি সত্যি সত্যি একজন সত্য সন্ধানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী। এগিয়ে যাক আপনার লেখা। শুভকামনা থাকলো।
তৌহিদ
সত্যকে অনুভব করার প্রয়াস চালাই দাদা। লেখাগুলোর মাঝে প্রকাশ করার চেষ্টা করি তাই। মন্তব্যে অনেক ভালোলাগা রইলো।
মোঃ মজিবর রহমান
প্রতিটি শব্দ বুনন মানুসের চাওয়া তার অন্তরনিহিত ভাব প্রকাশ একান্ত হলেও ডায়্রির পাতায় নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে ভাব প্রকাশ অত্যান্ত ভাল লাগা প্রকাশ করেছেন তা কস্ট দুখ যাই হোক।
ভাব প্রকাশ মনের মাধুরি মিশ্রিত তা পাঠক ও লেখকের মন ভরাই যথেস্ট তা অন্ত্যমিল হোক আর ছন্দ বা গদ্যে।
তৌহিদ
আপনার মন্তব্যে সত্যি অনুপ্রাণিত হলাম ভাইজান। আমার লেখার সম্মুখ বুঝতে পেরেছেন দেখে আমি আনন্দিত হলাম।
ভালো থাকবেন ভাই।
শাহরিন
অনেক ভারী লেখা। কি কমেন্ট করবো বুঝে আসছে না।
তৌহিদ
আবার একটু পড়বেন কষ্ট করে আপু? না বুঝলেও সমস্যা নেই। এসব জটিল ভাবনা মাথায় না নেয়াই উত্তম। তবুও আমার সব লেখায় আপনার উপস্থিতি খুব ভালো লাগে।
ভালো থাকবেন আপু।
ছাইরাছ হেলাল
গোপন ইচ্ছে দেখে চমকে উঠি, কত কিছুই না মন চায়,
পাওয়া না পাওয়ার হিসেব না করেই।
অনুভুতির দারুন প্রকাশ।
তৌহিদ
লেখা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইজান। ডায়েরিখানার জন্য উপযুক্ত ওয়ারিশ খুঁজছি। পেলেতো ভালই, না পেলে হয়তো ঘরের কোনায় বালুর স্তর জমবে একসময়।
সাবিনা ইয়াসমিন
মনের একান্ত কথাগুলো আসলেইকি সেভাবে প্রকাশ করা যায়! যা অনুভবের তার কয়েক গুণ বেশি আলোড়ন হতে থাকে প্রকাশ কালে। জীবনবোধ রচনায় এলে যেটা আগে এসে পরে তাহলো দর্শন। কি দেখলাম, কি পেলাম, কি চাই, কি খুঁজি সেটাই আর মনেরমত করে তুলে ধরতে পারিনা।
ডায়েরী পড়ে ভালো লাগছে। এভাবেই নাহয় গুচ্ছ গুচ্ছ ইচ্ছাগুলো প্রকাশিত হোক। আপনার ইচ্ছা পূর্ণ হোক, শুভ কামনা নিরন্তর তৌহিদ ভাই। 🌹🌹
তৌহিদ
আমরা সবসময় সবকিছু কি প্রকাশ করতে পারি আপু? কত অব্যক্ত কথামালা জমেছে ডায়েরিতে, একদিন হয়তো সবাই জানবে। হয়তো জানবে কত কিছুর সাক্ষী ছিলো আমার একান্ত অনুভূতির ডায়েরিটা। নিজের দর্শন সাবলীলভাবে পাঠকের সামনে প্রকাশ করাটা বেশ কষ্টসাধ্য। তবুও চেষ্টা করছি।
আপনার মন্তব্যে অনেক ভালোলাগা রইলো আপু। ভালো থাকবেন।
মনির হোসেন মমি
এই পৃথিবীর মানুষ রোগ-শোকের কঠিনাবরন আমায় আক্রান্ত করেনি কখনো। তবে ইদানিং একান্ত অনুভূতিগুলি লিখতে না পারার বেদনায় আজ যেন আমি হয়েছি মূর্তিমান এক মমিকৃত নিঃসাড় দেহ।
আপনিতো লিখে খালাস।আমিতো তাও লিখতে পারছি না। অনুভুতি অসম্ভব ভাল লাগল।
তৌহিদ
লিখে খালাস কি কন ভাই? ২৩ তারিখ ১০০ তম পোস্ট দিমু এই চিন্তায় যা তা লিখে যাচ্ছি। বাকী আছে ৩ টা লেখা।☺☺
মনির হোসেন মমি
অগ্রীম শুভেচ্ছা
সেঞ্চুরীয়ান৴
তৌহিদ
যদি লিখতে পারি আর কি!!
প্রদীপ চক্রবর্তী
দারুণ অনুভব দাদা ।
একান্ত অনুভূতি গুলো এমন করিয়ে সাজিয়ে লিখে যখন তা মনের মধ্য গ্রথিত তখন এক স্পর্শতার নির্যাস ছোঁয়া পাওয়া যায়।
বেশ ভালো লাগলো দাদা।