একদিন বাসে

মোহাম্মদ দিদার ২৩ জানুয়ারি ২০২০, বৃহস্পতিবার, ০২:০২:১৩অপরাহ্ন ভ্রমণ ১১ মন্তব্য

এলার্মের শব্দেই ঘুম ভাঙ্গলো। তরিঘরি করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পরলাম,রাজশাহীর উদ্দেশ্যে। সিট পেতে হবে, এই তাগিদে তারাহুরো করে,গাড়ীতে উঠে বসলাম।

পরের ষ্টানে বাস থামলো। আমি আমার মতোই বসে রইলাম। দ্বিতীয় ষ্টান থেকে গাড়ী ছেড়ে যাওয়ার খানিক পরে।

হ্যালো, ভাইয়া আমার বাবুটাকে একটু কোলে নিয়ে বসবেন? আমি মহিলার মুখের দিকে তাকালাম, কি বলবো বুজতে পারছিলাম না, চুপচাপ বাবুটাকে কোলে নিয়ে বসলাম। শা শা করে গাড়ি চলতে লাগলো, হঠাৎ ব্রেকে তন্দ্রা ভাঙ্গলো, হুমরি খেয়ে পরলো আমার পাশে দাড়িয়ে থাকা মহিলা। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে আবার স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে। আমার চোখ পরলো আবার ঐ মহিলার দিকে। কি অসহায়ের মতো দাড়িয়ে আছে! পাশে দাড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো ও চাঞ্চ নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমার বিবেকের টনক নরলো, আমি ভাবলাম এটা যদি আমার বোন হতো আমি কি পারতাম ওনাকে দাড় করিয়ে রেখে নিজে বসে থাকতে! না পারতাম না। আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। আমি প্রথমে বললাম, আপু আপানার বাবুটাকে একটু ধরবেন! ওনি আমার দিকে আরো গভীর মায়ামাখা চোখ তুলে তাকালো,সাথে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস । ওনার ছেলেকে নিয়ে আমি বিরক্ত, এমনটাই ভেবেছেন হয়তো। বাবুটাকে ওনার কাছে দিয়ে আমি উঠে দারালাম, আপু আপনি এখানে বসতে পারেন। না, না আপনিই বসুন, আমার জন্য আপনি কেনো কষ্ট করবেন! কথাটা তার ভেতর থেকে আসেনি নিশ্চই, সেটা আমার বুঝতে বাকি রইলো না। না, ঠিক আছে বসুন।

ফিক ফিক করে হেসে উঠলো পাশের ছিটে থাকা আরেক জন মহিলা। আমি ওনার হাসির কারণ প্রথমে বুঝতে না পারলেও। তখন ঠিকি বুঝতে পারলাম। যখন শুনতে পেলাম, পাশের ছিটে আরেক জন বললো;
এসব ভালোমানষি অনেক দেখেছি! সুন্দরী মেয়ে দেখছে,তাই বসতে দিয়ে ভালোমানুষ সাজতে চাইছে। আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না, বোকার মতই দাড়িয়ে রইলাম।

অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর, দেখলাম ড্রাইভারের পাশে বাসের ইন্জিন কভারে একটু জায়গা ফাঁকা আছে। আমি সেখানে গিয়ে বসলাম। আমার পিছু পিছু, একজন মুরুব্বি ও আসলো । একটু চেপে বসলাম আমি। যাতে মুরুব্বি বসতে পারে।

শা শা করে এগিয়ে যাচ্ছে গাড়ি, গাড়ির গ্লাস খোলা থাকায়, শো শো করে বাতাস আসছে,শরীরটা হাল্কা ঠান্ডা হয়ে আসলো, শরীর থেকে অস্বস্তি বিদায় নিলো। আমি একটু সস্তি নিয়ে বসলাম।

ওয়াক করে শব্দ হলো, চেখ ঘুরিয়ে দেখলাম সামনের ছিটের একজন বমি করে দিয়েছে, তার পাশের ছিটের লোকটা তো হো হো করে উঠলো, তবে তার এমন ব্যাবহারের যথেস্ট লজিক থাকা সত্বেও, তার ভাবা উচিৎ ছিলো বমি করা লোকটার পরিস্থিতি। মানবিকতার দিক থেকে ভাবলে, এমননটাই মনেহয়।

এসব ঘটনা তোয়াক্কা করার সময় নেই, গাড়ী চলছে তার গতিতে। গাড়ীর ইন্জিনের সাউন্ড উপেক্ষা করে একটা বিকট গরগরে শব্দ এসে পৌছালো আমার কানে। আমার বুঝতে বাকি রইলো না, এটা তার নাকডাকার শব্দ,যিনি আমার পিঠে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। বিরক্তিভরা চোখ নিয়ে একবার তাকিয়ে অন্যদিকে চোখ ঘুরাতেই দৃষ্টি আটকে গেলো, দু ছিট পরের এক মুরুব্বির দিকে। ওনি নিজের নাকের ভিতর আঙ্গুল দিয়ে এমনভাবে খুচরাচ্ছে, যেনো সেখানে লুকিয়ে আছে, অনেক দামী কেনো বস্তুু। ওনার পাশের ছিটের ব্যক্তি ওনার দিকে আঙ্গুল ইশারা করে, খানিক ঠোট বাকিয়ে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করলো।

ওস্তাদ সিঙ্গেল, ব্রেক হবে ব্রেক, হেলপারের এমন সিগনালে ই ব্রেক কসলো ড্রাইভার। গাড়ি রাজশাহী পুঠিয়া চলে আসলো। এটাই আমার আজকের শেষ গন্তব্য ছিলো।

0 Shares

১১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ