সমাজতন্তের প্রবক্তা দার্শনিক কাল মার্কস । বিশ্বব্যাপী তিনি যে বিপ্লব ঘটিয়েছেন, সেটি পৃথিবীর ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। কাল মার্কস  চেয়েছিলেন শ্রেণীহীন বিশ্ব, যে বিশ্বে ধনী ও গরিবের মধ্যে কোনো ব্যবধান থাকবে না। অনেক পরিবর্তন ঘটেছে, কিছু নতুন দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, কিছু পুরনো দ্বন্দ্ব মুছে গেছে; তবু বদলায়নি খেটে খাওয়া জনতার বিপ্লবী কামনা। এঙ্গেলসর সাথে মিলে মার্কস গভীর ভাবে ধ্রুপদী জার্মান দর্শন, বিলিতি চিরায়ত অর্থশাস্ত্র এবং ফরাসি কল্পাস্বর্গী সমাজবাদের মূল নীতিগুলো অধ্যয়ন করেন এবং গড়ে তোলেন বৈজ্ঞানিক সমাজতান্ত্রিক মতবাদ । যা পরবর্তীতে মার্কসবাদ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। আজ ৫ই মে এই মহান ব্যক্তির জন্মদিন  বাংলদেশে যখন মার্কস সংবাদমাধ্যমে অনুচ্চারিত, তখন ইউরোপে ক্যাপিটাল-রচয়িতা কার্ল মার্কস-কে নিয়ে নতুন করে ভাবনা-চিন্তা চলছে। তারুণ্য চে গুয়েভারার টি-শার্ট আর জিন্স পরে বটে, চে’র আদর্শ বা জীবন বিষয়ে জানে না। জানলে চে’র নামে আইসক্রীম বা পণ্য বিক্রয়ের কথিত ‘ফানে’ মজতে পারত না। চে গুয়েভারার সংগ্রাম বা জীবনবোধ বাদ দিয়ে তাঁকে ভিন্ন ধরনের আইকনে পরিণত করেছে পুঁজিবাদ। তরুণ-তরুণীদের  অনেকেই জানে না চের সংগ্রাম ও আদর্শের লক্ষ্য ছিল সাম্যবাদ। সমাজতন্ত । আমেরিকা তথা পুঁজিবাদের কৌশলই হচ্ছে লক্ষ্যহীনতার ভেতর দিয়ে আনন্দ বা বিনোদনের নামে পথভ্রষ্ট করে তোলা।‘পুঁজিবাদ ভূত দেখেছে, কমিউনিজমের ভূত’ মহান কাল মার্কস বহু আগে এই অমর উক্তিটি করেছিলেন। এখনো দেশে দেশে শোষক, সাম্রাজ্যবাদ, মুনাফালোভী, চাটুকার এবং সুবিধাবাদীদের জন্য কমিউনিজম আতঙ্ক এবং বিভীষিকার নাম। । কিন্তু এখনো কমিউনিজম সততা, আদর্শবাদিতা এবং গরিবে মানুষের অধিকারের প্রতীক আর পুঁজিবাদ হলো সুবিধাবাদ মানুষকে বঞ্চিত ও শোষণ করার প্রতীক। কমিউনিজমের বিরুদ্ধে পুঁজিবাদের শত অপপ্রচারের পরও এখনো একজন কমিউনিস্ট মানেই একজন আদর্শবান ব্যক্তি, একজন মুক্ত মনের সৎ মানুষ। একজন ভালো মানুষ। কমিউনিস্টদের বাংলাদেশেও প্রতিক্রিয়াশীল, মতলববাজরা নানারকম কুৎসা ছড়িয়েছে, গালাগালি করেছে। কিন্তু তারপরও কমিউনিস্টরা তাদের আচরণ এবং নিরন্তর কর্মধারায় সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধার আসনে আসীন। তাই সমাজে এখনো কমিউনিস্ট মানেই সৎ, নির্লোভ এবং বিবেকবান মানুষ ।

 

কাল মার্কসসংক্ষিপ্ত জীবনী :

 

১৮১৮ সালের ৫ই মে তৎকালীন প্রাশিয়ার ত্রিভস (ত্রিয়ের) শহরেকার্ল মার্কস জন্মগ্রহণ করেন। মার্কসরা ছিলেন সমৃদ্ধশালী এবং সংস্কৃতিবান। তাঁর বাবা হার্শেল মার্কস পেশায় ছিলেন একজন অ্যাডভোকেট। শুরুতে ইহুদি ধর্মাবলম্বী হলেও, বিভিন্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক কারণে তিনি সন্তান জন্মাবার আগেই প্রটেস্টান্ট (খ্রিষ্ট) ধর্মে দীক্ষিত হন। ছোট থেকেই কার্ল মার্কস ভালো ছাত্র ছিলেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন স্বভাব কবি। প্রেমিকা জেনি ভন ভেস্তফালেন-কে নিয়ে লেখা প্রেমের কবিতাগুলো পড়লে আজও অনুভব করা যায় সেদিনের সেই passion! হ্যাঁ, দেড়-শতাধিক কাল পেড়িয়ে যাওয়ার পরেও! বন ও বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন, দর্শন এবং ইতিহাসের পাঠ সমাপ্ত করে মার্কস যোগ দেন রাইনল্যান্ডের র‍্যাডিকাল যুবকদের দ্বারা পরিচালিত ‘রাইন অঞ্চলের সংবাদপত্র’ নামক পত্রিকায়। ১৮৪২ সালের অক্টোবর মাসে তিনি এর সম্পাদক হন। সম্পাদক হিসাবে যোগ দেয়ার পর থেকেই মার্কস-এর ক্ষুরধার লেখনীর জোড়ে কাগজের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর ফলে সরকার বাহাদুর যারপরনাই বিরক্ত হন। কয়েক মাসের মধ্যেই কাগজের অফিসে তালা পড়ে যায়। এই সময় মার্কস অর্থশাস্ত্রের প্রতি  আকৃষ্ট হন এবং তার পাঠ নেয়া শুরু করেন। ১৮৪৩ সালের ১৯-এ জুন জেনির সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হন কার্ল। জেনি ছিলেন একজন বিখ্যাত ব্যারনের কন্যা। এর পর তাঁরা চলে আসেন প্যারিস-এ। প্যারিস থেকেই শুরু হয় অপরিসীম দারিদ্র্য ও ইউরোপীয় রাষ্ট্রশক্তির প্রবল বাধার মুখে দাঁড়িয়ে তাঁদের লড়াই, যা জীবনের শেষ দিন অবধি ছিল তাঁদের নিত্যসঙ্গী। এই সংগ্রামে মার্কস এবং জেনির পাসে এসে দাঁড়ান তাঁদের অকৃত্রিম বন্ধু কমরেড ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস। ১৮৪৫ সালে প্রাশিয়ান সরকারের বদমায়েশির ফলে মার্কস-কে তাঁর পরিবার-সমেত প্যারিস থেকে নির্বাসিত করা হয়। তাঁরা চলে যান ব্রাসেলস-এ। ১৮৪৭ সালে মার্কস এবং এঙ্গেলস যোগ দেন কম্যুনিস্ট লিগ-এ। সেই বছরের নভেম্বর মাসে লিগের দ্বিতীয় সাধারণ সম্মেলনে ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের সঙ্গে কার্ল মার্কস যৌথভাবে রচনা করেন শ্রমিক শ্রেণীর অমোঘহাতিয়ার ‘কম্যুনিস্ট ইস্তাহার’। এতে তাঁরা দেখান যে ‘রাজনৈতিক ক্ষমতা হচ্ছে অপর এক শ্রেণীকে দমন করার জন্য এক শ্রেণীর হাতে সংগঠিত ক্ষমতা’। ১৮৪৮ সালে প্রকাশিত এই ছোট্ট পুস্তিকা গোটা ইউরোপ-এ আলোড়ন তোলে। ১৮৪৮ সালে জার্মানি এবং অস্ট্রিয়াতে বুর্জোয়া বিপ্লব শুরু হলে মার্কস-কে বেলজিয়াম থেকে বিতাড়িত করা হয়। সেখান থেকে প্যারিসের বুর্জোয়া বিপ্লবের ঝড় ঝাপটা পেড়িয়ে সপরিবারে মার্কস পৌঁছান জার্মানির কোলোন শহরে। সেখানে তিনি ‘রাইন অঞ্চলের নতুন সংবাদপত্র’ নামে একটা পত্রিকার সম্পাদনা শুরু করেন। তবে খুব বেশী দিন নয়। প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির হাতে আবার তাঁকে বেঁছে নিতে হয় নির্বাসিতের জীবন। মার্কসরা চলে যান প্যারিস-এ, সেখান থেকে আবার নির্বাসিত হয়ে লন্ডন-এ। বাকি জীবনটুকু তাঁদের সেখানেই কাটে। ১৮৬৪ সালে মার্কস এবং এঙ্গেলস তৈরি করেন শ্রমজীবী মানুষের আন্তর্জাতিক সংঘ। প্রথম আন্তর্জাতিক নামেই এই সংগঠন প্রসিদ্ধ। ১৮৭১ সালে প্রথম আন্তর্জাতিকের ফরাসি বিপ্লবীরা প্রতিষ্ঠা করেন প্যারিস কম্যুন। কম্যুনার্ডদের হঠকারী সিদ্ধান্তের সাথে মার্কস-এঙ্গেলস একমত না হলেও, তাঁরা তাকে স্বীকৃতি জানাতে ভোলেননি। যাইহোক, খুব বেশীদিন টেকেনি এই সংগঠন। ১৮৭২ সালে হেগ সম্মেলনে রুশ নৈরাজ্যবাদী নেতা বাকুনিনের সাথে মার্কস-এর প্রবল বিতর্ক হয় এবং বাকুনিন বিতাড়িত হন। বাকুনিনপন্থীদের হাত থেকে সংগঠনকে বাঁচাতে আন্তর্জাতিকের কার্যালয় স্থানান্তরিত করা হয় আমেরিকার ন্যুইয়র্ক-এ। ১৮৭৬-এর ফিলাদেলফিয়া সম্মেলনের পর প্রথম আন্তর্জাতিকের পতন ঘটে—শেষ হয় শ্রমিক আন্দোলনের এক বৈচিত্র্যময় অধ্যায়। ১৮৮৩ সালে চরম অর্থ কষ্টের মধ্যে মার্কস শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় তাঁর স্ত্রীর সমাধিস্থলের পাসে, হাইগেট গোরস্থানে। মার্কস ও জেনি মোট ছয় সন্তানের জন্ম দেন— জেনি ক্যারোলিন(১৮৪৪-১৮৮৩), জেনি লরা (১৮৪৫-১৯১১), এডগার(১৮৪৭-১৮৫৫), হেনরি এডওয়ার্ড গাই (১৮৪৯-১৮৫০), জেনিইভলিন ফ্রান্সেস (১৮৫১-১৮৫২), জেনি জুলিয়া এলিনর(১৮৫৫-১৮৯৮)। এছাড়াও আরও একটা পুত্র সন্তান তাঁদের হয়েছিল, যদিও সে পর্যাপ্ত খাদ্য না পেয়ে জন্মের এক সপ্তাহ পরেই মারা যায়। ফলে নামকরণের আর সময় হয়ে ওঠেনি!

 

গ্রন্থাবলী

 

১৮৪৮-এ প্রকাশিত ‘কম্যুনিস্ট ইস্তাহার’ ছাড়াও মার্কস বহু গুরুত্বপূর্ণ কেতাব রচনা করেছিলেন। ১৮৪৪ সালে মার্কস রচনা করেন ‘অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক খসড়া’। ঐ বছর ব্রুনো বাওয়ার-এর মতামতের সমালোচনা ক’রে তাঁর প্রবন্ধ ‘ইহুদী প্রশ্ন প্রসঙ্গে’ প্রকাশিত হয়। তার পরের বছর (১৮৪৫) তিনি লেখেন ফয়েরবাখ-এর উপর তাঁর বিখ্যাত থিসিস। সেই বছরই এঙ্গেলস-এর সাথে মিলে রচনা করেন ‘পবিত্র পরিবার’ এবং ‘জার্মান মতাদর্শ’ নামে দুটো বই। ১৮৪৭-এ প্রুধোর ‘দরিদ্রের দর্শন’ নামক ইস্তাহারের সমালোচনা ক’রে মার্কস রচনা করেন ‘দর্শনের দারিদ্র’। ঐ একই বছর প্রকাশিত হয় তাঁর ‘মজুরি শ্রম ও পুঁজি’ পুস্তিকা। ১৮৫২-তে মার্কস লেখেন ‘লুই বোনাপার্টের আঠারোই ব্রুমিয়ের’। ৫-এর দশকের শেষ থেকে মার্কস অর্থশাস্ত্র বিষয়ে বিভিন্ন বই ও পুস্তিকা রচনা করেন। ১৮৬৭-তে প্রকাশিত হয় তাঁর শ্রেষ্ঠ কাজ ‘পুঁজি’(প্রথম খণ্ড)। এখানে মার্কস পুঁজিবাদী অর্থনীতির প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাটা-ছেঁড়া ক’রে তার শোষণের দিকগুলো উন্মোচিত করেন। তবে মার্কস পুঁজি শেষ ক’রে যেতে পারেননি। মার্কস-এর পাণ্ডুলিপির থেকে বই-এর পরের দুই খণ্ড সম্পাদনা করেন এঙ্গেলস। ১৮৭১ সালে প্যারিস কম্যুন সম্পর্কে মার্কস তাঁর মতামত ব্যক্ত করেন ‘ফ্রান্স-এ গৃহযুদ্ধ’ বইতে। ১৮৭৫ সালে ল্যাসাল-এর মতাদর্শের আদলে গড়ে ওঠা কর্মসূচির সমালোচনা ক’রে তিনি লেখেন ‘গোথা কর্মসূচির সমালোচনা’। এছাড়াও মার্কস অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ পুস্তিকা এবং প্রবন্ধ রচনা করেন। তাঁর চিঠিপত্রের সংকলন এবং গাণিতিক পাণ্ডুলিপিটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতবর্ষ নিয়েও মার্কস ছিলেন অত্যুৎসাহী। ভারতের প্রথম স্বাধীনতার যুদ্ধ, ব্রিটিশ শাসনের চরিত্র ইত্যাদি নিয়ে তিনি গভীর ভাবে চর্চা করেন এবং কিছু কালজয়ী নিবন্ধ রচনা করেন। মার্কস এবং এঙ্গেলস-এর যৌথ সংগৃহীত রচনাবলীর সংখ্যা মোট ৫০।

 

মার্কসবাদের তিন উস ও উপাদান : এঙ্গেলসর সাথে মিলে মার্কস গভীর ভাবে ধ্রুপদী জার্মান দর্শন, বিলিতি চিরায়ত অর্থশাস্ত্র এবং ফরাসি কল্পাস্বর্গী সমাজবাদের মূল নীতিগুলো অধ্যয়ন করেন এবং গড়ে তোলেন বৈজ্ঞানিক সমাজতান্ত্রিক মতবাদ, যা পরবর্তীতে মার্কসবাদ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে এর মানে কখনই এমনটা নয় যে এই তিনটে বিশেষ উপাদানের মিশ্রণে মার্কসবাদ তৈরি। মার্কস জানতেন যে এই তিন আদর্শের ভিতরেও অনেক খামতি আছে। তাই তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খ অধ্যয়ন, অনুশীলন এবং বিশ্লেষণ ক’রে একেকটার ইতিবাচক দিকগুলো চিহ্নিত করেন, বিকশিত করেন এবং একটা বিশেষ পর্যায়ে এসে বিকশিত ইতিবাচক দিকগুলোর সংশ্লেষ ঘটিয়ে সৃষ্টি করেন তাঁর মতবাদ। এই মতবাদ বহুমুখী। কিন্তু আজ, এই মুহূর্তে আমরা বিশেষ কিছু দিক নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

 

দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ :

 

জার্মান চিন্তাবিদ হেগেল-এর দ্বাদ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির ভাববাদী ভ্রান্তিগুলো মার্কস শুধরে নেন এবং লুডভিগ ফয়েরবাখ-এর বস্তুবাদী ধারনার অসংগতিগুলোকে দূর করেন, এবং এদের সংশ্লেষ ঘটিয়ে সৃষ্টি করেন মার্কসবাদী মতবাদের দার্শনিক বুনিয়াদ—দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ। মার্কসীও দ্বন্দ্বমূলক মতবাদ হ’ল একটা বিশেষ ধরণের বিচারধারা যা বস্তু কণার অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বিপরীত গুণের সমন্বয় ও তার পরিমাণের কমবেশি হওয়ার ভিতর দিয়ে বস্তু কণার গতিময়তা, পরিবর্তন ও বিকাশের প্রক্রিয়াকে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে অধ্যয়ন করে এবং তার বিপরীত গুণাবলীর ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে নতুন বস্তুতে রূপান্তরের বিষয়টা সামনে আনে। অতএব আমরা বলতে পারি যে দ্বান্দ্বিকতার মূলসূত্র হ’ল— (১) একই বস্তুকণার মধ্যে বিপরীত গুণের সমন্বয়, (২) পরিমাণগত পরিবর্তন থেকে গুণগত পরিবর্তন, (৩)  বিপরীত গুণের ঘাতপ্রতিঘাতের ফলে নতুন বস্তুর উৎপত্তি। মার্কসীও বস্তুবাদ শেখায় যে এক মাত্র বস্তুজগতেরই অস্তিত্ব আছে এবং আমাদের চেতনাও বস্তুজাত। তাই মন বা ভাবের অস্তিত্ব বস্তু ছাড়া সম্ভব নয়, এবং এই বস্তু সদাই গতিশীল (এর ফলে বস্তুজাত জ্ঞানও গতিশীল)। পরবর্তীকালে এঙ্গেলস দেখান যে শুধু সমাজ বিজ্ঞানেই নয়, মার্কসীও দ্বন্দ্বমূলক মতবাদ প্রকৃতি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। দ্বন্দ্বমূলক প্রক্রিয়ায় বিপরীত গুণাবলীর যে বিরোধ বা দ্বন্দ্ব, তার সমাধান কোনো বাহ্যিক শক্তির দ্বারা হয় না, হয় বিরোধের বিকাশের উপর ভিত্তি ক’রে। কিন্তু এই বিরোধেরও দুটো দিক আছে—অবৈরিমূলক বিরোধ ও বৈরিমূলক বিরোধ। তাদের মধ্যে আছে মৌলিক পার্থক্য। অবৈরিমূলক বিরোধের ক্ষেত্রে দ্বন্দ্বের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তার সমাধানের পথ প্রশস্ত হয়। কিন্তু উলটো দিকে বৈরিমূলক বিরোধের ক্ষেত্রে দ্বন্দ্বের বিকাশ ক্রমশ ঐ বিরোধকে তীব্র থেকে তীব্রতর ক’রে তোলে। সামাজিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী যেকোনো দল বা ব্যক্তির এই দুই ধরণের বিরোধ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা একান্ত প্রয়োজন।

 

ইতিহাসের বস্তুবাদী ধারণা : দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির নিরিখে মার্কস আবিষ্কার করেন ‘মানব ইতিহাসের বিকাশের নিয়ম’। তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন, ‘রাজনীতি, বিজ্ঞান, কলা, ধর্ম ইত্যাদি চর্চা করতে পারার আগে মানুষের প্রাথমিক ভাবে দরকার খাদ্য, পানীয়, বস্ত্র, বাসস্থান’। অতএব প্রাণধারণের জন্য সকল প্রকার উপাদান উৎপাদন করতে হবে। ‘এই অর্থনৈতিক বিকাশের মাত্রাই হ’ল সেই ভিত্তি যার উপর গড়ে ওঠে সংশ্লিষ্ট জাতির রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, আইনের ধ্যানধারণা, শিল্পকলা, এমনকি তাঁদের ধর্মীও ভাবধারা পর্যন্ত…’। ঐতিহাসিক বস্তুবাদ শিক্ষা দেয় যে, সমাজ জীবনের পরিবর্তন সাধিত হয় উৎপাদনের শক্তির পরিবর্তনের ফলে, এবং এর ফলস্বরূপ উৎপাদনের সম্পর্ক পরিবর্তিত হয়। কিন্তু এই পরিবর্তনগুলো আপনা আপনি ঘটে না। এগুলো ঘটে এক শ্রেণীর সাথে আর এক শ্রেণীর দ্বন্দ্বের কারণে। অর্থাৎ যেকোনো সমাজের চালিকা শক্তি হ’ল শ্রেণী সংগ্রাম। বিবিধ কারণে আদিম সাম্যবাদী সমাজ ভেঙ্গে পড়ার পর থেকে এযাবৎ কাল অবধি উৎপাদক শ্রেণীর এবং উৎপাদনের উপকরণের মালিকদের ভিতরকার দ্বন্দ্বের কারণে প্রতিবারই সমাজের বৈপ্লবিক পুনর্গঠন হয়ে এসেছে। ঐতিহাসিক বস্তুবাদের নিরিখে  সমস্ত মহৎসৃষ্টির নির্মাতা হ’ল নিপীড়িত শ্রেণীগুলো। উৎপাদনের উপাদানের মালিকরা এগুলো আত্মসাৎ করে এবং উৎপাদকদের সমাজ-বিচ্ছিন্ন এবং আত্মবিচ্ছিন্ন রোবো-তে (robot) পরিণত করে।

 

বিচ্ছিন্নতার তত্ত্ব : উৎপাদনের উপকরণের উপর কর্তৃত্ব না থাকার ফলে কিভাবে একজন শ্রমিক অনুৎপাদক শ্রেণীর জন্য শ্রম দিতে দিতে তার উৎপাদিত দ্রব্য থেকে ও তার কাজ থেকে বিযুক্ত এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তা প্রথম আবিষ্কার করেন কার্ল মার্কস। মার্কস লক্ষ করেন যে এই বিযুক্তীর কারণে একজন শ্রমিক তার মানবীয় সত্তা হারিয়ে ফেলে এবং বিস্মৃত হয় যে পশুবৃত্তির—‘খাদ্যগ্রহণ, বংশবিস্তার, অথবা খুব বেশি হলে বাস এবং বেশভূষার’ ব্যাপার—বাইরেও তার একটা বিশেষ প্রজাতি-সত্তারয়েছে। অর্থাৎ সে তার নিজের থেকেই নিজেকে বিচ্ছিন্ন ক’রে ফেলে। এর থেকে মার্কস সিদ্ধান্তে আসেন যে এই তিন ধরণের বিচ্ছিন্নতার কারণে একজন শ্রমিক ক্রমশ বিযুক্ত হয়ে পড়ে অন্যান্য মানুষের থেকে। মার্কস লিখছেন— ‘মানুষ তার শ্রমের উৎপাদ হতে বিচ্ছিন্ন, বিচ্ছিন্ন তার জীবন ক্রিয়া হতে; বিচ্ছিন্ন প্রজাতি সত্তা হতে – এই সত্যতার প্রত্যক্ষ ফলাফল হচ্ছে মানুষের সঙ্গে অপর মানুষের বিচ্ছিন্নতা। মানুষ যখন নিজের সম্মুখে দাঁড়ায়, তখন সে আসলে অন্য একটা মানুষের মুখোমুখি দাঁড়ায়। এই কথাটাই খাটে মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে। একই কথা খাটে একটা মানুষের সঙ্গে অপর মানুষের সম্পর্কের বেলায়, সেই মানুষের শ্রম ও শ্রমের বিষয়ের জায়গায়।’ শ্রমবিভাজনও বিচ্ছিন্নতার একটা কারণ। এর প্রভাবে মানুষ তারসম্পূর্ণতাকে হারিয়ে ফেলে, একটা নির্দিষ্ট বৃত্তির চক্রাবর্তে ঘুরতে থাকে এবং খণ্ডিত মানুষে পরিণত হয়। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে বিচ্ছিন্নতা বা বিযুক্তী শ্রেণীহীন সমাজ ছাড়া দূর হওয়া সম্ভব নয়, কেননা এক মাত্র সেখানেই উৎপাদনের উপকরণের সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং শ্রম সংযুক্ত হয় জীবনের প্রাথমিক প্রয়োজন হিসাবে। আইন ক’রেব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপ বিচ্ছিন্নতা দূর করে না, কারণ শুকনো অর্থনৈতিক সমাজবাদ মানব সংস্কৃতির জগতে বা তাঁর মননে কোনো প্যারাডাইম শিফট-এর সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে না। পুঁজিবাদী সমাজে এই বিচ্ছিন্নতার প্রভাব সবচেয়ে তীব্র। মার্কসীয় অর্থশাস্ত্রের উদ্বৃত্ত মূল্যের বিষয় আলোচনা করলে এটা অনেকটা পরিষ্কার হবে।

 

মার্কসীয় অর্থশাস্ত্র : পুঁজিবাদী সমাজের গতিধারা উদঘাটন করেন মার্কস। তিনি দেখান কিভাবে মূল্যতত্ত্বের সাথে উদ্বৃত্ত মূল্যের ব্যপারটা জড়িয়ে থাকে। এডাম স্মিথ ও ডেভিড রিকার্ডো যে মূল্যের শ্রমতত্ত্ব আবিষ্কার করেন। মার্কস তাকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যান এবং বিকশিত করেন। ‘তিনি দেখান যে পণ্য (পুঁজিবাদী সমাজে পণ্য উৎপাদনই প্রধান। মার্কস-এর ‘পুঁজি’ গ্রন্থও তাই শুরু হয়েছে পণ্যের আলোচনা দিয়েই) উৎপাদনে সামাজিক ভাবে যে আবশ্যক শ্রম-সময়ের ব্যয় হয়েছে, তা দিয়েই তার মূল্যের নির্ধারণ হয়’। মার্কসীয় অর্থনীতির সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ’ল উদ্বৃত্ত মূল্য। বুর্জোয়া সমাজে একজন পুঁজিপতি উদ্বৃত্ত আহরণ করে মুনাফার মাধ্যমে। ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসাবে একজন পুঁজিপতি উৎপাদনের উপকরণের মালিক হয়, এবং তাই একজন শ্রমিক-কে, যে নাকি উৎপাদনের উপকরণ থেকে বিচ্ছিন্ন, তার শ্রমশক্তি সেই পুঁজিপতির কাছে বিক্রি করতে হয় গ্রাসাচ্ছাদনের জন্যে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট পুঁজিপতি একাধারে হয়ে ওঠে উৎপাদনের উপকরণের মালিক, উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের শ্রমশক্তির মালিক, এমনকি উৎপাদিত দ্রব্যেরও মালিক! শ্রম দিবসের একটা অংশের জন্য সেই শ্রমিক মজুরি পায়, আর একটা অংশের জন্য পায় না। এই বিনা মজুরির অংশটাই উদ্বৃত্ত মূল্য সৃষ্টি করে। মজুরি দিয়ে দেওয়ার পর ঐ পুঁজিপতি আগে বলা বিষয়ের সাথে সাথে উদ্বৃত্ত মূল্যেরও মালিক হয়ে বসে।মালিকপক্ষ অনেক সময় শ্রমদিবস বাড়িয়ে (extend) বা মজুরি কেটে উদ্বৃত্ত আহরণের চেষ্টা করে। অন্যান্য শ্রেণীবিভক্ত সমাজেও সামাজিক উদ্বৃত্ত তৈরি হয় ঠিকই, কিন্তু একমাত্র পুঁজিবাদী সমাজেই তা পুঁজির রূপ ধারণ করে। আবার পুঁজির সঞ্চয় আগেভাগেই ধরে নেয় উদ্বৃত্ত মূল্যের সম্ভাবনা। ‘উদ্বৃত্ত মূল্য ধরে নেয় পুঁজিতন্ত্রী উৎপাদনের উপস্থিতি এবং পুঁজিতন্ত্রী উৎপাদন পূর্বাহ্ণেই ধরে নেয় পণ্য-উৎপাদনকারীর হাতে প্রচুর পরিমাণ পূঁজি ও শ্রমশক্তির অস্তিত্ব।’ মার্কস এই প্রক্রিয়াকে বলেছেন ‘দুষ্টচক্রের নিয়ত আবর্তন’।  পুঁজির সঞ্চয় শুরু হওয়ার আগে পুঁজির আদিম সঞ্চয়ের অস্তিত্ব। এই আদিম সঞ্চয় সম্পর্কেও মার্কস যুগান্তকারী দিকনির্দেশক দিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন ‘উৎপাদনের উপায়সমুহ থেকে  উৎপাদক-কে সম্পূর্ণ ভাবে বিচ্ছিন্ন করার উপরেই’ আদিম সঞ্চয়ের ব্যাপারটা প্রতিষ্ঠিত এবং ‘জমি থেকে কৃষক-কে উৎখাত’ ক’রে তাকে স্বাধীন শ্রমিকে রূপান্তরিত করাই এর ভিত্তি। এসব ছাড়াও মার্কস অন্যান্য আরও অনেক জটিল বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন যা আমাদের, শুধু মাত্র অর্থনীতিকেই নয়, বিভিন্ন সমাজের ভিন্নতাকে বুঝতে সাহায্য করেছে। তিনি যেমন পুঁজিবাদী সমাজ নিয়ে আলোচনা করেছেন, তেমন ভাবেই আলোচনা করেছেন প্রাক-পুঁজিবাদী সমাজ নিয়ে। অবশ্য, মার্কস এইসব আলোচনা-সমালোচনা নিছক অ্যাকাডেমীক কারণে করেননি। তিনি ছিলেন বিপ্লবী। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সমাজটাকে পাল্টানোর উদ্দেশ্যে ব্যাখ্যা করা, সঠিক ভাবে জানা এবং বোঝা। আর সেই জন্যেই তিনি গড়ে তুলেছিলেন শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্বের তত্ত্ব যা আসলে শ্রেণীসংগ্রামে বশীভূত।

 

শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্ব ও সমাজতান্ত্রিক সমাজ : নিজের রাজনৈতিক-সামাজিক অবদানের কথা বলতে গিয়ে ১৮৫৩ সনে মার্কস ভেদমেয়ার-কে লেখেন— ‘বর্তমান সমাজে বিভিন্ন শ্রেণীর অস্তিত্ব এবং তাঁদের মধ্যে লড়াই, এই আবিষ্কারের কৃতিত্ব আমার নয়। …নতুন যেটুকু আমি করেছি, তা হচ্ছে, এই প্রমাণ করা যে (১) শ্রেণীগুলোর অস্তিত্ব শুধু উৎপাদনের বিকাশের বিবিধ ঐতিহাসিক স্তরের সাথে জড়িত; (২) শ্রেণীসংগ্রাম থেকে স্বাভাবিক ভাবেই সর্বহারার একনায়কত্ত্ব আসে; (৩) এবং এই একনায়কত্ব সমস্ত শ্রেণীর বিলুপ্তি এবং একটা শ্রেণীহীন সমাজে উত্তরণ ছাড়া কিছু নয়। …’শ্রমিকশ্রেণীর একনায়কত্বের অর্থ কি? এর অর্থ হ’ল শোষিত শ্রমিকশ্রেণীকে শাসক শ্রেণীতে উন্নীত করা, এবং জনগণের মূল অংশের গণতান্ত্রিক চাহিদাকে সুনিশ্চিত ক’রে উৎপাদনের উপায়সমূহকে সামাজিক সম্পত্তিতে পরিণত করা এবং শ্রেণী ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা। তবে, এই ব্যবস্থা একদিনে কায়েম হতে পারে না। এটা একটা দীর্ঘস্থায়ী ব্যাপার। এক ধাক্কায় এমনটা হওয়া সম্ভব নয়। অকালে বিপ্লব করলে তা একটা পর্যায় পর ধ্বংস হবেই। ‘বুর্জোয়া উৎপাদন পদ্ধতি তখনই উচ্ছেদ হতে পারে যখন তার বৈষয়িক ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে, যখন তার উচ্ছেদ হওয়াটা প্রয়োজন। তার আগে যদি সর্বহারা বুর্জোয়ার রাজনৈতিক শাসনকে উৎখাত করে তাহলে সেই জয় হবে নেহাতই সাময়িক’। ‘গোথা কর্মসূচী’-র সমালোচনা ক’রতে গিয়ে মার্কস তুলে ধরেন যে পুঁজিবাদী সমাজের গর্ভ থেকে জন্মলাভ করা কম্যুনিস্ট সমাজে, অর্থাৎসমাজতন্ত্রের প্রাথমিক পর্যায়ে, বুর্জোয়া সমাজের অবশেষ রয়ে যাবে এবং তাই তা সমাজতন্ত্রের উচ্চ পর্যায়ের অবস্থা থেকে পৃথক হবে। এই নতুন সমাজের প্রাথমিক অবস্থায় একজন মানুষ ব্যক্তিগতভাবে সমাজকে যতটা শ্রম দেবে, তার মর্মে সে একটা প্রমাণপত্র পাবে এবং তা দিয়ে সে সমাজের ভোগ্যবস্তুর ভাঁড়ার থেকে তার শ্রম মূল্যের সমপরিমাণ ভোগ্যবস্তু লাভ করবে। অর্থাৎ সে সমাজকে যতটা দেবে, অন্যরূপে ঠিক ততোটাই ফেরত পাবে। কিন্তু কম্যুনিস্ট ব্যবস্থার উচ্চ পর্যায়ে এই নিয়ম পরিবর্তিত হবে কেননা তখন শ্রম জীবনধারণের উপায়ের বদলে জীবনের প্রাথমিক প্রয়োজন হয়ে দেখা দেবে, শ্রমবিভাগের জাঁতাকল থেকে মানুষ মুক্ত হবে এবং দৈহিক আর মানসিক কাজের পারস্পরিক বৈপরীত্য আর থাকবে না। এই নতুন ব্যবস্থায় প্রত্যেকে তার ক্ষমতা মতো শ্রম দেবে এবং তার প্রয়োজন মতো দ্রব্য পাবে।

 

পরিশেষে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে, কিছু নতুন দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, কিছু পুরনো দ্বন্দ্ব মুছে গেছে; তবু বদলায়নি খেটে খাওয়া জনতার বিপ্লবী কামনা। সময়ের সাথে সাথে তা বেড়েই চলেছে। তাই উৎপীড়কদের একদিন উচ্ছেদ করবেই এইসব সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, আর আগের মতোই সেই সংগ্রামের বাতিঘর হবেন  দার্শনিক, যার নাম কার্ল মার্কস।

 

লেখক :  আহমেদ জালাল (সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক)

 

Mail : ahmedjalalbsl@gmail.com

 

সূত্র :  http://eitosomoy.com/node/5

 

http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2012-02-07&ni=85802

 

http://taiyabs.wordpress.com/2009/06/10/%E0%A6%B8%E0%A7%88%E0%A7%9F%E0%A6%A6-%E0%A6%AC%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%B0-2/

0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ