একটি চিঠি এবং

শুভ্র রফিক ১ মার্চ ২০১৬, মঙ্গলবার, ০৩:০২:৫৭পূর্বাহ্ন গল্প ১৫ মন্তব্য

আমি তখন নবম শ্রেণির ছাত্র।সবে গোফ গজাতে শুরু করেছে।কাজেই মনের মধ্যেও নানা ধরণের বাজে চিন্তা বিরাজ করে।আমাদের ক্লাসে সবচে সুন্দরী মেয়ের নামে অনেক কাটাকাটি করে প্রেম পত্র দাঁড় করালাম।অনেক সাহস বুকে সঞ্চয় করে মেয়েটিকে চিঠিটা দিয়েও দিলাম।কিন্তু সুন্দরীরা যে এত পাষাণ হতে পারে তা আমার জানা ছিল না।শুনেছিলাম রাবনের বোন সুর্পনখা যখন লক্ষণ কে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল,তখন নাকি লক্ষণ তাকে অপমান করেছিল।শুধু অপমান নয়,মহা অপমান।লক্ষণ সুর্পনখার নাক কেটে দিয়েছিল।কান কেটে দিয়েছিল।আমার মনে হয় সেই কথা সুন্দরীর জানা ছিল।তাই সে চিঠি পাওয়ার পরে যা করেছিল, তাতে আজও লজ্জায় আমার মাথা হেট হয়ে যায়।সুন্দরী পরের দিন ক্লাসে এসে মিজান স্যারের কাছে নালিশ দেয়।মিজান স্যার ছিলেন অত্যধিক রাগী।তিনি অতি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের এমন ভাবে পিটাতেন যে তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না।মিজান স্যার আমাকে বললেন ছুটির পরে যেন উনার সাথে দেখা করি।স্যারের কথা শুনে আমার মুখ শুকিয়ে গেল।মুরব্বিরা বলেন,বিপদ কালে দোয়া ইউনুস ভাল উপকার দেয়।আমি দোয়া ইউনুস পড়া শুরু করে দিলাম।মনে মনে বললাম,হে আল্লাহ বিপদ থেকে তুমি আমারে রক্ষা কর।আর জীবনে প্রেম করব না।প্রয়োজনে সারা জীবন ব্যাচলার থাকব।কিন্তু মনে হয় আমার কথা আল্লাহর কাছে পৌঁছল না।স্কুল ছুটি হয়ে গেল।কিন্তু আমাদের নবম শ্রেণির ছুটি হলনা।

মিজান স্যার চেয়ারে বসে দুলছেন আর এদিকে আমার সমস্ত শরীর দুলছে।সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি বিরামহীন ভাবে দোয়া ইউনুস পড়ে যাচ্ছি।

স্যার পকেট থেকে চিঠি বের করে আমার কাছে দিয়ে বললেন,চিঠিটা তুই জোড়ে জোড়ে পড়।আমি চিঠি না নিয়ে পট করে স্যারের পা জড়িয়ে ধরলাম।স্যার আমাকে মাফ করে দেন।আমার অন্যায় হয়ে গেছে।

দোয়া ইউনুসের কারণেই হোক আর অন্য কোন কারণেই হোক স্যার নরম হলেন।আমাকে বললেন,তুই বহুত বড় ত্যাদড়।এত সহজে তোকে ছাড়া যাবেনা।তুই গিয়ে ওর পায়ে ধরে মাফ চা।আমার মাথা ঘুরতে লাগল।এত গুলো ছাত্র/ছাত্রীর ভিতর ক্লাস মেটের পা ধরে মাফ চাব?এর চেয়ে কি মরে যাওয়া অনেক ভাল না?বাংলায় একটা প্রবাদ আছে,অপমানের চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়।আমার মনে হয় যিনি এই প্রবাদ বানিয়েছিলেন,তিনি হয়ত আমার মত পরিস্থিতেই এভাবে প্রবাদটি বানিয়েছিলেন।

 

আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি দেখে স্যার হুঙ্কার দিয়ে বললেন,কি হল?বেত শুরু করতাম নাকিরে?

পাশে দাঁড়িয়ে ছিল আমাদের ক্লাসের ক্যাপ্টেন।সে আমাকে আস্তে আস্তে বললেন,যা গিয়ে ওর পা ধরে মাফ চেয়ে নে।নইলে অবস্থা আরো খারাপের দিকে মোড় দেবে।তখন কিন্তু তোকে মারও খেতে হবে এবং পাও ও ধরতে হবে।তারচে তুই পাও ধরে মাফ চেয়ে নে।গিয়ে মেয়েটার পা ধরে মাফ চেয়ে নিলাম।তারপর আর কিছু বলতে পারব না।মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম।

অনেক দিন গত হয়ে গেছে।সুন্দরী এস,এস,সি পাস করার আগেই বিয়ে পাস করে ফেলল।আমি পরীক্ষার পাসের জন্য উঠে পরে লাগলাম।যে করেই হোক আমার ভাল একটা রেজাল্ট করতেই হবে।

ক্লাসে কারো সাথে তেমন মিশিনা।মাথা নিচু করে স্কুলে যাই।মাথা নিচু করে বাড়ি ফিরি।কিন্তু প্রতিক্ষণে সেই শাস্তির কথা মনে পরে।

এস,এস,সি পাস করলাম।রেজাল্ট ভাল।আমিই একমাত্র ছাত্র যে লেটার সহ স্টার মার্কস পেয়েছি।শিক্ষক অভিভাবক সহ সবাই খুব খুশি।আমি নিজেও খুশি।তবে মাঝে মধ্যেই সেই সুন্দরীর স্মৃতি মনে পড়ে।

 

আমি শহরের নামি কলেজে ভর্তি হলাম।মেসে থেকে পড়ি।হঠাত হঠাত বাড়ি যাওয়া পরে।একদিন বাড়ি গিয়ে বিকেল বেলা রাস্তা দিয়ে হাঁটছি।দেখা হয়ে গেল এক ক্লাসমেটের সাথে।আমাকে সেইই বলল,সুন্দরীর কথা কি কিছু জানিস?আমি চুপ করে রইলাম।সে বলল সুন্দরী বাপের বাড়িতে চলে এসেছে।আর নাকি জামাই বাড়ি যাবে না।শুনে খুব খারাপ লাগল।যে মেয়ে রুপের এত বড়াই করত,সে চলে এল কেন?প্রশ্নটা আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুলল।কয়েকদিন পরেই চলে এলাম শহরে।বিকাল বেলা কোচিং করতে যাচ্ছি।পথে দেখা হয়ে গেল সুন্দরীর সাথে।আমি চলেই যাচ্ছিলাম।সুন্দরী আমাকে ডাকদিল।আমি ফিরে তাকালাম।সুন্দ্রীর আগের জৌলুস নেই।

 

চোখের নিচে কালি জমেছে।বুঝলাম ঘুম নেই তার।আমাকে বলল,তুই বুঝি এখনো আমার উপর রেগে আছিস?

আমি মাথা নিচু করেই বললাম যাস কই?

সুন্দরী বলল সে এসেছে ডাক্টার দেখাতে।আমি ওর সাথে দু একটা কথা বলে চলে গেলাম।

তারপর জীবনের অনেক খানি পথ পাড়ি দিয়ে এই বয়সে অবর্তীণ্য হয়ে বুঝতে পারলাম যে সুন্দরি মেয়েরা এক্কটু বেশিই হৃদয়হীনা হয়ে থাকে।

(সংক্ষিপ্ত)

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ