একজন মানুষ হয়ে বাঁচি

রিমি রুম্মান ৮ জানুয়ারি ২০১৪, বুধবার, ০৯:৫০:৫৯পূর্বাহ্ন বিবিধ ২০ মন্তব্য

একই পাড়ায় থাকা এবং পাশাপাশি বাসা হওয়ার সুবাদে আমরা দু'জন বান্ধবী।আবার, এক সঙ্গে শিল্পকলা একাডেমীর রতন'দা এর কাছে গীটার শিখতাম। ওর মেজদি'র কাছে আমি গানও শিখেছিলাম বেশ কিছুদিন। এমনি করে আমাদের অনেক সুন্দর স্মৃতি। ওর নাম শিখা।

 

যখন পাসপোর্ট, ভিসা, এম্বেসি, এয়ার টিকেট... সব মিলে আমার ব্যস্ততা, তখন কিছুটা অর্থ সংকটে পড়েছিলাম। শিখা'র পরিবার আমাকে সহযোগিতা করতে চাইলো। মেজদিদির বিয়ের জন্য যে গহনা রেখেছিল, তার অংশবিশেষ বিক্রি করে তারা আমার সমস্যার সমাধান করার আগ্রহ ব্যক্ত করলো। আমি আবেগে আপ্লুত হলাম। চোখে মুখে কৃতজ্ঞতা। সে রাতে আনন্দে ঘুম হলনা। যদিও শেষ পর্যন্ত সে সাহায্য নিতে হয়নি, তবুও এমন মানসিকতা ক'জনারই বা থাকে!!

 

অবশেষে, এক এপ্রিলে আমার ফ্লাইট। ছেড়ে যাবো আমার শহর, আমার স্বজন। বিষণ্ণ মন। পরিবারটি দাওয়াত করল আমাকে। অতিথি আমি একজনই। ফ্লোরে শীতল পাটিতে খেতে বসেছি। ছোট ছোট কাঁসার বাটিগুলোয় হরেক রকম আইটেম। শুধুই আমার জন্যে এত আয়োজন__!!  ওরা তরকারিতে পেঁয়াজ খায় না, শুধুই আমার জন্য সব আইটেম পেঁয়াজ দিয়ে রান্না করেছে__ জানালো। আমি আবারো আপ্লুত হলাম। এতোটুকুন আমাকে এত ভালবাসা__!!

 

৫ বছর পর দেশে গেলাম যখন... ততদিনে শিখা চট্টগ্রামে স্বামীর সংসারে। অনেক কষ্ট করে শাঁখারি বাজারের বাড়িটি খুঁজে বের করলাম। ভীষণ সারপ্রাইজড হল। আবেগে আপ্লুত দু'জনই। চোখে জল। কেন জল_! অন্তর্যামী জানেন।

 

এক যুগ পর আবারও চোখে জল। আজ শুধু আমার অন্তর্যামীই নন, আমিও জানি কেন এই জল। অল্প কিছু সংখ্যক খারাপ মানুষের বীভৎস হিংসার শিকার ওরা... অমুসলিম বলে। বিশাল অংশ আজ জিম্মি ছোট অংশের কাছে। আমার আর ওই জড় বস্তুর মাঝে কোন তফাৎ খুঁজে পাইনা। নিরীহ জড় বস্তুর যেমন কিছু করার নেই, তেমনি আমারও। সংখ্যা লঘিষ্ঠ আর সংখ্যা গরিষ্ঠ দিয়ে মানুষকে বিচার করা তো শিখিনি আমরা। মাথা উঁচু করে আর যে দাঁড়াবার সাহস নেই ওদের সামনে। খুব জানবার সাধ হয়, কেমন আছে শিখা সাহা, শিল্পী দি, মাসীমা... ওরা সবাই।

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ