ইসলাম ধর্ম ও মানুষ পোড়ানো

রিয়েল আবদুল্লাহ ৩ নভেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার, ১১:২৮:৪৮অপরাহ্ন সাহিত্য ১০ মন্তব্য

 

ধর্ম আমার ইসলাম।আল্লাহ আমার রব। আমার নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। একথা যেমন চিরসত্য।  তেমনি আমি একজন মানুষ একথাও চিরসত্য। কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন,

"আল্লাহ আমার প্রভু, আমার নাহি নাহি ভয়

আমার নবী মোহাম্মদ, যাহার তারিফ জগৎময়।

আমার কিসের শঙ্কা,

কোরআন আমার ডঙ্কা,

ইসলাম আমার ধর্ম, মুসলিম আমার পরিচয়।"

 

সমগ্র বিশ্ব যখন হিংসায় উন্মত্ত, রক্ত ঝরছে যখন পৃথিবীর নরম শরীর থেকে, তখন এই বাংলার এক কবি বিশ্বকে শুনিয়ে ছিলেন মানবতার অমর কবিতা।

 

সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’। বাংলার মধ্যযুগের এক কবি বড়ু চণ্ডীদাস উচ্চারণ করেছিলেন মানব-ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিক বাণী।

 

কবি নজরুল তার মানুষ কবিতায় বলেছেন,

 

"মানুষেরে ঘৃণা করি

ও’ কারা কোরান, বেদ, বাইবেল

চুম্বিছে মরি মরি

ও মুখ হইতে কেতাব-গ্রন্থ নাও জোর

করে কেড়ে

যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই

মানুষেরে মেরে ।

পুজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল !–মুর্খরা সব শোনো

মানুষ এনেছে গ্রন্থ,–গ্রন্থ আনেনি মানুষ

কোনো ।"

 

আল্লাহ এই পৃথিবী তৈরি করেছেন মানুষের বাস যোগ্য করে। তিনি নিজের জন্য কিছু রাখেন নি। মানুষেরই মনোরঞ্জনের জন্য এই আকাশ,গ্রহ নক্ষত্র রাজি,বৃক্ষ বাগান, চাঁদ তাঁরা, গাছ পালা সাগর মহাসাগর সব সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে যুগান্তর কালো আঁধারের অন্ধকার থেকে মাতৃযোনি গলিয়ে পৃথিবীর মুখ দেখিয়েছেন। যা তিনি না করলেও পারতেন। তাঁর তারিফ সকলেই গায়। তবে মানুষের মত করে কেউ নয়।

 

যুগে যুগে অসংখ্য নবী প্রেরণ করেছেন। অসংখ্য নবী আর চারজন রাসুল কেবল মানুষের হেদায়াতের জন্য কাজ করে গেছেন। প্রত্যেক নবী রাসুল শুধু মাত্র আল্লাহ যে একজন আছেন এটা প্রমান করতেই জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এক আল্লাহর জন্যই রক্ত রঞ্জিত হয়েছেন। দন্ত মুবারক খুইয়েছেন। তবু তিনি মানুষ খুন করেন নি। আল্লাহ তায়ালা তাকে দুত পাঠিয়ে জিজ্ঞাসা করার পরেও তিনি তায়েফবাসীর ক্ষতি চাননি। বরং দু হাত তুলে তাদের হেদায়াতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। উনার সিলসিলা অনুসরণ করেছেন তাঁর প্রিয় চার সাহাবী,হযরত আবুবকর (রাঃ),হযরত আলী (রাঃ),হযরত উমর (রাঃ),হযরত ওসমান (রাঃ) নিজেরা অনেকেই আততায়ী দ্বারা খুন হয়েছেন তাও মসজিদের ভেতরে,তবুও খুনের বদলা খুন নিতে যাননি। প্রত্যেকেই মানুষের মঙ্গলের জন্য দোয়া করেছেন,নিজে সৎ থেকেছেন কষ্ট করেছেন তবুও তা প্রকাশ করেননি।

 

নবী করিম ( সাঃ) পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে শত চেষ্টা করেও যাঁর সমাধান হয়নি তিনি তা করেছেন। ইসলামকে জয় করেছেন। আরবের মাটিতে শত প্রতিকূলতার ভেতরেও উড়িয়েছেন ইসলামের পতাকা। সে পতাকা পরবর্তীতে শুধু আরব নয়,সারা বিশ্ব জয় করেছে। তিনি সকলের সম্মান অর্জন করেছেন। তিনি বেঁচে থাকতেই কত মানুষ তাকে আঘাত দিয়ে কথা বলেছেন,তাঁর পথে কাঁটা দিয়েছেন,তাঁর হুকুমের বরখেলাপ করেছেন,তবুও তিনি তাঁদের সাথে কটু কথা বলেননি,বলেননি রাগ হয়ে কথা। আল্লাহর কাছে হেদায়েত চেয়েছেন। দোয়া করেছেন।

 

আর আমরা এতটাই অন্ধ কুসংস্কারাচ্ছন্ন যে,ভুলেই বসে আছি,নবীজি নিজের যে ইমেজ এই বিশ্বের বুকে তৈরি করে গেছেন তা এত ঠুনকো নয়। দু একটা কার্টুন আর দু একটা কটু কথা বলললেই শেষ হয়ে যাবে। বরঞ্চ বর্তমান পৃথিবীতে আমরা যতই ইমান আমল করি না কেন, যতই পীর মুর্শেদ হই না কেন,নবীর ধারে কাছেও যেতে পারব না। আমরা মরে মাটির সাথে মিশে গেলেই আমাদের নাম-ধাম,ইমান-আমল শেষ,আমাদের পরিজন ছাড়া আর কেউ স্মরণ করবে না,অথচ আমার নবী দুজাহান যাঁর জন্য সৃষ্টি করা হয়েছিল সেই আখেরি জামানার সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নাম পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন অক্ষয় অম্লান হয়ে রইবে।

 

তিনি কোথাও কখনওই বলেননি,আল্লাহ ও ইসলাম নিয়ে কেউ কথা বললে, তাঁকে খুন করে ফেলতে হবে।  কিন্তু আমরা ভাবছি,নবীকে নিয়ে বিধর্মীরা দু একটি কথা বললেই,আমাদের ইসলাম শেষ হয়ে যাবে। ভুল, এ ধারনা ভ্রান্ত।

 

নবীকে নিয়ে কার্টুন এঁকে নবীকে ছোট করা যায় না। আল্লাহ ও নবীর কাউকেই ইনারা দেখেননি। এ হচ্ছে তাঁদের মনের কল্পনা, প্রতিমা। যেমন প্রতিমা তৈরি করে পুজা করা হয়। যা ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ।

 

তার জন্য আল্লাহ 'কে নবী'কে নিয়ে কার্টুন তৈরি করলে তাঁকে খুন করতে হবে তাঁর নির্দেশনা কোথাও নেই।

 

পবিত্র আল্লাহ একজন বিধর্মীর মৃত্যুর শেষনিঃশ্বাস পর্যন্ত অপেক্ষা করেন, সে একবার আল্লাহর  নাম স্মরণ করেন কি না? নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহ ধৈর্য্যের এক বিষ্ময়কর উদাহরণ।

 

তা না হলে তিনি এক ইশারায় পৃথিবী থেকে সব বিধর্মী এক নিমিষে ভেনিশ করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন না। অথচ আমরা এতটাই অধৈর্য যে মানুষ খুন করে তাকে আবার পুড়িয়ে ফেলি। আমরা এতটাই অন্ধ যে,বোধ বিচার কিছু করি না।

 

পৃথিবীতে ৮০০ কোটি মানুষ। এত মানুষ যে ভাবা কঠিন। তাঁদের প্রত্যেকের মগজের ম্যানেজমেন্ট আলাদা। তাঁরা সবাই এক হবে কি করে ভাবি। আবার আমরা কি তাদের প্রত্যেকের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছে দিতে পেরেছি কি? পারিনি। ইসলাম ধর্মের কঠিন নির্দেশ কাউকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা যাবে না। কিন্তু ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে নিষেধ করা হয়েছে কি? যদি না করা হয় তবে দাওয়াত পৌঁছানো জরুরি।

 

আমরা কি এমন কর্ম করছি যে, আমাদের শৌর্য ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখে অন্য ধর্মের মানুষ ইসলামের পতাকার নীচে আসবে?

 

যা আছে পুরনো কথা। বিগত পনেরশত বছরে আমরা কি করেছি? আমরা কি জ্ঞানবিজ্ঞানে সারা বিশ্বকে হাতের কবজায় নিতে পেরেছি ? পারিনি। বর্তমান পৃথিবীতে যা কিছু উদ্ভাবন করেছে তা বিধর্মীরাই।

 

আজ যদি মুসলিমরা ক্ষমতাধর হতো। সবদিকে উন্নত হতো। বিধর্মীরা ভয় পেতো। ইসলাম নিয়ে কিছু বলার বা উক্তি করার সাহস পেতো না।

 

ইসলাম কি সেইরকম কিছু পেয়েছে পরহেজগার মুসলিমদের কাছ থেকে? নারকীয় চিন্তা ভাবনার জন্য কি আল কোরআন? আল কোরআন কি হত্যার অনুমোদন দেয়?

 

ইসলামিক চিন্তা বিদেরা ওয়াজিনগন সকল ওয়াজ মাহফিলে ইসলামের শৌর্য বির্য বলতে যা বুঝান, তা ইসলামের ক্ষতি সাধন করতে যথেষ্ট।

 

পুরাতন সময়ের নৃশংসতা বা যুদ্ধের ঘটনা কর্মকাহিনী বলে, প্রমাণ করে দেন যে, ইসলাম পূর্বেও এমনই হত্যার সাথে জড়িত ছিল। যা বিধর্মীদের মনে ভুল চিন্তার উদ্রেক করে। এমনিতেই তাঁরা ইসলামের খুঁত ধরতে ওস্তাদ। উপর্যুপরি তাঁরা ভাবে ইসলাম ধর্মের প্রায় সকলেই জঙ্গি। আসলে কি তাই?

না ইসলাম ধর্ম কখনওই শান্তির বাইরে নয়। কিছু ভুল ব্যাখ্যাকারী আলেম-ওলামার কারণে ইসলাম প্রিয় লোকজনের মগজ ওয়াস। যে কারণে এখন প্রায় সকলেই বোধ চিন্তা না করে সামান্য বিষয় নিয়ে ক্ষেপে যায়। অযথা রক্তপাত করে। অযথা নিজেদের অন্যায়ের সাথে জড়ায়। মুসলমান হয়ে মুসলমানদের পিটিয়ে মারে।

 

"এই ত গত কয়েকদিন আগে লালমনিরহাট এলাকায় একজনকে মসজিদের ভেতরে পিটিয়ে মারা হলো। তার কারণ লোকটি শিক্ষক ও শিক্ষিত আপগ্রেড মাইন্ডেড ছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। মসজিদে নাকি জঙি ও বেঁফাস ধরনের কথা বার্তা হচ্ছিল। প্রতিবাদ করেছিলেন। তাই তাকে একটা বেদাতি তকমা দেয়া হলো। নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে পরে তাকে পুড়িয়ে ফেলা হলো। "

 

এ কি ইসলামের কথা। হতেই পারে না। ইসলামের নাম করে ভন্ড ধর্মীয় গোটাকয়েক মানুষের অপকাজ। যে কারণে বাংলাদেশের ইসলাম ধর্ম আজ সারাবিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ।

 

এভাবে এই খুনী মানুষগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠার আগে সতর্ক হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু তা কে করবে? রাষ্ট্র তো আগেই নতিস্বীকার করে আছে। বিগত পঞ্চাশ বছরে বাঙালীদের মধ্যে যে ইসলামিক রেভুলেশন ঘটান হয়েছে,এই ধারা এখনও অব্যাহত আছে। যা খুবই কুসংস্কারাচ্ছন্ন। কুপমন্ডুকতা পূর্ণ।

 

সরকার সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে নি। এ শক্তি লুক্কায়িত, যা সরকারের অজানা নয়। ভয়ে আমি যেমন নাম প্রকাশ করছি না। সরকারও করছে না। অথচ সরকার নিজেই তাঁদের বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাব পোষন করে।

 

সরকারের উচিত সেই ইসলামী অপশক্তির মুখোস উন্মোচন করা। যাঁরা দেশের সার্বভৌমত্ব কে নস্যাৎ করে দিতে চায়। ইসলামের মত শান্তির ধর্মকে অশান্তির ধর্মে পরিনত করতে চায়,আগে তাঁদের বিচার হওয়া জরুরী।

 

আল্লাহ সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুন।

0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ