পঁয়ষট্টি : অহমের প্রতি
উফ!তুই আজকাল বড়ো অসহ্য এবং বিরক্তিকর হয়ে উঠেছিস। একই কথা ঘ্যানঘ্যান করে যাচ্ছিস। ঠিক ভাঙ্গা রেকর্ডের মতো। আমি জানিনা মারকাট তোকে কিভাবে সয়ে নিয়ে যাচ্ছে এতোগুলো বছর। আমি যদি তোর বস হতাম, তাহলে কবেই যে তোকে চাকরী থেকে ফায়ার করতাম! শোন কাজ কর মন দিয়ে। অনেক ছুটি নিয়েছিস। না করেও তো লাভ নেই, আবারও ছুটি নিবি। সে জানি। তাই যতো পারিস তোর বসকে খুশীতে রাখ। তা নইলে ফিরে গিয়ে দেখবি চাকরী গেছে।
ফুলকুঁড়ির প্রেমিকের কথা না ভেবে তোর নিজের কথা ভাব। পিউ এখনও আছে। এরপর ও চলে গেলে আর সম্ভব না। বুঝলি ছাগল? ভালো আছি।
তোর তিরি
ছেষট্টি : তিরির প্রতি
আজ মারকাটের জন্মদিন গেলো। সকালে অফিসে এসেই আমার খোঁজ নেয়। কিন্তু না পেয়ে মেজাজ মনে হয় বিগড়ে গেলো। তার নিজের চেম্বারে এসে দেখে ফুল। জীবনে কখনো মনে হয় ফুল পায়নি, পাবার কথাও না যা তার স্বভাব! ভ্রূ দুটো এক জায়গায় এনে, নাকটা কুঁচকে যেভাবে চাইলো আমার দিকে মনে হলো পারলে আমাকে গিলেই খায়। বললাম হ্যাপি বার্থ ডে। আমায় জিজ্ঞাসা করলো কার, মারকাটের নাকি? থমকে গেলাম। নরমাল টেম্পারেচারে থেকেও মনে হচ্ছিলো দেশের পঞ্চাশ ডিগ্রীতে আছি। বুঝেছিস অবস্থা? মারকাট মানে? বুঝিনি মারকাট কে? জিজ্ঞাসা করলো কেক কোথায়? অনেক হাসলাম দুজনেই। অফিসের সকলেই এলো, এই অফিসে এমন অনুষ্ঠান প্রথম হলো। বেশ কাটলো রে।
শোন বাসায় ফিরে এসে রান্না করেছি তোর প্রিয় সর্ষে ইলিশ। জানিস কে শিখিয়ে দিয়েছে? তোর পিউ। জানিয়ে দিস মন্দ হয়নি রান্না। আরোও কিছু রেসিপি যেনো পাঠায়।
তোর অহম
সাতষট্টি : অহমের প্রতি
ওরে রে রে এত্তো এত্তো কিছু! মারকাট বেচারার আসল নামটা কি বল তো আমায়? তা তখন একটা ফোন দিসনি কেন? আমিও তাহলে উইশ করতাম। তবে আসলেই মানুষটা সত্যি ভালো। আমরা শুধু বলি ওসব দেশে শুধু স্বার্থ, কাজ আগে, আবেগ নেই আমাদের মতো। তোর মারকাট আমার সেসব ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিয়েছে। শুধু ভেবে দেখ আমরা যদি আমাদের বসের নামকে নিয়ে মজা করতাম, চাকরী শুধু যেতোই না, আরোও অনেক ক্ষতি হবার সম্ভাবনাও থাকতো। মারকাটকে বলিস আমি তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। আর চিঠির সাথে কার্ডটা দিয়ে দিস ওকে।
তলে তলে আর কতো কিছু যে দেখবো। ঠিক আছে পিউকে বলবো তোকে রেসিপি পাঠাতে। একটা কথা বল তো চিঠি লিখিস নাকি ওকে? নাকি ফোন হয় রোজ? ওহো বলে নেই আজ প্রিয় বিশাল এক সারপ্রাইজ দিয়েছে আমায়। মনে আছে আমাদের সেই আড্ডার কেন্টিনের কথা? বিকেলে ফিরেই বলে রেডি হতে চায়েনিজ রেষ্টুরেন্টে যাবে। বললাম আমার ইচ্ছে নেই, কিছুতেই মানলো না। ওর অভিনয় তো জানিস, বেশ একটা অভিমান সাজিয়ে বসে রইলো। ওমা গাড়ী দেখছি অন্যদিকে যাচ্ছে, বললাম কোথায় যাচ্ছি আমরা? কতো স্মৃতির জায়গা আমাদের, গিয়ে দেখি রিনী, ওর বর প্রাঞ্জল। এই ছাগল তোকে খুব খুঁজছিলো এই চোখ। আমরা এখনও সেই একই, কিন্তু আমাদের কেন্টিনটা না বদলে গেছে।
তোর তিরি
আটষট্টি : তিরির প্রতি
আবারও ইমোশনাল ভাব দেখাচ্ছিস? যা তোকে মানায় না কিছুতেই। আরে কোথায় লাফ দিয়ে বলবি, “এ কে আমাদের মহরম ভাই না!” আচ্ছা মহরম ভাই কি এখনও আছে? থাকলে তো আমার জন্যে চা ফ্রী এখনও। ধ্যত্তের এতোবার দেশে গেলাম বেড়িয়ে আসা যেতো কিন্তু। তবে এবার এসে অনেক ঘুরবো।
আর তোর জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে পিউর সাথে আমার কোনো চিঠির যোগাযোগ হয়না, এমনকি ফোনও না। মাঝে-মধ্যে ফোনে কথা হয়। বিষয় হলি তুই। আমার কাছে জানতে চায় তুই কি পছন্দ করিস, কি না। ইত্যাদি। নাহ তুই আমায় আর বুঝিস না। কি হয়েছে রে তোর? দেখ প্রেমটা আমার আসেনা। চেষ্টায় যদি সেই আবেগ কখনো ফিরে আসে, সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। শুধু তোর জন্যে। তবে পিউর সাথে সেই সম্পর্ক আর হবেনা। কারণ নির্ভেজাল এবং শুদ্ধ একটা বন্ধুত্ত্ব যখন হয়ে যায়, প্রেম আর হয়না। সেটা পিউও জানে। আর কতোবার বলবো?
যাক মারকাটকে তোর শুভেচ্ছাবার্তাসহ কার্ডটা দিয়েছি। খুব খুশী। জানতে চাইলো তোর কথা। শোন ছুটি মঞ্জুর। তোরা মেয়েরা জানিস বড়ো যাদুকর। এ নিয়ে পরে কথা হবে। আর ছাগলী নিজের খেয়াল রাখিস। ঠিকমতো ঔষধ খেতে হয়। এখন তুই একা না।
তোর অহম
হ্যামিল্টন, কানাডা
২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ইং।
Thumbnails managed by ThumbPress
৩৬টি মন্তব্য
অনিকেত নন্দিনী
মারকাটের আসল নাম কী?
আরে! মারকাট ছেলে না মেয়ে তাইতো জানিনা। 😮
কত্ত প্রশ্নের উত্তর যে জানতে ইচ্ছা করে গো। ততির আর কত উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াবে গো নীলাদি? পিউকে নিয়ে অহমের মাঝে অন্যরকম কিছু কি জন্মাবে কখনো?
অনিকেত নন্দিনী
তিরি*
নীলাঞ্জনা নীলা
মারকাটের আসল নাম কখনো আসেনি। তাই জানিনা। তিরি ঘুরুক, এমন অবস্থায় বেড়ালে মন ভালো থাকে। তারপর তো অনেক দায়িত্ত্ব, তখন না পারবে ঘুমাতে, না থাকবে একটু নিজের জন্যে সময়।
দিদি অহমের যা অবস্থা এখন পর্যন্ত দেখছি, ঠিক বুঝছি না। তা কি কি জানতে চান, জিজ্ঞাসা করেই ফেলুন না। উত্তর যদি জানা থাকে তাহলে নিশ্চিত দেবো। 😀
অনিকেত নন্দিনী
এবারে জিজ্ঞেস করলামনা (আসল কথা হইলো কী জিগামু তা ভুইলা গেছি :p)
পরের পর্বে আর দেরি করাকরি নাই। সোজা প্রশ্ন যাবে, হুম্ম।
নীলাঞ্জনা নীলা
পরের পর্বর উত্তর তাহা হইলে এখন হইতেই রেডি করিয়া রাখি :p 😀
মোঃ মজিবর রহমান
যাক এখন এতো পড়ে উত্তর দেবনা কাজ সেরে নি আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
ঠিক আছে মজিবর ভাই। যখন সময় হবে তখন বলবেন। অপেক্ষায় রইলাম।
অরুনি মায়া
আসছি আপু আগের গুলো পড়ে | আজই পড়ব 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
ঠিক আছে আপু যখন সময় হয়, তখনই পড়ো। 🙂
নাসির সারওয়ার
পিছনের গুলো পড়ে আসবো।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়ূ তখন আপনি ছিলেন না যখন চমক পর্বগুলো লিখছিলাম। তবে চিন্তা নেই, সময় কখনো না কখনো আবার আসবে।
হুম পেছনেরগুলো পড়ে জানাবেন, তাহলে এগিয়ে নেয়ার ভাবনাটা মাথায় রাখবো।
আবু খায়ের আনিছ
কিছু বলতে হলে পিছনে ফিরে তাকাতে হবে। আচ্ছা একবার ঘুরে আসি পিছন থেকে।
নীলাঞ্জনা নীলা
আনিছ ভাইয়া হুম ঘুরে আসুন টাইম মেশিন এখানে আছে।
আবু খায়ের আনিছ
বেক গিয়ারে দিয়ে বসেছি। এখন পিছানোর পালা।
নীলাঞ্জনা নীলা
পিছানো শেষ হলো? 😀
আবু খায়ের আনিছ
শেষ হলো। পড়লাম আর বুঝলাম এইটি একটি আড্ডার উপর নির্ভর করে লেখা।
অনেককেই দেখলাম, তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাদের অনেকেই অনুপস্থিত। নীতেশ দা, অরণ্য ভাইয়া, হিলিয়াম, লীলাবতি আপু এদের দেখি না অনেকদিন হল। সবাই আবার ফিরে আসবে এই আশা করি।
আবু খায়ের আনিছ
লেখার বিষয়ে কি বলব, কখনো হেসেছি, কখনো সিরিয়ায় হয়ে বুঝার চেষ্টা করেছি আবার মাঝে মাঝে দুয়েক লাইন বারবার পড়েছি। খসড়া আপুর মতই বলতে হবে। লিখে যাও ওস্তাদ।
নীলাঞ্জনা নীলা
আনিছ ভাইয়া এই ধারাবাহিকটি আসলে দুই বন্ধুর মধ্যে চিঠির আদান-প্রদান। এর মধ্যে কথোপকথনও আছে।
বন্ধুত্ত্বকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এখানে। বন্ধুতাই মুখ্য, অন্য সব গৌণ।
আর ব্লগের বন্ধুদের নিয়ে আসা সবাই এই ধারাবাহিকটিকে অনেক আপন করে নিয়েছেন।
খসড়া
ভালইতো চলছে, লিখে যাও ওস্তাদ।
নীলাঞ্জনা নীলা
আপনারা সবাই পাশে আছেন বলেই চলছে। তা নইলে কবেই থেমে যেতো!
ছাইরাছ হেলাল
খেই হারাইয়ালছি।
নীলাঞ্জনা নীলা
ক্যান জানতে পারি কি?
ছাইরাছ হেলাল
আগে কী পড়েছি মনে নেই।
নীলাঞ্জনা নীলা
আগে আপনার কবিতা আবৃত্তি করেছিলো অহম। ওই যে তিরির বাসায় সোনেলার আড্ডা বসেছিলো? মনে নেই? অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় আপনি ছিলেন! 🙂
শুন্য শুন্যালয়
অহমও পটাতে শিখে গেছে দেখে ভাল লাগলো।
মেয়েরা যদি সত্যিই যাদু জানতো আপু!! 🙁
ফুলটুসিটা কবে আসবে? কবে ছাগলটার কিছু গতি হবে?
নীলাঞ্জনা নীলা
আরে না শিখে উপায় আছে? আজকাল না পটিয়ে কি চলা যায় আপু?
আপু মেয়েরা অবশ্যই ভালো যাদু জানে। দেখি অহম কি বলে সামনে এই যাদু নিয়ে 😀
ফুলটুসী কবেই চলে আসতো। মধ্যে থেমে গেলো লেখাটা।
ছাগলটা প্রেমে পড়েছে তোমার নিশ্চিত। কাউকেই তার চোখে লাগছে না, দেখছো না? 😀 :p
শুন্য শুন্যালয়
হা হা, লিখে ফেলবো নাকি একটা গল্প? 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
অবশ্যই। কাল ঘুম থেকে উঠে যেনো পাই, প্লিজ এমন করে লেখো। -{@
তানজির খান
মাঝখানে কয়েকটা পার্ট পড়া হয়নি। সময় করে পেছনের পার্টগুলো পড়বো।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া ঠিক আছে পড়ে নাও। সকলেই দেখছি পুরোনো পর্বে আছে। তাই কিছুদিন পর আবার লিখবো।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আমি ফুলটসীর আগমনের অপেক্ষায় আছি। এই ধারাবাহিক পড়লে মনে হয় চোখের সামনেই সব দেখতে পাচ্ছি।
New Born Baby আমার খুব পছন্দ! সেই ছোট্টবেলা থেকেই। ক্লাস নাইন থেকেই আমি হাসপাতালে অনেক প্রসুতি ঘনিষ্ট আত্মীয়ের ডিউটি করতাম, শুধু জন্মবাচ্চাকে কাছে পাবো বলে।
পিছনের পর্বগুলো আবার পড়ার লোভ হচ্ছিলো। কিন্তু সময় নেই, অফিস শুরু হয়ে গেছে।
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু আপনিও দেখছি আমারই মতোন! তবে আমার না খুব ভালো লাগে ওদের পায়ের আঙুলে আদর করতে।
ফুলটুসী আসবে খুব তাড়াতাড়ি। একটু অপেক্ষা করুন। চলে এলো বলে।
জিসান শা ইকরাম
শুধু চিঠি দিয়ে পোষ্ট, তুমিই প্রথম আনলে সোনেলায়
চরিত্র গুলোকে সোনেলার ব্লগারদের সাথে নিয়ে এলে একসময়।
অপেক্ষায় থাকি ওহম তিরি কখন আসবে………
শুভ কামনা।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা চিঠি আমার প্রিয় বিষয়। আমি আসলেই খেয়াল করিনি চিঠির পোষ্ট আমায় দিয়ে শুরু বুঝি?
আর সোনেলা তো আমার অনুভূতি আর আবেগের একান্ত প্রিয় একটি আশ্রয়।
ভেবে রেখেছি অহম-তিরিকে বইমেলায় বেড়াতে নিয়ে যাবো। দেখি পারি কিনা!
পাশে থেকো।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
শুধু পড়িয়া গেলাম!
কিছু বুঝি নি ……
নীলাঞ্জনা নীলা
দুই বন্ধুর মধ্যে চিঠির আদান-প্রদান। এ নিয়েই এই ধারাবাহিক। আগের পর্বগুলো কষ্ট করে পড়লে বুঝবেন।