নিদারুন যন্ত্রনায় এক অস্পৃশ্য আবিষ্টতার মোহে যন্ত্রণাকাতর রাজহাঁসটি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলে মেটোপথে। জরাজীর্ণতার আবহে পেচুটি চোখে ঝাপসা হয়ে এসেছে তার ক্ষীণদৃষ্টির অক্ষিগোলক। দূরে কুয়াশায় ভাসা ভাসা বাষ্পাকুল খড়গাদায় কুক্ কু কুক্ করে ডেকে ওঠে একজোড়া শ্যামাঙ্গী।

রাজহাঁস ফটফট করে ডানা ঝাপটিয়ে জানান দেয় নিজের আগমনী বার্তা। মস্তক অবনত করে নিজের চ্যাপ্টা ঠোঁটে হিমবালুতে ঠোকাঠুকি করে প্যাক প্যাক করে ডেকে ওঠে। কি বিকট কর্কশ কন্ঠ! কানে বাজখাঁই লাগে, বিরক্তিকর কর্ণকুহরে বাতায়নবর্তিনী বাবুই পাখিটির চিঁ চিঁ শব্দে ড্রাম বেজে ওঠে তার হৃদস্পন্দনে।

রাজহাঁস প্রস্তুতি নেয় সামনে এগুবার। নিজের পায়ের পাতায় নির্লজ্জ কাঁদাচোষা আঁটাল মাছিটিকে এক ঝটকানিতে ভাসিয়ে তোলে শুন্যে। ব্যাটা, রক্তলোচন! আর জায়গা পাসনি বসার? নর্দমার কাঁদা না খেয়ে এসেছিস শোষিতের নোনা রক্ত খেতে? এমনও দিন দেখার ছিলো আমার! তবে যা, তুইতো তুচ্ছ মাছি। আমি আজ ইয়াম্মী ব্যাঙাচির ঘ্রাণে মাতোয়ারা পেটুক।

শাসকীয় রাগে ক্ষীপ্ততায় রাজহাঁসের লম্বা গ্রীবার জ্বলে ওঠে হিরোশিমার অনল। প্যাক প্যাক শব্দে প্রথমে ডান পরে বাম, আবার ডান পরে বাম পায়ে মিলিটারি তকমায় এগিয়ে যায় সামনের ধানক্ষেতে, ইয়াম্মী ব্যাঙাচিদের দিকে। ঝপাস! শব্দে অস্থির হয়ে ধানশিষে সবে একটিমাত্র কামড় দেয়া ফিচকেটি উড়ে গিয়ে বসে মরা কঞ্চিতে। এখানে শোষিতরাও শোষণ করা শিখেছে শোষণকারীদের থেকে!

গোগ্রাসে গলাধঃকরণ করা রাজহাঁসের খাদ্যনালীতে অর্ধমৃত ব্যাঙাচিগুলির নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। আর কিছুক্ষণ পরেই তারা রাজহাঁসটির রক্তকণিকায় শক্তির যোগান দেবে একথা ভাবতেই তার ডানাগুলি খুশিতে আবেগাপ্লুত হয়ে আবার ফট ফট শব্দ করে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়। অতিশোষনে সে নিজেও ইবলিশের রুপ ধারণ করেছে আজ!

তৃপ্তির ঢেকুর তুলে লম্বা দম নেয় রাজহাঁসটি। জলের নীচে তার লম্বা গ্রীবাদেশ খুঁজে ফিরছে ব্যাঙাচির জন্মদাত্রীকে। নিজের শান্তির পলেস্তারায় দাগ লাগিয়ে যারা তাকে শোষক বানিয়েছে সে রাক্ষুসে রক্তলোভীদের ছবি ভেসে ওঠে মনে। অবশেষে বড় ব্যাঙটাকে দেখতে পেয়েছে সে। রাগে বিক্ষুব্ধচিত্তে স্পীডোমিটারে দুইশত মাইল বেগে ঠোঁটদুটোকে হা মেলে ছুটে যায় সেদিকে।

পানিতে বিশালাকার পাখনা দাপটানোর ঝপাৎ ঝপাৎ শব্দে ভয় পেয়েছে আশেপাশের সব জলজেরা। একটু দূরে ব্যাঙটি ডুবুডুবু চোখে তাকিয়ে আছে মরণ ফাঁদে আটকেপড়া রাজহাঁসটির দিকে। জীবন সায়াহ্নের শেষ বুঝি আজ হলো তবে! শোষকের লোভনীয়তা ধারণ করে নিজে শাষক সাজতে গিয়ে অকালেই শোষকের ফাঁদে আটকা পড়েছে সে।

জলেভেজা চোখদুটি বন্ধ হয়ে এসেছে রাজিহাঁসটির। জন্ম থেকে মৃত্যু, শুভ্র সফেদ থেকে কুঁচকুঁচে অন্ধকার গহ্বর, শোষিত থেকে শোষণ, শোষক থেকে শাসক সব মনে পড়ছে তার। ধীরে ধীরে চিরনিদ্রায় তলিয়ে যাচ্ছে রাজহাঁসটি। তার বিরক্তিকর প্যাক প্যাক শব্দের বিমর্ষতার আর সুখনিদ্রা ভঙ্গ হবেনা কোন শোষকের।

বোকা রাজহাঁস! শোষণকারীরা কখনওই তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে বাঁচতে দেয়না- জীবনে এই শিক্ষা সে পেয়েও ধারণ করতে পারেনি। হায়! এসব জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা আর কোনো রাজহাঁসকে বলার জন্য বেচারা বেঁচে রইলোনা আর।

0 Shares

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ