একটি প্রতারণা ও একটি সততার গল্প

নীরা সাদীয়া ৪ জানুয়ারি ২০২১, সোমবার, ০৯:৩২:৫১অপরাহ্ন অণুগল্প ১৬ মন্তব্য

১.

আমি তখন অনেক ছোট, বয়স পাঁচ কি ছয় বছর হবে। গ্রামের বাড়িতে থাকতাম। অবাধ স্বাধীনতা, বাঁধভাঙা আনন্দ আর গাছের সবুজ পাতার মতই সজীব মন নিয়ে বেড়ে উঠছিলাম। গ্রামেরই একটি সমবয়সী ছেলের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সারাদিন তার সাথে খেলাধূলা অতপর কোনদিন তার বাসায় খাওয়া তো কোনদিন আমার নিজের বাসায় দুজন মিলে খাওয়া। ছেলে আর মেয়েতে কোন বিভেদ বোঝার বয়স তখন আমার হয়নি। তাছাড়াও চিরকালই আমার বুদ্ধি সুদ্ধি একটু কম। যাই হোক, একদিন খেলতে গিয়ে দেখি ছেলেটি কোথা থেকে যেন একটি টায়ার নিয়ে এসেছে। আমি তখন দক্ষিণ ঘরের দাদুর বাড়ির পেছনের লিচু গাছে বসা। টায়ারের মত একটা অদ্ভুত নতুন জিনিস চোখে পড়ায় আমি তরিঘরি করে গাছ থেকে নেমে এলাম। এসে জিজ্ঞেস করলাম,

 

: এটা কি?

: এটা টায়ার।

এটার পেছনে লাঠি দিয়ে বারি দিয়ে কিভাবে দৌড়াতে হয় তা সে আমাকে বুঝিয়ে দিল।আমি সেই টায়ার দেখে মহা অবাক! আমারতো এমন খেলনা নেই৷আছে শুধু কয়েকটা পুতুল আর হাঁড়ি পাতিল। এবার আমার এটাও চাই! ছেলেটাকে বললাম...

 

: তোমার খেলনাটা আমাকে দেবে? একটু পরেই দিয়ে দিব। আমার পুতুলটাও তোমায় খেলতে দেব।

: ঠিকাছে টায়ার দেব। কিন্তু আমার পুতুল চাই না। তোমাদের ঘর থেকে যদি একটা জিলাপি এনে দাও, তাহলেই হবে।

: আচ্ছা, নিয়ে আসছি। জিলাপি খেয়ে আমরা টায়ার খেলব।

 

ছেলেটি সম্মতিসূচক ভঙ্গিতে মাথা নাড়লে আমি তাকে জিলাপি এনে দিলাম। জিলাপি খেয়ে টায়ার হাতে নিয়ে ছেলেটি দিল ভোঁ দৌড়! আমি তো অবাক! জীবনের এই প্রথম প্রতারণা নামক বিষয়টার সাথে আমি পরিচিত হলাম, যদিও বিষয়টার নাম যে প্রতারণা তা জেনেছিলাম আরও বহুকাল পর। ততদিন নাম না জানা এক অনুভূতি আমার মনকে বিষিয়ে তুলতো।

 

এর কিছুদিন পর পরিবারের সাথে  ঢাকায় চলে গেলাম। ভুলে গেলাম টায়ারের গল্প। কিন্তু যখনই নতুন কেউ আমাকে ঠকাতো, তখনি চোখে ভেসে আসতো সেই টায়ার...

 

২.

আমার বাসা পলিটেকনিক মোড়, ময়মনসিংহ।ফলে প্রায়দিনই সৈয়দ নজরুল কলেজের সামনে থেকে অটোতে উঠি, টেকনিকেল মোড়ে এসে নামি। আমি জানি এতটুকুর ভাড়া ১০ টাকা, কিন্তু কিছু চালক খুব ঝামেলা করে আরও পাঁচ টাকা আদায় করে। তাই ঝামেলা এড়াতে সর্বদা ১৫ টাকা দিয়ে দেই। ফলে ভাড়া যে মূলত ১০ টাকা তা আমি ভুলেই গেছিলাম।  একদিন আমার কাছে পাঁচ টাকা ভাংতি না থাকায় অটোমামাকে ২০ টাকার নোট দেই। তিনি আমাকে ১০ টাকা ফেরত দেন। আমি বললাম,

 

"ভাড়াতো ১৫ টাকা। আপনি ৫ টাকা ফেরত দেবেন।"

তিনি বললেন,

"ভাড়া ১০ টাকাই মামা।"

 

এবারও আমি তাঁর সততা দেখে মুগ্ধ হয়ে অটোর চলে যাওয়ার পথে চেয়ে রইলাম।

 

একটা ছোট্ট জীবনে যা শিখলাম তা হলো,

বেশিরভাগ মানুষ প্রতারক হলেও, দু/একজন সৎ মানুষ কোথাও না কোথাও থাকে। যদিও তাঁদের দেখা পাওয়া দুঃসাধ্য।

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ