একটি ফিল্মি স্টাইলে ছ্যাকা কাহিনী

দিলরুবা মুন ২৮ অক্টোবর ২০১৩, সোমবার, ১১:২৭:৩২অপরাহ্ন বিবিধ ২০ মন্তব্য

তখন আমি ঢাকায় প্রথম, হোস্টেলের রুমমেটদের সাথে সবে টুক টাক বন্ধুত্ব করছি...
একদিন বাইরে থেকে রুমে এসে দেখি বীথি নামের এক রুমমেট হাপুস নয়নে কাঁদতেসে...
কি হল জিজ্ঞেস করে একটা আধা-স্টোরি শুনলাম...এক প্লে-বয়ের খপ্পরে পড়ে, ছ্যাকা খাইয়া কান্তাসে, খোঁজ নিতে গিয়া জানতে পারসে ওই পোলার কাজই এইটা, মজা নেয়া... প্রথমে একটা গাইল দিলাম, "শালী, এই খোঁজটা আগে নিতে পারলি না? ফোন লাগা, আমি কথা কমু"
বীথির নাম্বার থেকে ফোন করে দেখি ওয়েলকাম টিউন দেয়া,
“বালিকা তোমার প্রেমের পদ্ম দিওনা এমন জনকে,
যে ফুলে ফুলে উড়ে মধুপান করে অবশেষে ভাঙ্গে মনকে”
পরের বার ফোন দিয়া বুঝলাম উহা এখন রিজেক্ত লিস্টে,
পোলা তো দেখি ওভারস্মার্ট, মেজাজ-ই খারাপ হয়ে গেসে...

মেয়েটারে প্রথমে শান্তভাবে জিগ্যেস করলাম, "বদলা নিবি?"
সে হেঁচকি তুলতে তুলতে বলে, "কি রকম?"
“ নিবি কিনা বল" বললাম আমি...
কান্নার মাঝখানেও ফিক করে হেসে দিলো...
ধরে সোজা করে বসালাম, বললাম, "নো কান্নাকাটি, যা যা জানতে চাইবো সোজাসাপটা উত্তর দিবি"
আমার সাথে ছিল আরও দুইটা রুমমেট, ইতি আর এশা, একের পর এক প্রশ্ন করলাম, সব ডিটেইল শুনলাম, অভ্যাস-বদভ্যাস, পছন্দ-অপছন্দ, কাজ করার ধরন, খাওয়ার স্টাইল থেকে শুরু করে খুঁটিনাটি যতটুকু সে জানতো...
প্রশ্ন করলাম, "কোন ক্লোজ ফ্রেন্ডের নাম্বার আছে?",
"রুমমেটের নাম্বার আছে, নাম শাওন"
"শাবাশ"
তারপর একদিন ঠিক করলাম আমাদের মিশন ডেট...
ইতিকে ধরিয়ে দিলাম রুমমেটের নাম্বার, ওদিকের প্রতিক্রিয়া জানতে হবে তো!
অন্যসময় ফোনের প্যাচালগুলো সুমি হ্যান্ডেল করে, কিন্তু সে লক্ষ্মীপুরে আমি ঢাকায়, তাছাড়া এখন এটা আমার নতুন সার্কেল...
ফোন করলাম আমার নাম্বার থেকেই... রিসিভ করার পর হ্যালোর আর টাইম দেই নাই, কোন এক কাল্পনিক ক্লাসমেট কে উদ্দেশ্য করে ননস্টপ ঝাড়ি...
অনেকক্ষণ পর ওই পাশের কথা শোনার পর গলায় যতটুকু সম্ভব মধু ঢেলে "সরি" এবং সাথে ভুলের কারন ব্যাখ্যা...

তার দুই/তিন দিন কিসসু করি নাই, মিস কলও না, জানতাম সে নিজেই ফোন করবে,
ফোনে সপ্তাখানেক সেরাম প্রেম করলাম...
অন্য এক রুমমেটের ইনফর্মেশন (মেডিকেল+ফ্যামেলি) আমার ইনফর্মেশন বলে চালিয়ে দিলাম, তবে কিছুটা ঘুরিয়ে, হোস্টেলকে বানালাম বাসা...
ইতি আর আমি দুজনেই ফোন রাখার পর আলোচনায় বসতাম...

এক সপ্তাহ পর ডিনারে ইনভাইট করলো, বললাম আম্মু বেরতে দেবে না, কিছু একটা বুদ্ধি দাও...
তারপর সেই বলল কোন ফ্রেন্ড কে নিয়ে বেরোও, বলো বার্থডে পার্টিতে যাচ্ছ...

ঠিক করলাম এশা যাবে আমার সাথে...
আমি একা যেতে আসলেই ভয় পাচ্ছিলাম, কলেজ আর গানের স্কুল(বাফা)ছাড়া কিচ্ছু চিনিনা, অন্যদিকে এশা সব চিনে, চটপটে আর তার সাহসও দুর্দান্ত...
বীথিকে বললাম, তোর এক্স রে ফতুর বানাইতে চললাম...
বীথি বলল, লাভ নাই, সে অনেক খরচ করে, প্রিপারেশান নিয়েই আসবে...
বিকেলে সবাই মিলে রেডি করল আমাকে, যেন কোন ত্রুটি না থাকে...
আমি আর এশা ধানমণ্ডির একটা জায়গায় এসে ওয়েট করছি, মিঃ প্লেবয়ের ফোন এলো, "এই, তুমি নেভি ব্লু ফতুয়া পরেছ না??"
"হুম, কিন্তু জনাব, আপনি কই?"
"এইতো তোমার একদম সামনে!" বলেই কোত্থেকে ভুস করে সামনে চলে এলো...
ওরে কি হাসি...
এশার সাথে আগেই সব ঠিক করা ছিল, আমি প্রেমিক সামলাবো, আর সে খরচ
পোলার সম্পর্কে যতটা শুনেছিলাম, ততটা চটপটে মনে হলনা, তাকে দেখে মনে হল কোন কারনে ভ্যাবাচ্যাকা খাইসে...
দু'জনে আবদার করলাম একটা বড় রেস্টুরেন্টে খাবার জন্য, আমতা আমতা করে রাজি হয়ে গেলো,
গিয়েই এশা শুরু করলো, "জানো ভাইয়া, তোমার সাথে দ্যাখা করার জন্য আপু টেনশানে দুপুরে খেতেইইই পারেনি, আরেকটুর জন্য অ্যান্টির কাছে ধরাই খেয়ে যাচ্ছিলাম"
আমিও মাথা নেড়ে সায় দিলাম...
খাবার অর্ডার দিলো এশা, কি অর্ডার দিলো ভাই সাহেব খেয়ালই করেননি, তাকে মিষ্টি মিষ্টি কথায় ব্যাস্ত রেখেছিলাম যে!
প্রত্যেকের জন্য দুইটা করে ডিস অর্ডার দিলো, সাথে ছোট খাট আরও কিছু আইটেম...
খাবার খাওয়ার মাঝখানে এশার কান্নাকাটি... আমি চিকেন ফ্রাই খাবো, আমাকে কারী দিসে কেন!
তার জন্য আলাদা করে অর্ডার দিলাম আবার... ছেলেটা ঘামছিল রীতিমত, বলল, একটা ফোন করে আসছি, ওয়েট...
তারপর, কিছুক্ষণ পর আবার বাইরে গেলো, এবার একটু দেরী হলো ফিরতে,
যাই হোক, আমরা হাসিখুশি খাবার খেলাম একটু আধটু, বাকিটা পার্সেল...

বিদায়ক্ষণ, জিগ্যেস করলো কীভাবে যাবো, বললাম ক্যানো রিকশায়!
বলল, আমি এগিয়ে দিয়ে আসবো...
ঝট করে এশা বলল, “না না আমরা যেতে পারবো!”
আমি বললাম, “আসুক না! কি হবে?”
“তাহলে সিএনজি নেবো” বলল এশা...
তাকে যাবনা বলার কোন সুযোগই দেই নি!

রাত প্রায় সাড়ে নয়টা... ধানমণ্ডি থেকে আজিমপুর দিব্যি রিকশায় চলে যাওয়া যেতো...
রাস্তায় হঠাৎ এশার চীৎকার, আপু আমি বেল খাবো...
বেচারা সিএনজি থামিয়ে এক ডজন বেল কিনল, আর এশার হাতে দিলো...
আমরা একটা সুন্দর বাসার সামনে নামলাম, হাত নেড়ে বিদায় দিয়ে বাউন্ডারির ভিতর গিয়ে ঘাপটি মেরে থাকলাম সে চলে যাওয়া পর্যন্ত... (ভাগ্যিস দারোয়ান ছিল না)
আধাঘণ্টা ঘাপটি মেরে থেকে পড়ে রিকশা নিয়ে আমরা চলে এলাম হোস্টেলে, হোস্টেলের এন্ট্রি সন্ধ্যা ছয়টায় শেষ... ইতি আর বীথির সাহায্যে চুরি করে ঢুকলাম...
এসেই ইতিকে ধরলাম, “কোন নিউজ আছে?”
ইতি বলল, “নিউজ মানে, হেব্বি এক্ষান নিউজ! তোমরা খাবার অর্ডার দেয়ার পর শাওনকে ফোন করে ডাকসে টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য, শুভ’র পকেটে বিল দেবার মত টাকা ছিল না, এতো কি অর্ডার দিসিলা আপু?”
“বলতেসি, আগে কথা শেষ কর”
“হুম, শুভ’র পকেট মানি সব ফিনিশ, সে নাকি মন খারাপ করে বসে আছে”
“তারপর?”
“সে নাকি কনফিউজড, এসেই বলসিল, কি হইলো কিছুই বুঝলাম না, কিন্তু মেয়েটারে ভালোই লাগসিল”
“ওয়াও, এবার জমবে মজা...”
একটু ওয়েট করে ফোন দিলাম, ফোন ধরার পর-পরই ফর ফর করে বলতে শুরু করলো, “শোন, তোমার এই ফ্রেন্ডরে আর কখনো নিয়া আসবানা...”
ফোনে দেয়া ছিল লাউড স্পীকার... আমরা সবাই তো হাসতে হাসতে শেষ...
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “এটা কি হল?”
“ছ্যাঁকা” বললাম আমি... “মন দিয়ে শোন, আমি বীথির ফ্রেন্ড, বীথিকে চিনিস তো?”
“এগুলো তাহলে বীথির প্ল্যান ছিল?”
“না, আমার। মেয়েটা তোকে ভালোবাসতো, সত্যি ভালোবাসতো... তোর কাছে ভালোবাসার মূল্য নেই তাই তোকে বোঝানোর জন্য তোর পকেট খসিয়েছি... আজ টাকার উপর দিয়ে গেলো বলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচার কিছু নেই, কারন অন্য কেউ আমার মতো দয়া নাও করতে পারে...”
ফোনটা কেটে দিয়েই বীথিকে জিগ্যেস করলাম, “খুশী??”
মুচকি হেসে বীথি বলল, “একটা থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করছে”

জানতাম আবার ফোন আসবে, সম্পর্ক যত হাল্কাই হোক, ভেঙ্গে গেলে খারাপ লাগে, এবং যদি সে ক্ষেত্রে তাকে ছেড়ে যাওয়া হয়...
অনেকক্ষণ পর ফোন এলো, সরি বলার জন্য...
কিন্তু ফোনটা কেউ ধরল না...
কারন, শুভ এখন ওয়েলকাম টিউন শুনছে...
“হও হুঁশিয়ার মনের দুয়ারে নজর রাখো খুব,
চোখের ফাঁকিতে, মুখের হাসিতে হয়ো না উৎসুক!
.....পুড়ে যাবে সব সুখ”

আমরা হোস্টেলের প্রায় ৯জন মিলে একটা জম্পেশ ডিনার করলাম...
হোস্টেলের রান্না ফেরত দিয়ে বললাম, রান্না ভালো না হলে আমরা খাবনা... বয়কট!
তারপর...
থাক না !
সে গল্প না হয় আরেকদিন করবো...

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

  • দিলরুবা মুন-এর শপথ পোস্টে
  • দিলরুবা মুন-এর শপথ পোস্টে
  • দিলরুবা মুন-এর শপথ পোস্টে
  • দিলরুবা মুন-এর শপথ পোস্টে
  • দিলরুবা মুন-এর শপথ পোস্টে

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ